কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি উপজেলার নাওডাঙ্গা, পুলেরপাড় হতে উত্তর বড়ভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত প্রায় ৩ বর্গমাইল এলাকা বাঁশগ্রাম নামে সুপরিচিত। এই এলাকার মানুষের বাঁশই হচ্ছে প্রধান অর্থ করি ফসল। সংসারের ছোটছোট প্রয়োজনে সারাবছরে ১/২টি বাঁশ বিক্রি করেন। আবার বছর শেষে বাঁশ বিক্রি করে মোটা অংকের টাকা পেয়ে থাকেন।
উৎপাদিত বাঁশ গুনেমানে উন্নত হওয়ায় ঢাকাসহ সারাদেশ এখান থেকে বাঁশের চালান নিয়ে যাওয়া হয়। ধরলা নদীর এ পাড়ার বাঁশের ব্যবসা এই বাঁশগ্রাম এলাকার ব্যবসায়ীরা নিয়ন্ত্রণ করেন। পুতুল পোদ্দার, সেলিম মিয়া, মোজামেল হক, সালাম মিয়া, রোস্তোম হক, মাহালম মিয়া, সাইফুল হক, মমিনুল ইসলামসহ বাঁশ ব্যবসায়ী সবাই বাঁশ গ্রামের মানুষ। বড় বড় টলি যোগে প্রতি টিপে ৭/৮ হাজার বাঁশ ঢাকা নিয়ে যাওয়া হয়। প্রতিটি বাঁশ ১২০-১৫০ টাকায় কিনে ২০০-২৫০ টাকায় বিক্রি করেন। আগে তারা বাঁশের ভুড় (বাঁশের বড় ভেলা) তৈরি করে বাঁশ ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে যেতেন। ঐ গ্রামের বাঁশ চাষি লক্ষী কান্ত রায় বলেন, বাঁশ চাষে তেমন খরচ নেই। এই এলাকার মাটি বাঁশ চাষের উপযোগী হওয়ায় শুধু বাঁশ রোপন করলেই ২/৩ বছরের মধ্যেই বাঁশ বাজারজাত করার উপযোগী হয়। এখানে উৎপাদিত বাঁশের কঞ্চী (ঝিক) নেই বললেই চলে। ইদানিং অনেকে রাসায়নিক সার প্রযোগ করে ভালো ফল পাচ্ছেন। নাওডাঙ্গা, পুলেরপাড়, শাহবাজার (শিবের বাজার), চন্দ্র-খানা, ধনিরাম ও ঘোগারকুটির কিছু এলাকা জুড়ে এই বাঁশ বন বিস্তৃত। ফুলবাড়ি কুড়িগ্রামের পাকা রাস্তা ধরে চললেই এই বাঁশ গ্রামের অস্তিত্ব টের পাওয়া য়ায়। তাছাড়াও চন্দ্র-খানা গ্রামের যে কোন মেটো রাস্তা ধরে পশ্চিম দিকে চললেই বাঁশের ছায়া যুক্ত রাস্তা, বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য কাটা বাঁশের স্তূপ, বড় বড় বাঁশ ঝাড়ের ভেতর বাড়ি, কখনও কখনও বাঁশের ঘন-বড় ঝাড়ের মধ্যে পড়লে সূর্যও দেখা যায় না। বাঁশ বনের ভেতর দিয়ে বয়ে চলা নীলকমল নদের শীতল বাতাস, বাঁশের ছায়া, ঘুঘু, কোকিল, শ্যামা বিভিন্ন পাখির কলরবে আপনার মন ফুরফুরে করে তুলবে। অনেক বিনোদন প্রিয় মানুষ এই বাঁশ বনের সৌর্ন্দয্য উপভোগ করতে আসে।
ফুলবাড়ি উপজেলার কৃষি কর্মকতা মাহাবুবুর রশীদ বলেন, ফুলবাড়ি উপজেলায় প্রায় ২৫ হেক্টর জতিতে বাঁশের চাষ হয়। বাঁশ উৎপাদনে বিশেষ অবদান রাখায় বাঁশ বন এলাকার মানুষকে প্রয়োজনীয় পরার্মশ দেয়া হচ্ছে। বাঁশবন রক্ষা, উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ঐ গ্রামে সুদুর প্রসারী পরিকল্পনা গ্রহন করা যেতে পারে। জীবনে- মরণে বাঁশ মানুষের নিত্যসঙ্গী। বর্তমানে বাড়তি জনসংখ্যার চাপে বাঁশ ঝাড় উজার হচ্ছে। তাই বাঁশ চাষিদের প্রযোজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে বাঁশ গ্রামটি বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষার আবেদন জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন