শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসা বাণিজ্য

দশ রিক্রুটিং এজেন্সির অনিয়ম-দুর্নীতি

আরো ৩ মাস সময় পেল তদন্ত কমিটি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০১ এএম

দশ রিক্রুটিং এজন্সির অনিয়ম, দুর্নীতি তদন্তে গঠিত কমিটিকে তদন্ত সম্পন্ন করতে আরো ৩ মাস সময় দিয়েছেন হাইকোর্ট। এর মধ্যে তদন্ত শেষ করতে না পারলে কমিটির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি দেন আদালত। গতকাল বুধবার বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী এবং বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের ডিভিশন বেঞ্চ এ সময় দেন। এর আগে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক প্রেরণ ও নিয়ন্ত্রণকারী ১০ রিক্রুটিং এজেন্সি সিন্ডিকেটের অনিয়ম তদন্তে গঠিত কমিটির কাজে অসন্তোষ প্রকাশ করেন আদালত।
আদালত থেকে বেরিয়ে পিটিশনার পক্ষের কৌঁসুলি ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম বলেন, ৬ মাসের মধ্যে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দাখিল করার কথা ছিল। অন্তত: ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও প্রতিবেদন জমা পড়েনি। এ কারণে আদালত কমিটির প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। আদালত বলেছেন, ৬ মাসের মধ্যে রিপোর্ট দেয়ার কথা । এখন ১০ মাস পার হয়ে যাচ্ছে। তারপরও বার বার এসে সময় চাইছেন। আদালতের এ মন্তব্যের পর আমরা কমিটিকে কার্যপরিধি ঠিক করে দিতে আদালতে আবেদন করি। আদালত আমাদের আবেদন মঞ্জুর করে পাঁচটি কার্যপরিধি নির্ধারণ করে দিয়েছেন।
পাচঁ কার্যপরিধিগুলো হচ্ছেÑ(এক) ২০১৭ সালের ১০ মার্চ থেকে ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮ সাল পর্যন্ত এই দুই বছরে কোন কোন রিক্রুটিং এজেন্সি শ্রমিক পাঠাতে পেরেছে এ তথ্য দিতে হবে। এতে যদি দেখা যায় যে, এই ১০ জন ছাড়া কেউ শ্রমিক পাঠাতে পারেনি তাহলে তাতেই প্রমাণ হয়ে যাবে তাদের একটা সিন্ডেকেট ছিল। (খ) মাইগ্রেশন খরচ বাবদ প্রতিটা শ্রমিক থেকে কত টাকা নেয়া হয়েছে। সরকার নির্দিষ্ট করে দিয়েছে ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা করে। তারপর এটাকে একটু বাড়িয়ে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা করে নির্ধারণ করে দেয় সরকার। কিন্তু দেখা গেছে প্রত্যেক শ্রমিক থেকে ৪ লাখ করে নেয়া হয়েছে। এ দুই বছরে বিদেশে গেছে ২ লাখ ৮৫ হাজার শ্রমিক। তার মানে কয়েক শ’ কোটি টাকার ব্যাপার। (গ) মালেয়শিয়া থেকে যখন সিদ্ধান্ত এলো ১০ জনের মাধ্যমেই শ্রমিক পাঠাতে হবে তখন এখান থেকে প্রতিবাদ করা হয়েছে। ১১ নম্বর বিবাদী নূর আলী, যিনি এই সিন্ডিকেটের মাস্টার মাইন্ড; তিনি সরকারের কাছে একটা প্রস্তাব দিয়ে বলেছিলেন, একেকজন সিন্ডিকেটের আরও ২০ জন করে রিক্রুটিং এজেন্সি অন্তর্ভুক্ত তাতে ২শ’ জন হয়ে যায়। এই ২শ’ জনের মাধ্যমে আমরা বিদেশে শ্রমিক পাঠাবো। পর্যায়ক্রমে সবাইকে তাতে যুক্ত করব। তখন সরকার এটাকে অনুমোদন দিয়েছেন। কিন্তু আমরা এটিকে তদন্ত করে দেখতে বলেছি সবাইকে মিলে মিশে পাঠিয়েছিল নাকি ১০ জনই পাঠিয়েছে। (ঘ) মালেয়শিয়ায় বা বিদেশে শ্রমিক পাঠাতে হলে শ্রমিকদের মেডিকেল পরীক্ষা করতে হয়। মালয়েশিয়ার জন্য ২৬টি মেডিকেল সেন্টার খোলা হয়েছিল। এই ২৬টার মধ্যে ৮টা ছিল সিন্ডিকেটের। দেখা গেছে, যেখানে মেডিকেল পরীক্ষার ফি ছিল ১৫শ থেকে ২ হাজার টাকা। কিন্তু তারা নিয়েছে ৫ হাজার ৩শ টাকা করে। পাঠিয়েছে ৩ লাখ শ্রমিকের মত। আর মেডিকেল পরীক্ষা করানো হয়েছে ৫ লাখের মত। যারা যেতে পারেননি তাদের মেডিকেল পরীক্ষার টাকাও ফেরত দেয়া হয়নি। এই মেডিকেল সেন্টারের মাধ্যমে কত টাকা আদায় হয়েছে সেটাও খুঁজে দেখতে হবে। (ঙ) জনশক্তি কর্মকসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ইসরাফিল আলমসহ চারজন সংসদ সদস্য মালেয়শিয়া গিয়েছিলেন সিন্ডিকেটের বিষয়ে তদন্ত করতে। পরে ইসরাফিল আলম একটি বেসরকারি চ্যানেলের টকশোতে বলেছিলেন, তদন্ত করা উচিত। শ্রমিকদের থেকে যে টাকা নেয়া হয়েছে তা পাচার হয়েছে কি না সেটাও তদন্ত করতে বলা হয়েছে। এছাড়া সিন্ডিকেটের অন্যান্য অনিয়মও তদন্ত করতে পারবে কমিটি।
উল্লেখ্য, গত ২৬ জুন মালয়েশিয়ায় শ্রমিক প্রেরণ নিয়ন্ত্রণকারী ১০ রিক্রুটিং এজেন্সির সিন্ডিকেট ও তাদের অনিয়ম তদন্ত ১৮ জুলাইয়ের মধ্যে প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে করতে বলেন। কিন্তু কমিটি প্রতিবেদন দাখিল না করে আবারো সময় চান। এর আগে গত ফেব্রæয়ারিতে সিন্ডিকেটের অনিয়ম তদন্তে হাইকোর্টের নির্দেশে কমিটি গঠন করে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। কমিটিতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবকে আহŸায়ক করা হয়। গত বছরের ২৯ অক্টোবর মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানো নিয়ন্ত্রণকারী ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সির সিন্ডিকেটের অনিয়ম তদন্তে কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন আদালত।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন