বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

এনজিওদের উসকানি রোহিঙ্গাদের নানা শর্ত

সন্দেহের দোলাচলে প্রত্যাবাসন

বিশেষ সংবাদদাতা, কক্সবাজার | প্রকাশের সময় : ২২ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০১ এএম

এখনো সন্দেহের দোলাচলে আজকের রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন। বাংলাদেশের প্রস্তুতি থাকলেও রোহিঙ্গারা দিচ্ছেন নানা শর্ত। নাগরিকত্ব, নিরাপত্তা, বসতভিটাসহ সম্পদ ফেরত ও নিপীড়নের বিচার নিশ্চিত না হলে মিয়ানমারে ফিরতে নারাজ বলে সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন তারা।

প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমার সরকার কর্তৃক স্বীকৃত রোহিঙ্গারা জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা-ইউএনএইচসিআর এবং শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার- আরআরআরসি কার্যালয়ের প্রতিনিধিদের কাছে সাক্ষাৎকারে এমনটি জানিয়েছেন।

জানা গেছে, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষও রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মোটামুটি আন্তরিক। সাক্ষাৎকার শেষে হলরুম থেকে বের হওয়া ২৬ নম্বর ক্যাম্পের এ-ব্লকের বাসিন্দা মুহাম্মদ রিয়াজ (৩২), রশিদ আমিন (৪৫) ও আই-ব্লকের হোসেন আহমদ (৫২) এমন তথ্য জানান। রোহিঙ্গাদের এসব দাবির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন শালবাগানের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ইনচার্জ (সিআইসি) মোহাম্মদ খালেদ হোসেন।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের পর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সরব হয় মিয়ানমার সরকার। এরই বহিঃপ্রকাশ তিন হাজার ৪৫০ জন রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে রাজি হওয়া। এটি বাস্তবায়নে দুই দেশের মাঝে চলছে তোড়জোড় প্রস্তুতিও। এসব কারণে সম্মানজনক প্রত্যাবাসনে আশাবাদী হন তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গারা।
স¤প্রতি ইউএনএইচসিআর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে তারা জানান, সম্মানজনক প্রত্যাবাসনে শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা আছে রোহিঙ্গাদের। তারা মনে করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখলে রোহিঙ্গারা নাগরিকত্ব নিয়ে নিজ দেশে ফিরে যেতে পারবেন।

গত মঙ্গলবার থেকে টেকনাফের শালবাগান রোহিঙ্গা শিবিরে নির্মিত ক্যাম্প ইনচার্জের হলরুমে সাক্ষাৎকার দিতে আসেন তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গারা। সিআইসি মোহাম্মদ খালেদ হোসেন জানান, মঙ্গলবার সকাল থেকে মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে মতামত জানানোর কথা ছিল তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গাদের। কিন্তু দুপুর পর্যন্ত শালবাগান রোহিঙ্গা শিবিরে নির্ধারিত স্থানে সাক্ষাৎকার দিতে আসেননি তাদের কেউ। পরে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা- ইউএনএইচসিআর এবং শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার- আরআরআরসি কার্যালয়ের প্রতিনিধিরা তাদের সাক্ষাৎকার দিতে আসার জন্য উৎসাহিত করার চেষ্টা করেন। এরপর একেকটি পরিবার আলাদাভাবে সাক্ষাৎকার দিতে আসেন। প্রায় প্রতিটি পরিবারের সদস্যরা অভিন্ন দাবি উত্তাপন করেন। এসব দাবি মানা হলে তারা যেকোনো সময়ই ফিরে যেতে প্রস্তুত বলে জানান।
সাক্ষাৎকারে ২১ পরিবারের নেতৃত্ব দেয়া ২৬ নভেম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. বজরুস আলম বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রধান দাবি, রোহিঙ্গা হিসেবেই তাদের নাগরিকত্ব দেয়া। পাশাপাশি মিয়ানমারের দীর্ঘদিন ধরে বন্দি এক লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকেও মুক্তির ব্যবস্থার দাবি জানানো হয়েছে।

এছাড়া এপার থেকে যারা যাবেন, তারা ওপারের কোনো ক্যাম্পে নয়, সরাসরি নিজেদের পুরনো বসতভিটায় যেতে পারার মতো ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় মিয়ানমারে ফিরে গিয়ে কোনো লাভ নেই বলে তালিকায় নাম থাকা রোহিঙ্গারা অভিমত প্রকাশ করেছেন। সাক্ষাৎকার দিয়ে বের হয়ে আসা মুহাম্মদ রিয়াজ (৩২), রশিদ আমিন (৪৫) ও হোসেন আহমদ (৫২) জানান, দোদুল্যমান অবস্থায় মিয়ানমারে ফিরে যেতে চাই না। মিয়ানমারে আমাদের ওপর চালানো নিপীড়নের বিচার করতে হবে, সম্পত্তি ফেরতের পাশাপাশি নাগরিকত্ব দিতে হবে। এরপরই আমরা ফেরত যাব।

ঘদিও সবধরনের প্রস্তুতি থাকা সত্তে¡ও পূর্বের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করেনি মিয়ানমার। বারবার কথা না রাখার রেকর্ড আছে মিয়ানমারের। এবারও ‘শঙ্কা’ নিয়েই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশ। মাঠপর্যায়ে সবধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এদিকে, মিয়ানমারে ফিরে যেতে রোহিঙ্গারা বিভিন্ন শর্তজুড়ে দেয়ার পেছনে কিছু দেশি-বিদেশি এনজিও ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখার ও দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন