হাকালুকির অপরূপ সৌন্দর্য স্থানীয়, দেশ ও বিদেশীদের মন কাড়ে। সেই সৌন্দর্য্যের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে নতুন সংযোজন ‘পালের মোড়া ব্রীজ’। স্থানীয়দের কাছে সেলফি ব্রীজ হিসেবে পরিচিত। ঈদের ছুটিতে ঘুরে আসতে পারেন মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার হাকালুকি তীরবর্তী পালের মোড়া ব্রীজ এলাকা।
স্থানীয় উদ্দ্যোমি কিছু ছাত্র-যুবক মিলে সাদামাটা এ ব্রীজসহ সড়কের আশপাশের এলাকাকে আধুনিকায়ন করার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও প্রিন্ট মিডিয়ার বদৌলতে প্রকাশ পায়। ফলে প্রতিদিনই পালের মোড়ায় ছুটে আসছেন ভ্রমণ পিপাসুরা।
সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার কাদিপুরের শেষাংশ ও ভুকশিমইলের অগ্রভাগে কুলাউড়া-ভুকশিমইল-বরমচাল সড়কের ওপর পালেরমোড়া সেতুর অবস্থান। রেল, সড়ক ও নৌ সবক্ষেত্রে রয়েছে ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা। কিন্তু অনেক সম্ভাবনার কুলাউড়া উপজেলায় পর্যটকের আগমন ছিল নামমাত্র। তবে গত কয়েক বছর যাবত পাল্টে যাচ্ছে কুলাউড়ার দৃশ্যপট। এরকম প্রকৃতিসৃষ্ট নয়নাভিরাম দৃশ্যের সব রকম উপমা নিয়েই কুলাউড়া। তাই পর্যটকদের নতুন আকর্ষণ কুলাউড়ার ‘পালেরমোড়া’। চারপাশে হাওরের অথৈ পানি। পানির ওপর ছলাৎ ছলাৎ ঢেউ। সেই পানির বুক চিড়ে বেড়িয়ে এসেছে কুলাউড়া-ভুকশিমইল-বরমচাল আঞ্চলিক সড়ক। তার ওপর দাঁড়িয়ে সুদৃশ্য পাকা সেতু। লাল-সাদা রঙে আঁকা সেতুটি দূর থেকে দেখলে মনে হয় বিশালাকারের একটি সামুদ্রিক জাহাজ। সেতুর একটু আগে রয়েছে নৌকাঘাট।
অথৈ পানিরাশি ভেদ করে হরদম সেখানে যাতায়াত করছে ছোট-বড় সাইজের নৌকা। কেউ মাছ ধরার কাজে, কেউবা যাতায়াতের স্বার্থে নৌকাগুলো ব্যবহার করছেন। আবার হাওরের বুক চিড়ে বের হওয়া সড়কে চলছে শত শত ছোট-বড় গাড়ির বহর।
চলতি বর্ষায় ভুকশিমইলে যাওয়ার সময় চোখে পড়বে এমন সব নয়নাভিরাম দৃশ্য। কুলাউড়া-ভুকশিমইল-বরমচাল সড়ক সংস্কার ও বিভিন্ন কালভার্টে রঙ দেয়ার জায়গাটি আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। তাই পালেরমোড়া এখন একটি দর্শনীয় স্থান।
কুলাউড়া শহর থেকে ৮ কিলোমিটার পশ্চিম-উত্তর দিকে অবস্থিত পালেরমোড়া সেতু।
পালেরমোড়া ঘাটে দাঁড়িয়ে উত্তর, পূর্ব বা দক্ষিণের যে কোন দিকে তাকালেই চোখে পড়বে সমুদ্রাকৃতির বিশাল হাওর হাকালুকির মনোরম দৃশ্য। দূরে ঘন-কালো মেঘের মতো দাঁড়িয়ে থাকা গ্রামগুলোকে মনে হবে একেকটা দ্বীপ। আর এর মধ্য দিয়ে ধারনা পাওয়া যাবে বর্ষায় প্রকৃতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মানুষের বেঁচে থাকার নিরন্তর সংগ্রাম সম্পর্কেও। লিলুয়া বাতাসের দিকে একটু কান পাতলে ছলাৎ ছলাৎ ঢেউয়ের শব্দও শোনা যাবে হামেশাই। পাকা ঘাটের দু’পাশে দাঁড়ালে স্বচ্ছ পানিতে ভিজে যাবে দুই পা। মন-প্রাণ তখন নেচে উঠবে অপার আনন্দে। মন চাইলে পালেরমোড়া থেকে ভাড়ায় চালিত নৌকা নিয়ে হাওরের মাঝখানেও যাওয়া যায়। কুলহীন হাওরের মাঝখানে গেলে দেখা যায় জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য। ঢেউয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দুলতে থাকে মাঝিদের ছোট ছোট নৌকা।
হাকালুকি পাড় ঘেঁষা পালেরমোড়া এলাকার আশপাশে বানের পানি আসায় পরিবেশটা আরও বেশি শান্ত ও মনোরম হয়ে উঠেছে। এছাড়াও স্থানীয়রা পালেরমোড়া কালভার্টের আশপাশে রঙতুলি, ফুলের গাছ রোপণ, আগত পর্যটকদের বসার জন্য বেঞ্চ তৈরি করাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন