বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

ভারতের সাথে সংলাপ অর্থহীন

নিউ ইয়র্ক টাইমসকে সাক্ষাৎকারে ইমরান খান

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৩ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০১ এএম

অধিকৃত কাশ্মীর নিয়ে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে ভারতীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলা অর্থহীন বলে মন্তব্য করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তিনি বলেন, নয়াদিল্লির সঙ্গে শান্তি ও সংলাপের জন্য তার পদক্ষেপ এখন পর্যন্ত নিরর্থক প্রমাণিত হয়েছে।

বুধবার মার্কিন প্রভাবশালী গণমাধ্যম দ্যা নিউইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিক সালমান মাসউদ এবং মারিয়া আবি-হাবিবকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান বলেন, ‘তাদের (ভারত) সঙ্গে কথা বলার কোনো মানে নেই। আমি বলতে চাচ্ছি, আমার সব কথা শেষ। দুর্ভাগ্যক্রমে, এখন যখন আমি পেছনে ফিরে তাকাচ্ছি, দেখি, শান্তি ও সংলাপের জন্য আমার প্রস্তাবিত সব প্রচেষ্টাকে তারা নিবৃত্ত করে দিয়েছে।’

ইসলামাবাদে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দেয়া সাক্ষাৎকারে কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থার কাছে কাশ্মীর নিয়ে ইমরান এমন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দিয়ে বলেন, ‘আমাদের করার মতো সেখানে আর কিছুই নেই।’

গত ৫ আগস্ট প্রেসিডেন্টের এক আদেশের মাধ্যমে কাশ্মীরিদের সাত দশকের দীর্ঘ স্বায়ত্তশাসন দেয়া বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার করে নিয়ে যায়। সম্পূর্ণ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে কাশ্মীরকে অবরুদ্ধ করার ১৮তম দিনে প্রবেশ করে বৃহস্পতিবার। এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৪ হাজার মানুষকে ভারত-অধিকৃত কাশ্মীরে আটক করা হয়েছে।
ইমরান টাইমসকে বলেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এখানের আশি লাখ মানুষের জীবন ঝুঁকির মধ্যে। সেখানে ঘটতে যাওয়া জাতিগত নিধনযজ্ঞ এবং গণহত্যা সঙ্ঘটিত হওয়ার বিষয়ে আমরা সবাই চিন্তিত।’ খান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ‘একজন ফ্যাসিস্ট এবং হিন্দু আধিপত্যবাদী হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যিনি মুসলিম অধ্যুষিত কাশ্মীরের জনগোষ্ঠীকে নির্মূল করতে এবং এই অঞ্চলটিকে হিন্দুসমৃদ্ধ করতে চান মোদি।’
ইমরান খান অধিকৃত কাশ্মীর দিল্লির অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর থেকে তার টুইটার বার্তায় বারবার বলেছেন যে, হিমালয় অঞ্চলটিতে ভারতের সরকারের নীতি হিন্দু জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) দলের ‘আদর্শ’ এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) একটি মূল সংগঠন এই আরএসএস- যা ‘হিন্দু আধিপত্যে’ বিশ্বাস করে।

টাইমসের সাক্ষাৎকারের সময় তিনি ভারতের হামলার ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। পাকিস্তান বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের ন্যায্যতা প্রমাণের লক্ষ্যে ভারত কাশ্মীরে একটি প্রতারণামূলক ‘মিথ্যা-পতাকা অপারেশন’ চালিয়ে যেতে পারে এবং বাধ্য হয়েই পাকিস্তানকে তার জবাব দিতে হবে বলেও উদ্বেগ প্রকাশ করেন খান। তিনি বলেন, ‘দুই পরমাণুসজ্জিত দেশ যখন চোখে চোখ রেখে নজর রাখছে, যে কোনো কিছুই ঘটতে পারে তখন। আমার চিন্তা হচ্ছে, এই উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে এবং দুটো পারমাণবিক-সশস্ত্র দেশের এমন উত্তেজনা বিশ্বের জন্যেও হুমকির, আমরা যা মোকাবেলা করছি এখন তা নিয়ে বিশ্বের উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত।’

১৪ আগস্ট, আজাদ জম্মু ও কাশ্মীর আইনসভার বিশেষ অধিবেশনে বক্তব্য দেয়ার সময় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী মোদিকে সতর্ক করে বলেছিলেন যে, পাকিস্তানে ভারতের যে কোনো পদক্ষেপের তীব্র প্রতিক্রিয়া হবে।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের মতে, প্রধানমন্ত্রী ইমরানের মন্তব্যে ভারত সরকার তৎক্ষণাৎ কোনো জবাব দেয়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত হর্ষবর্ধন শ্রিংলা অবশ্য এই সমালোচনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের অভিজ্ঞতা হয়েছে যে, যতবারই আমরা শান্তির দিকে কোনো উদ্যোগ নিয়েছি, এটি আমাদের জন্যে খারাপে পরিণত হয়েছে। আমরা আশা করি, পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বাসযোগ্য, অপরিবর্তনীয় ও যাচাইযোগ্য পদক্ষেপ নেবে।’ শ্রিংলা আরো দাবি করেন, অধিকৃত কাশ্মীরের বিষয়গুলো ‘স্বাভাবিকতার দিকে’ যাচ্ছে। পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে বিধিনিষেধ সহজ করা হচ্ছে। জনসাধারণের ইউটিলিটি সার্ভিস, ব্যাংক এবং হাসপাতালগুলোও স্বাভাবিকভাবে কাজ করছে। পর্যাপ্ত খাবারের মজুদ রয়েছে। যোগাযোগের ক্ষেত্রে কিছু নিষেধাজ্ঞা নাগরিকের নিরাপত্তা এবং সুরক্ষার স্বার্থে রয়েছে।

তবে, শ্রীনগরে বসবাসরত অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী নাজির আহমদ শনিবার মার্কিন বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে জানান যে, ‘শাকসবজি, দুধ এবং ওষুধের মতো দৈনন্দিন দ্রব্য কেনার ক্ষেত্রে এখনো বাসিন্দাদের অসুবিধা হচ্ছে। বাবা অসুস্থ এবং নিয়মিত ওষুধ সরবরাহ করার প্রয়োজন রয়েছে, যা আমাদের পরিবারের সংগ্রহ করতে অসুবিধা হচ্ছে।’ কাশ্মীরের বর্তমান পরিস্থিতিকে একটি অবরোধের মধ্য দিয়ে জীবনযাপন করার সঙ্গে তুলনা করে আহমদ বলেন, ‘কোনো ইন্টারনেট নেই, টেলিফোন নেই, যোগাযোগ নেই, পরিবহন নেই। আমরা পশুর মতো জীবনযাপন করছি। সুতরাং আমি সকলকে অনুরোধ করছি, দয়া করে এসে এই পরিস্থিতির সমাধান করুন। বাড়ি থেকে কেউ বের হচ্ছে না।’

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (12)
মিছিল রিয়াসাত ২৩ আগস্ট, ২০১৯, ২:১৯ এএম says : 0
ভারত যদি যুদ্ধ চায় পাকিস্তান পিছপা হবে না। বায়ুসেনা অভিনন্দনকে জিম্মি করতে যেমন হয়নি।
Total Reply(0)
মাদিহা আফজাল ২৩ আগস্ট, ২০১৯, ২:২০ এএম says : 0
নব্য নাজির সাথে সংলাপে কও সুফল পাওয়া যাবে না।হিটলারের সাথে আলোচনায় কোন ফল হয়নি।
Total Reply(0)
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২৩ আগস্ট, ২০১৯, ২:২০ এএম says : 0
All Muslim countries should support Kashmir
Total Reply(0)
খালিদ বিন ওয়ালিদ ২৩ আগস্ট, ২০১৯, ২:২০ এএম says : 0
সঠিক ও যুক্তিযুক্ত কথাই বলেছেন ইমরান খান। কাশ্মীরের মহারাজা হরি সিং যেই যেই শর্তের সাপেক্ষে কাশ্মীরকে ভারতে যুক্ত করার দলিল স্বাক্ষর করেছিলেন সেই শর্তগুলোকেই ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ও ৩৫ক ধারায় সংকলন করে কাশ্মীরের ভারতভুক্তির বিষয়টিকে বৈধতাদানের আপাত চেষ্টা করা হয়েছিলো, সেই ৩৭০ ও ৩৫ক ধারা বাতিল করে ভারত প্রমাণ করলো তারা কাশ্মীরের অবৈধ দখলদার। ভারতের মতো কোন অবৈধ দখলদারের সাথে কাশ্মীর বিষয়ে কোন আলাপ আলোচনা চলতে পারে না, নিয়ম মেনে কাশ্মীরের অধিকার ভারত না ছাড়লে অন্তর্জাতিক মহল থেকে ভারতের উপর ভৌগলিক ও অর্থনৈতিক অবরোধ ও চীন-পাকিস্তান থেকে ভারতের উপর সামরিক হস্তক্ষেপ অনিবার্য।
Total Reply(0)
Tapan Khan ২৩ আগস্ট, ২০১৯, ২:২১ এএম says : 0
আন্তর্জাতিক সংগঠন, জাতিসংঘের বা রাষ্ট্রগুলোর, পাকিস্তানের পাশে দাঁড়ানো উচিত এবং একই সাথে কাশ্মীরের স্বাধীনতার জন্য কথা বলা উচিত। তা না হলে পারমাণবিক শক্তিধর পাকিস্তান যেকোনো সময় এটমবোম এর ব্যবহার করলে তখন জাতিসংঘ বা অন্যান্য সংগঠন গুলোর আর বলার কিছু থাকবে না। এটা এখন হাসি খেলার বিষয় নয়, এটা অতিদ্রুত সামাল দেয়ার বিষয়। তা নাহলে এটা মানবতার জন্য একটা মহা বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে।
Total Reply(0)
Fm Suruj ২৩ আগস্ট, ২০১৯, ২:২২ এএম says : 0
হয়তো তার দেশ অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল। অন্যান্য দেশে জনপ্রিয়তা কম কিন্তু একটা কথা মনে রাখবেন সে যতটা মানব দরদী,সাহসী ও পরিশ্রমী তাতে সে অন্যান্য ক্ষমতাবান অত্যাচারী শাসকদের তুলনায় কোটি গুন ভালো। যারা তাকে দেখে নাক কুচকায় তারাই হয়তো সেই সব খুনি সন্ত্রাসীদের সাপোর্ট দেয় যারা বিনা কারনে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার জন্য নিরহ মানুষদের রক্ত নিয়ে হলি খেলে। একটা কথা মনে রাখবেন মানবতার জয় সবসময়ই। দোয়া ও ভালবাসা রইলো
Total Reply(0)
Mostafizur Rahman ২৩ আগস্ট, ২০১৯, ২:২২ এএম says : 0
এত অল্প সময়ে ফলাফল মিলানো যাবেনা। বাংলাদেশ অপেক্ষা করেছে ১৯৪৭ থেকে ৭১। কাশমিরি জাতি হয়তো আরো বেশী সময় অপেক্ষা করতে হবে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য।
Total Reply(0)
Moshiur Rahman Mushfiq ২৩ আগস্ট, ২০১৯, ২:২২ এএম says : 0
এগিয়ে যান আপনি জয় হবেই ইনশাআল্লাহ। আপনার মত যদি বাংলাদেশে এরকম সিদ্ধান্ত নিতো তাহলে বিনা যুদ্ধে জয় নিশ্চিত হত।
Total Reply(0)
Nannu chowhan ২৩ আগস্ট, ২০১৯, ৯:৩০ এএম says : 0
Bjp Rss era kono jaigai kono shova ba mosolman ba nimno borner hinduder opor ottachar korte gele eder hate eakta gerua ronger potaka jar moddhe natshi jarmanir potakai jei chinno silo tahao ase,ete bujha jai era natshi kormo kande bishshash kore.....
Total Reply(0)
Asadur Rahman ২৩ আগস্ট, ২০১৯, ৯:৩৭ এএম says : 0
ধন্যবাদ তোমাকে লিডার। কিসের আলোচনা। তুমি তোমার কাজ চালিয়ে যাও।
Total Reply(0)
Nazera Zahir Chowdhury ২৩ আগস্ট, ২০১৯, ৯:৩৮ এএম says : 0
In India there is no democracy. So u r intelligent.
Total Reply(0)
anisul ২৩ আগস্ট, ২০১৯, ১১:১০ এএম says : 0
ভারত এর মুসলিম রা ভারত এর সাথেই আছে ......... ভারত আমাদের পবিত্র ভূমি ....... বাইরের আক্রমণ হলে ভারত ছেড়ে কথা বলবেনা ........ শত্রুকে মাটিতে মিশিয়ে দেবে ......
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন