মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪৩০, ০৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা নিহত ২২৪ আহত ৮৬৬

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সংবাদ সম্মেলন

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৯ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০০ এএম

ডিআরইউতে গতকাল যাত্রী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন -ইনকিলাব


এবারের ঈদযাত্রায় ২০৩টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় ২২৪ জন নিহত ও ৮৬৬ জন আহত হয়েছে। এ ছাড়া সড়ক, রেল ও নৌপথে ঈদে ২৪৪টি দুর্ঘটনায় ২৫৩ জন নিহত ও ৯০৮ জন আহত হয়েছে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির ‘ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদন ২০১৯’-এ এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। গতকাল রোববার বেলা ১টার দিকে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ঈদযাত্রার প্রতিবেদন তুলে ধরেন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী। সংবাদ সম্মেলনে, অতিরিক্ত ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধ করা, চালকের প্রশিক্ষণ, ঈদযাত্রায় মোটরসাইকেল নিষিদ্ধ করা, ঈদের পরে মনিটরিং কার্যক্রম বহাল রাখা, চালক-শ্রমিকদের বেতন-বোনাস ও কর্মঘণ্টা নিশ্চিত করা, জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলকে কার্যকর প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলাসহ ১২টি সুপারিশ করা হয়েছে।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোট সড়ক দুর্ঘটনার মধ্যে ৬৭টি ঘটেছে মোটরসাইকেলের সঙ্গে অন্যান্য যানবাহনের সংঘর্ষের কারণে। এটি মোট দুর্ঘটনার ৩৩ শতাংশ। অর্ধেকের বেশি পথচারী গাড়িচাপার শিকার হয়েছে। পথচারীকে গাড়িচাপা দেয়ার ঘটনা ঘটেছে ৫২ দশমিক ২১ শতাংশ। আগামী ঈদে মোটরসাইকেল ও পথচারী গাড়িচাপার ঘটনা এড়ানো সম্ভব হলে সড়ক দুর্ঘটনার ৮৫ শতাংশ কমে আসবে বলে যাত্রী কল্যাণ সমিতি জানিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, এবারের ঈদে লম্বা ছুটি থাকার পরও শুধু পরিকল্পনার অভাবে সড়কে অসংখ্য মানুষের ভোগান্তি হয়েছে। পরিবহন খাতে চালক ও সহকারী, শ্রমিকদের বেতন-বোনাসের পরও ঈদযাত্রায় ভাড়া নৈরাজ্য প্রতি বছর লক্ষ করা যায়। কর্মঘণ্টা ও বেতন নির্ধারিত না থাকায় ভাড়া নৈরাজ্যে সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েছে যাত্রীরা। পরিবহন শ্রমিকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা যতক্ষণ পর্যন্ত নির্ধারিত না হবে, তত দিন যাত্রীদের ভোগান্তি হবে এবং প্রতিবেদনও প্রকাশ করতে হবে। কর্মঘণ্টা ও বেতন ঠিক না থাকার কারণে ঈদের সময় বেশি আয় ও মুনাফার আশায় চালকেরা প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হন। পাশাপাশি মালিকেরাও তাগাদা দিতে থাকেন। এর ফলে চালকেরা মাথায় টেনশন নিয়ে গাড়ি চালান।

মোজাম্মেল হক বলেন, বিগত ঈদের চেয়ে এবার রাস্তাঘাটের পরিস্থিতি তুলনামূলক ভালো, নৌপথে বেশ কিছু নতুন লঞ্চ যুক্ত হয়েছে। রেলপথে বেশ কয়েক জোড়া নতুন বগি সংযুক্ত হলেও এবারের ঈদে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ে নৈরাজ্য, যানজটের ভোগান্তি, রেলপথে সিডিউল বিপর্যয় ও টিকিট কালোবাজারি, ফেরি পারাপারে ভোগান্তিসহ নানা কারণে যাত্রী হয়রানি বেড়েছে।

তিনি আরো বলেন, এবারের ঈদুল আজহায় বিগত বছরের ঈদুল আজহার চেয়ে সড়ক দুর্ঘটনা ৬ দশমিক ৪০ শতাংশ, নিহত ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ ও আহত ১ দশমিক ৫০ শতাংশ কমেছে বলে যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। তবে এবারের ঈদের আগের চেয়ে ঈদের পরে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। ঈদের আগের দিন ১১ আগস্ট ৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ জন নিহত হয়েছেন এবং ঈদের পরদিন ১৩ আগস্ট ২৪টি দুর্ঘটনায় ২৬ জন নিহত হয়েছেন। আমরা দেখেছি, ঈদের আগে সড়ক দুর্ঘটনা মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে, যা ঈদের পর বেড়েছে। কারণ, বাসচালক ও যানবাহনগুলোকে বিরতি দেয়া হয়নি। আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করেছি, ঈদের আগে ঢাকঢোল পিটিয়ে সড়কমন্ত্রী, র‌্যাব, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঠে ছিল। তবে ঈদের পরদিনই তার উল্টো চিত্র। সড়কে মনিটরিংয়ে কেউ ছিল না, সবাই ঘরে ঢুকে পড়েছে। সে সময় দুর্ঘটনা, প্রাণহানি ও হতাহতের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, সমিতির প্রতিবেদনটিতে ঈদযাত্রা শুরুর ৬ আগস্ট থেকে ১৭ আগস্ট পর্যন্ত সময়ের তথ্য নেয়া হয়েছে। যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের সদস্যরা ৪১টি জাতীয় ও আঞ্চলিক দৈনিক, ১১টি অনলাইন গণমাধ্যমে প্রকাশিত দুর্ঘটনার সংবাদ পর্যবেক্ষণ করে ঈদযাত্রা প্রতিবেদন তৈরি করেছে। ২০৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৭ জন চালক, ৩ জন শ্রমিক, ৭০ জন নারী, ২২টি শিশু, ৪২ জন শিক্ষার্থী, ৩ জন সাংবাদিক, ২ জন চিকিৎসক, ৮ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ৩ জন রাজনৈতিক নেতা এবং ৯০০ যাত্রী ও পথচারী সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। দুর্ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সংঘটিত দুর্ঘটনার ২১ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৫২ দশমিক ২১ শতাংশ পথচারীকে গাড়িচাপা দেয়া, ১৭ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে এবং ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ অন্যান্য অজ্ঞাত কারণে দুর্ঘটনায় পড়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়েছে, ২৭ দশমিক ৪ শতাংশ বাস, ২৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ মোটরসাইকেল, ১৬ দশমিক ৪ শতাংশ ট্রাক-পিকআপ-লরি-কাভার্ড ভ্যান, ৭ দশমিক ৮২ শতাংশ মাইক্রোবাস, ১৩ দশমিক ৫২ শতাংশ অটোরিকশা, ৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ নছিমন-করিমন, ৪ দশমিক ৯৮ শতাংশ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা-ইজিবাইক এসব দুর্ঘটনায় জড়িত ছিল।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) সাবেক চেয়ারম্যান মো. আইয়ুবুর রহমান বলেন, এবারের ঈদে ভাড়া নৈরাজ্য খুব বেশি হয়েছে। সরকার যখন ভাড়া নির্ধারণ করে, তখন শ্রমিকদের বেতন-বোনাস ঠিক করে ভাড়া নির্ধারণ করে। কাজেই ঈদের সময় অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। ঈদের পর দুর্ঘটনা বেড়ে যায় মনিটরিংয়ের অভাবে। গত বছর নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সড়ক পরিবহন আইন পাস হলেও তা এখনো কার্যকর হয়নি। এ আইন দ্রুত কার্যকর হলে সড়কে দুর্ঘটনা কমে আসবে বলে তিনি মনে করেন। যাত্রী কল্যাণ সমিতির সহ-সভাপতি তাওহীদুল হক, যুগ্ম মহাসচিব এম মনিরুল হক, যাত্রী অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক কেফায়েত শাকিল, কনসাস কনজুমারস সোসাইটির (সিসিএস) নির্বাহী পরিচালক পলাশ মাহমুদ প্রমুখ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন