বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

৭০ বছরে মধ্যে সর্বোচ্চ আর্থিক সঙ্কটে ভারত

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৩ আগস্ট, ২০১৯, ৪:২৩ পিএম

ভারতের বাজেটে পাঁচ হাজার কোটি মার্কিন ডলার অর্থনীতির স্বপ্ন ফেরি করেছিল মোদি সরকার। কিন্তু সেই স্বপ্ন তো দূর, বর্তমান জিডিপির হার ধরে রাখাই দুঃস্বপ্নের মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই অশনি সঙ্কেত দিয়েছেন নীতি আয়োগের ভাইস চেয়ারম্যান রাজীব কুমার। তার অভিযোগ, এই পরিস্থিতিতেও সরকার কার্যত ঘুমিয়ে রয়েছে।

রাজীব কুমার জানিয়েছেন, আর্থিক ক্ষেত্রে গত ৭০ বছরে এমন সঙ্কটজনক পরিস্থিতি আসেনি। এই ‘অভূতপূর্ব’ পরিস্থিতির মোকাবেলায় অবিলম্বে চিরাচরিত প্রথার বাইরে বেরিয়ে কোনও পদক্ষেপ না নিলে অর্থনীতির মেরুদণ্ডই ভেঙে পড়বে, এমন শঙ্কার কথাও শোনা গিয়েছে ভাইস চেয়ারম্যানের মুখে। অর্থাৎ ৩৭০ ধারা রদ, চিদম্বরমের গ্রেফতারির মতো জ্বলন্ত ইস্যুর অন্তরালে শিল্পক্ষেত্রে যে রক্তক্ষয়ের চোরাস্রোত বয়ে চলেছে, তেমনই অশনি সঙ্কেত দিয়েছেন নীতি আয়োগ কর্তা।

অটোমোবাইল সেক্টর ধুঁকছে। বহু কর্মী ছাঁটাই করে বা ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে অধিকাংশ সংস্থা। উৎপাদন ক্ষেত্রে ভাটা। নতুন কোনও শিল্প বা বিনিয়োগের রাস্তা তৈরি করা যাচ্ছে না। কিন্তু আদপে তার চেয়েও বেশি সঙ্কট ফাইনান্সিয়াল সেক্টরে অর্থাৎ আর্থিক শিল্পক্ষেত্রে। নীতি আয়োগের চেয়ারম্যানের বিশ্লেষণ, ‘সরকারের কাছে এটা এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। গত ৭০ বছরে মূলধনের এই রকম পরিস্থিতি (সঙ্কটজনক) হয়নি, যেখানে গোটা আর্থিক ক্ষেত্র প্রচণ্ড চাপের মধ্যে পড়েছে।’

কিন্তু এই ডুবন্ত পরিস্থিতির কারণ হিসেবে যা উল্লেখ করেছেন প্রাজ্ঞ অর্থনীতিবিদ রাজীব কুমার, সেটা মোদি সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলার পক্ষে যথেষ্ট। তারমতে, ‘গোটা খেলাটা পাল্টেছে গত চার বছরে। নোটবন্দি, জিএসটি এবং দেউলিয়া বিধি পরিবর্তন। তার আগে পর্যন্ত ১০, ২০, ৩০, ৩৫ শতাংশ নগদ বাজারে লেনদেন চলত। কিন্তু এখন সেই পরিমাণ অনকেটাই কমে গিয়েছে।’

বাজারে নগদ মূলধনী লেনদেন ও বিনিয়োগের অবস্থা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারছে না। এই পরিস্থিতি শুধু সরকার ও বেসরকারি ক্ষেত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বেসরকারি ক্ষেত্রেই একে অন্যের মধ্যে কেউ কাউকে লোন দিতে চাইছে না।’ তার আরো বক্তব্য, ‘সরকার নিশ্চয়ই বুঝতে পারছে যে সমস্যাটা আর্থিক ক্ষেত্রে। মূলধন ধীরে ধীরে দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে। সেটা থামানো দরকার।’

নীতি আয়োগের নম্বর টু সরকারকে সাবধান করে দিয়ে বলেছেন, পরিস্থিতি যেহেতু অভূতপূর্ব, তাই তার মোকাবিলায় পদক্ষেপও করতে হবে অভূতপূর্ব। কোনও উপায়ে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব, তার নির্দিষ্ট পদ্ধতি না বললেও মোদ্দা কথায় দু’টি নির্দিষ্ট পদক্ষেপের কথা বলেছেন। ‘এক, এমন কোনও পদক্ষেপ যা চিরাচরিত বা প্রথাগত নয়। দ্বিতীয়ত, আমি মনে করি, বেসরকারি ক্ষেত্রের আস্থা ফেরাতে সরকারের যা কিছু করা সম্ভব, তেমন সব কিছু করতে হবে।’

ভয়াবহ এই সঙ্কটের ছাপ পড়েছে গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট বা জিডিপি-তেও। ৩১ মার্চ শেষ হওয়া গত আর্থিক বছরে জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল ৬.৮ শতাংশ। তার মধ্যে জানুয়ারি থেকে মার্চ শেষ ত্রৈমাসিকে এই হার ছিল ৫.৮ শতাংশ। মারাত্মক প্রভাব পড়েছে শেয়ার বাজারেও। আর্থিক সমীক্ষক সংস্থা নমুরা পূর্বাভাস দিয়েছে এপ্রিল-জুন এই ত্রৈমাসিকে জিডিপির এই হার আরও কমে নেমে যেতে পারে ৫.৭ শতাংশে। নমুরার রিপোর্টে এই নিম্নগতির কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, ভোগ্যপণ্যের ক্রেতা কম, দুর্বল বিনিয়োগ, সার্ভিস সেক্টরের খারাপ পারফরম্যান্স। যদিও জুলাই-সেপ্টেম্বর ত্রৈমাসিকে এই হার সামান্য কিছুটা বাড়তে পারে বলে ইঙ্গিত নমুরার।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন