মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪৩০, ০৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসা বাণিজ্য

সুদহার কমাতে তিন পরামর্শ বিআইবিএমের : মুনাফার প্রতিযোগিতায় বাড়ছে খেলাপি ঋণ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৭ আগস্ট, ২০১৯, ৭:৪৫ পিএম

মুনাফার প্রতিযোগিতার কারণে গুণগত মান বিবেচনা না করেই মরিয়া হয়ে ঋণ বিতরণ করছে বেসরকরি ব্যাংকগুলো। এতে খেলাপি বাড়ছে ব্যাপক হারে যা উচ্চ সুদহারকে উস্কে দিচ্ছে। তাই সুদ হার কমাতে বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) ব্যাংকের পরিচালন ব্যয় কমানো, ঋণের গুণগত মান উন্নয়ন এবং যৌক্তিক মুনাফার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করার পরামর্শ দিয়েছে ব্যাংকগুলোকে। এছাড়া চীন ও নেপালের আদলে খেলাপি ব্যক্তিদের ওপর রেল ও বিমানের টিকিট কাটায় নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরামর্শ এসেছে আলোচকদের পক্ষ থেকে।

মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটোরিয়ামে ‘ইন্টারেস্ট রেট অ্যান্ড এক্সপানশান অব ব্যাংক ক্রেডিট’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এসব পরামর্শ এসেছে।

বৈঠকে মূল প্রবন্ধ হিসেবে সুদহার ও ব্যাংক ঋণ নিয়ে পরিচালিত একটি গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরেন বিআইবিএমের প্রফেসর মো. নেহাল আহমেদ। এতে প্রফেসর নেহাল বলেন, ঋণ গ্রহীতারদের উচ্চসুদহার ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে বড় বাঁধা। যা ঋণ পরিশোধে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। উপরন্তু উচ্চ সুদের কারণে পণ্য উৎপাদনে খরচ বাড়ার কারণে রফতানিমুখী শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সুতরাং ঋণের সুদহার যৌক্তিক পর্যায়ে আসা দরকার।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের অনেক দেশ খেলাপী ঋণ কমানোর জন্য রাষ্ট্রীয় মালিকানায় অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি গঠন করেছে। এসব কোম্পানি সকল ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কিনে নিয়ে তা আদায় করছে। এভাবে অনেক দেশই খেলাপি কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। তাই বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও সরকারকে এমন উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে এই প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, এই উদ্যোগ খেলাপী ঋণ নিয়ন্ত্রণ এবং সুদহার কমাতে সহায়তা করবে।

গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক প্রফেসর ড. বরকত-এ-খোদা। প্রধান অতিথি ছিলেন বিআইবিএম-এর মহাপরিচালক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মহা. নাজিমুদ্দিন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিআইবিএম-এর প্রফেসর এবং পরিচালক (গবেষণা, উন্নয়ন ও পরামর্শ এবং প্রশাসন ও হিসাব) ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জ্জী।

মহা. নাজিমুদ্দিন বলেন, গত কয়েক বছর ধরে সরকারের নীতি নির্ধারক পর্যায় থেকে শুরু করে সর্বত্র আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে দঁড়িয়েছে ব্যাংক সুদহার। সুদহার কম থাকলে বিনিয়োগে গতি বাড়ে। ভিশন-২০৪১, এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং ডেল্টা প্ল্যানের লক্ষ্য অর্জন করতে হলে সুদের হার কমিয়ে আনতে হবে, যাতে উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে আগ্রহী হয়। সরকার এ লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।

ড. বরকত-এ-খোদা বলেন, সরকার উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। বর্তমান সরকার অর্ন্তভূক্তিমূলক ব্যাংকিংয়ে কাজ করে যাচ্ছে। তবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উচ্চ লক্ষ্য অর্জনে সুদহার যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনতে হবে।

পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএম-এর সুপারনিউমারারি প্রফেসর হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অসম প্রতিযোগিতা অনেক সময় বিপদ ডেকে আনছে। এটি দ্রুত বন্ধ করতে হবে। ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদকেই বিষয়টি দেখভাল করতে হবে। অনেকে সঞ্চয়পত্রের সুদের হারের কারণে ব্যাংক সুদ কমানো সম্ভব হচ্ছে না দাবি করেন। তবে গবেষণায় প্রমাণিত সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ব্যাংক ঋণের সুদে তেমন কোন প্রভাব পড়ে না। ব্যাংকের ট্রেজারি ব্যবস্থাপনাটা সুষ্ঠু হলে ব্যাংক তারল্য সংকটের মধ্যে পড়ে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএমের সাবেক সুপারনিউমারারি প্রফেসর মো. ইয়াছিন আলি বলেন, ব্যাংকের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে খেলাপী ঋণ কমাতে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পুরো ব্যাংকিং খাতকে খেলাপী সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। নেপাল এবং চীনে ঋণ খেলাপীরা ট্রেন এবং বিমানের টিকেট কিনতে পারেন না। এ ধরণের উদ্যোগ বাংলাদেশেও নেওয়া যেতে পারে।

বিআইবিএমের গবেষণা তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সাল শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট খেলাপি ঋণ ছিল ১০ দশমিক ৩ শতাংশ। খেলাপির এই উচ্চ হার ব্যাংকিং খাতের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ। খেলাপি ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোর পরিচালন আয় থেকে প্রভিশন রাখতে হয়। অপেক্ষাকৃত দুর্বল ব্যাংক গুলো প্রভিশন রাখতেও ব্যর্থ হচ্ছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ব্যাংকিং খাতের প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ৬৬০ কোটি ১০ লাখ টাকা। এসব কারণেই হাজার চেষ্টার পরেও ঋণ বিতরণ বৃদ্ধি করা সম্ভব হচ্ছে না। দিন দিন কমে যাচ্ছে ব্যাংকের আমানতের পরিমাণ। যা বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে তীব্র তারল্য সংকটের তৈরি করেছে।

গবেষণা তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে বেসরকারি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ থাকলেও অর্জন হয়েছে মাত্র ১৩ দশমিক ২ শতাংশ। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম। তবে প্রায় ১০ বছর থেকে গড় আমানতের সুদহার ৯ থেকে ১১ শতাংশের মধ্যেই রয়েছে।

স্প্রেড রেট (ঋণ ও আমানতের সুদ হারের পার্থক্য) ২ থেকে ৩ শতাংশে কমিনে আনার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে গবেষণা প্রতিবেদনে। এছাড়া ঋণ বিকেন্দ্রীকরণের ওপরও জোর দেওয়া হয়েছে এতে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন