ধর্মীয় ভাব গাম্ভীর্য পরিবেশ ও আনন্দ উৎসবের মধ্যদিয়ে রাজশাহী অঞ্চলে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত হয়েছে। সকালে খানিকটা উষ্ণ আবহাওয়ার মধ্যদিয়ে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। নামাজ শেষে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য সাধ আর সাধ্যের সমন্বয় ঘটিয়ে কোরবানী করা শুরু হয়। যা চলে ঈদের পরদিন পর্যন্ত। দুপুরে হঠাৎ করে বৃষ্টি শুরু হয়। কোরবানীর পশুর কাটাকুটিতে কিছুটা ছন্দপতন ঘটালেও গরম আবহাওয়াকে খানিকটা নরম করেছে। আর ধুয়ে মুছে নিয়ে গেছে রক্ত আর বর্জ্য। শুরু হয়েছে রোদ্রবৃষ্টির খেলা। এই রোদ্র তো এই বৃষ্টি ঝরছে।
স্বস্তি নিয়ে মানুষ কোরবানীর মাংশ বিতরন করেছে আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে বাড়িতে। মিসকিনরা মহল্লায় মহল্লায় ঘুরে ঘুরে মাংশ সংগ্রহ করেছে। যথরীতি এবারো বসেছিল কোরবানীর মাংশের বাজার। আগে শুধু স্টেশন এলাকায় এ বাজার বসলেও এর বিস্তৃতি বেড়েছে। সাথে বেড়েছে দামও। বস্তীর মানুষ বাড়ি বাড়ি মাংশ সংগ্রহের পর নিজেদের প্রয়োজনে খানিকটা রেখে দিয়ে বাকীটা বিক্রি করে তেল মশল্লা চাল ডাল কেনে। ঈদ উৎসবে শামিল হয়। এসব মাংশের ক্রেতা নি¤œ মধ্যবিত্ত থেকে মধ্যবিত্তরা। অর্ধেক দামের কিছু বেশীতে এ মাংশ বিক্রি হয়। এ মাংশ দিয়ে ঈদের খুশী পরিবার পরিজনদের সাথে ভাগাভাগি। আবার অনেকে শখ করে এ মাংশ কেনে। তাদের শখের কারন হলো এতে বিভিন্ন ধরনের মাংশের সংমিশ্রন থাকে। খাসী ভেড়া ষাড় বকনা মোষ সব মাংশের মিশ্রনের কারনে নাকি এর স্বাদের ভিন্নতা থাকে। আবার মাঝারী থেকে ফুটপাতের হোটেল ব্যবসায়ীরা এ মাংশ কিনে জমা রাখে ব্যবসার জন্য। এখানে ভীড়ে গেছে মধ্যস্বত্ত ভোগীরা। মাংশ ওজন করে দেয়া কিংবা তারা নিজেরা কম দামে কিনে নিয়ে একটু বেশী দামে বেচে। মাপামাপির ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতে ওদের কাছে কিছু কমদামে তুলে দেয়।
খোঁজ নিয়ে জানাযায় একেকজন বাড়ি বাড়ি ঘুরে পাঁচ থেকে সাত আট কেজি মাংশ সংগ্রহ করে। এমন দুজনের সাথে আলাপকালে তারা জানান তাদের মাংশের সংগ্রহের পরিমান কমে যাচ্ছে। কারন সবাই ফ্রীজে জমা রাখছে। একজন সচেতন মানুষ ক্ষোভের সাথে বলেন এক গরুতো সাত ফ্রীজে জমা হচ্ছে। অর্থাৎ গরুর সাত ভাগ। আর ফ্রীজ কোম্পানীগুলো যেনো মেতে উঠেছে ফ্রিজ বিক্রি উৎসবে।
ঈদের পরের দিন বিভিন্ন বয়েসী মানুষ মেতে উঠেছে আনন্দ উৎসেব। আত্মীয় স্বজনদের বাড়ি যাওয়া দাওয়াত খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তোলা। আর বিনোদন স্পট গুলোয় ভীড় জমানো। মরা পদ্মায় খানিকটা পানি রয়েছে। আর এ পানিতে নৌকায় ভাসছে শত শত মানুষ। নদীর তীরে বসে ফুচকা চটপটি পেয়ারা মাখা খাওয়া চলছে।
শিক্ষা নগরী রাজশাহী রাস্তায় এখন বেশ ফাঁকা। এখানে পড়ালেখা করতে আসা লাখ দেড়েক শিক্ষার্থী ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ফিরে গেছে নিজ গ্রামে স্বজনদের কাছে। গ্রামীন জনপদেও ঈদ আনন্দের কমতি নেই। গাঁও গেরাম যেন জেগে উঠেছে। যদিও গ্রামে ফিরতে তাদের ভোগান্তি কম হয়নি। বিশেষ করে যারা রাজধানীসহ অনান্য এলাকা থেকে উত্তরাঞ্চলের শহর গ্রামে ফিরেছেন। রেলপথ সড়ক পথ কোনটিতে যাত্রা স্বস্তির ছিলনা। বরং অপেক্ষাকৃত স্বস্তির রেলযাত্রা সবচেয়ে বেশী ভোগান্তিতে ফেলেছে। সব ট্রেনের সিডিউল ছিল লন্ডভন্ড। আট দশ ঘন্টা করে বিলম্ব হয়েছে। কষ্টকরে টিকেট কাটার পর ঘন্টার পর ঘন্টা রেলস্টেশনে অপেক্ষা ছিল আরো বেশী যন্ত্রনাদায়ক। সড়ক পথে উত্তরাঞ্চলের প্রবেশ পথ টাঙ্গাইল থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর (যমুনা) উভয় দিকে ছিল ত্রিশ চল্লিশ কিলোমিটার যানজট। ছয় সাত ঘন্টার পথ পাড়ি দিতে সময় লেগেছে কখনো চব্বিশ ঘন্টার বেশী। এ সময় অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। যাদের নিজস্ব গাড়ি ছিল তারাও যানজটের বিড়ন্বনা থেকে রেহায় পাননি। সব মিলিয়ে এবারের ঈদ যাত্রাটা ছিল নিরানন্দের। তারপরও স্বজনদের কাছে পৌছতে পেরে পথের ক্লান্তি ভুলেছে। মেতেছ ঈদ আনন্দে। আবার ফেরার চিন্তাটা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। অনেকে চাকুরীর কারনে আগেভাগে চলে যাবেন। পরে আসবে পরিবারের অন্যরা। কারন ঘরে ফেরার মত পথের দূর্ভোগে যেন আর পড়তে না হয়। গ্রামের স্বজনরা বলছেন তোমরা আরো কটাদিন থেকে যাও। এখন ঢাকা আর শহর মানেতো ডেঙ্গু। গাঁও গেরামে ওসব ভদ্র প্রজাতির মশা নেই। ডেঙ্গু হবার ভয়ও নেই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন