শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কমরেড মোজাফ্ফর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন

রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় কুমিল্লার দেবিদ্বারে দাফন আজ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৫ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০১ এএম

অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমেদের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় -পিআইডি


উপমহাদেশের বাম প্রগতিশীল রাজনীতির অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব ন্যাপ সভাপতি অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদকে আজ কুমিল্লার দেবিদ্বারের এলাহাবাদ গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে। তার একমাত্র মেয়ে আইভী আহমদ জানান, অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদের লাশ কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার উপজেলা নিজ গ্রামে নিয়ে যাওয়া হবে।

আজ রোববার সকাল দশটায় কুমিল্লা শহরের টাউন হল ময়দানে তৃতীয় নামাজে জানাজা হবে। এরপর দেবিদ্বার উপজেলার নিজ গ্রাম এলাহাবাদে চতুর্থ নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে। এর আগে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা ও বায়তুল মোকাররম মসজিদের তার দুই দফায় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারেও তার প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর হয়।

অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ এমন এক কমরেড যিনি প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতেন। কার্ল মার্র্কসের তত্ত¡ ও এঙ্গেলসের আদর্শের রাজনীতি করলেও যাপিত জীবনে পবিত্র কোরআন হৃদয়ে ধারণ করতেন। ফজরের নামাজের পর পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করতেন প্রতিদিনই। দলের নেতাকর্মী এবং পরিচিতজন বাসায় দেখা করতে গেলে নামাজ-রোজা, ইসলাম ধর্ম তথা পবিত্র কোরআনের আদেশ-নির্দেশনা অনুযায়ী জীবন যাপনের পরামর্শ দিতেন। মুসলিম মনিষীদের জীবনী গ্রন্থ পড়ার পরামর্শ দিতেন।

তিনি জীবনের বড় সময় কাকরাইল ও সেগুনবাগিচায় বসবাস করেছেন। শেষ জীবনে অসুস্থ অবস্থায় বারিধারায় মেয়ে আইভি আহমদের বাসায় বসবাস করেন। কাকরাইল ও সেগুন বাগিচার বাসায় ইনকিলাবের এই প্রতিনিধির নিয়মিত যাতায়াত ছিল। তিনি প্রায়ই বলতেন ‘ইসলামবিদ্বেষ কোনো মুসলমানের কাজ হতে পারে না। বাম রাজনীতির দর্শক কখনো মানুষকে ধর্মহীন হওয়ার প্ররোচনা দেয় না’।

ব্রিটিশ আমলে জন্ম নিয়েও অধ্যাপক মোজাফ্ফর ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, পরবর্তীতে ভাষা আন্দোলন, শিক্ষা আন্দোলন, ছয় দফা আন্দোলন, তেভাগা আন্দোলন, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান এবং ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে গৌরবময় ভূমিকা পালন করেন। অসাম্প্রদায়িক শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য তিনি ছিলেন একজন আপসহীন সংগ্রামী মানুষ। বাম ধারার অযুত লক্ষ নেতাকর্মীর কাছে তিনি ছিলেন অত্যন্ত দায়িত্ববান ও কর্মিবান্ধব অভিভাবক।

তিনি দেশের শত শত ছাত্রছাত্রীকে ডাক্তারি পড়াতে সোভিয়েত ইউনিয়ন পাঠিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রায় ৪৮ বছর পর মুক্তিযোদ্ধাদের সুবিধা-ভাতা নেয়ার হুড়োহুড়ি, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধের তালিকা নিয়ে যখন তীব্র বিতর্ক তখন মুজিবনগর সরকারের এই উপদেষ্টাকে ২০১৫ সালে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ দেয়া হয়। কিন্তু তিনি সে পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন ‘পুরস্কারের জন্য মুক্তিযুদ্ধ করিনি। দেশের জন্য যুদ্ধ করে পুরস্কার নেয়া কোনো দেশপ্রেমিকের কাজ নয়’। মানুষের বঞ্চনা আর শোষণের বিপক্ষে সারাজীবন লড়ে যাওয়া এই রাজনীতিবিদ গত শুক্রবার রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন মুজিবনগর সরকারের উপদেষ্টা অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের প্রতি গতকাল শ্রদ্ধা জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীসহ দলমত নির্বিশেষে দেশের প্রায় সকল রাজনৈতিক দলের নেতা-প্রতিনিধি।

শনিবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, মন্ত্রী-এমপি ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। প্রেসিডেন্টের পক্ষে তার সহকারী সামরিক সচিব শ্রদ্ধা জানান।

আওয়ামী লীগের পক্ষে দলীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে মরহুমের রুহের শান্তি কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। এর আগে মরহুমের কর্মময় জীবন নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন তার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মীরা। বীর এ মুক্তিযোদ্ধার কফিন জাতীয় পতাকায় মোড়ানো ছিল।

জানাজায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, ব্যারিস্টার আমির-উল ইসলাম, দীলিপ বড়–য়া, হাসানুল হক ইনু, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, মাহবুব উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুস সোবহান গোলাপসহ সংসদ সদস্য ও বিভিন্ন দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এসময় মরহুমের জীবনী পাঠ করেন ন্যাপের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন। জানাজা শেষে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মোজাফ্ফর আহমেদকে গার্ড অব অনার ও রাষ্ট্রীয় সালাম প্রদান করা হয়। এ সময় এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

সংসদ ভবন থেকে দুপুর সাড়ে ১২টায় অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদের লাশ নিয়ে আসা হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানে সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা জানান সাধারণ মানুষের অধিকারের রাজনীতি করা এই আপসহীন মানুষটিকে। সামাজিক, সাংস্কৃতিক আর রাজনৈতিক অঙ্গনের সবাই সামিল সেই শ্রদ্ধার মিছিলে সামিল হন। সেখানেও তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। শ্রদ্ধা জানাতে আসা মানুষের কথা প্রজন্মের পর প্রজন্মের কাছে অনুসরণীয় হয়ে থাকবেন অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ।

তার জন্য রাখা শোক বইয়েও অনেকে লিখেছেন স্মৃতিকথা। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছিল সর্বস্তরের মানুষের ঢল। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, বিএনপির পক্ষ থেকে স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদের) সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার, সাম্যবাদী দলের (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী) সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়–য়া, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি সভাপতি আ.স.ম আব্দুর রব, ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সহ-সভাপতি প্রফেসর মুনতাসীর মামুন, মুক্তিযোদ্ধা শফিকুর রহমান, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়েশা খানম, সাবেক ছাত্রনেতা কামরুজ্জামান আনসারী, সুভাস সিংহ রায়, মুকুল চৌধুরী, গণতন্ত্রী পার্টির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন প্রমুখ মোজাফ্ফর আহমদের লাশে শেষ শ্রদ্ধা জানান।

ঢাবি পরিবাবেরর পক্ষ থেকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে যান ভিসি প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামান ও আইন বিভাগের প্রফেসর মিজানুর রহমানসহ শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের একটি প্রতিনিধি দল। এ সময় বিভিন্ন দলের নেতারা অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদের কর্মময় জীবন নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন।

মোজাফ্ফর আহমদের মৃত্যুতে ঢাবি ভিসি প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামান গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। গতকাল শনিবার বিশ^বিদ্যালয়ের গণসংযোগ দফতর থেকে পাঠানো এক শোক বিজ্ঞপ্তিতে ঢাবি ভিসি বলেন, শুধু বাংলাদেশেই নয় এই উপমহাদেশের রাজনীতির একজন পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছিলেন প্রফেসর মোজাফ্ফর আহমদ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, গণতন্ত্র, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সমুন্নত রাখতে তাঁর যে ভূমিকা তা জাতীয় ইতিহাসে সমুজ্জ্বল হয়ে থাকবে।

তিনি গরিব ও মেহনতি মানুষের স্বার্থ রক্ষায় আজীবন সংগ্রাম করেছেন। ভিসি মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন এবং তাঁর পরিবারের শোকসন্তপ্ত সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।

এরপর বাদ আসর বায়তুল মোকাররম মসজিদে মোজাফফর আহমদের দ্বিতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। নামাজে জানাজায় ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররমের পেশ ইমাম মাওলানা এহেসানুল হক। সেখানের সর্বস্তরের মানুষ নামাজে জানাজায় অংশগ্রহণ করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (11)
Sangram Datta ২৫ আগস্ট, ২০১৯, ১২:৫১ এএম says : 0
We salute the dauntless, honest, dedicated, patriotic & secular left politician.
Total Reply(0)
Sarwar Hossain ২৫ আগস্ট, ২০১৯, ১২:৫১ এএম says : 0
ইন্না-লিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাহি রাজিউন .... আল্লাহ যেন তার সমস্ত গুনাহ মাফ করে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করেন।
Total Reply(0)
Nuruzzaman Delowar ২৫ আগস্ট, ২০১৯, ১২:৫২ এএম says : 0
বিনম্র শ্রদ্ধা। মহান আল্লাহ তাকে জান্নাত নসীব করুন আমিন।
Total Reply(0)
Aminul Islam Jewel ২৫ আগস্ট, ২০১৯, ১২:৫২ এএম says : 0
একজন কিংবদন্তীকে হারাল বাংলাদেশ ! বিনম্র শ্রদ্ধা ।
Total Reply(0)
Rezaul Karim Lotus ২৫ আগস্ট, ২০১৯, ১২:৫২ এএম says : 0
May his soul rest in peace
Total Reply(0)
Salahuddin Mahmud ২৫ আগস্ট, ২০১৯, ১২:৫২ এএম says : 0
Inna lillahe wa inna Elihe Rajiun. A role model politician. My honour and gratitude for him.
Total Reply(0)
Sheik Mohiuddin ২৫ আগস্ট, ২০১৯, ১২:৫৩ এএম says : 0
ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। আল্লাহ তাঁকে বেহেস্ত নসীব করুন। আমীন।
Total Reply(0)
Taher ২৫ আগস্ট, ২০১৯, ১:১১ এএম says : 0
Dhormo - kormo - shomaztontro ei silo tar raznitir montro. Dhormer mul kotha shomaztontro-ei kothata bujhte peresilen amar dekha ek matro shomaztontri neta commred Mozzaffor- bidaykale lal salam.
Total Reply(0)
Zahid ২৫ আগস্ট, ২০১৯, ১১:০৭ এএম says : 0
প্রকৃত নামাজির পক্ষে ইসলামের বিপক্ষে কি বাম রাজনীতি করা সম্ভব ?
Total Reply(0)
Yeasin Ahmed ২৫ আগস্ট, ২০১৯, ১২:১৩ পিএম says : 0
May Allah grant him Jannat
Total Reply(0)
ইয়াছিন উর-রহমান ২৫ আগস্ট, ২০১৯, ৩:৩৬ পিএম says : 0
আল্লাহ যেন উনাকে বেহেস্ত নসীব করেন। আমিন
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন