বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

সৃষ্টির ওপর একমাত্র আল্লাহরই কর্তৃত্ব

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ২৪ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০১ এএম

ঈমানদাররা জানে যে, আল্লাহ তার কুদরতের দ্বারা সার্বক্ষণিকভাবে গোটা সৃষ্টিজগৎকে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করছেন। তিনি তাঁর কোনো ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সৃষ্টি সম্পর্কেও বেখবর নন। তিনি তাঁর অসংখ্য গুণাবলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ইলম ও খবর এ দুয়ের দ্বারা সদা সর্বত্র সংঘটিত সকল বিষয়ের স্থীতি ও গতি সম্পর্কে পূর্ণতর অবহিত। এটা যে কত ব্যাপক ও গভীর হতে পারে সেটা ধারণা বা কল্পনা করা খুবই কঠিন।
আল্লাহর মনোনীত নবী-রাসূল ও তাঁর মারেফাত বা পরিচয়ের বিশেষ নেয়ামতপ্রাপ্ত সালেহ বান্দারা তার বহুমুখী ও নিরঙ্কুশ কুদরতের ব্যাপ্তি, শক্তি ও গভীরতা সম্পর্কে বেশ ভালো জানেন। নিজের বড়ত্ব, সক্ষমতা, পবিত্রতা, করুণা ও ঔদার্য, ক্ষমা, ক্রোধ, পছন্দ, অপছন্দ ইত্যাদি সম্পর্কে মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআন মাজীদে এবং তাঁর বান্দা ও রাসূল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যবানিতে যা কিছু প্রকাশ করেছেন তা মানুষের জন্য যথেষ্ট।

নিজের অতীত ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে, জন্ম-মৃত্যুর উদ্দেশ্য সম্পর্কে, একটি জীবনযুদ্ধ পরিচালনার লক্ষ্য ও ফলাফল সম্পর্কে, নিজ আত্মার শুরু ও এর অনন্ত যাত্রার দীর্ঘ পথ ও গন্তব্য সম্পর্কে, নিজ সৃষ্টি ও ধ্বংস সম্পর্কে, একটি মানবজনম লাভ ও এর পরিণতির সাফল্য সম্পর্কে মানুষ সঠিক কোনো জ্ঞান কখনোই লাভ করতে পারত না, যদি না মহান আল্লাহ নবী-রাসূলের মাধ্যমে তাঁর বাণী ও জ্ঞান পাঠাতেন।

উল্লিখিত এসব বিষয়সহ মানবজীবনের আরো অজানা প্রসঙ্গ নিয়ে মানুষ নিজেদের সীমিত জ্ঞান, ভাবনা, অনুভূতি, আবেগ, ধারণা ও কল্পনা মিশিয়ে যে সন্ধানটুকু করেছে এর নাম দর্শন। ইহজীবনের নানা অভিজ্ঞতা ও বাস্তবতার আলোকে বা মানুষের চিন্তা, জ্ঞান ও অনুভূতির ভিত্তিতে ইহজীবন সম্পর্কিত কিছু দর্শন সত্যের দিশারী হতে পেরেছে। তবে মানুষের জন্মের আগের এবং মৃত্যুর পরের বিষয়ে দর্শনের সব কথাই অন্ধকারে ঢিল ছোড়ার চেয়ে বেশি কিছু নয়। মানবজনম পরিচালনা ও এর সার্থকতা সম্পর্কে দর্শনের সকল প্রস্তাবনা ও নির্দেশনা ভ্রান্তিতে ভরপুর।

এ জায়গাটি পূরণ করার জন্য, মানবজনমের শত জিজ্ঞাসার জবাব প্রদানের জন্য, মানুষের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ পরিণতি সম্পর্কে নিখুঁত জ্ঞান বিতরণের জন্য সর্বশক্তিমান আল্লাহ ফেরেশতার মাধ্যমে মনোনীত নবী-রাসূলদের নিকট নিজের জ্ঞান, নির্দেশনা ও আলো প্রেরণ করেছেন ওহির মাধ্যমে। এ দ্বীনি প্রত্যাদেশ মানুষকে যে দার্শনিক ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়েছে, এরপর আর এসব বিষয়ে তার মানুষের দেয়া কোনো দর্শনের প্রয়োজন থাকে না।

ঈমানদারদের জন্য আল্লাহ তার অপার করুণায় হেদায়েতের সূর্য ও চন্দ্ররূপে, উজ্জ্বল প্রদীপরূপে পবিত্র কোরআন দিয়ে বিশ্বমানবতার মুক্তিদূত হযরত রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দুনিয়ায় প্রেরণ করেছেন। আল্লাহ অবিশ্বাসী, প্রকৃতিবাদী, সংশয়বাদী, যুক্তিবাদী, নানা পর্যায়ের নাস্তিক ও ধর্মহীনদের প্রতি মহাসত্যের দাওয়াত দিয়েছেন।

যারা আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাসী তবে তার মান অনুযায়ী নিষ্কলুষ বিশ্বাসী নয়। নিজেদের মানবিক ক্ষুদ্রতা, জড়তা, মূঢ়তা, অস্বচ্ছতা, ত্রুটি ও দুর্বলতায় ভরা বিশ্বাস ও ধারণা নিয়ে তাদের কল্পনার খোদায় বিশ্বাসী। তাদের ধারণার খোদায় বিশ্বাসী কিংবা তারা আল্লাহর সাথে নানাভাবে অন্যকে শরিক করে। এদের ব্যর্থ জীবন ও চেষ্টা-সাধনার বিষয়েও আল্লাহ তায়ালা স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

মোটকথা ঈমানদারদের জন্য আল্লাহ যেমন হাজারো আলোকমালা সাজিয়ে রেখেছেন, পাশাপাশি যারা আল্লাহর সঠিক পরিচয় পায়নি, তাঁকে এবং তাঁর রাসূলকে বিশ্বাস করেনি, তাঁর সব নবী-রাসূল, তার ফেরেশতাকুল, আসমানী কিতাব, পরকাল, ভাগ্যের ভালো ও মন্দ দুটোই আল্লাহ থেকে হয় এবং মৃত্যুর পর হিসাব-নিকাশ, বিচার ও চূড়ান্ত পরিণতির জন্য মানুষের পুনরুত্থানে বিশ্বাসী নয়।
এর পাশাপাশি বিশ্বাস করার মতো জরুরি আরো কিছু বিষয় এবং মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহ ও রাসূলের বিধিবিধান, শরীয়তের দিকনির্দেশ যারা মেনে নিতে সম্মত হয়নি, তাদের জন্যও পরম করুণাময় আল্লাহর শত সহস্র দেদীপ্যমান পথনির্দেশ ও আলোকোজ্জ্বল হেদায়েত এই পৃথিবীতে বিরাজমান।

মহান আল্লাহ একটি প্রকৃতিগত ও স্বভাবগত মহাসত্যকে প্রচারের ওপরই বেশি জোর দিয়েছেন। কারণ, ভরদুপুরে সূর্যের অস্তিত্ব কেউ অস্বীকার করবে আর এ জন্য তাকে যুক্তি-প্রমাণ দিয়ে বোঝাতে হবে। এ বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে কেউ আশা করে না। তৃষ্ণার্ত মানুষকে শীতল মিষ্টি পানি এগিয়ে দেয়া প্রকৃতি ও স্বভাবের মধ্যে পড়ে।

সুপেয় পানির পাশাপাশি তাকে যে এর সপক্ষে অনেক যুক্তিতর্ক ও তথ্য-প্রমাণও দিতে হবে। স্বাভাবিক অবস্থায় কোনো মানুষ এমন চিন্তা করবে না। স্বাভাবিক চিন্তা বা দ্বীনে ফিতরত থেকে গুটিকয় লোক চোখ ফিরিয়ে নিতে পারে ভেবে পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহয় তুলনামূলক অল্প কিছু জায়গাতেই নাস্তিক, মুরতাদ, অবিশ্বাসী বা ভ্রান্ত বিশ্বাসে নিমজ্জিত লোকদের উদ্দেশে ওয়াজ ও উপদেশ দেয়া হয়েছে।

যারা আল্লাহর সাথে শরিক করে কিংবা মুখে ঈমান আনলেও অন্তরে ঈমান আনেনি, এ ধরনের লোকদের জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূল অনেক দাওয়াত, যুক্তি, প্রশ্ন ইত্যাদিসহ সঠিক চিন্তা-ভাবনার মাধ্যমে আসল সত্যকে গ্রহণ করার নসিহত করেছেন। কোরআন ও হাদিস এ ধরনের ওয়াজ ও নসিহতে ভরপুর।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
মাহিন আদনান ২৪ আগস্ট, ২০১৯, ১:৩৪ এএম says : 0
আল্লাহই আদেশ করেন অর্থাৎ তিনি তাঁর সৃষ্টিকে যা ইচ্ছা তা নির্দেশ দেন, তিনিই ফায়সালা করেন যেভাবে ইচ্ছা, কাউকে মর্যাদার উপরে উঠানো আবার নীচুতে নামিয়ে আনেন, কাউকে জীবিত করেন, কাউকে মৃত্যু দান করেন, কাউকে ধনী করেন আবার কাউকে ফকির করেন। তিনি ফায়সালা দিচ্ছেন যে, ইসলাম সম্মানিত হবে এবং সমস্ত ধর্মের উপর বিজয়ী থাকবে তাঁর নির্দেশের পিছু নিয়ে কেউ সেটাকে বাতিল করতে বা পরিবর্তন করতে পারবে না। (তাবারী, ১৬/৪৯৩)
Total Reply(0)
মাহিন আদনান ২৪ আগস্ট, ২০১৯, ১:৩৫ এএম says : 0
আল্লাহ তাআলা বলেন, “তারা কি দেখে না যে, আমরা এই জমিনকে চর্তুদিক দেখে সংকুচিত করে আনছি? আর আল্লাহই আদেশ করেন, তাঁর আদেশ বাতিল করা কেউ নেই এবং তিনি হিসেব গ্রহণে তৎপর।” (সূরা রা’দ- ৪১)
Total Reply(0)
মোঃ আজহার রুবেল ২৪ আগস্ট, ২০১৯, ১:৩৫ এএম says : 0
আল্লাহই আমাদের রব ও পালনকর্তা- বান্দাকে সুনিশ্চিতভাবে জানতে ও স্বীকার করতে হবে যে, আল্লাহ হলেন এককভাবে সকল কিছুর মালিক ও প্রতিপালক, তিনি সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা, তিনি সমগ্র বিশ্বকে এককভাবে পরিচালনা করেন।
Total Reply(0)
হাঃমাওঃ শিব্বির আহমদ হাবিবী ২৪ আগস্ট, ২০১৯, ১:৩৫ এএম says : 0
তিনি আকাশ থেকে জমিন পর্যন্ত সকল কার্য পরিচালনা করছেন, সর্বভৌমত্ব একমাত্র আল্লাহর।
Total Reply(0)
সাজেদা আক্তার ২৪ আগস্ট, ২০১৯, ১:৩৬ এএম says : 0
সার্বভৌমত্বে, প্রভুত্বে, ধন-সম্পদে, প্রতিপালনে, কর্তৃত্বে ইত্যাদির ক্ষেত্রে একমাত্র আল্লাহই অধিপতি ও মালিক, এতে তাঁর কোন শরীক বা অংশীদার নেই।
Total Reply(0)
মোঃ আরিফ ২৪ আগস্ট, ২০১৯, ৮:১৭ এএম says : 0
এটা তো ১০০% খাটি কথা
Total Reply(0)
কামরুজ্জামান ২৪ আগস্ট, ২০১৯, ৮:৩৮ এএম says : 0
এই গুরুত্বপূর্ণ লেখাটির জন্য উবায়দুর রহমান খান নদভী হুজুরকে অসংখ্য ধন্যবাদ
Total Reply(0)
নাঈম ২৪ আগস্ট, ২০১৯, ৮:৪০ এএম says : 0
আল্লাহ তায়ালাই সকল কিছুর মালিক । তাই কর্তৃত্ব তো তারই থাকবে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন