বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

হে আল্লাহ! রমজানে ওদের বিবেকের তালা খুলে দাও!!

প্রকাশের সময় : ১০ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টালিন সরকার : ‘চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনী’ প্রবাদের মতো অবস্থা দেশের মুনাফাখোর মজুতদার কিছু ব্যবসায়ীর। রমজানে পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দিয়ে রোজাদারদের পকেট কাটছে। অথচ তাদের সংগঠন এফবিসিসিআই-র নেতারা গলা ফাটিয়ে প্রচার করেছে রমজানে পণ্যের মূল্য বাড়ানো হবে না। কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘কেউ কথা রাখেনি’ কবিতার নাদের আলী মিথ্যাবাদী ছিলেন না। ৩৩ বছরেও কথা না রাখার কারণ তিনি অবুঝ শিশুকে বুঝ দিয়েছেন। কিন্তু আমাদের দেশের মুনাফাখোর ব্যবসায়ী তথা তাদের সংগঠনের অধিকাংশই যে মিথ্যাবাদী তার প্রমাণ মেলে বাজারে গেলেই। রমজানকে কেন্দ্র করে বাজার উত্তাপ; তিন দফায় বেড়েছে পণ্যের মূল্য। ৬৫ টাকার ছোলা রমজানের এক মাস আগে দুই দফায় বেড়ে হয়েছে ৮৫ টাকা। রমজানে একশ টাকা। ৪৫ টাকার চিনি ৬২ টাকা, মশুর ডাল ১৪০ টাকা, ৩০ টাকার বেগুন ১শ’ টাকা, ২০ টাকার শসা ৬০ টাকায় উঠেছে। আর ঢাকা দক্ষিণের মেয়র রমজান উপলক্ষে ৩৮০ টাকার গরুর গোশত কেজিতে ৪০ টাকা বৃদ্ধি করে ৪২০ টাকা নির্ধারণ করেন। একই হারে খাসি, মহিশ ও ভেড়ার গোশতের মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি মেয়র সাঈদ খোকনের কশাইপ্রেম দেখে মনে হচ্ছে তার নামের সঙ্গে উপাধি দেয়া উচিত ‘কশাইপ্রেমী মেয়র’। নিন্দুকেরা বলে থাকেন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অনেক কশাই দা-কুড়াল নিয়ে ভোট কেন্দ্রের সামনে পাহারা দিয়ে ভোটারদের ঠেকিয়েছে। তার প্রতিদান হিসেবে কেউ দাবি না করলেও গোশশের দাম কেজিতে ৪০ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছেন মেয়র নিজস্ব ক্ষমতাবলে। অন্যান্য পণ্যমূল্যেরও প্রায় অভিন্ন অবস্থা। অথচ সরকার দাবি করছে রমজান উপলক্ষ্যে পণ্যমূল্যের উর্ধ্বগতির খবর সঠিক নয়। শুধু তাই নয়, সরকারের একজন দায়িত্বশীল মন্ত্রী দ্রব্যমূল্যের কিছু বৃদ্ধির জন্য দায়ী করেছেন টিভির টকশোলে। ওই মন্ত্রী বলেছেন, টকশোতে আলোচকরা পণ্যমূল্য বাড়িয়ে দেন, তাতে মূল্য বাড়ে। তারা এমন আলোচনা করেন যার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। বাজারে পণ্যের দাম স্বাভাবিক রয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, রমজান উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়েনি। এমপি-মন্ত্রীরা ক্ষমতাধর। সাধারণ মানুষ তাদের সমালোচনা করবে এমন সাহস কতজনের আছে!
হে আল্লাহ! এমপি-মন্ত্রী এবং আমাদের নেতাদের বিবেকের দরজা খুলে দাও। জনগণের সেবক দাবিদার নেতাদের সাধারণ মানুষের দুঃখ, কষ্ট, যন্ত্রণা, ব্যথা-বেদনা, অক্ষমতা-স্বক্ষমতা বোঝার তৌফিক দাও!! ওরা যেন মানুষের ব্যথা বুঝতে পারে। জনগণের সেবক! অথচ মানুষের দুঃখের বদলে সবকিছুতেই সুখ দেখেন; দুঃখ-যন্ত্রণা তাদের চোখে পড়ে না, বিবেকে নাড়া দেয় না।
রমজান মাস। পণ্যমূল্য লাগামছাড়া। সারাদিন রোজা রেখে দেশের শতকরা কতভাগ মানুষ স্বাভাবিকভাবে ইফতার করতে পারছেন? দেশের ৮০ ভাগ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। এক মন ধানে এক কেজি গরুর গোশত পাওয়া যায় না। তিন মন ধানে এক কেজি ওজনের ইলিশ মাছ পাওয়া যায় না। কৃষকরা গরুর গোশত আর ইলিশের স্বাদ ভুলতে বসেছে। কিন্তু ধানের মূল্য না পাওয়ায় লোকসান গুনেছে অনেক টাকা। প্রতি মণ ধান উৎপাদনে খরচ হয়েছে ৬৫০ টাকা থেকে ৭শ’ টাকা। অথচ প্রতি মণ ধান বিক্রি করেছেন ৪শ’ থেকে সাড়ে ৪শ’ টাকা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্রামের অধিকাংশ গৃহস্থ পরিবারে পণ্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে সারাদিন রোজা রেখে ছোলাবুট, পেঁয়াজি, বেগুনি দিয়ে ইফতার করার সংগতি নেই। ইফতার করে কেউ খান পান্তা, কেউ খান রাতের খাবার। অর্থনৈতিক ভাবে রাষ্ট্র থেকে চরম বৈষম্যের শিকার ওই গরীব কৃষকদের দিকে তাকানোর সময় নেই আমাদের গণতান্ত্রিক নির্বাচিত (!) সরকারের। তাদের দম ফেলানোর ফুসরত নেই; মহাব্যস্ত জঙ্গী দমনে। আগে দেশের কোথাও কোনো কিছু ঘটলেই সরকারের দৃষ্টিতে পড়তো জঙ্গী আর আইএস। জঙ্গি আর আইএসে গিজগিজ করতো। কৌশলগত কারণে এখন আইএস ‘নেই’ হয়ে গেছে। চলছে শুধু ‘জঙ্গী জঙ্গী’ মাতম। ক্রস ফায়ার, বন্দুক যুদ্ধ ইত্যাদির নামে যেমন মানুষ হত্যা বাড়ছে; তেমনি গুম-খুনও বাড়ছে সমান তালে। প্রায় প্রতিদিনই খুনের ঘটনা ঘটছে। ঘটনা ঘটলেই বিএনপি-জামায়াতের ওপর দায় চাপিয়ে প্রকৃত খুনিদের পর্দাল আড়ালে নেয়ার রাষ্ট্রীয় কৌশল দেখা যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ এবং গ্রামের কৃষক এ সবের ধারের কাছেও নেই। মানুষ চায় স্বাভাবিক ভাবে জীবন যাপন করতে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে নির্মল সেনের লেখা ‘স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি’। এখনো যেন সে গ্যারান্টি নেই। হাজারো সমস্যার মধ্যেও সিয়াম সাধনার মাসে সাধারণ মানুষ রোজা রাখেন, অথচ পণ্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে ইফতার সিহারী ঠিকমতো খেতে পারেন না। অবশ্য দুর্নীতিবাজ. খুষখোর, মুনাফাখোর এবং রাষ্ট্রীয় সুবিধাভোগীদের ব্যাপার ভিন্ন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১১ লাখ ৬৯ হাজার টন ভোজ্য তেল, ১৩ লাখ ৭ হাজার টন চিনি, ১ লাখ ৩০ হাজার টন মসুর ডাল, ৪ লাখ ২৭ হাজার টন পেঁয়াজ ও ২ লাখ ৪৭ হাজার টন ছোলা আমদানি হয়েছে। তারপরও পণ্যমূল্যের এই উধর্বগতি কেন? রমজানকে কেন্দ্র করে ক্রেতাদের পকেট কাটতে মুনাফাখোর ব্যবসায়ীরা পণ্যের মূল্য হুহু করে বাড়িয়ে দিয়েছে। সীমিত আয়ের মানুষ পবিত্র রমজানে নিদারুণ কষ্ট করে রোজা রাখছেন। মানুষ যে কষ্টে আছেন, দ্রব্যমূলের উর্ধ্বগতির কারণে পরিমিত খাবার খেতে পারছেন না। এই বাস্তবতা যাতে আমাদের নেতানেত্রীরা অনুধাবন করতে পারেন সে জন্য তাদের বিবেকের দরদা খুলে দিন। আমাদের নেতানেত্রীরা যাতে বিবেক দিয়ে বুঝতে পারেন তারা যা জানেন তা প্রকৃত সত্য নয়। প্রকৃত সত্য হলো পণ্যমূল্য লাগামহীন। মানুষ ভাল নেই। হে আল্লাহ! ওদের বিবেকের তালা খুলে দিন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন