বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সাহিত্য

নজরুল ও বাংলাদেশ

সুমন আমীন | প্রকাশের সময় : ৩০ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

পৃথিবীর একমাত্র ব-দ্বীপ বাংলাদেশ।ইতিহাসের সহগ্র বছরের পথ পরিক্রমায় আজ স্বাধীন সার্বভোম রাষ্ট্র।এই স্বাধীনতার পেছনে আছে হাজারো বীরের আন্দোলন,ত্যাগ আর রক্তের ইতিহাস।প্রাচীন গুপ্ত যুগ,পাল যুগ থেকে শুরু করে সুলতানী আমল,মুঘল আমল,নবাবী আমলের সময় থেকে ব্রিটিশদের হাতে স্বাধীনতা হারিয়ে প্রায় দুশো বছর বেনিয়াদের শোষনে জর্জরিত হয় সবুজ শ্যামল বাংলাদেশ।এই পরাধীনতার নাগপাশ থেকে জাতিকে মুক্তির পথ দেখিয়েছেন বহু কবি,সাহিত্যিক।শুনিয়েছেন জাগরণের গান।

সাম্যের কবি,মানবতার কবি,বিদ্রোহী কবি,প্রেমের কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাদের অগ্রগন্য। জাতিকে ঘুম ভাঙ্গার গান প্রথম শুনিয়েছেন তিনি। বাংলাদেশের সাথে ও নজরুলের রয়েছে প্রানের ও প্রেমের সম্পর্ক। তৎকালীন পূর্ব বাংলা আর বর্তমান বাংলাদেশ তাই নজরুলের পদচারণায়য় মুখরিত হতে দেখি।বারবার তিনি এসেছেন এই শ্যামল মাটির টানে।
কাজী নজরুল ইসলাম বাংলাদেশে প্রথম আসেন ১৯১৪ সালের জুন মাসে। চুরুলিয়া গ্রামের সেই দুরন্ত কিশোর কাজী নজরুলকে দারেগা রফিজ
উল­াহ ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল থানার কাজী সিমলা তাঁর নিজ গ্রামে নিয়ে আসেন।তিনি তাঁকে ভর্তি করে দেন নিকটবর্তী দরিরাম পুর হাই স্কুলে।তৎকালীন পূর্ব বাংলা আর বর্তমান বাংলাদেশের সাথে তাঁর ঘনিষ্টতার সূত্রপাত হয় এভাবেই।বাংলার মানুষ ও তাদের জীবন যাপন,আচার অনুষ্ঠান,সুখ-দুঃখ,হাসি কান্না,আনন্দ বেদনার দোলায় দোলায়িত হলেন নজরুল। বিস্তীর্ণ সবুজ আর শ্যামল প্রকৃতি দারুনভাবে রেখাপাত হলো তাঁর মধ্যে।
১৯২০ সালে বন্ধু মুজফফর আহমদের সাথে বরিশালে শেরে বাংলা এ.কে ফজলুল হকের বাড়ি বেড়াতে আসেন নজরুল।বরিশালের রুপ মাধুর্য নদী ও খালবিল মুগ্ধ করেছিল কবিকে।যৌবনের প্রারম্ভে বাংলাদেশের প্রকৃতি, নিসর্গ,মানুষ নতুন করে দেখলেন কবি।
কাজী নজরুলের জীবনের এক বিশাল অধ্যায় নিয়ে আছে কুমিল­ার দৌলতপুর।১৯২১ সালে হঠাৎ করেই আলী আকবর খানের সাথে কুমিল­ায় আসেন। এখানে তাঁর প্রেম,মাতৃ স্নেহ,মানুষের সাথে ভালোবাসার বন্ধন,জনপ্রিয় ব্যক্তি, দু’দুটো প্রেমের ঘটনা,তাঁর গ্রেপ্তার হওয়া,সভা সমিতিতে যোগদান,অভিমান,দুঃখ, ক্ষোভ, আনন্দ উল­াস সবকিছুই ঘটেছিল। তাই কুমিল­া অধ্যায় নজরুল জীবনের অপরিহার্য অংশ।কুমিল­ার আলী আকবর খানের বন্ধু বীরেন সেনের মা বিরজা সুন্দরী দেবীকে কবি মা› ডাকতে শুরু করেন নজরুল। আজন্ম ভালোবাসার কাঙাল কবি মা বিষয়টিতে ছিলেন অত্যন্ত স্পর্শকাতর।জেলে অনশনরত অবস্থায় সে সময়ের বিখ্যাত রাজনীতিক, সাহিত্যিক এমন কি কবি গুরু পর্যন্ত তাঁর অনশন ভাঙ্গাতে পারেন নি।কিন্তু বিরজা সুন্দরী দেবীর অনুরোধে নজরুল অনশন ভঙ্গ করেন।কুমিল­াতেই নজরুল প্রথম প্রেমে পড়েন।আলী আকবর খানের বোনের মেয়ে সৈয়দা খাতুনের সাথে তাঁর মন দেয়া নেয়া হয়।ভালোবেসে কবি তাঁর নাম রাখেন নার্গিস আসার খানম।তাকে নিয়ে গান,কবিতা লেখেন নজরুল।
নার্গিস! নার্গিস!/ কেন ফুটলে আমার গুল-বাগিচায়
আনলে মদির সুরভী।/ কেন গাইলে গজল শিরীন সুরে
কাঁদলো সাজের পূরবী।।
কিন্তু নার্গিসের সাথে কবির মিলন হয়নি।কোন এক অজানা কারনে বিয়ের আসর থেকেই চলে যান নজরুল।এই নার্গিস তাঁর জীবনে না পাওয়ার বেদনার নাম।প্রথম স্ত্রী,প্রথম প্রণয়নী নার্গিসকে কবি ভালোবেসে ছিলেন অন্তর থেকে।নার্গিসকে না পাওয়ার ফাঁকি ও প্রতারণা কবির মনে প্রচন্ড আঘাত দেয়।মানুষের প্রতি ভালোবাসা,বিশ্বাসভঙ্গ,ক্ষোভ,বেদনা,ঘৃনা তাকে দ্রোহী করে তোলে।আবার এই কুমিল­াতেই কবি পান প্রশান্তির ছোঁয়া।প্রমিলা নজরুলের জীবনে প্রশান্তির ছায়া নিয়ে আসে।প্রমিলার মাঝে কবি তাঁর প্রশান্তির খোঁজ পান।কবির বিধ্বস্থ জীবন,প্রমিলার ছোঁয়ায় প্রাণিত হয় নবতর ভাবে।কবির ‹বিজয়নী›কবিতায় পাওয়া যায়-
হে মোর রাণী!তোমার কাছে হার মানি আমি শেষে।
আমার বিজয়-কেতন লুটায় তোমার চরণ তলে এসে।
আমার সমর-জয়ী অমর তরবারী
দিনে দিনে ক্লান্তি আনে, হয়ে ওঠে ভারী
এখন এ ভার আমার তোমায় দিয়ে হারি,
এই হার মানা হার পড়াই তোমার কেশে।।
কবি কাজী নজরুল ইসলাম যখন খ্যাতির উচ্চ শিড়ায় আসীন তখন চট্টগ্রামে তার আগমন হয়।তিনি মোট তিনবার চট্টগ্রাম আসেন।প্রথমবার ১৯২৬ সালে, দ্বিতীয়বার
১৯২৯ সালে এবং তৃতীয়বার ১৯৩২সালে। চট্টগ্রামে কবি ঘুরে বেড়িয়েছেন,সভা সমিতিতে বক্তৃতা,কবিতা গান আবৃত্তি দিয়ে মাতিয়ে তুলতেন।চট্টগ্রামের দুই ভাই-বোন হাবিবুল­াহ বাহার ও শামসুন নাহার মাহমুদ কবির আত্মার আত্মীয় পরিণত হয়। (চলবে)

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন