শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

খানজাহান আলী (রহ.) বিমানন্দরে বাড়বে মোংলা বন্দর ও ইপিজেডের কার্যকারিতা

প্রকাশের সময় : ১১ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আবু হেনা মুক্তি, খুলনা থেকে : বহু কাক্সিক্ষত বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি খানজাহান আলী (রহ:) বিমান বন্দর প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীর ফাস্টট্র্যাক প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এটি খুলনাঞ্চলের মানুষের জন্য আশার বাণী। তবে সরকার কৌশলী হয়ে এ প্রকল্পটি প্রাইভেট সেক্টরে বাস্তবায়নের রোডম্যাপে অগ্রসর হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীও সম্মতি দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর সাথে দফায় দফায় প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে দূতিয়ালীর দায়িত্ব পালন করছেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান। ২০১৯ সালে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি ইতিমধ্যে একনেকে পাস হয়েছে। সরকার তার বর্তমান মেয়াদকালে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের শতভাগ সুফল ঘরে তুলতে চায়। আগামী নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে এ প্রকল্পের সফলতা সহায়ক বলে মনে করছেন স্থানীয় রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
সূত্রমতে, মোংলা বন্দরকে আধুনিকায়ন করা এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। অবহেলিত এ বন্দরটিকে সূর্যালোকে প্রস্ফুটিত করার দাবি সর্বমহলের। প্রস্তাবিত বিমান বন্দরটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর বাগেরহাট জেলার মংলার অতি কাছে এবং বিভাগীয় শহর খুলনা থেকে মাত্র ১৫ কি:মি: দূরে। বিমান বন্দরটি স্থাপিত হলে এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য গতিশীল হবে। দেশী ও বিদেশী ব্যবসায়ী মহল তুলনামূলক কম সময়ে ও নিরাপদে ইপিজেড ও মংলা বন্দরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ও মালামাল পরিবহন করতে পারবে। এতে করে ইপিজেড ও বন্দরের কার্যকারিতা বাড়বে। অন্যদিকে বিশ্বের একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনের পর্যটন বিকাশে এই বিমান বন্দর বিশেষ ভূমিকা রাখবে। এদেশের পর্যটন খাতে সুন্দরবনের অপরূপ বৈচিত্র্য, হযরত খানজাহান আলী (রহ:) মাজার, ঐতিহাসিক ষাটগম্বুজ মসজিদ, পার্শ¦বর্তী গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় জাতির বঙ্গবন্ধু মাজার ও স্মৃতিসৌধ, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের পূর্ব-পুরুষের বাসস্থান রূপসার পিঠাভোগ এবং ফুলতলা উপজেলার দক্ষিণডিহির শ্বশুরালয় ইত্যাদির গুরুত্ব অপরিসীম। বিমান বন্দরটি নির্মাণ হলে পর্যটকদের নিরাপদ যাতায়াত সুবিধা হবে এবং পর্যটনখাতের উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান বলেন, বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটিসহ এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘ দিনের প্রাণের দাবী খুলনাঞ্চলে বিমান বন্দর প্রতিষ্ঠা। এ পর্যন্ত সরকারিভাবে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও তহবিল সংকটের কারণে যথাসময়ে প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখেনি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছায় প্রকল্পটি খুব দ্রুত বাস্তবায়ন হবে। খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান বলেন, ফয়লায় খানজাহান আলী বিমান বন্দর নির্মাণ প্রক্রিয়া নানা অবহেলার শিকার হওয়া সত্ত্বে¡ও যতটুকু কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে তার উপর ভিত্তি করে এবং আরো কিছু টাকা খরচ করে স্বল্প সময়ের মধ্যে ছোট যাত্রীবাহী বিমান ওঠানামার ব্যবস্থা করা সম্ভব। প্রথম পর্যায়ে এই ব্যবস্থা করে খানজাহান আলী বিমান বন্দরের ঐতিহাসিক যাত্রা শুরু করা যায়।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ, দ্বিতীয় বৃহত্তম সামুদ্রিক বন্দর মংলাকে কার্যকর ও সুন্দরবনের পর্যটন সুবিধার লক্ষ্যে খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। ১৯৯৬ সালে বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য একনেক অনুমোদন দেয়। এ বিমান বন্দরকে পূর্ণাঙ্গ অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরে রূপান্তরের জন্য ২০০১ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সিদ্ধান্ত নেয়। এর আগে বিএনপি সরকারের শেষ বছর ১৯৯৫ সালের মার্চে তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া প্রস্তাবিত খানজাহান আলী বিমানবন্দরের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গঠনের পর দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনৈতিক ও যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে পুনরায় ‘খানজাহান আলী বিমানবন্দর প্রকল্প’ গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিশেষ বিবেচনায় নেয়া হয়। ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভায় প্রাক্কলিত ব্যয় ৩শ’ ২২ কোটি টাকার পরিবর্তে ৪শ’ ৫৪ কোটি টাকা নির্ধারণের জন্য পুনরায় বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে পরিকল্পনা কমিশনকে অনুরোধ জানানো হয়। সর্বশেষ খানজাহান আলী বিমান বন্দর প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৪৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এদিকে ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুলনা-সাতক্ষীরা সফরকালে বিমানবন্দর প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতি দেন। প্রকল্প বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয়া হয়।
সূত্র মতে, অতি সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা স্বাক্ষরিত পত্রে বলা হয়েছে, দেশী ও বিদেশী মালিকানায় গঠিত যৌথ উদ্যোগে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। ওরিসিস শীর্ষক বিদেশী কোম্পানী অর্থসংস্থান করতে ইচ্ছুক। লার্সেন এন্ড ট্যারবো লি: কারিগরি বিষয়াবলি ও নির্মাণের দায়িত্ব নিতে সম্মত হয়েছে। ৩০ বছর তারা বিমান বন্দর পরিচালনা করবে। প্রকল্পটি উন্নয়ন কর্মসূচীতে অন্তর্ভুক্ত আছে। পদ্মার এপারে বৃহত্তর আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর নির্মাণের জন্য অধিক পরিমাণ জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। তাই পিপিপিতে বিমান বন্দর নির্মাণ ও পরিচালনা করলে নির্ধারিত সময়ে অর্থ সরবরাহ ও চালু করা সম্ভব হবে। প্রকল্প থেকে সাশ্রয় প্রাপ্ত অর্থ সরকার অন্য প্রকল্পে ব্যয় করতে পারবে।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেননের সভাপতিত্বে বিমান বন্দরটি নির্মাণ সংক্রান্ত আন্তঃ মন্ত্রণালয়ের সভায় গৃহীত হয় যে এই প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীর ফাস্টট্র্যাক প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন