বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

উপকূলবাসীর মনে নেই ঈদ আমেজ

মো. মাসুদ রানা, খুলনা থেকে | প্রকাশের সময় : ১১ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০১ এএম

সময় বদলেছে। বদলেছে প্রকৃতি, পরিবেশ ও আবহাওয়া। বদলেছে মানুষের মন, মনন, চিন্তা, চেতনা, আদর্শ ও বিশ্বাসও। তেমনিভাবে বদলেছে জীবনের গতি প্রকৃতি। শুধু বদলাই নাই উপকূলবাসীর ভাগ্য। ভাঙা-গড়ার মধ্য দিয়ে এবং প্রকৃতির সাথে নিরন্তর যুদ্ধ করে বিধ্বস্ত জীবনে ঘুরে দাড়ানো চেষ্টা ব্যর্থ চেষ্টা অব্যাহত। এ উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জীবনে ঈদ কিবং ঈদের মতো কোন আনন্দ বার্তা হাসি ফুটাতে পারেনি।
বৃহত্তর খুলনা অঞ্চলের মানুষের জীবন অত্যন্ত শঙ্কা, আতঙ্ক ও বেদনার। ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষের জীবনে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ঈদের আমেজ নেই।
ঈদ মানেই আনন্দ, ঈদ মানেই খুশি, ঈদ মানে উৎসব। বছর ঘুরে আবার মুসলমানদের ঘরে ঘরে কড়া নাড়ছে ঈদুল আজহা। এই ঈদের দিনের আনন্দ থেকে কেউ বঞ্চিত হয় না, বা হতে চায় না। মা-বাবা, স্ত্রী-পুত্র পরিজনসহ আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয় মানুষ। ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়া স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু ঠিক তার উল্টোটা হয় উপকূলীয়বাসী বা সুন্দরবন সংলগ্ন অঞ্চলের বাসিন্দাদের।
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস কিংবা জলদস্যু সবকিছুই মোকাবিলা করে থাকতে হয় সুন্দরবন সংলগ্ন অঞ্চলের বাসিন্দাদের। আর জীবিকার জন্য জীবন বাজি রেখে প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধকরে অথৈ সাগরে যেতে হয় মাছ শিকারে। ভাগ্য ভালো হলে ভালোভালো মাছ নিয়ে ঘরে ফেরা সম্ভব হয়, আর না হলে ঝড় বা দস্যুর কবলে পড়ে হতে হয় নিখোঁজ বা মৃত। এতো প্রতিকূলতা সত্তে¡ও বাপ-দাদার মাছ শিকার পেশা ছাড়তে পারেন না এখানকার মানুষ। দিনরাত হাড়ভাঙা শ্রম দিয়ে যে মাছ ধরেন তা দিয়ে কোনো মতে চলে তাদের সংসার।
পবিত্র ঈদুল আজহা দুয়ারে কড়া নাড়ছে। সাতক্ষীরা আর খুলনার অংশ বিশেষে ভিটে বাড়ি হারা মানুষের দুর্দিন যেন আর শেষ হচ্ছে না। ঈদ তাদের কাছে কোন আনন্দের বার্তা বয়ে আনবে না। তাদের বক্তব্য আমাদের আবার ঈদ কিসের!
দাকোপের এলাকার জসিমের ছেলে জিহাদ বলে, ‘অনেকের ঘরে রুটি-মাংস, কিন্তু আমাদের ঘরে চুলো জ্বলে না। হয়তো ঈদের দিনেও না খেয়ে কাটাতে হবে। আমাদের ঈদ নেই, প্রতিটি দিনই সমান’।
জসিমের প্রতিবেশি সালমা আক্তার বলেন, ‘দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে জসিমের অভাবের সংসার। নিজস্ব জমি নেই, অন্যের জমিতে আশ্রিত তারা। জাল বেয়ে যা পান, তা দিয়ে কোনোমতে খাবারের ব্যবস্থা হয়। কখনো আবার একবেলা জোটে তো দু’বেলা না খেয়ে থাকতে হয়। খাবারই জোটে না, সেখানে তাদের কোরবানি কিসের?’
সুন্দরবন সংলগ্ন দাকোপে এলাকার জেলে মো. শাহিন মিয়া বলেন, মোরা শূন্য ভাগি, তাই শূন্যের কাতারেই রয়ে গেলাম। মাছ ধরতে না পারা এবং হাতে জমা টাকাও না থাকায় এবার ঈদ আনন্দও শূন্য হয়ে যাবে।
কয়রার বাসিন্দা আমেনা বেগম বলেন, ঈদ দিয়া কি হরমু। সংসার চলায় দায়...। মোর স্বামীর আয় নাই, টাহাও নাই। এবার ঈদের জামা-কাপুড় কিনতে পারমুনা।
প্রতি বছর দুর্যোগ আর অতি বর্ষণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার কারণে সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার লক্ষাধিক মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবুও সরকার নানাভাবে সাহায্য করছে গৃহহারা এই মানুষদের। এর সাথে রয়েছে বিভিন্ন এনজিও, সামাজিক প্রতিষ্ঠান, বিত্তবান ও দানশীল মানুষেরা।
হয়তো ‘রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’ গানটি এবার তাদের হৃদয়ের দরজায় তেমনভাবে কড়া নাড়তে না পারলেও প্রত্যেকেই তাদের সীমিত সাধ্য নিয়ে ঈদ পালনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়েছে। বাঁধভাঙা প্লাবিত ও আইলা ক্ষতিগ্রস্ত অনেক স্থানে এখনও চারদিকে শুধু পানি আর পানি। বেঁচে থাকাই এখন তাদের প্রানান্ত চেষ্টা।
প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে দিনের এক একটি সময় অতিবাহিত হচ্ছে তাদের। ছেলে মেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে খোলা আকাশের নিচে বৃষ্টিতে ভিজে রোদ্দুরে পুড়ে জীবন যাপন করছে হতভাগ্য মানুষগুলো। আগে এই মানুষগুলোই সাচ্ছন্দে রোজা পালন ও ঈদের খুশি ভাগাভাগি করে একাকার হয়েছে। সময়ের ব্যবধানে একসময়ের গৃহস্থ এখন পথের ভিখারী। অবর্ননীয় কষ্টে আছে তারা।
সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের অভাবের সংসারে প্রতিদিনের খাবার যোগাতেই দায়... ঈদের আনন্দ নিয়ে তাদের ভাবার বা আনন্দ ভাগাভাগি করতে স্বাদ থাকলেও সাধ্য নেই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন