মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ওষুধের দেখা নেই অ্যাপে মাতামাতি

স্টাফ রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ১৮ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০১ এএম

নগরজুড়ে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব থেকে নাগরিকদের মুক্তি দিতে একরে পর এক পদক্ষেপ নিয়ে আসছে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি ও ডিএনসিসি)। গতকাল রাজধানীর জাতীয় স্কাউট ভবনে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উন্মোচন করা হয়েছে স্টপ ডেঙ্গু মোবাইল অ্যাপ। এ নিয়ে নগরবাসীর মনে সৃষ্টি হয়েছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। তারা বলছেন, এই অ্যাপের চেয়ে বর্তমানে বেশি গুরুত্ব এডিস মশা প্রতিরোধে ওষুধ ছিটানোর কাজ। ওষুধ ছিটানোর কাজ রেখে দুই সিটি কর্পোরেশনের অ্যাপ উদ্বোধন নিয়ে ব্যস্ত থাকায় অনেকেই বিরক্তি প্রকাশ করেছেন।

এ নিয়ে রাজধানীর পুরান ঢাকার ওয়ারীর বাসিন্দা সৈয়দ আকমল হোসেন বলেন, মশা নিধনে ওষুধের সাথে দেখা নাই তারা ব্যস্ত আছেন অ্যাপ উদ্বোধন নিয়ে। এই অ্যাপ এখন আমাদের কি কাজে আসবে। তিনি বলেন, এডিস মথার কামড়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে তিলধারনের ঠাই নেই। আর তার এনিয়ে ঠাট্টা মশকরায় ব্যস্ত আছে।
এছাড়াও ঢাকা দক্ষিণের মেয়র তার সংস্থার এলাকাকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণসহ নাগরিকদের সমস্যা চিহ্নিত করতে কমিউনিটি অ্যাম্বাসেডর নিয়োগ দিয়েছেন। আর উত্তর সিটি কর্পোরেশন মেয়র আতিকুল ইসলাম একই মোড়কে বাসাবাড়ির এডিস মশা ও তার লার্ভা নিধনে স্টিকার থেরাপি’র উদ্যোগ নিয়েছেন। তবে দুই মেয়রের এমন উদ্যোগ মশা নিধনে কতটা কাজে দেবে তা নিয়েও সন্দেহ দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞদের অভিমত, লোক দেখানো পদক্ষেপ না নিয়ে দুই সংস্থাকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা বলছেন, এডিস মশার উৎপত্তিস্থলের মধ্যে নগরবাসীর বাসাবাড়ি অন্যতম। এ জাতীয় মশা তিন দিনের বেশি জমে থাকা স্বচ্ছ পানি, বাসার ছাদ, ফুলের টব, পরিত্যক্ত টায়ার, বেসিন, কমোড, এসি বা রেফ্রিজারেটরের পানিতে জন্মায়। এর সিংহভাগই বাসাবাড়ির অভ্যন্তরে জন্ম নিয়ে থাকে। কিন্তু মশা বা তার উৎপত্তিস্থল নির্মূলের দায়িত্বে থাকা দুই সিটি কর্পোরেশন তার নাগরিকদের বাসাবাড়িতে গিয়ে এসব ধ্বংস বা ওষুধ প্রয়োগের সুযোগ পায় না। সে কারণেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে এতে কতটা সফলতা আসবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া ডেঙ্গু জ্বরের ছোবল থেকে মুক্তির লক্ষ্যে উন্মোচন করা হয়েছে স্টপ ডেঙ্গু মোবাইল অ্যাপ। এই অ্যাপ ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের যেকোনো স্থানে মশার প্রজনন স্থান স্বয়ংক্রিয়ভাবে শনাক্ত করে মশা নিধনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া যাবে। গতকাল শনিবার সকালে রাজধানীর কাকরাইলে জাতীয় স্কাউট ভবনে ‘পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এই অ্যাপ উদ্বোধন করা হয়।

একই অনুষ্ঠানে পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ বিনির্মাণে ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রথমবারের মত চুক্তি সই করে একজোট হয়েছে সরকারের পাঁচটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এবং আরো চারটি সংস্থা। চুক্তি স্বাক্ষরের পর স্টপ ডেঙ্গু নামে একটি বিশেষায়িত অ্যাপ প্রকাশ করা হয়। ই-ক্যাব বাংলাদেশের সার্বিক তত্ত¡াবধানে অ্যাপটি তৈরিতে কারিগরি সহায়তায় দেয় ই-পোস্ট ও বিডি-ইয়ুথ।

অ্যাপটির ব্যবহার ও কার্যকারিতার ওপর আলোকপাত করে অনুষ্ঠানে জানানো হয়, অ্যাপ ব্যবহারের মাধ্যমে যেকেউ সারা দেশের যেকোনো স্থানে মশার প্রজনন স্থান স্বয়ংক্রিয়ভাবে শনাক্ত করতে পারবেন। এর মাধ্যমে পুরো দেশের মশার প্রজনন স্থানের ম্যাপিং তৈরি করা হবে। ফলে সিটি কর্পোরেশন এবং স্থানীয় সরকার খুব সহজেই কোন এলাকায় কতজন লোক নিয়োগ করতে হবে তা মশার জন্মস্থানের ঘনত্ব দিয়ে নির্ধারণ করতে পারবে। মশা নিয়ন্ত্রণে কী পরিমাণ ওষুধ কিনতে হবে বা ব্যবহার করতে হবে সে বিষয়টিও জানা যাবে। একইসঙ্গে পরবর্তী বছরের জন্য আগে থেকে সতর্কতামূলক প্রস্তুতি নেওয়া যাবে।

পাশাপাশি ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিকে কীভাবে কোথায় চিকিৎসা সেবা দেওয়া যাবে তা জানা যাবে বলে জানান ই-ক্যাব সভাপতি শমী কায়সার। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ স্কাউটস, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব), ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি কর্পোরেশন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, আইসিটি বিভাগের অধীন এটুআই প্রকল্প এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা চুক্তি সই করেছে। চুক্তি অনুযায়ী, পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সংক্রমিত রোগ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ, বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রযুক্তির সহায়তায় নাগরিক পর্যায়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে যে যার অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করবেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ও বাংলাদেশ স্কাউটস এর সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর কমিশনার ও বাংলাদেশ স্কাউটস এর প্রধান জাতীয় কমিশনার ড. মোজাম্মেল হক খান প্রমুখ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন