বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী জীবন

হজের সফরে নামায : ঝগড়া ও বিতর্ক কাম্য নয়

মুহাম্মাদুল্লাহ আরমান | প্রকাশের সময় : ৯ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

 

শেষ
সুতরাং জুমহুর উলামায়ে কেরাম যা বলেছেন সেটাই দলীলের দিক থেকে শক্তিশালী। আর ইমাম মালেক রহ. যা বলেছেন তা সহীহ দলীল ভিত্তিক কথা নয়। এ হিসেবে হানাফী মাযহাবের হাজীদের ভেতরে মতবিরোধ থাকার কথা ছিল না। কিন্তু নতুন প্রেক্ষাপটে এখানে আরেকটি বিষয় বিবেচনায় এসে গেছে। তা হলোÑ মিনা, আরাফাহ ও মক্কা এক শহর নাকি ভিন্ন শহর। কারণ ভিন্ন হওয়া না হওয়ার ওপর নামাযের হুকুমেও ভিন্নতা চলে আসে।
মিনা, আরাফা ও মক্কা এক শহর নাকি ভিন্ন শহর!
এ বিষয়ে মারকাযুদ্দাওয়াহ আল ইসলামিয়ার আমীনুত তালীম মাওলানা আবদুল মালেক সাহেব বলেন, ‘এটা তো জানা মাসআলা যে, কোনো শহরে কেউ ১৫ দিন থাকার নিয়ত করলে মুকীম হয়ে যায়। আগে মক্কা ভিন্ন শহর আর মিনা ভিন্ন জায়গা হওয়ার ব্যাপারে কোনো দ্বিমত ছিল না। কিন্তু এখন বসতি বেড়ে মিনা মক্কার সাথে মিলে যাওয়ার কারণে মক্কা-মিনাকে একই শহর ধরা না ধরার বিষয়টি উপস্থিত হয়েছে। (আরফাহর ক্ষেত্রেও এ বিষয়টি প্রযোজ্য) তাই কোনো কোনো হানাফী ফকীহের মত অনুযায়ী মক্কা-মিনা মিলে ১৫ দিন হলেও মুকীম। আর কোনো কোনো হানাফী ফকীহের দৃষ্টিতে আগের মতো এখনও মক্কা ভিন্ন শহর, মিনা ভিন্ন আবাদি। তাদের কাছে দুই জায়গায় মিলিয়ে ১৫ দিন হলে হাজী মিনায় মুসাফির গণ্য হবে। নতুন এই প্রেক্ষাপটে হানাফী মাযহাব অনুসারীদের মাঝেও মতবিরোধ হয়েছে। একদিকে দারুল উলূম করাচি। তারা মিনাকে মক্কার সঙ্গেই গণ্য করেন। অপরদিকে দারুল উলূম দেওবন্দ এবং বিন্নৌরি টাউন। তারা মিনাকে ভিন্ন গণ্য করেন। 
আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, এটি সম্পূর্ণ দীনি বিষয়। লড়াই-ঝগড়ার কোনো অবকাশ নেই। সবাই নিজেদের কাফেলার আমীরের সিদ্ধান্ত মেনে চলবে। তারপরও যদি কেউ নিজের আস্থাভাজন আলেমের ফতওয়ার ওপরই আমল করতে চায় সে আমীরের অনুমতি নিয়ে ভিন্নভাবে আমল করুক। কিন্তু অন্যদের সাথে বিবাদে লিপ্ত হবে কেন?’
আরাফায় যোহর-আসর
দ্বিতীয় যে মাসআলা নিয়ে আরাফাহর মাঠে তাবুতে তাবুতে বিতর্ক হয় তা হলো, আরাফাহর মাঠে কেউ যদি তাবুতে একা অথবা নিজেরা জামাত করে নামায পড়ে তাহলে তারা কি যোহর-আসর একসাথে পড়বে নাকি যোহরকে যোহরের ওয়াক্তে এবং আসরকে আসরের ওয়াক্তে পড়বে? এ বিষয়ে প্রথম কথা হচ্ছে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম হজ্জাতুল বিদার সময় আরাফায় যোহর-আসর একসঙ্গে (আসরকে এগিয়ে) পড়েছেন। এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। আর মুযদালিফায় মাগরিব-এশা একসাথে (মাগরিবকে এশার সময় পিছিয়ে) পড়েছেন। অবশ্য মুযদালিফার নামায নিয়ে কোনো মতবিরোধ নেই। ওখানে একা, নিজেদের জামাতে কিংবা ইমামুল হজের পেছনে পড়লেও মাগরিব-এশা একসঙ্গে পড়বে। 
কথা হলো, আরাফায় যোহর-আসর একসাথে পড়ার বিষয়টিও কি মুযদালিফার মতো স্বতঃসিদ্ধ? মতবিরোধহীন? এর উত্তর হচ্ছে, স্বয়ং খায়রুল কুরুনের মধ্যেও (সাহাবী-তাবেয়ীগণের যুগেও) এ বিষয়ে ইখতিলাফ পাওয়া যায়। কেউ তাবুতে (ইমামুল হজের পেছনে নয়) পড়লেও একসঙ্গে পড়েছেন। কেউ তাবুতে পড়লে ভিন্নভাবে পড়েছেন। ইমাম আবু হানীফা রহ. হাদীস ও আসার থেকে যা বুঝেছেন এবং উম্মাহর সামনে পেশ করেছেন তা হলোÑ আরাফায় ইমামুল হজের পেছনে পড়লে যোহর-আসর একসঙ্গে পড়বে আর নিজেরা ভিন্নভাবে পড়লে যোহরের সময় যোহর এবং আসরের সময় আসর পড়বে। এ হচ্ছে মাসআলা। ইমাম আবু হানীফা রহ. তাঁর দাদা উস্তাদ ইবরাহীম নাখয়ী রহ.-এর মতামত বর্ণনা করেছেনÑ
‘যখন তুমি আরাফার দিন তোমার তাবুতে নামায পড়বে তখন যোহর-আসর উভয়টা তার সময় অনুযায়ী পড়বে।’Ñ(কিতাবুল আসার : ৩৪৪, ১/৩৬৫, দারুস সালাম মিশর; ইলাউস সুনান ৭/৩০৭৩)
এক্ষেত্রে জুমহুরের মতামত হলো, কেউ একা একা নামায পড়লেও যোহর-আসর একসাথে পড়বে। তাঁদের দলীল হলো, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাযি. আরাফায় ইমামের পেছনে নামায পড়তে না পেরে তাঁর ঘরে যোহর-আসর একসাথে পড়েছেন।Ñ(সহীহ বুখারী, কিতাবুল হজ : ৮৯)

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন