বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সবার জন্য সমান অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে স্বাধীনতার পরপরই এক সুদূরপ্রসারী অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন বলে দেশের বেশ ক’জন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তারা বলেন, জাতির পিতার নেতৃত্বে নতুন সরকার যুদ্ধ নিপীড়িত মানুষ বিশেষ করে পল্লীর দরিদ্র জনগোষ্ঠী যাতে প্রয়োজনীয় সহায়তার মাধ্যমে নতুন করে জীবন শুরু করতে পারে সে জন্য ত্রাণ ও পুনর্বাসনকে অগ্রাধিকার দিয়ে আর্থিক নীতি প্রণয়ন করে। দেশের প্রথম বাজেটে কৃষি, শিক্ষা ও সমাজকল্যাণের পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধা এবং নারী, শিশু ও যুদ্ধে সর্বস্বান্তদের জন্য গৃহনির্মাণে অগ্রাধিকার দেয়া হয়। বঙ্গবন্ধুর বিশেষ উদ্যোগে এই বাজেটের আলোকে দারিদ্র্য বিমোচন এবং শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য ও বাসস্থান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ৪ হাজার ৪৫৫ কোটি টাকায় দেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়।
এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধু সব সময় গরিবের পক্ষে কাজ করেছেন। এমনকি ছোটবেলাতেই তিনি তার পিতার ক্ষেতের ফসলের অংশ গরিবদের মধ্যে বিতরণ করতেন।
ড. আতিউর বলেন, আমরা তার জীবন পর্যালোচনা করলে দেখতে পাব যে, তিনি পাকিস্তান সরকারের বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম এবং শোষণ ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে রাজনীতিতে যোগ দেন। শোষকদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে তিনি বহুবার হাসিমুখে কারাগারে গিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ১৯৭০ সালের নির্বাচনের আগে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন যে, কৃষকদের ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা দিতে হবে না এবং কেউই ১শ’ বিঘার ওপর জমি রাখতে পারবে না। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধু অর্থনৈতিক সমতা প্রতিষ্ঠায় ব্যাংক ও শিল্প কারখানা জাতীয়করণ এবং প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু চাকরির সুযোগ সৃষ্টি ও আয় বৈষম্য কমিয়ে আনতে কৃষি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং কুটির শিল্পের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। সেই সঙ্গে দেশব্যাপী যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নেও পদক্ষেপ নেন।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের আরেক সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, পাকিস্তান সরকারের পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে সব ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাÐ থেকে বিচ্ছিন্ন করার নীতি ও তৎপরতার প্রেক্ষাপটে ৬ দফা আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল অর্থনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। সে সময় জাতীয় বাজেটে পূর্ব পাকিস্তানের উন্নয়নে কোনো প্রণোদনা ছিল না। অথচ পূর্ব পাকিস্তানের পাট ছিল পাকিস্তানের রফতানি আয়ের প্রধান উৎস।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার পূরণে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র তৈরিতে অনেক উদ্যোগ নিয়েছেন। ড. সালেহ উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ এখন বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ নীতি ও দক্ষ নেতৃত্বে দারিদ্র্য বিমোচন ও খাদ্য নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন খাতে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে। বস্তুত বাংলাদেশ আজ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন