বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

আ. লীগের দশ বছরের শাসনামলে গুম ১২০৯ জন : বিএনপি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩১ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০০ এএম

আওয়ামী লীগের টানা দুই মেয়াদের অর্থাৎ গত দশ বছরের শাসনামলে গুম হওয়া ১২০৯ জন মানুষের পরিসংখ্যান দিয়েছে বিএনপি। বিশ্ব গুম দিবসে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই তথ্য জানান।

রিজভী বলেন, গুম একটি ভয়ঙ্কর মানবতাবিরোধী অপরাধ। বাংলাদেশে বর্তমান গুমের ধারাবাহিকতা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য, যা শুরু হয়েছিল ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৫ সালে। গণতন্ত্রের অকালমৃত্যু ঘটানোর জন্যই গুমের মতো অমানবিক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ক্ষমতাসীনেরা। গণতন্ত্র হত্যায় রাষ্ট্রের এই নিষ্ঠুর চেহারা দেখে জনগণ শোক জানাতেও ভয় পায়।

তিনি বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর থেকে এখন পর্যন্ত সারা দেশে গুম হওয়া মানুষের সংখ্যা ১২০৯ জন। যার ভেতরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুম করেছে সংখ্যা ৭৮১ জন।
এদের মধ্যে রয়েছে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক এমপি এম ইলিয়াস আলী, সাইফুল ইসলাম হিরু, ঢাকা সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর চৌধুরী আলম, লাকসাম বিএনপি নেতা হুমায়ুন কবির পারভেজ সুমন। রয়েছে ছাত্রদল নেতা জাকির, নিজাম উদ্দিন মুন্না, তারিকুল ইসলাম ঝন্টু, আদনান চৌধুরী, মো. সোহেল, খালিদ হোসেন সোহেল, সম্রাট মোল্লা, মাহবুব সুমনসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনগুলোর শত শত নেতাকর্মী, যা হাজার পেরিয়ে যাবে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদকে দুই মাস গুম করে রাখার পর পার্শ্ববর্তী দেশে ফেলে দিয়ে এসেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

রিজভী বলেন, গুমের শিকার পরিবারের সদস্যরা এখনো পথচেয়ে বসে আছেন। ছোট শিশুরা অপেক্ষা করছে বাবা ফিরে আসবে সেই আশায়। সন্তানের দুশ্চিন্তায় অনেকের বাবা-মা দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন। নিখোঁজ সুমনের মা চোখের পানি ফেলতে ফেলতে অন্ধ হয়ে গেছেন। গুমের শিকার প্রতিটি পরিবারের কান্না-আহজারি আর প্রতীক্ষার দিবানিশি শেষ হচ্ছে না।

তিনি বলেন, গুমকে ব্যবহার করা হচ্ছে সুদূরপ্রসারী উদ্দেশ্য নিয়ে, বিরোধী দল ও মতকে নির্মূল করে রাষ্ট্র-সমাজে একমাত্রিকতা, কর্তৃত্ববাদী ও একদলীয় শাসনব্যবস্থাকে দীর্ঘস্থায়ী করাই এর মূল লক্ষ্য। চিরদিনের মতো নিখোঁজ হওয়ার ভয়ে মানুষ বিদ্যমান দুঃশাসনের বিরুদ্ধে যাতে প্রতিবাদী হয়ে উঠতে না পারে সেজন্য বর্তমান সরকার গুমকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। এই নিষ্ঠুর কাজের সাথে যারা জড়িত তারা হিংস্র প্রাণীর সাথেই তুলনীয়।

রিজভী অভিযোগ করে বলেন, বাংলাদেশে গুমের ইতিহাস সৃষ্টি করেছে আওয়ামী সরকার। রাষ্ট্রীয় মদদ ছাড়া কাউকে গুম করা অসম্ভব। গুম ও ক্রসফায়ারের মতো গুরুতর অপরাধের ঘটনাগুলো সমাজে, সংবাদমাধ্যমে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি হলেও তাতে সরকারের টনক নড়েনি। এতেই বোঝা যায় এতসব গুমের হোতা কারা।

তিনি বলেন, জোরপূর্বক বা যেকোনো ধরনের গুম বন্ধ করতে সরকারের প্রতি জাতিসঙ্ঘ ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা আহ্বান জানিয়েছে বহুবার। দুঃখের সাথে বলতে হয়, আওয়ামী লীগ সরকারের নীতিনির্ধারক থেকে শুরু করে প্রথম সারির মন্ত্রীরা পর্যন্ত সেই আহ্বানকে উড়িয়ে দিয়েছে। তারা সব সময় গুমের তথ্যপ্রমাণগুলোকে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা বলে এড়িয়ে চলে। তবে গুমের ঘটনার ‘একদিন তদন্ত করে বিচার হবেই’।

মৌলভীবাজার কলেজের শহীদ জিয়া অডিটোরিয়ামের নামফলক ছাত্রলীগ ক্যাডাররা ভেঙে ফেলার ঘটনার নিন্দা এবং ঢাকা মহানগর উত্তর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার মহিলা দলের গ্রেপ্তার হওয়া সভাপতি আলেয়া বেগম মনি ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জোসনা বেগমের মুক্তির দাবিও জানান তিনি।

নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, আসাদুল করিম শাহিন, অ্যাডভোকেট আবেদ রাজা, আমিনুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন