শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধর্ম দর্শন

চাঁদের চেয়েও সুন্দর ছিলেন প্রিয় নবীজী (সা.)

মুফতি মাওলানা মুহাম্মাদ এহছানুল হক মুজাদ্দেদী | প্রকাশের সময় : ১৫ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০২ এএম

মুমিন হৃদয়ের একান্ত আশা, যদি সব কিছুর বিনিময়ে হলেও প্রিয়নবী (সা.)কে জীবনে একনজর দেখতে পেতাম! কারণ, নবিজী (সা.) নিজেই বলেছেন, ‘আমার যে উম্মত ঈমানের চোখে একবার আমাকে দেখবে তাকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না।’ (তিরমিাজ।) প্রিয় রাসুল (সা.) এর পবিত্র আকার-আকৃতি অনেক সাহাবি থেকে বর্ণিত হয়েছে। হজরত আলী (রা.) যখনই প্রিয় নবী (সা.)-এর দেহ মোবারকের বর্ণনা দিতেন, তখন বলতেন, নূর নবী (সা.) অত্যধিক লম্বাও ছিলেন না এবং একেবারে বেঁটেও ছিলেন না; বরং তিনি ছিলেন লোকদের মধ্যে মধ্যম আকৃতির। তাঁর মাথা মোবারকে চুল একেবারে কোঁকড়ানো ছিল না এবং সম্পূর্ণ সোজাও ছিল না; বরং মধ্যম ধরনের কোঁকড়ানো ছিল। তিনি অতি স্থূলদেহী ছিলেন না এবং তাঁর চেহারা মোবারক একেবারে গোল ছিল না; বরং লম্বাটে গোল ছিল। গায়ের রং ছিল লাল-সাদা সংমিশ্রিত। চোখ মোবারকের বর্ণ ছিল কালো এবং পলক ছিল লম্বা ও চিকন। হাড়ের জোড়াগুলো ছিল মোটা। পুরো দেহ মোবারক ছিল পশমহীন, অবশ্য পশমের চিকন একটি রেখা বুক মোবারক থেকে নাভি মোবারক পর্যন্ত লম্বা ছিল।

দুই হাত এবং দুই পা মোবারকের তালু ছিল গোস্তে পরিপূর্ণ। যখন তিনি হাঁটতেন তখন পা মোবারক পূর্ণভাবে উঠিয়ে মাটিতে রাখতেন, যেন তিনি কোনো উঁচু জায়গা থেকে নিচের দিকে নামছেন। যখন তিনি কোনোদিকে তাকাতেন তখন ঘাড় মোবারক পুরোপুরি ঘুরিয়ে তাকাতেন। তাঁর উভয় কাঁধ মোবারকের মাঝখানে ছিল মোহরে নবুওয়াত বা নবী হওয়ার অলৌকিক নিদর্শন। তিনি হলেন সর্বশেষ নবী। তিনি ছিলেন মানুষের মধ্যে অধিক দানশীল, সবচেয়ে বেশি সত্যভাষী।

তিনি ছিলেন সবচেয়ে কোমল স্বভাবের এবং বংশের দিক থেকে সম্ভ্রান্ত এবং মর্যাদার অধিকারী। যে ব্যক্তি তাঁকে হঠাৎ দেখত, সে ভয় পেত গুরুগম্ভীর্যের কারণে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি পরিচিত হয়ে তাঁর সঙ্গে মিশত, সে তাঁকে অনেক ভালোবেসে ফেলত । নবী (সা.)-এর গুণাবলী বর্ণনাকারীরা এ কথা বলতে বাধ্য হন যে, আমি তাঁর আগে ও পরে তাঁর মতো কাউকে কখনো দেখতে পাইনি। (শামায়েলে তিরমিজি।) হজরত হাসান বিন আলী বলেন, আমার মামা হিন্দ বিন আবু হালা (রা.)কে রাসুল (সা.) এর অবয়ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করি। তিনি নূর নবীর পুরো দেহ মোবারকের বর্ণনা দেন। একপর্যায়ে তিনি বলেন, হুজুর (সা.) এর কপাল মোবারক ছিল বেশ উন্নত। ভ্রু ছিলো সরু ও ঘন পাপড়ি বিশিষ্ট। দুই ভ্রু মোবারক আলাদা ছিল। মাঝখানে একটি রগ ছিলো। হজুর (সা.) যখন রাগ হতেন, তখন তা ভেসে ওঠত। নাক মোবারক খাড়া ছিলো। ভালোভাবে না দেখলে মনে হত তিনি প্রকান্ড নাক বিশিষ্ট। নাক থেকে এক ধরণের নূর চমকাতো। (শামায়েলে তিরমিজি।)

রাসুল (সা.) এর পেট মোবারক সম্পর্কে হিন্দ বিন আবু হালা বলেন, ‘আল বাতনে ওয়াসসাদরি আরিদুন অর্থ পেট ও বুক সমান ছিলো।’ (শামায়েলে তিরমিজি।) সাম্প্রতীক সময়ে কেউ কেউ বলছেন, নবিজীর দেহ মোবারক সিক্সপ্যাক অর্থাৎ হুজুরের পেট মোবারকে ছয়টি ভাঁজ ছিলো। এ বর্ণনা থেকে স্পষ্ট জানা যায়, রাসুল (সা.) এর বুক বা পেটের কোনো অংশ সিক্সপ্যাক ছিলো না। একথা তো সাবাই জানে, সিক্সপ্যাক দেহধারীরর বুক এবং পেট কখনো সমান হয় না।

রাসুলে করিম (সা.)-এর আকৃতি সম্পর্কে হজরত জাবের ইবনে সামুরা (রা.) বলেন, একবার আমি চাঁদনি রাতে নবী (সা.)কে দেখলাম। অতঃপর একবার রসুলুল্লাহ (সা.)-এর দিকে তাকালাম আর একবার চাঁদের দিকে তাকালাম। তখন তিনি লাল বর্ণের পোশাক পরিহিত অবস্থায় ছিলেন। তাঁকে আমার কাছে চাঁদের চেয়ে অনেক বেশি সুন্দর-উজ¦ল মনে হলো। (তিরমিজি ও সুনানে দারেমি।)

হজরত কাব ইবনে মালেক (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) যখন কোনো ব্যাপারে আনন্দিত হতেন তখন তাঁর চেহারা মোবারক উজ্জ্বল হয়ে উঠত। মনে হতো যেন তাঁর মুখমন্ডল চাঁদের টুকরো। (বুখারি ও মুসলিম।) হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুল (সা.)-এর সামনের দাঁত দুটির মাঝে কিছুটা ফাঁক ছিল। যখন তিনি কথা বলতেন, তখন মনে হতো ওই দাঁত দুটির মধ্য দিয়ে যেন নূর বিচ্ছুরিত হচ্ছে। (সুনানে দারেমি।) হজরত আবু হোরায়রা (রা.) বলেন, রসুল (সা.) এর চেয়ে বেশি সুন্দর কাউকে আমি কখনো দেখিনি। মনে হতো যেন সূর্য তাঁর মুখমন্ডলে ভাসছে। আর রাসুল (সা.) অপেক্ষা চলার মধ্যে দ্রæতগতিসম্পন্ন কাউকে দেখিনি। তাঁর হাঁটার সময় মনে হতো মাটি যেন তাঁর জন্য সংকুচিত হয়ে এসেছে। আমরা তাঁর সঙ্গে সঙ্গে চলার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে হাঁটতাম। অথচ তিনি স্বাভাবিক নিয়মেই হাঁটতেন। (তিরমিজি।) মহান আল্লাহ তায়ালা যেন আমাদের সবাইকে দিদারে রাসুলুল্লাহ (সা.) এবং জিয়ারাতে বাইতুল্লাহ নসিব করেন। আমিন।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
md abdul kadir ৩১ আগস্ট, ২০১৯, ২:০৯ এএম says : 0
সুবাহান আল্লাহ।
Total Reply(0)
md abdul kadir ৩১ আগস্ট, ২০১৯, ২:০৯ এএম says : 0
সুবাহান আল্লাহ।
Total Reply(1)
md fulbabu ২৭ অক্টোবর, ২০২২, ১২:৫৮ এএম says : 0
সুবাহান আল্লাহ।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন