বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

আরবের জাহেলিয়াতকবলিত কাবাকে চির কলঙ্কমুক্ত করা হয়-২

খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী | প্রকাশের সময় : ২৬ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০২ এএম

কাবাগৃহের প্রথম ও প্রধান উদ্দেশ্য ছিল সেখানে এক আল্লাহর এবাদত করা, তাঁকে স্মরণ করা এবং তাঁর প্রতি একাগ্রচিত্তে আনুগত্য প্রকাশ করা- এ সবই ছিল কাবার প্রতি প্রকৃত সম্মান প্রদর্শন ও তার পবিত্রতা রক্ষার মৌলিক বিষয়। কিন্তু আরববাসীরা সেগুলোর স্থলে হজ উপলক্ষে সমবেত হয়ে বিভিন্ন পাপাচার ও শিরকে লিপ্ত হয়ে পড়েছিল। তারা যে কাজগুলো করত তার মধ্য থেকে গত আলোচনায় আমরা কয়েকটি তুলে ধরেছিলাম। পাঠকের উদ্দেশে আজ আরো কয়েকটি তুলে ধরতে চেষ্টা করব।

যারা কোরবানি করত তারা তার রক্ত নিয়ে কাবার দ্বার প্রাচীরে লেপে দিত এবং এ কাজকে সাওয়াবের মনে করত। ইহুদিদের থেকে এ প্রথা এসেছিল বলে তাফসিরে বর্ণিত। এ প্রসঙ্গে আয়াত নাজেল হয়, ‘তোমরা যা ভালোবাস, তা হতে ব্যয় না করা পর্যন্ত তোমরা কখনো পুণ্য লাভ করবে না। তোমরা যা কিছু ব্যয় করো আল্লাহ অবশ্যই সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত।’ (সূরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৯২)

কোরবানিতে আল্লাহ তায়ালা তাকওয়া পরহেজগারীকেই গ্রহণ করে থাকেন, এটাই আসল উদ্দেশ্য।
হজ প্রথায় কোরেশরা ইসলামি নীতিবিরোধী নিয়ম চালু করেছিল যে, তারা হজের আসল এবাদতগাহ আরাফাতে গমন করত। তারা বলত, আমরা হেরমের অধিবাসী। হেরমের সীমার বাইরে আমরা যেতে পারব না, এটি আমাদের খান্দানী অপমান। এ জন্য তারা ‘মোজদালেফা’ পর্যন্ত গমন করে থেমে যেত, আরবের বাকি সকল লোক আরাফাতেই সমবেত হতো এবং সেখান হতে ‘মোজদালেফা’ ও ‘মিনায়’ আসত। আল্লাহ বলেন, ‘‘যখন তোমরা ‘আরাফাত’ হতে প্রত্যাবর্তন করবে তখন ‘মাশ আরুল হারাম’-এর নিকট পৌঁছে আল্লাহকে স্মরণ করবে। যদিও ইতঃপূর্বে তোমরা বিভ্রান্তদের অন্তর্ভুক্ত ছিলে।”

‘অতঃপর অন্যান্য লোক যেখান হতে প্রত্যাবর্তন করে, তোমরাও সেই স্থান হতে প্রত্যাবর্তন করবে। আর আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে। বস্তুত আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।’ (সূরা : বাকারা, আয়াত : ১৯৮,১৯৯)
কোরবানি করা পশুকে মনে করা হতো খোদার জন্য উৎসর্গ করা হয়েছে। এ জন্য তার ওপর সোওয়ার হতো না, পদব্রজে চলার কষ্ট স্বীকার করত। রসূলুল্লাহ (সা:) কঠোরভাবে এ প্রথা নিষিদ্ধ করেন।

কাফেররা ‘হজে¦ মুছমেত’ নামক প্রথা চালু করেছিল। অর্থাৎ হজ পালনকারী হজের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মুখে কোনো কথা বলত না, চুপ থাকত। ইসলাম মানুষের এ অসাধ্য প্রথা নিষিদ্ধ করে।
নারী-পুরুষ উলঙ্গ অবস্থায় কাবা তাওয়াফ করত। আয়াত নাজেল হয়, ‘হে বনি আদম! প্রত্যেক মসজিদে সুন্দর পোশাক পরিধান করে তোমাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন করো।’ (সূরা : আরাফ; আয়াত : ৩১)

‘নাসী’ প্রথার কারণে হজের মাস হ্রাস পেয়ে ‘জিলকদ’ মাসে এসে গিয়েছিল। তাই নবম বর্ষের হজ ঐ মাসেই অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু হজের আসল মাস ছিল ‘জিলহজ’। এ জন্য রসূলুল্লাহ (সা:) এক বছর অপেক্ষা করেন এবং তখনই হজ আদায় করেন, যখন হজ তার আসল কেন্দ্রে প্রত্যাবর্তন করে। (সীরাতুন নবী অবলম্বনে)
নগ্ন উলঙ্গ হয়ে নারী-পুরুষের একসঙ্গে খানা-ই-কাবা প্রদর্শন করার মতো বেহায়াপানা, লজ্জাস্কর ব্যাপার ছাড়া কিছুই হতে পারে না। রসূলুল্লাহ (সা:)-এর নিকট এটাই ছিল তীব্র ঘৃণা ও ক্ষোভের বিষয় এবং কাবায় স্থাপিত মূর্তি-প্রতিমার গায়ে কোরবানির পশুর রক্ত মাখানো ছিল কাফেরদের আরো ঘৃণ্য আচরণ। বাকি অন্য কারণগুলোও ছিল ইব্রাহিমী হজের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।

মোট কথা, বর্ণিত সব বিষয়ের বিবেচনা করার পরিবেশ পরিস্থিতি ছিল সম্পূর্ণ বৈরী ও আপত্তিকর। এসব কারণে পরিবেশ অনুক‚লে আসার ও কাবার গুণগত ও মানমর্যাদাগত পরিবর্তন সংস্কারের জন্য প্রথম বছরেই হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা:) প্রেরিত হন এবং পরবর্তী বছর খোদ রসূলুল্লাহ (সা:) হজ আদায় করতে গমন করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
Foysal Ahmed ২৬ আগস্ট, ২০১৯, ১:৫১ এএম says : 0
thanks a lot for this news
Total Reply(0)
Mahmud Rony ২৬ আগস্ট, ২০১৯, ১:৫১ এএম says : 0
পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে যে হারে সন্ত্রাসী আক্রমণ চলছে, এরকম তীর্থস্থানগুলো কতদিন নিরাপদ থাকবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়; এমনকি জেদ্দাতেও সন্ত্রাসী আত্মঘাতী বিস্ফোরণ হয়েছে, এবং হারাম শরীফ আক্রমণের পরিকল্পনাও জঙ্গী সংঘটন করেছে বলে জানা গিয়েছিল। সর্বোপরি একটি নিরাপদ বিশ্বই আমাদের সকলের কাম্য।
Total Reply(0)
Nasir Tushar ২৬ আগস্ট, ২০১৯, ১:৫১ এএম says : 0
কাবার ভিতরে যেকোনো দিকে ফিরে নামাজ পড়া যায়। বছরে দু’বার কাবার চাবি খোলা হয় ভেতরটা ধোয়ার জন্য। এ দু’বার হলো রমজান শুরুর এক মাস আগে, আর কোরবানির ঈদের এক মাস আগে।
Total Reply(0)
Jiboner Oddhay ২৬ আগস্ট, ২০১৯, ১:৫১ এএম says : 0
কাবা সম্পর্কে অনেককাল ধরেই কিছু ভুল ধারণা প্রচলিত ছিল যে, কাবার উপর দিয়ে কোন পাখি বা কিছুই উড়ে যেতে পারে না। আসলে অনেক পাখিই কাবার ওপর দিয়ে উড়ে যায় এবং উপরে বসেও।
Total Reply(0)
তাইজুল ২৬ আগস্ট, ২০১৯, ১:৫২ এএম says : 0
কাবাকে অনেক নামেই কুরআন-হাদিসে ডাকা হয়েছে; বাইতুল হারাম (Sacred House), বাইতুল্লাহ (House of Allah), বাইতাল আতিক (Ancient House) এবং আওয়াল উল বাইত (First House)। এর দিকে ফিরেই মুসলিমরা নামাজ আদায় করেন (‘কিবলা’)
Total Reply(0)
তানবীর ২৬ আগস্ট, ২০১৯, ১০:৩৫ এএম says : 0
কোরবানিতে আল্লাহ তায়ালা তাকওয়া পরহেজগারীকেই গ্রহণ করে থাকেন, এটাই আসল উদ্দেশ্য।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন