শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ফটোসেশনে ডেঙ্গু নিধন

এডিস মারতে উত্তরে স্টিকার থেরাপি, দক্ষিণে ‘কমিউনিটি অ্যাম্বাসেডর’ নিয়োগ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৪ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০১ এএম

রাজধানীর কদমতলীতে মুরাদপুর আদর্শ সরকারি স্কুল প্রাঙ্গনে জমে থাকা পানিতে মশার লাভায় ভরা। গতকাল তোলা ছবি -ইনকিলাব


সিনেমা বা নাটক মুক্তির আগে দর্শকদের আকর্ষণ বাড়াতে ‘ট্রেইলার’ প্রচার করা হয়। ট্রেইলার দেখে দর্শকরা ওই সিনেমা বা নাটক দেখার জন্য উৎসাহী হয়ে উঠেন। ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটার পর এডিস মশা নিধনে প্রতিদিন ঢাকার দুই সিটি মেয়রের মশা নিধন কার্যক্রমের ট্রেইলার টিভিতে দেখানো হচ্ছে। এমনকি দুই মেয়রের নানান কার্যক্রম টিভিতে লাইফ টেলিকাস্ট করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে নিত্যদিন প্রচারিত হচ্ছে মেয়রদের কার্যতৎপরতার সচিত্র প্রতিবেদন। মানুষ প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টা এসব দৃশ্য দেখছে। কেবল মশা নিধনে রাজধানীতে যে কার্যকর ওষুধ ছিটানোর প্রয়োজন, শুধু সেটাই দেখছে না। তাহলে কী ‘ট্রেইলার’ দেখে যেমন সিনেমা প্রেমীরা হলে গিয়ে ছবি দেখতে উৎসাহী হন; তেমনি এডিস মশাও কী মেয়রদ্বয়ের কার্যক্রমের ‘ট্রেইলার’ দেখে ভয়ে পালাবে?

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে প্রতিদিন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা নিয়ে বুলেটিন প্রচার করা হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে এক হাজার ৪৪৬ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। আর রাজধানী ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের দুই মেয়রের এডিস মশা নিধনের ট্রেইলার দেখানো হচ্ছে। দুই মেয়রের মশক নিধন কার্যক্রমের ট্রেইলার দেখানো এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বুলেটিন প্রচার রুটিন ওয়ার্কে পরিণত হয়েছে। অবশ্য মশা নিধনে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মিটিং ও র‌্যালি হচ্ছে। ভ্রাম্যমান আদালত বাড়ি বাড়ি গিয়ে জরিমানা করছে; মানুষকে সচেতন করছে। এসব কর্মকান্ডে এডিস মশার কামড় ও ডেঙ্গু রোগী কি কমছে?

সারাদেশে ডেঙ্গু নিয়ে যখন আতঙ্ক উদ্বেগ তখন ফলাও করে প্রচার করা হলো ঢাকা উত্তরের সিটি মেয়র চীন থেকে এবং ঢাকা দক্ষিণের সিটি মেয়র ভারত থেকে এডিস মশা নিধনের ওষুধ আমদানী করছেন। ঢাকা দক্ষিণের নগর ভবনে ভারত থেকে আমদানী করা ওধুষের পরীক্ষার পর প্রচার করা হলো ‘সাকসেসফুল’। কিন্তু সিটিতে ওষুধ ছিটানোর দেখা নেই। বরং দুই মেয়র এডিস মশাকে ভয় দেখাতে নতুন নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। কেউ মশা নিধনে ‘কমিউনিটি অ্যাম্বাসেডর’ নিয়োগ দিয়েছেন। আবার কেউ এডিস মশার লার্ভা নিধনে ‘স্টিকার’ থেরাপি দিচ্ছেন। শুধু তাই নয়, নিত্যদিন সেমিনার, সিম্পোজিয়া, মন্ত্রী ও বিশিষ্টজনদের সঙ্গে মতবিনিময়, প্রজেক্টর বসিয়ে কোলকাতা টু ঢাকা ভিডিও কনফারেন্স, এমনকি ঢাকার বাড়িওয়ালাদের হুমকি-ধমকি দিয়ে এডিস মশা নিধনের চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু এডিস মশা কিছুতেই ভয় পাচ্ছে না এবং বংশ বৃদ্ধি বন্ধ করছে না।

ইনকিলাবের পক্ষ থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটির কয়েকজন কাউন্সিলরের সঙ্গে যোগাযোগ করে এডিস মশা নিধনের ওষুধ ছিটানোর খোঁজ নেয়া হয়। তারা জানান, পর্যাপ্ত ওষুধ নেই, ফগার মেশিন নেই, নতুন ওয়ার্ডে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কোন ওষুধ ও বাজেট দেয়া হয়নি। প্রতিটি ওয়ার্ডে মাত্র ২টি ফগার মেশিন; যার জন্য দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে ডেঙ্গু রোগ। কাউন্সিলররা কেউ কেউ নিজ উদ্যোগে কিছু করলেও অধিকাংশ কাউন্সিলর শুধু মিটিং আর র‌্যালি করেই দায়িত্ব শেষ করছেন। ওয়ার্ড কাউন্সিলররা নিজেরাই ডেঙ্গু আতঙ্কের কথা জানান। তাদের মতে এখনই ওষুধ না ছিটালে সেপ্টেম্বর অক্টোবরে ডেঙ্গু ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।
অ্যাম্বাসেডর নিয়োগ, স্টিকার থেরাপি
এডিস মশা নিধনে ওষুধ ছিটানোর চেয়ে নিজেকে ‘হিরো’ বানাতে টিভিতে ট্রেইলার প্রচারে বেশি মনোযোগী ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন। কার্যকর ওষুধ ছিটানোর বদলে তিনি ঢাকা দক্ষিণকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণসহ নাগরিকদের সমস্যা চিহ্নিত করতে কমিউনিটি অ্যাম্বাসেডর নিয়োগ দিয়েছেন। এই কমিউনিটি অ্যাম্বাসেডর এডিস মশার উৎপত্তিস্থল ও লার্ভা ধ্বংসে কাজ করবে। ডিএসসিসি মেয়র সাঈদ খোকন সাংবাদিকদের বলেছেন, এরই মধ্যে সিটি করপোরেশন এলাকাকে চার ভাগে ভাগ করে প্রত্যেক ভাগে ৭ জন করে মোট ২৮ জন কমিউনিটি অ্যাম্বাসেডর নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাদের কাজ হচ্ছে কোন কোন এলাকায় মশার উপদ্রব বাড়ছে, কোথায় ওষুধ ছিটাতে হবে, এসব চিহ্নিত করে সেসব এলাকায় মশক নিধনকর্মী পাঠাবে। অবশ্য টিভির ট্রেইলারে তার হুংকার সেপ্টেম্বরের প্রথম সাপ্তাহে এডিস মশা বিতারিত করে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করবো প্রচার হচ্ছে।

এদিকে ঢাকা উত্তর মেয়র এডিস মশা নিধনে জনসম্পৃক্ততা বাড়িয়েছেন। তিনি সারাদিন ঘুরছেন এবং মশা নিধন ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার প্রতি নগরবাসীকে উৎসাহী করে তুলছেন। কিন্তু ওষুধ না ছিটানোয় এডিস মশা মেয়রের ভয় পাচ্ছে না। ডিএনসিসির মেয়র প্রতিটি ওয়ার্ডকে ১০ ভাগে ভাগ করে স্থানীয় নাগরিকদের অন্তর্ভুক্ত করে চিরুনি অভিযানের উদ্যোগ নিয়েছেন। সেই অভিযানে যেসব বাসাবাড়িতে মশার লার্ভা পাওয়া যাবে সেই বাড়িতে ‘এই বাড়ি ও স্থাপনায় এডিসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে’ শীর্ষক লাল ‘স্টিকার’ লাগিয়ে দেওয়া হবে। এ লক্ষ্যে কয়েক হাজার স্টিকার ছাপানো হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী ৩ দিনের বেশি কোনও স্থানে পরিষ্কার পানি জমা পড়ে থাকলে সেখানে এডিস মশার লার্ভা জন্মায়। সে অনুপাতে প্রতি ৩দিন পরপর বাসাবাড়ির প্রতিটি স্থান পরিদর্শন করা হবে। তিনি মানুষের বাড়িতে প্রবেশে বাধা দিয়ে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দেন। এ প্রসঙ্গে মেয়র আতিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছেন, আমরা যে বাড়িতে এডিসের লার্ভা পাবো সেই বাড়িতে একটি স্টিকার লাগিয়ে দেবো। যদি দেখা যায় বাড়ির মালিক সংশোধন হননি তখন আইন অনুযায়ি ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা এক একটি ওয়ার্ডকে ১০টি ভাগে ভাগ করেছি। এর প্রতিটি ভাগকে আবারও ১০টি ভাগে ভাগ করেছি। প্রতিটি ভাগে ১শ’ জন করে লোক নিয়োগ করা হয়েছে। সামাজিকভাবে পরিচিত স্থানীয় মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। কমিটি প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা চেক করবে। আমার মনে হয় এতে বাসাবাড়ির মানুষ সচেতন হবে। এডিস মশা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

দক্ষিণ সিটির হালচাল
শুধুই হাকডাক! এডিস মশা নিধনে কার্যকর ওষুধ ছিটানোর দেখা নেই। ঢাকা দক্ষিণ সিটির নগর ভবনে চলতি মাসের প্রথম সাপ্তাহে ভারতের টেগ্রোস কেমিক্যাল ইন্ডিয়া লিমিটেড থেকে আমদানি করা ওষুধ ম্যালাথিউন ৫% ও ডেল্টামেথ্রিন ১১.২৫% ইএলভি পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় দুদিন পর বলা হয় ভারত থেকে আমদানি করা নমুনা ওষুধের ফিল্ড টেস্ট রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ওষুধটি শতভাগ কার্যকর। এটি ছিল প্রাথমিক পরীক্ষা। ম্যালাথিউন ৫% ও ডেলটাম্যাথরিন ১.২৫% নামে ওষুধ দু’টির শতভাগ কার্যকারিতা পাওয়া গেছে। কিন্তু সে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে কোথায়? কয়েকজন কাউন্সিলর বলছেন- তারা মশা মারার কোনো ওষুধ পাননি। ঢাকা দক্ষিণের ৫২ নং ওয়ার্ড (থানা কদমতলী) কাউন্সিলর নাসিম মিয়া জানান, প্রতিটি ওয়ার্ডে ডেঙ্গু বিষয়ে একটি কমিটি আছে। আমি কমিটির উপদেষ্টা মাত্র। সুপারভাইজ করা ছাড়া আমার কোন কাজ নেই। এর বেশী বলতে রাজি হননি তিনি। অথচ ৫২ নং ওয়ার্ডে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা অর্ধশতাধিক ছাড়িয়ে গেছে। মুরাদপুর হাইস্কুল রোডের মুদি দোকানদার আহমদ ভান্ডারী বলেন, মশার ওষুধ মাঝে মাঝে ছিটায়; কিন্তু এই এলাকায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা তো দিন দিন বেড়েই চলেছে। তাই দিনের বেলায় কয়েল জ্বালিয়ে রাখি। ৫৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর (কামরাঙ্গীর চর) নুরে আলম বলেন, প্রয়োজনীয় ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না। তারপর ও আমরা নিজ উদ্যেগ্যে জনগনকে সেবা দেয়ার পাশাপাশি প্রতিদিন ৪টি বাড়িতে লার্ভা বা মশক নিধন করছি। এলাকার বাসিন্দা আশ্রাফাবাদের জলিল মাতবর বলেন, কামরাঙ্গীরচর এলাকায় অর্ধশতাধিক ডেঙ্গু রোগী আছে ,কিন্তু ওষুধ নাই তাই ছিটানো হচ্ছেনা। আমরা খুবই আতঙ্কের মধ্যে আছি। ৫৯নং ওয়ার্ড (কদমতলীর মেরাজ নগর, মোহাম্মদবাগ) কাউন্সিলর আকাশ কুমার ভৌমিক বলেন, কোন ওষুধ নেই, কোন ফগার মেশিনও নেই। মেয়র সাহেব বলেছেন, নুতন ওয়ার্ডে কোন বাজেট নেই। তাই নিজ খরচে ওষুধ কিনে যতটুকু পারা যায় চেষ্টা করে যাচ্ছি। এই পর্যন্ত ৪/৫ জন রোগীর ব্যায়ভার বহন করেছি এবং কোন ডেঙ্গু রোগী থাকলে তার সমস্ত খরচ আমি দিব বলে ঘোষণা দিয়েছি। ৩৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর (আগা সাদেক রোড, বংশাল) আউয়াল হোসেন বলেন, আমার ওয়ােের্ড ১১টি ইউনিট ফগার মেশিনের জায়গায় আছে মাত্র ২টি। এ ছাড়া পর্যাপ্ত ওষুধ নেই। পুরনো ঢাকার অলিগলিতে এখন প্রতিদিন ওষুধ ছিটানো দরকার কিন্তু ওষুধ নেই। মেয়রকে জানালে তিনি বলেছেন ধৈর্য্য ধরতে। ৩৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর (টিকাটুলী, গোপীবাগ, আর কে মিশন রোড, ওয়ারী থানা) ময়নুল হক মন্জু বলেন, আমার এলাকার স্কুল কলেজগুলোতে ইতিমধ্যেই সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান করেছি। আমার এলাকায় কেউ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হলে সকল খরচ আমি বহন করব। পর্যাপ্ত ওষুধ ও ফগার মেশিন নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, যা করছি নিজ উদ্যোগে। তবে কাউন্সিলর হিসেবে আমার চেষ্টার কোন ক্রুটি নেই। অভয়দাস লেনের বাসীন্দা এবং স্থানীয় একটি স্কুলের শিক্ষক মোস্তাক আহমেদ বলেন, মশার ওষুধ তো ছিটাতে দেখিনা, যা দেখি সব তো টিভিতে। এখানে ওষুধ ছিটানোর কোন কার্যক্রম নেই। তবে স্কুলে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে যতটুকু সম্ভব সচেতনতার কথা বলি।

ওষুধ ছিটানো হয়নি ঢাকা উত্তরে
অনেক দিন আগ থেকেই লিমিট অ্যাগ্রো প্রোডাক্ট লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান দুই সিটি করপোরেশনে মশা মারার ওষুধ সরবরাহ করে আসছে। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ১০ সেপ্টেম্বর ও ৪ অক্টোবর কোম্পানিটিকে এক লাখ ১৪ হাজার ৯৯০ লিটার ওষুধ সরবরাহ করার জন্য কার্যাদেশ দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী ১১ নভেম্বর থেকে ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে ওষুধগুলো সরবরাহের শর্ত দেওয়া হয়। দুটি চালানের মাধ্যমে প্রথম ধাপে ৫০ হাজার লিটার ও দ্বিতীয় ধাপে ৬৪ হাজার ৯৯০ লিটার ওষুধ ঢাকেশ্বরীতে মশক নিবারণ দফতরে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু এ দুটি চালান ডিএনসিসির (ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন) নিজস্ব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হওয়ায় সেগুলো গ্রহণ করা হয়নি। ওই ওষুধ ডিএসসিসির (ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। পরে ডিএসসিসি সেগুলো ব্যবহার করে। অভিযোগ ওঠে ওষুধ ছিটানোর নামে পানি ছিটানো হচ্ছে। কয়েকদিন আগে গুলশান ক্লাবে পত্রিকার সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে মশা নিধন ইস্যুতে মতবিনিময় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম। সেখানে তিনি স্বীকার করেন সিন্ডিকেট করে দুটি প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন থেকে দুই সিটিতে মশা মারার ওষুধ সরবরাহ করতো। একটি কোম্পানির ওষুধ নিম্নমানের হওয়ায় সেটাকে নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। অন্যটির বিষয়ে আলোচনা চলছে। তিনি রাজধানীর এডিস মশা নিধনে নানা কার্যক্রমের উদ্যোগের কথা জানান। এর মধ্যে তিনি কোলকাতার ডেপুটি মেয়রের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করে এডিস নিধনের চেষ্টা করেন। বাড়ি বাড়ি ঘুরে এবং সেমিনার সিম্পোজিয়াম করে মশা নিধনের চেষ্টা করছেন। এতে জনগণ কতটুকু সুবিধা পাচ্ছেন তা অবশ্য বলা দুষ্কর।

ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত
এডিস মশা দল, মত ও মানুষের পরিচিতি দেখে কামড়ায় না। শুধু সাধারণ মানুষ নয়, অনেক ডাক্তার এবং পুলিশ বাহিনীর সদস্যও এডিসের কামড়ে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। এদের কয়েকজন মারাও গেছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে এক হাজার ৪৪৬ জন সাধারণ রোগী ভর্তি হয়েছে। আগের দিন (২২ আগস্ট) এই সংখ্যা ছিল এক হাজার ৫৯৭ জন। ২১ আগস্ট ছিল এক হাজার ৬২৬ জন। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ৬১ হাজার ছাড়িয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম গতকাল এ তথ্য জানিয়েছে। সরকারি তথ্য অনুসারে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা ৪৭ বলা হলেও বেসরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা প্রায় দেড়শ’। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভাষ্য মতে, সরকারের রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) ডেঙ্গুতে ৮০ জনের সম্ভাব্য মৃত্যুর তথ্য এসেছে।

যারা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন সেই ডাক্তার ও নার্সরাও (স্বাস্থ্যকর্মী) ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন। ৩/৪ জন ডাক্তার মারাও গেছেন। এমনকি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অফিস নগরভবনে এক স্বাস্থ্যকর্মী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেব মতে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসারত ৯৪ চিকিৎসকসহ ৩০০ স্বাস্থ্যকর্মী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়, সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্সরা। একক হিসাবে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা দেয়া এই সরকারি হাসপাতালের ২৫ জন ডাক্তারসহ ৬২ জন স্বাস্থ্যকর্মী এ বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ২ জন ডাক্তার এবং ১২ জন নার্স রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১ জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ৯৪ জন চিকিৎসক, ১৩০ জন নার্স এবং ৭৭ জন হাসপাতালকর্মী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

অভিযান চলছে
এডিস মশা নিধনে ওষুধ ছিটানোয় জোর না দিয়ে ভ্রাম্যমান আদালত বিভিন্ন বাসা বাড়িতে অভিযান চালাচ্ছে। সম্প্রতি রমনার একাধিক বাড়িতে অভিযান চালায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ভ্রামমাণ আদালত। ১/সি বেইলি রোডের একটি তিনতলা বাড়িতে দেখা যায়, বাড়ির ছাদে গার্ডেন। আশপাশের ভবনের লোকজন অভিযোগ করেছেন, ওই বাসায় এডিস মশার লার্ভা জন্মাতে পারে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান চালাতে যায় ভ্রামমাণ আদালত। তবে সেখানে গাছের গোড়ায় পানি জমতে দেখা যায়নি। বাড়ির কেয়ারটেকার সুমন জানান, গার্ডেনটি দেখাশোনার জন্য দুইজন কর্মী রয়েছে। ডেঙ্গ জ্বরের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় তারা সেখানে পানি জমতে দেননি। এছাড়াও শান্তিনগরের নিটল টাটার সার্ভিসিং সেন্টারে যায় ভ্রামমাণ আদালত। তিনতলা ভবন হলেও সেটির ওপরে টিনের ছাদ রয়েছে। সেখানেও এডিস মশার কোন লার্ভা পাওয়া যায়নি।
ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্রে জানা গেছে, ওই সময় যে ৪টি বাড়িকে জরিমানা করা হয়েছে সেই বাড়ির বিভিন্নস্থানের ফেলে রাখা জমাট পাত্রের ৮০ শতাংশের মধ্যে লার্ভা মিলেছে। এছাড়াও বাড়ির নিচের গ্যারেজের পরিত্যক্ত টায়ার, বাড়ির মূল ফটকের লোহার গেটের ফাঁকে, পরিত্যক্ত কমোডে, খানাখন্দে জমানো পানি দেখতে পান। সেগুলোতে মশার বিচরণ ক্ষেত্র ছিল। তারা বাসা ও প্রতিষ্ঠানের অভিযানের পাশাপাশি বিভিন্ন পার্ক, নার্সারি ও ফোয়ারাগুলোতেও অভিযান চালাবেন। ১৯৩ ফকিরাপুলের নির্মাণাধীন একটি ভবনে এডিস মশার লার্ভা পাওয়ায় ১০ হাজার টাকা, ৪৩/১ হাজারীবাগ শেরে বাংলা রোডের বাড়ির ছাদে পরিত্যক্ত টায়ারে এডিসের লার্ভা পাওয়ায় ২৫ হাজার টাকা এবং কেএমদাস লেনের ২টি বাড়িতে লার্ভা জন্মানোর উপযোগী পরিবেশ পাওয়ায় ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়াও পুরান ঢাকার অভয় দাস লেনের ২টি বাড়িতে নোংরা ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ বিদ্যমান থাকায় ৪ হাজার টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমান আদালত। এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের একজন নির্বাহী মাজিস্ট্রেট জানান, সিটি কর্পোরেশন অভিযানের পাশাপাশি জনগণকে সচেতনও করছে। স্থানীয় জনগণ এতে সহযোগিতা করেছে। এডিস মশা যাতে চারপাশে ছড়াতে না পারে সেক্ষেত্রে তারা আগের চেয়ে অনেক সচেতন হয়েছেন।

প্রশ্ন হলো এভাবে কতদিন চলবে? ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ সরকারি হাসপাতালগুলোতে সীমাবদ্ধতার মধ্যেও ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা চলছে। কিছু কিছু বিষয়ে বিতর্ক থাকলেও ডেঙ্গু রোগীদের সেবায় ডাক্তার, নার্সদের কঠোর পরিশ্রম প্রশংসাযোগ্য। ঢাকা উত্তরের মেয়র ডেঙ্গু মোকাবিলায় সফল হতে না পারলেও তিনি এলাকার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করছেন। দক্ষিণের মেয়র ওষুধ না ছিটিয়েই সেপ্টেম্বরের মধ্যে ডেঙ্গু রোগ কমিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছেন। প্রশ্ন হলো- এভাবে কতদিন? প্রতিদিন যে পরিমাণ মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে যাচ্ছে তা খুবই উদ্বেগজনক। এখন টিভিতে ট্রেইলর দেখিয়ে প্রচারণা নয়; প্রকৃত অর্থে মশা নিধনের ওষুধ ছিটিয়ে এডিস নিধন অপরিহার্য। এডিস মশা নিধনে মেয়রদ্বয় স্টিকার থেরাপি ও অ্যাম্বাসেডর নিয়োগের বদলে ওষুধ ছিটানোর দিকে নজর দিলে মানুষ উপকৃত হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (10)
Munsi Asraful ২৪ আগস্ট, ২০১৯, ১২:৫০ এএম says : 0
একটা তামাসা শুরু হয়ে গেছে।
Total Reply(0)
Jewel Khan ২৪ আগস্ট, ২০১৯, ১২:৫০ এএম says : 0
সভা সেমিনার আর ফটোসেশনে কি ডেঙ্গু নিধন হবে????? লোক দেখানো কাজ ছেড়ে মশা মারার দিকে নজর দেন।
Total Reply(0)
Nurul Hoque ২৪ আগস্ট, ২০১৯, ১২:৫১ এএম says : 0
হে আল্লাহ তুমি সবাইকে বুঝার তাও ফিক দাও
Total Reply(0)
Dalia Chowdhury ২৪ আগস্ট, ২০১৯, ১২:৫১ এএম says : 0
আল্লাহ বাংলাদেশের মানুষকে হেফাজত করুক। আজ বাংলাদেশ অনেক বড় বিপদের মধ্যে আছে। ইনশাআল্লাহ আল্লাহই সাহায্য করবে
Total Reply(0)
Syed Zahidun Nabi ২৪ আগস্ট, ২০১৯, ১২:৫২ এএম says : 0
সি টি কর্পোরেশনের কোন মশার ঔষধ আছে কিনা সন্দেহ। পাবলিকের সাথে মশা নিয়ে মশকরা শুরু করছে।তারা মানুষের বাসায় যায় কোন সাহসে। কত টাকার ঔষধ কেনা ছিল তার হিসাব জনগণকে দিতে হবে। I fell both the Mayor are disgrace & incompetence for the country. To run city like Dhaka we need multitalented & Dynamic Person like our late Mayor Annisul Huq
Total Reply(0)
Jolilur Rahman Jolil ২৪ আগস্ট, ২০১৯, ১২:৫২ এএম says : 0
বাড়ীতে কোথাও জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতেই জন্মে এডিস মশা।এরপর ডেংগু তারপর অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু।নিজে সাবধান হন অন্যদের সাবধান করুন।
Total Reply(0)
Rehan Usman ২৪ আগস্ট, ২০১৯, ১২:৫২ এএম says : 0
এতো কষ্টকরে বাংলার জনগণ এডিস মশা পালতেছে।তাই মশাগুলো কৃতজ্ঞতা সরূপ কামড়াইতাছে আরকি। মেয়রের মনে মনে কয়,আমার কি দোষ আমি কি কামড়াইছি নাকি।
Total Reply(0)
Korim Mondol ২৪ আগস্ট, ২০১৯, ১২:৫৩ এএম says : 0
এখন কি আর কামান দিয়া মশা মরে? মরটিন, ব্লাক ফাইটার, নিম, গ্লোব এসব কামান দিয়া আগের মতো মশা মরেনা। মশা মারতে মিশাইল লাগবে !!!
Total Reply(0)
Humayun Ahamed ২৪ আগস্ট, ২০১৯, ১২:৫৩ এএম says : 0
ঢাকার সব মানুষ গুলা যার যার বাড়িতে ধুপের ধোঁয়া দিন তাহলে দেখবেন মশা পালাবে আর হ্যাঁ দুই মেয়েরের বাড়িতে যাতে ধুপের বা অন্য কোনো কিছুর ধোঁয়া দিয়ে যাতে মশা না তাড়াতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখবেন কারণ মশা যাতে তাদের বাড়িতে বাসা বাধে আর তাদের কামড়ে মেরে ফেলে..!!
Total Reply(0)
Naim Uddin ২৪ আগস্ট, ২০১৯, ৮:১১ এএম says : 0
It's the real picture of our country
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন