শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ঈদে মেহেদি দিতে গিয়ে গণধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রী

অভিযুক্ত দুই আসামি বন্দুকযুদ্ধে নিহত : স্কুলছাত্রীসহ শিকার ৪ : আটক ৪

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৫ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০১ এএম

ভোলায় ঈদ করা হলো না ষষ্ঠ শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীর (১২)। চাঁদ রাতে মেহেদি দিয়ে হাত রাঙাতে গিয়ে গণধর্ষণের শিকার হয়ে রক্তে রঞ্জিত হলো তার শরীর। জীবন-মৃত্যুর মাঝে ছটফট করছে অসহায় ওই শিশু। এ ঘটনায় গত সোমবার ৩ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছে মেয়েটির বাবা। অভিযুক্ত দুই আসামি গত মঙ্গলবার রাতে পুলিশের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে। এছাড়া পটুয়াখালী বাউফলে স্কুলছাত্রী, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় হতদরিদ্র পরিবারের ৫ম শ্রেণির এক শিশু, ঝিনাইদহে এক কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এদিকে, দিনাজপুরের বিরামপুরে বিয়ের প্রলোভনে স্কুলছাত্রীকে দিনের পর দিন ধর্ষণ ধর্ষণের অভিযোগে একজনসহ বিভিন্ন স্থানে ৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ।

ভোলা : ভোলায় ঈদের আগে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া স্কুলছাত্রীকে হাত, পা ও মুখ বেঁধে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয়রা শিশুটিকে প্রথমে ভোলা সদর হাসপাতাল ও পরে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ায় তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ ঘটনায় গত সোমবার সকালে ভোলা মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এদিকে, ভোলা সদর উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে ‘গোলাগুলিতে’ দুই যুবক নিহত হয়েছেন। পুলিশ বলছে, নিহত দুই যুবক স্কুলছাত্রী ধর্ষণ মামলার আসামি। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে উপজেলার রাজাপুর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। দুই ধর্ষকের লাশ দেখে খুশিতে কেঁদে ফেললেন স্কুলছাত্রীর বাবা।
নিহতরা হলেন- সদর উপজেলার চরসামাইয়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের সৈয়দ আহম্মেদের ছেলে আল আমিন (২৫) ও কামাল মিস্ত্রির ছেলে মঞ্জুর আলম (৩০)। স্কুলছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনার দুইদিন পর ভোলা সদর উপজেলায় মঙ্গলবার রাত আড়াইটার দিকে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হলেন তারা।

খবর পেয়ে গতকাল বুধবার সকালে ভোলা সদর হাসপাতালে ছুটে যান সদর উপজেলার চরসামাইয়া ইউনিয়নের চরসিপলি গ্রামের বাসিন্দা গণধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রীর বাবা কৃষক মো. হানিফ। এসময় লাশ দেখে খুশিতে কেঁদে ফেলেন কৃষক হানিফ। মেয়েকে ধর্ষণকারী দুই ধর্ষকের লাশ নিজের চোখে দেখে কান্নাজড়িত কণ্ঠে হানিফ বলেন, মনে অনেক শান্তি পেলাম। পুলিশকে অনেক ধন্যবাদ।

ভোলা সদর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছগির মিয়া বলেন, মঙ্গলবার গভীর রাতে আমরা গোপনে সংবাদ পাই সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ রাজাপুর এলাকায় নদীর পাড়ে টাকা ভাগাভাগি নিয়ে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ চলছে দুই ডাকাত গ্রুপের। খবর পেয়ে সেখানে অভিযানে যাই আমরা। তখন আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে পুলিশের ওপর গুলি চালায় ডাকাতদের দুই গ্রুপ। এ সময় আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি ছোড়ে পুলিশ। ত্রিমুখী ‘বন্দুকযুদ্ধের’ একপর্যায়ে দুইজন নিহত হয়। তখন ট্রলার নিয়ে পালিয়ে যায় ডাকাতরা। পরে ঘটনাস্থল থেকে একটি বন্দুক, আট রাউন্ড গুলি ও দুটি রামদাসহ গুলিবিদ্ধ দুইজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। রাতেই তাদের লাশ মর্গে পাঠানো হয়।

এর আগে গত রোববার সদর উপজেলার উপজেলার চরসামাইয়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের চরসিফলি গ্রামের এক কৃষক ঈদ উপলক্ষে তার আদরের দুই মেয়ের জন্য বাজার থেকে মেহেদি কিনে আনেন। সন্ধ্যার দিকে তাদের বাবা গরু বিক্রি করার টাকা আনতে ভোলা শহরে যান। বাবা শহরে চলে যাওয়ার পর দুই বোন রাত ৮টার দিকে প্রতিবেশী দুঃসম্পর্কের আত্মীয় মাহফুজের স্ত্রীর কাছে হাতে মেহেদি দিয়ে সাজতে যায়। ওই সময় আগে থেকে অপেক্ষমাণ মাহফুজের ঘরের ভাড়াটিয়া আল আমিন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া স্কুলছাত্রীকে ডেকে তার ঘরে নিয়ে যায়। এ সময় আলমিনের স্ত্রী ঘরে ছিল না। এ সুযোগে ওই ছাত্রীকে আলামিন ও তার সহযোগী মঞ্জুর আলম হাত-পা ও মুখে কাপড় বেঁধে ধর্ষণ করে পালিয়ে যায়। পরে ছাত্রীর চিৎকারে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করে মুম‚র্ষু অবস্থায় ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গোপনাঙ্গে থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ায় পরে ওই ছাত্রীকে গত সোমবার ঈদের দিন বরিশালের শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় ( শেবাচিম) হাসপাতালে পাঠানো হয়।

ভোলা সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. মমিনুল ইসলাম জানান, ধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রীর বয়স কম হওয়ায় অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশালের শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

বিরামপুর (দিনাজপুর) : দিনাজপুরের বিরামপুরে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ৮ মাস ধরে নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া (১২) ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছে একই এলাকার মহন্ত হাসদা (২৩) নামের এক যুবক। এ ঘটনায় ওই যুবককে অভিযুক্ত করে মেয়েটির মা গত রোববার বিরামপুর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করলে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ওই যুবককে আটক করে গত সোমবার দিনাজপুর জেলহাজতে প্রেরণ করে।

মামলার বরাত দিয়ে বিরামপুর থানর পরিদর্শক (তদন্ত) সোহেল রানা জানান, দীর্ঘ ৮ মাস ধরে নবম শ্রেণি পড়ুয়া ওই স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ করেছে মহন্ত হাসদা (২৩) নামের একই এলকার এক যুবক। পরে মেয়েটি গত শনিবার বিয়ের দাবি নিয়ে ওই যুবকের বাসায় গেলে তার বাবা-মা মেয়েটিকে বাসা থেকে বের করে দেয়। এ ঘটনায় গত রোববার মেয়ের মা বাদী হয়ে ওই যুবককে অভিযুক্ত করে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করলে পুলিশ তাকে আটক করে জেলহাজতে প্রেরণ করে।

ধর্ষণের শিকার ওই স্কুলছাত্রীর মা জানান, বেশ কিছু দিন ধরে ওই যুবক তার মেয়েকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করে। গত কয়েক দিন ধরে মেয়েটির শারীরিক পরিবর্তন ঘটলে তখন সে বিষয়টি পরিবারের লোকদের কাছে খুলে বলে।

মঠবাড়িয়া (পিরোজপুর) : পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় হতদরিদ্র পরিবারের ৫ম শ্রেণীর এক শিশুছাত্রীকে (১১) ধর্ষণের ঘটনায় গত শনিবার রাতে ধর্ষক নুরুল ইসলামকে (৪৫) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধর্ষক নুরুল ইসলাম উপজেলার বাইশ কুড়াবাজারের মুদি ব্যাবসায়ী ও ভেচকী গ্রামের মৃত আব্দুল জব্বার খানের ছেলে। সে তিন সন্তানের জনক।

ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহে এক কিশোরীকে (১৪) ধর্ষণের অভিযোগে তিন যুবকের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে নির্যাতনের শিকার ওই কিশোরীর বাবা আজিজুর রহমান বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
নির্যাতনের শিকার কিশোরীর চাচা জানান, গত সোমবার সন্ধ্যায় মেয়েটি গ্রামের মাঠে গরু আনতে গেলে খাজুরা গ্রামের মুন্তাজ আলীর ছেলে বাদশা, মন্টু মন্ডলের ছেলে রুহুল আমীন ও একই গ্রামের জাফর আলীর ছেলে মুন্নু তার ভাতিজিকে মাঠ থেকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করে। পরে ক্যাডেট কলেজের সামনের একটি আবাসন এলাকায় ফেলে রেখে যায়। ভ‚মিহীন পাড়ার এক ব্যক্তি তাকে উদ্ধার করে বাড়ি পৌঁছে দেন। বাড়ি এসে সে সব খুলে বলে। ঝিনাইদহ সদর থানার অফিসার-ইন-চার্জ (ওসি) মিজানুর রহমান খান বলেন, আসামিরা সবাই পলাতক রয়েছে। পুলিশ তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছে।’

পটুয়াখালী : অষ্টম শ্রেণী পড়ুয়া এক স্কুল ছাত্রীকে (১৪) ধর্ষণের অভিযোগে ধর্ষক মো. গফুর ওরফে মারুফকে (২০) গ্রেফতার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার সকালে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। তার বাবার নাম আবুল কালাম রাড়ী। বাউফল উপজেলার কালিশুরী ইউপির সিবপুর গ্রামে।

জানা গেছে, একই গ্রামের অষ্টম শ্রেণীতে পড়ুয়া ওই ছাত্রীকে যৌন হয়রানি করত। ঘটনার দিন গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টার দিকে গফুর ওই ছাত্রীর ঘরের শয়ন কক্ষের জানালার কপাট খুলে ভিতরে ঢুকে জোরপ‚র্বক ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর বাবা বুধবার সকালে বাউফল থানায় মামলা করে। ধর্ষক গফুর জানান, ওই ছাত্রীর সাথে তার দেড় বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
Shamim Sarowar ১৫ আগস্ট, ২০১৯, ৩:৫৬ এএম says : 0
আল্লাহর আইন কার্যকর করলে এসব আর দেখতে হতো না।
Total Reply(0)
Asraful Alam Tutul ১৫ আগস্ট, ২০১৯, ৩:৫৬ এএম says : 0
Very sad
Total Reply(0)
জীবন ১৫ আগস্ট, ২০১৯, ৩:৫৭ এএম says : 0
ধর্ষণের বিচার ফাঁসি হওয়া চাই
Total Reply(0)
S.m. Saiful Islam ১৫ আগস্ট, ২০১৯, ৩:৫৭ এএম says : 0
ধর্ষণের বিষয়ে ইসলামী আইন কার্যকর করা হোক।
Total Reply(0)
Md Monsur Alam Topon ১৫ আগস্ট, ২০১৯, ৩:৫৯ এএম says : 0
যাক, আমরা সাধারন জনগন। সরকারের তড়িৎ শাস্তি নিশ্চিত করাতে। আবারও সরকার প্রমান করল। কেউ আইনের উর্ধ্বে নয়। এভাবে যদি ধর্ষনকারীর বিচার তড়িৎ কার্যকর হয় ভবিষ্যতে ধর্ষিতার হার হ্রাস পেয়ে যাবে। মানুষর আস্থা সরকারের উপর ১০০% থাকবে।
Total Reply(0)
Fatema Akter ১৫ আগস্ট, ২০১৯, ৪:০০ এএম says : 0
অভিনন্দন পুলিশ কে।
Total Reply(0)
মোহাম্মদ ফারুক ১৫ আগস্ট, ২০১৯, ৫:৩৯ এএম says : 0
ধষ’ন শাস্তি মৃত্য দন্ড হওয়া উচিত। তবে ক্রস ফায়ারে নয়। আদালতের মাধ্যমে, ধ্রত তম সময়ে। এ ভাবে মেরে ফেলা ধষ’নে চেয়ে বড় অপরাধ।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন