শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সবল অর্থনীতির সোপান

মীরসরাই-সীতাকুন্ডে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ২১ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০২ এএম | আপডেট : ১২:০৬ এএম, ২১ আগস্ট, ২০১৯

চট্টগ্রামে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের মডেল


চট্টগ্রামের মীরসরাই-সীতাকুন্ড ও এর সংলগ্ন ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার বিশাল অঞ্চলজুড়ে তৈরি হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর। ৩০ হাজার একর জমি নিয়ে এটি হবে দেশের সর্ববৃহৎ বিশেষায়িত অর্থনৈতিক জোন। অবকাঠামো নির্মাণের কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলেছে। আসছে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস নাগাদ সেখানে সর্বপ্রথম উৎপাদনে যাচ্ছে চীনা কোম্পানির শিল্প প্রতিষ্ঠান।

তাছাড়া চীনের বিভিন্ন নামিদামি কোম্পানি বড়সড় শিল্পপার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নিয়ে কাজ শুরু করেছে। মীরসরাই সমুদ্র উপকূলে এগিয়ে চলেছে একটি কন্টেইনার বন্দর ও টার্মিনালের নির্মাণকাজ। দেশি-বিদেশি পুঁজি বিনিয়োগ ও শিল্পায়নের মধ্যদিয়ে ব্যাপক কর্মসংস্থানের দুয়ার খুলতে যাচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর প্রবীণ অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ সিকান্দার খান দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, রফতানি শিল্প প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল বা ইপিজেড-এর আদলে চট্টগ্রামে এই সর্ববৃহৎ বিশেষায়িত শিল্পাঞ্চল গড়ে উঠলে দেশের রফতানি বাণিজ্য আরো গতিশীল হবে। বৈদেশিক মুদ্রা ও রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে। সেখানে বড় ধরনের কর্মসংস্থানের সুযোগ কাজে লাগানো যাবে।

তিনি বলেন, নির্মাণাধীন এই শিল্পাঞ্চল থেকে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের দূরত্ব কম। ফলে সেখানে উৎপাদিত শিল্প পণ্যসামগ্রী বিদেশে রফতানি সহজ হবে। তাছাড়া শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামালের সরবরাহ পাওয়া যাবে। আমাদের দেশের আবহাওয়া, সুলভ শ্রমিক ও অন্যান্য সুবিধা ইত্যাদি মিলে এ ধরনের অর্থনৈতিক জোন স্থাপনের জন্য যথেষ্ট উপযোগী পরিবেশ রয়েছে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর প্রতিষ্ঠিত হলে বাংলাদেশের সবল অর্থনীতি গড়ার পথে সোপান রচিত হবে।

অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে অবকাঠামো সুযোগ-সুবিধা তৈরির ব্যাপক কাজ সম্পন্ন করা হচ্ছে। পরিকল্পিতভাবে এবং ধারাবাহিকভাবে এসব কাজ এগিয়ে চলেছে। এই শিল্পনগর কয়েক ভাগে বিভক্ত রয়েছে। সেখানে প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজ চলছে। এর পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন সম্পন্ন হলে দেশের বিনিয়োগ, শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান ও জাতীয় অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখবে বৃহত্তম এই শিল্পাঞ্চল।

তিনি জানান, প্রয়োজনীয় সব অবকাঠামো সুবিধার সমম্বয়ে একে পরিপূর্ণ রূপে গড়ে তুলতে আমরা নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের লক্ষ্যে ব্যাপক আবেদন এসেছে। বিনিয়োগ প্রস্তাব, সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি স্বাক্ষর প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। অবকাঠামো স্থাপনের পাশাপাশি শিল্প স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে। আমি আশাবাদী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও শিল্পায়নের ক্ষেত্রে মডেল হয়ে দাঁড়াবে নিঃসন্দেহে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মাত্র কিছুকাল আগেও সমুদ্র ঘেঁষে লোনা পরিত্যক্ত বিস্তীর্ণ জমি ও গোচারণ ভূমি আজ পরিবর্তনের ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে। লাখো এলাকাবাসী তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় বুক বেঁধেছেন। চট্টগ্রাম জেলার মীরসরাই ও সীতাকুন্ড উপজেলার ১৮ হাজার একর, ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার ১২ হাজার একর মিলে ৩০ হাজার একর জায়গায় গড়ে উঠছে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর। সেখানে দেশি-বিদেশি অনেকগুলো কোম্পানি বা শিল্পগোষ্ঠি একক এবং যৌথ উদ্যোগে বিনিয়োগে গার্মেন্টস ও নীটওয়্যার, ইস্পাত ও লোহাজাত শিল্প, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত, রাসায়নিক, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, ওষুধ, টেক্সটাইল, কন্টেইনার ম্যানুফ্যাকচারিং, ভোজ্যতেল, খাদ্য প্রক্রিয়াজাত খাতে শিল্প-কারখানা স্থাপন করবে।

বেজা সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগকে (এফডিআই) অগ্রাধিকার দেবে। আগামী ৫ বছরের মধ্যেই শিল্পায়ন দৃশ্যমান রূপ নেবে। পূর্ণাঙ্গ অবস্থায় দাঁড়িয়ে গেলে ৭ লাখ থেকে ১০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে। মিনি সিঙ্গাপুরের আদলে সেখানে শিল্পনগরকে ঘিরে এক বা একাধিক উপশহর গড়ে উঠবে। দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ী ও শিল্পোদোক্তাদের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৮শ’ কোটি ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে চীনের একক বিনিয়োগ ও কারিগরি সহায়তায় জুঝাউ জিনইয়ান কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কোম্পানি লিমিটেডের শিল্প-কারখানা নির্মাণের কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। শিল্পনগরে উৎপাদন শুরু করলে এটি হবে প্রথম শিল্প কারখানা। দশ একর জমির উপর নির্মিত এ শিল্প প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ ৮০ কোটি ডলারেরও বেশি।

বিদেশে রাসায়নিক দ্রব্য রফতানি করবে কোম্পানিটি। চীনা কারখানাটি গত জুলাই মাসে উৎপাদন শুরু করার টার্গেট ছিল। তবে শিল্প-কারখানার বিভিন্ন যান্ত্রিক সরঞ্জাম সংযোজনের কাজ শেষ না হওয়ায় তা পিছিয়ে গেছে। এ বিষয়ে বেজা নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী জানান, চীনা প্রতিষ্ঠানটির আমদানিকৃত অবশিষ্ট কিছু কিছু শিল্প যন্ত্রপাতি বন্দর কাস্টমস থেকে খালাস, শুল্কসহ আনুষঙ্গিক কিছু প্রক্রিয়া বাকি রয়েছে। তবে তা শিগগিরই শেষ হলে আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস নাগাদ চীনা কোম্পানিটি উৎপাদনে যাবে বলে আশা করা যায়।

এদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের অবাকাঠামো সুযোগ-সুবিধার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে চীনের বিভিন্ন কোম্পানি বড়সড় বিনিয়োগে এগিয়ে এসেছে। সেখানে ৯৮৮ দশমিক ৫০ একর জায়গার উপর ‘সিচুয়ান ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক’ নামে একটি চায়না শিল্প পার্ক স্থাপন করবে চীনের সিচুয়ান সিল্করোড ইকোনমিক বেল্ট ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড কর্পোরেশন চেম্বার অব কমার্স।

এই গ্রুপ কোম্পানির আওতায় ১৫৯ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব এসেছে। তারা ২৪টি শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনের লক্ষ্যে বিনিয়োগে আগ্রহী। তাছাড়া চীনের বিভিন্ন নামিদামি কোম্পানি এই শিল্পনগরে তাদের শিল্প-কারখানা রি-লোকেট-এর মাধ্যমে সম্প্রসারণের ব্যাপারেও আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বেজা প্রতিটি দেশি-বিদেশি প্রস্তাবের লাভালাভ নিবিড়ভাবে যাচাই-বাছাই করেই অগ্রসর হচ্ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Dildar Hossen ২১ আগস্ট, ২০১৯, ২:৪৯ এএম says : 0
চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর সহসা যাতে বাস্তবায়ন হয় সেই দাবি জানাই। তাহলে বেকার শিক্ষিত তরুণদের কর্মসংস্থান হবে।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন