শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

এডিস মশার বন্ধ্যাত্ব নিয়ে ভাবছে গবেষকরা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৫ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০১ এএম

বর্তমান ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে সরকার গৃহীত চলমান মশক নিধন অভিযান অব্যাহত রাখার পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকায় সফররত আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ দলের তিন প্রতিনিধি। তাদের মতে, (এসআইটি) বা বন্ধ্যাকরণ প্রক্রিয়া সময়স্বাপেক্ষ। কিন্তু বাংলাদেশে এই মুহুর্তে বেশ ডেঙ্গুর প্রকোপ চলছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে বন্ধ্যাকরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে সফলতা পাওয়া সম্ভব নয়। তবে দীর্ঘমেয়াদে এই প্রক্রিয়ায় সফলতা পাওয়া সম্ভব। 

গত বুধবার স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি কমিশন, জাতিসংঘের ফুড এন্ড এগ্রিকালচার সংস্থা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডবি¬উএইচও) তিন প্রতিনিধির দেয়া বক্তব্যে উল্লেখিত বিষয় উঠে এসেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল কালাম আজাদ এ তথ্য দিয়ে বলেন, বাংলাদেশে পুরুষ এডিস মশা স্টেরাইল ইনসেক্ট টেকনিক (এসআইটি) বা বন্ধ্যা করে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করার পদ্ধতি কার্যকর করা যাবে কিনা-এর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ দলটি গত বুধবার ঢাকায় আসে। স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় ডবি¬উএইচও প্রতিনিধি একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন।
বিশেষজ্ঞদের প্রসঙ্গে প্রফেসর আবুল কালাম আজাদ বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রনে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিজ্ঞানসম্মত বিভিন্ন পদ্ধতি খতিয়ে দেখতেই এই বিশেষজ্ঞ দলের এদেশে আসেন। তারা জেনেভা থেকে বুধবার ঢাকায় নেমেই দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের সংশি¬ষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে তারা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রন এবং ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা নিধনে যেসব কার্যক্রম চলমান রয়েছে, সেগুলো অব্যহত রাখতে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন। কারণ দেশে ডেঙ্গুর যে আউটব্রেক চলছে সেটি নিয়ন্ত্রনে র‌্যাপিড ব্যবস্থার বিকল্প নেই। তারা আক্রান্ত রোগীদের যথাযথ চিকিৎসা প্রদানের পাশাপাশি, মশার প্রজননক্ষেত্র ধ্বংশ, ফগিংয়ের মাধ্যমে প্রপ্তবায়স্ক মশা মারার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বৈঠকে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ দল পুরুষ এডিস মশা বন্ধ্যা করার পদ্ধতি কয়েকটি দেশে কার্যকর করার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। ঢাকার কাছে সাভারে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি গবেষণা কেন্দ্রে পুরুষ এডিস মশাকে বন্ধ্যা করে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি নিয়ে একটি গবেষণা সম্প্রতি সম্পন্ন করেছে। তবে পাইলটিং এখনো চলমান রয়েছে। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা গত বৃহস্পতিবার সাভারে গিয়ে সেখানকার গবেষকদের সঙ্গেও আলোচনা করেন।
সংশি¬ষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ডেঙ্গু সংক্রমন ঠেকাতে বিজ্ঞানীরা বহুবছর ধরে মানুষকে আক্রমনকারী মশাবাহিত ভাইরাস প্রতিরোধে ওলবাকিয়া ব্যাক্টেরিয়া নিয়ে কাজ করছে। এই ব্যাক্টেরিয়া নিরাপদ। প্রকৃতিতে অন্যান্য পোকা মাকড়ের মধ্যে এটি পাওয়া গেলেও এডিস ইজিপ্টি মশায় এটি পাওয়া যায় না। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন এই ব্যাক্টেরিয়া যদি এডিস ইজিপ্টির মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়া যায় তাহলে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, জিকা ভাইরাসের সংক্রমন লাঘব সম্ভব হবে। এটি মূলতো দুইভাবে মশার দেহে কাজ করে- ভাইরাসের বিরুদ্ধে মশার শরীরে রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়ায় এবং ভাইরাস বৃদ্ধি ব্যহত করে। বিজ্ঞানীদের মতে, এই প্রক্রিয়াটি প্রাকিৃতিক, সাশ্রয়ী এবং টেকসই। ওয়ার্ল্ড মাস্কিউটো প্রোগ্রাম নামক প্রকল্প অষ্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের ১২টি দেশে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করছে।
এছাড়া স্টেরাইল ইনসেক্ট টেকনিক (এসআইটি) বা মশা বন্ধাকরণ পদ্ধতি প্রয়োগ করেও কোন কোন দেশে এডিস নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় গামা রশ্মি ব্যবহার করে এডিস পুরুষ মশাকে বন্ধাকরণ করা হয়। তারপর এই মশা স্বাভাবিক মশার তুলনায় ১০গুণ বেশি ছেড়ে স্ত্রী মশার সঙ্গে প্রজনন ঘটানো হয়। তারপর স্ত্রী এডিস ডিম পাড়লে সেই ডিম থেকে আর লার্ভা জš§ায় না।
বিশিষ্ট কীটতত্ত¡বিদ ড. মঞ্জুর চৌধুরী বলেন, ওলবাকিয়া এবং এসআইটি পদ্ধতি দুটিই ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ। বর্তমাদের আমদের দেশে ডেঙ্গুর যে অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে সে অবস্থা এসব পদ্ধতি প্রয়োগ সময়োপযোগী নয়। তিনি বলেন, এই মূহুর্তে উন্নত মানের ফগিং মেশিন ও কার্যকর ওষুধ ব্যবহার করে বিস্তৃর্ণ এলাকায় ফগিং করে প্রাপ্তবয়স্ক এডিস মশা মারতে হবে। পাশপাশি প্রজননক্ষেত্র ধ্বংশ করতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার এন্ড কেন্ট্রাল রুমের তথ্য অনুযায়ি ঢাকাসহ সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত সংখ্যা কমেছে। গত ২৪ ঘন্টায় (শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) ১১৭৯ জন নতুন করে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এরমধ্যে ঢাকার ৫৭০ জন এবং ঢাকার বাইরে ৬০৯ জন। গত ১ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৬২ হাজার ২১৭ জন। মৃতের সংখ্যা ৪৭ জন। তবে সরকারি ভাবে আক্রান্ত ও মৃতের যে সংখ্যা প্রকাশ করা হয়েছে, প্রকৃত আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা এরচেয়ে অনেক বেশি।
৪ জনের মৃত্যু
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালের উপ-পরিচালক চিকিৎসক ল²ীনারায়ণ মজুমদার জানান, শনিবার ভোর ৬টার দিকে জারিফ হোসেন নামে এই শিশুর মৃত্যু হয়।
রাজধানী ঢাকার ইবনে সিনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন অজয় দাস (২৫) নামে এক তরুণ। গতকাল শনিবার ইবনে সিনা হাসপাতালের গ্রাহক সেবা বিভাগের কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। নিহত তরুণ চাঁদপুরের মতলব থানার সুজাতপুর গ্রামের গৌতম দাসের ছেলে।
এদিকে ডেঙ্গু জ্বরের সাথে দীর্ঘ এক সপ্তাহ যুদ্ধ শুক্রবার গভীর রাতে মৃত্যু কাছে পরাজিত হয়েছেন কেরানীগঞ্জের আবুল কালাম (৩০)। শুক্রবার গভীর রাতে রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালে শেষ নিঃস্বাস ত্যাগ করেন তিন। শনিবার সকালে স্থানীয় হাউলি কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়।
অপরদিকে পিরোজপুর সদর উপজেলার টোনা গ্রামের নজরুল ইসলাম বাবুল হাওলাদারের স্ত্রী চার সন্তানের জননী মমতাজ বেগম (৪৫) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে টানা নয় দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে মৃত্যু বরণ করেছেন। শনিবার তাকে তার টোনা গ্রামের পারিবারিক কবর স্থানে দাফন করা হয়েছে।##

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন