বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কার্যক্রম শুরু হলেই খেলাপি ঋণ কমে আসবে

চার রাষ্ট্রীয় ব্যাংকে আর রি-ফাইন্যান্সিং নয় : অর্থমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০২ এএম

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গতকাল রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেন -ইনকিলাব


অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন- সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংককে সরকারের পক্ষ থেকে আর কোনো অর্থ বরাদ্দ (রিফাইন্যান্সিং) দেয়া হবে না। বাজেটেও এসব ব্যাংকের জন্য বরাদ্দ থাকবে না। এসব ব্যাংকে নিজের টাকায় চলতে হবে। এ সময় রাষ্ট্রায়ত্ত এই চার ব্যাংককে আগামী সাতদিনের মধ্যে কর্মকৌশল জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। সরকার এগুলো দেখবেন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবেন। আমরা তাদের অর্থায়ন বাদে অন্যান্য সহায়তা করব। এদিকে এক্সিট প্ল্যান (খেলাপি ঋণ কমানো পরিকল্পনা) বাস্তবায়িত না হওয়ায় খেলাপি ঋণ বেশি দেখাচ্ছে। এটা বাস্তবায়ন হলেই খেলাপি ঋণ অনেক কমে আসবে বলে উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী।

গতকাল রোববার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সম্মেলন কক্ষে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর চেয়ারম্যান এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) সঙ্গে আলোচনা শেষে এ তথ্য জানান অর্থমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে ব্যাংকগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন মন্ত্রী।

প্রতি অর্থবছরেই মূলধন ঘাটতি পূরণের জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংককে বরাদ্দ (রিফাইন্যান্সিং) দিয়ে আসছে সরকার। তবে সেই সুযোগ আর রাখা হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাংকগুলোকে এখন থেকে আর রিফাইন্যান্সিং নয়। প্রতিবছর যে রিফাইন্যান্সিং করতাম লস (ঘাটতি) কভার করার জন্য, দ্যাট ইজ অফ (তা বন্ধ)। দ্যাট’স স্টোরি অব পাস্ট (এটা এখন থেকে অতীত)। আর কোনোদিন রিফাইন্যান্সিং হবে না।’ ‘তাদের অর্থ আয় করতে হবে। এ দেশের মানুষকে দেখাশোনা করেই তাদের বেতন নিতে হবে,’ -যোগ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, চারটি ব্যাংকের এলাকা অনেক বড় প্রায় ২৫ শতাংশ। চারটি ব্যাংককে লোকসান কমিয়ে এনে ১৫ শতাংশ লাভ করতে হবে। জনগণকে সেবা দিয়ে মুনাফা বাড়াতে হবে। অর্থনীতি মানুষের জন্য। সরকার এমন কিছু করবে না, যাতে জনগণের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংকগুলোর জন্য বরাদ্দ আছে- এমন প্রশ্নের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, এ বছরের বাজেটে কোনো বরাদ্দ নেই।

ব্যাংকগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তাদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা অবকাঠামো খাতে অনেক বিনিয়োগ করেছি। বর্তমানে এসবের সুফল পাবো। এসবের সুফল পেতে থাকলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশের নিচে নামবে না। তবে ব্যাংকগুলোকে সম্পদের সঠিক ব্যবহার করতে হবে এবং বুঝে শুনে ঋণ দিতে হবে। একই সঙ্গে আমাদের আর্থিক খাত ঠিকভাবে চলছে। আমরা অর্থনীতির সব খাতেই ভালো করছি। রফতানি বাড়ছে। যারা বলছে রফতানি কমছে তারা অসত্য বলছে।

খেলাপি ঋণ প্রসঙ্গে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, এক্সিট প্ল্যান (খেলাপি ঋণ কমানো পরিকল্পনা) বাস্তবায়িত না হওয়ায় খেলাপি ঋণ বেশি দেখাচ্ছে। এটা বাস্তবায়ন হলেই খেলাপি ঋণ অনেক কমে আসবে। এই এক্সিট প্ল্যান আদালতে আছে। এটা বিচারাধীন থাকায় এই বিষয়ে কিছু বলা ঠিক হবে না। আইনের দ্রুত সুরাহা হলেই খেলাপি ঋণের বর্তমান চিত্র থাকবে না। আইনটি বাস্তবায়নাধীন থাকায় অনেক ব্যবসায়ী খেলাপি ঋণ পরিশোধ করছে না।
এমনকি যারা দিত, তারাও এখন দিচ্ছে না। যারা এ সুযোগ নেবে, তারা তো ব্যবসায়ী।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা তাড়াতাড়ি এর সুরাহা করব। সুরাহা করলে আমাদের অবস্থা আপনারাই মূল্যায়ন করতে পারবেন। আপনারা খুশি হবেন। তখন দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের চিত্রই বদলে যাবে। এছাড়াও, ব্যাংক ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার বিষয়ে শিগগরিই সার্কুলার জারি করা হবে বলে উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী। আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, অনেকেই তারল্য সঙ্কট নিয়ে চিন্তিত। কিন্তু আমাদের তারল্যের পরিমাণ প্রায় ৯২ হাজার কোটি টাকারও বেশি। আমানত এবং ও দিক থেকেও আমাদের অবস্থান খুব ভালো। পুঁজিবাজার প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, পুঁজিবাজার সঠিকভাবে চলছে। এখানে বাইরের পুঁজিনাই। পুঁজিবাজার আমাদের ক্ষতির কারণও হবে না।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলাম, ইআরডি সচিব মনোয়ার আহমেদ, অর্থ সচিব আবদুর রউফ তালুকদার, সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জিয়াউল হাসান সিদ্দিকী এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আতাউর রহমান প্রধান, জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান জামালউদ্দিন আহমেদ এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুছ ছালাম আজাদ, অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস উল ইসলাম, রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মনজুর হোসেন এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক মুক্তির স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে: অর্থমন্ত্রী
এদিকে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, বঙ্গবন্ধু দুটি যুদ্ধ রেখে গেছেন। একটি যুদ্ধ তিনি করে গেছেন, যেটা রক্তাক্ত যুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের সময় ৩০ লাখ শহীদ, পরে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় ৪ নেতাকে হত্যার মাধ্যমে শেষ হয়েছে। আরেকটি যুদ্ধ সোনালী যুদ্ধ। এর দায়িত্ব আগামী প্রজন্মের। বঙ্গবন্ধু অর্থনৈতিক মুক্তির যে স্বপ্ন দেখেছেন, তা বাস্তবায়নে আমাদের কাজ করতে হবে।

গতকাল রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটে (আইডিইবি) জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়োজিত শোক দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।
বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে নিজের স্মৃতিচারণ করে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বঙ্গবন্ধুকে ৪ বার কাছ থেকে সুযোগ হয়েছে। একবার শ্রীমঙ্গলের আলতাফুর রহমান চৌধুরী ও আমি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে চাই। তখন তিনি আলতাফ সাহেবকে বঙ্গবন্ধু বললেন, ইলিয়াস আমার কাজটা করে দিল না। এই ইলিয়াস ছিল, শ্রীমঙ্গলের চা শ্রমিক ইউনিয়নের শ্রমিক নেতা। একজন প্রধানমন্ত্রী হয়েও দেশের মানুষের প্রতি কতো ভালোবাসা থাকলে এভাবে কথা বলতে পারেন।

পাকিস্তান আমলে বাঙালিদের প্রতি অবহেলার স্মৃতিচারণ করে বলেন, যখন অডিট রিপোর্ট করতে পাকিস্তানে যেতাম তখন বাংলাদেশি হওয়ায় চেয়ারে বসতে চেয়ার দেয়া হতো না। একটা টিনের ট্রাংক দেয়া হতো বসতে। আরেকটা দেয়া হতো, অপিট রিপোর্ট লেখার জন্য।

অর্থমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর যদি স্বাভাবিক মৃত্যু হতো তাহলে মানুষের মন থেকে তিনি হারিয়ে যেতেন। ওই চক্রটি হিসেবে ভুল করেছে। এই পৃথিবী যতোদিন থাকবে, ততোদিন তিনি আমাদের মাঝে চিরস্মরণী করে দিয়েছে। যতোদিন পৃথিবীতে সূর্য থাকবে ততোদিন বঙ্গবন্ধু আমাদের মাঝে দীপ্তিময় হয়ে থাকবে।

ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, জীবনে ডেঙ্গু ছাড়া অন্যকিছু আমাকে কাবু করতে পারেনি। বাজেটের দুই দিন আগে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হই। বাজেটের দিন জ্বর দিয়ে সংসদে যাই। কিন্তু বক্তৃতা দেয়ার সময় ৭ মিনিট আমার জ্ঞান ছিল না। ওই সময় কী হয়েছে, না হয়েছে তা এখনো মনে করতে পারি না।

আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরও মোশতাক ও মীর জাফরদের ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি। তারা ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে গ্রেনেড হামলা চালায়। ১৫ ও ২১ আগস্টের হামলা একই ধারাবাহিকতার অংশ। সেই ষড়যন্ত্র এখনো চলছে। ষড়যন্ত্র রুখতে সতর্ক থাকতে হবে।

বঙ্গবন্ধুর হত্যার ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করতে তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে জন এফ কেনেডিকে ১৯৬৩ সালে হত্যার পর এক সপ্তাহের মাথায় কমিশন গঠন করা হয়। পরে ওই কমিশনের রিপোর্ট আমেরিকার জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। ইন্ধিরা গান্ধী, রাহুল গান্ধীকে হত্যার পরও কমিশন গঠন করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী ও পরবর্তীতে তাদের মদদদাতাদের চিহ্নিত করতে কমিশন গঠনের মাধ্যমে তদন্ত করে অনুপুঙ্খভাবে জনগণকে জানানো উচিত।

সভাপতির বক্তব্যে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ওনার (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) অসমাপ্ত কাজ আমাদের করতে হবে। তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো শ্রেষ্ঠ উপায় হচ্ছে, সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে দেশপ্রেম ও সততা নিয়ে কাজ করলে বঙ্গবন্ধু চিরকাল বাংলার মাটিতে বেঁচে থাকবে। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন এনবিআরের কর প্রশাসন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা অণুবিভাগের সদস্য কালিপদ হালদার, শুল্ক রফতানি ও বন্ড অণুবিভাগের সদস্য সুলতান মো. ইকবাল প্রমুখ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন