শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ঈদযাত্রায় ১৩৫ দুর্ঘটনায় ১৮৫ জন নিহত

নিরাপদ সড়ক চাই’র প্রতিবেদন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৫ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০১ এএম

এবারের ঈদুল আজহার ছুটিতে সারাদেশে ১৩৫টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছেন ১৮৫ এবং আহত হয়েছেন ৩৫৫ জন। গত ১০ থেকে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত মোট ৯ দিনে এসব দুর্ঘটনা ঘটে। গতকাল শনিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় সামাজিক সংগঠন ‘নিরাপদ সড়ক চাই- নিসচা’। বিভিন্ন পত্রিকা, অনলাইন নিউজ পোর্টাল, সংবাদ সংস্থা ও টেলিভিশনের তথ্য এবং সারাদেশে নিসচা’র ১২০টি শাখা সংগঠনের নেতাকর্মীদের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শামীম আলম দীপ বলেন, এবারের ঈদুল আজহায় সড়ক দুর্ঘটনা ঈদুল ফিতরের তুলনায় বেশি। ঈদুল ফিতরে দুর্ঘটনার সংখ্যা ছিল ১২৭টি। এতে নিহত হয় ১৮৪ এবং আহত হয ৩৩২ জন। প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ঈদুল ফিতরে সড়কপথে ঈদযাত্রা যতটা স্বস্তিদায়ক ছিল ঈদুল আজহায় তা ভোগান্তিতে পরিণত হয়। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের যাত্রীদের বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। লম্বা সময়জুড়ে সড়কে যানবাহনকে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। তবে নৌপথে দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া ঈদযাত্রা অনেকটা স্বস্তিদায়ক ছিল। এবারও ঈদের আগের দিন সদরঘাট টার্মিনালে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ সামলাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। রেলপথে বেশ কয়েক জোড়া নতুন বগি সংযুক্ত হলেও রেলপথে শিডিউল বিপর্যয় ও টিকিট কালোবাজারির কারণে যাত্রী হয়রানি বেড়েছে। অনলাইনে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রিতে এবারও প্রযুক্তিগত সমস্যা ও শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে রেলের যাত্রীদের বিড়ম্বনা পোহাতে হয়েছে।

নিসচার পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ঈদে উত্তরবঙ্গের সড়কে দুর্ঘটনা বেড়েছে। তবে ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডে তিনটি সেতু (কাঁচপুর, মেঘনা ও গোমতী) খুলে দেয়ায় ঢাকা থেকে চট্টগ্রামসহ পূর্ববঙ্গের বিভিন্ন জেলায় যানজট হয়নি বললেই চলে এবং সড়ক দুর্ঘটনা তুলনামূলক কম হয়েছে। তবে খুলনা ও যশোর অঞ্চলে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে।

ঈদুল ফিতরে মোটরসাইকেলে দুর্ঘটনার সংখ্যা বেশি থাকলেও এবার তা কমেছে বলে উল্লেখ করে বলা হয়, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার সংখ্যা কমলেও বাস দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়েছে। চালকের খেয়ালিপনাসহ নানা কারণে মোটরসাইকেল বিধ্বংসী বাহন হয়ে উঠেছে। সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে মোটরসাইকেলের দৌরাত্ম্য এবং চালকদের বেপরোয়া মনোভাব নিয়ে সব মহলকে ভাবতে হবে। সন্তানের হাতে মোটরসাইকেল তুলে দেয়ার আগে এর ভয়াবহতা সম্পর্কে অভিভাবকদের ভাবতে হবে। এবার ৪০টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ২৯ জন (চালক ও আরোহী) নিহত হয়েছেন। ঈদুল ফিতরে ৪৫টি দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ছিল ৩৮।

দুর্ঘটনার মূল কারণ হিসেবে- বেপরোয়া গতি, ওভারটেকিং, ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও পণ্যবাহী বাহনে যাত্রী বহন, পণ্যবাহী বাহন বন্ধের নিষেধাজ্ঞা অমান্য, অদক্ষ চালক ও হেলপার, বিরামহীন ও বিশ্রামহীনভাবে যানবাহন চালানো, সিডিউল বিপর্যয়, অতিরিক্ত যাত্রী বহন, মহাসড়কে অটোরিকশা; ব্যাটারিচালিত রিকশা; নসিমন-করিমন ও মোটরসাইকেলের অবাধ চলাচল, মহাসড়কে ছোট যানবাহনের জন্য আলাদা লেন বা সার্ভিস রোড না থাকা, ঈদ ফেরত যাতায়াতে মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকা, সড়কের বেহাল দশা, গাড়ি না পেয়ে মোটরসাইকেলে যাত্রা, সড়কে নৈরাজ্য, অতিরিক্ত ভাড়া, ট্রাফিক আইন না মানা এবং মোটরসাইকেলে একাধিক যাত্রী বহনকে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এসব সমস্যার সমাধানসহ চালকদের প্রশিক্ষণে গুরুত্ব দেওয়া গেলে আগামীতে দুর্ঘটনা কমবে।

নিসচার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, উবার ও পাঠাও’য়ের মতো ইন্টারনেটভিত্তিক রাইড শেয়ারিং বাহনগুলোর স্বেচ্ছাচারিতা বেশি লক্ষ্য করা গেছে। অ্যাপসে সাড়া না দিয়ে অতিরিক্ত ভাড়ায় যাত্রী বহনের প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা গেছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণসহ স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধে এবং মনিটরিংয়ের আহ্বান জানানো হয়। অন্যথায় সিএনজি অটোরিকশা চালকদের মতো এরাও বেপরোয়া হয়ে উঠবে এবং যাত্রী বিড়ম্বনা বাড়বে।
শামীম আলম দীপের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত বিআরটিএর সাবেক চেয়ারম্যান আয়ুবুর রহমান খান, সংগঠনটির উপদেষ্টা ম. হামিদ, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম আজাদ হোসেন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মিরাজুল মইন জয়, যুগ্ম মহাসচিব বেলায়েত হোসেন খান নান্টু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন