সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, চামড়ার দাম নিয়ে সিন্ডিকেটের কারসাজি রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে যার বিরুদ্ধে যতটুকু অপরাধের প্রমাণ পাওয়া যাবে তার বিরুদ্ধে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। কেউ রেহাই পাবে না।
গতকাল সচিবালয়ে তাৎক্ষণিক এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, এ বিষয়টি (চামড়ার দাম কম) আমরা গণমাধ্যমের মাধ্যমে জেনেছি। তবে বাস্তবে চিত্রটা কী সেটা আমার সম্পূর্ণ জানা নেই। এ বিষয়ে যারা অভিজ্ঞ তাদের কাছ থেকে এটা সম্পর্কে জানা দরকার। তিনি বলেন, চামড়ার দামের বিষয়ে সিন্ডিকেটের কারসাজি শুনেছি। সিন্ডিকেটদের একটা চক্র আমাদের দেশে রয়েছে। আসলে এ ক্ষেত্রে সিন্ডিকেটের কারসাজি হয়েছে কি না সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তে যদি ধরা পড়ে যে, চামড়ার দাম কমে যাওয়ার পেছনে সিন্ডিকেট কাজ করেছে তাহলে যে ব্যক্তি যে মাত্রায় এ শিল্পের ক্ষতি করেছে তার বিরুদ্ধে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
‘আওয়ামী লীগের এক ব্যক্তি এ সিন্ডিকেট পরিচালনা করেছেন’ বলে বিএনপি নেতা রিজভীর অভিযোগ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ঈদের পর মাত্র একদিন সময় গেল। এত অল্প সময়ে এটা নির্ণয় করা সম্ভব নয়।
রিজভীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, কার কারসাজির জন্য চামড়ার সমস্যা হয়েছে এর তথ্যপ্রমাণ থাকলে দেন। বিরোধী দলের তো পুরনো অভ্যাসই হচ্ছে ঢালাওভাবে অভিযোগ করা। বাস্তবে তাদের কোনো ইতিবাচক কাজ নেই, সব সময় নেতিবাচক বিষয়টাকে আঁকড়ে ধরে। সরকারের সামান্য কিছু পেলেই সেটাকে নিয়ে তারা বিষোদগার করতে থাকে।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, এবার সড়কপথে ঈদযাত্রা মোটামুটি স্বস্তিদায়ক ছিল। একটি রুটে (টাঙ্গাইল থেকে সিরাজগঞ্জ) দুর্ভোগ ছিল অসহনীয়। এলেঙ্গা থেকে রংপুর চার লেন না হওয়া পর্যন্ত এ দুর্ভোগ থাকবে। তিনি বলেন, একটা রুটে দুদিন খুবই দুর্ভোগের কারণ হয়েছিল। সড়কেও হয়েছিল এবং টার্মিনালেও অপেক্ষমাণ যাত্রীরা দুর্ভোগের শিকার হয়েছিলেন। এটা টাঙ্গাইল রুটে।
রুটটি প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, সমস্যাটি আগে ঢাকা-চট্টগ্রামে ছিল। এদিক থেকে এইট লেনে গিয়ে টু লেন ব্রিজে চলাচল, ওদিক থেকে ফোর লেনে এসে টু লেন ব্রিজে লম্বা যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এখানেও সমস্যাটাও ঠিক তাই। এখানে চার লেনে যাত্রাটা যেখানে শেষ হয়, টু লেন শুরু হয় সেখানে।
টাঙ্গাইল রুটে ভোগান্তির কারণ প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, উত্তরবঙ্গে এমনিতেই গার্মেন্ট কর্মীরাসহ শেষ দিকে চাপটা এমন যে, তখন প্রেসার মোকাবিলা করা খুব কঠিন। চার লেন থেকে যখন দুই লেনে যায় প্রেসারটা তখন লম্বা যানজট সৃষ্টি হয় এবং যানজট আরও লম্বা হয় যখন ধৈর্যহারা হয়ে চালকরা গাড়ি উল্টো পথে নিয়ে যায়। এ কারণটাই ছিল। যে কারণে দুদিন যাত্রাটা স্বস্তিদায়ক ছিল না, ভোগান্তি হয়েছে। অনেক মানুষ কষ্ট করেছে। গাড়ি দেরিতে আসার কারণে টার্মিনালেও বহু মানুষের কষ্টের সীমা ছিল না। এজন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছি।
তিনি বলেন, শুধু টাঙ্গাইল থেকে সিরাজগঞ্জ- এখানে যে সমস্যাটা, এ সংকট অনেক চেষ্টা করেও এড়াতে পারিনি। এখন এলেঙ্গা থেকে রংপুর চার লেনের কাজ শুরু হবে। এলেঙ্গা থেকে রংপুর পর্যন্ত চার লেন না হওয়া পর্যন্ত দুর্ভোগ থাকবে। আমি আশা করি, আমাদের ওদিকে আরেকটু অপেক্ষা করতে হবে। তবে আপাতত চার লেন হওয়ার আগ পর্যন্ত আরও ঈদ আছে, আরও প্রেসার আছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আপাতত কিছু ব্যবস্থা করার চিন্তা-ভাবনা আমরা করছি।
সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় নলকা ব্রিজে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, এখানে বেশি যানজটের সৃষ্টি হয়। এখানে যত দ্রুত সম্ভব সমাধান করার চিন্তা-ভাবনা করছি। ব্রিজটি যেহেতু অপ্রশস্ত তাই সেটাকে প্রশস্ত করতে হবে। আরও একটা ব্রিজ আছে যেটাকে বেইলি ব্রিজ করে আপাতত সমাধান খুঁজতে হবে। দীর্ঘস্থায়ী সমাধান চার লেনের মধ্যে আছে। আপাতত যে সময়টা সমস্যার কারণ হবে সে সময়টা অতিক্রম করার জন্য আমাদের একটা পথ বের করতে হবে। এ ছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রামে নিয়মিত নির্ধারিত সময়েই গাড়ি পৌঁছেছে এবং সাড়ে তিন-চার ঘণ্টায় চট্টগ্রাম যাত্রা- এটা ইতিহাসে প্রথম ছিল। ঢাকা-সিলেটও ভালো ছিল। ভুলতা ফ্লাইওভার খুলে দেয়া হয়েছে। ঢাকা-ময়মনসিংহেও আমরা যতটা খারাপ হবে ভেবেছিলাম সেটা হয়নি। ঢাকা-ময়মনসিংহে স্বস্তিদায়ক ছিল।
উত্তরের মানুষ এ সুবিধাটা কবে পাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পর্যায়ক্রমে পাবে। এখন ঢাকা-এলেঙ্গা চার লেন হলো। যখন এলেঙ্গা-রংপুর চার লেন কাজটা শেষ হবে তখন উত্তরবঙ্গের মানুষ আরও স্বস্তি পাবে এবং ঢাকা-চট্টগ্রামের মতো স্বস্তিদায়ক হবে। কাজেই যত দিন না চারর লেনের কাজটা শেষ হচ্ছে এলেঙ্গা থেকে রংপুর, ততদিন পর্যন্ত এ দুর্ভোগ পোহাতে হবে এবং ভোগান্তির অবসান হবে না- এটাই স্বাভাবিক।
মন্ত্রী বলেন, আমরা কি ঢাকা-চট্টগ্রামে অপেক্ষা করিনি? এখন ঢাকা-চট্টগ্রাম আর কখনও দুর্ভোগ হবে- এটা চিন্তাও করছি না। আপাতত সহনীয় করে রাখার জন্য নলকাসহ দুটি ব্রিজের সংস্কারের ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করছি। তাতে বোধহয় কিছু ফল পাব, পেতে শুরু করব।
এবার ঈদে দক্ষিণাঞ্চলে ফেরি সংকট ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, পদ্মা, যমুনার তীব্র স্রোতের কারণে ফেরি চলাচল বিঘিœত হয়েছে। যে কারণে উভয় পাড়ে লম্বা যানজটের সৃষ্টি হয়েছে এবং অনেক মানুষের কষ্ট হয়েছে।
৬-১৩ আগস্ট পর্যন্ত সড়কপথে দুর্ঘটনায় ৪৩টি দুর্ঘটনায় ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানান সড়ক পরিবহনমন্ত্রী। বলেন, এবার দুর্ঘটনা গতবারের থেকে কম এবং প্রাণহানিও কম হয়েছে। এবারের ঈদযাত্রা মোটামুটি স্বস্তিদায়ক হয়েছে; তবে একটা জায়গায় হ্যাসেল বেশি হয়েছে যেটা আমরা এক্সপেক্ট করিনি। তার চেয়ে বেশি হয়েছে। আমরা এবারের ভুল থেকে ভবিষ্যতে শিক্ষা নেব। এ ভুলের পুনরাবৃত্তি রোধে চারর লেন হওয়ার আগে সেটা করব। এ ব্যাপারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে এবং আমরা সিরিয়াসলি বিষয়টা দেখছি।
সেতুমন্ত্রী আরও বলেন, এবার ঈদযাত্রায় প্রতিদিন ৩৬ হাজার ২০২টি গাড়ি প্রতিদিন চলাচল করেছে। অতিরিক্ত ভাড়ার বিষয়ে মনিটরিং অত্যন্ত কড়া ছিল এবং ভিজিল্যান্স টিমও তৎপর ছিল। পুলিশ এবং হাইওয়ে পুলিশ, বিআরটিএ সবাই মিলে তৎপরতায় ৬৯টি মামলায় ২ লাখ ১৮ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সর্বমোট ৩৮১টি মামলায় ৭ লাখ ৬৭ হাজার ১০০টাকা জরিমানা করেছি। এ ছাড়া অতিরিক্ত ভাড়া ফেরত দেয়া হয়েছে।#
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন