শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

বঙ্গবন্ধুর খুনিরা ছিল পরিচিত

আ.লীগ ক্ষমতায় এলে জনগণের ভাগ্যের উন্নতি হয়

ইয়াছিন রানা | প্রকাশের সময় : ৩১ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০০ এএম

গতকাল শোক দিবসের আলোচনায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা


প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনিরা সবাই ছিল পরিচিত। তারা নিয়মিত আমাদের বাসায় আসত। ডালিমের বউ, শালী, শাশুড়ি তো আমাদের বাসায় পড়েই থাকত। মেজর নূর (শেখ কামালের সহকর্মী ছিলেন) নিয়মিত বাসায় আসত। রশিদ-ফারুকও বাসায় আসত। কিন্তু এরাই জঘন্যতম ঘটনাটি ঘটায়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। আমরা দুই বোন ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর খুনি। দেশের ভেতরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী যারা বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডে জড়িত ছিল, তারা পরবর্তীতে জিয়ার সঙ্গে গেছে। অনেকে এখনো বেঁচে আছে, বড় বড় কথাও বলে। তারা বঙ্গবন্ধু হত্যায় জিয়ার পক্ষ নিয়ে নতুন সাফাই গাওয়া শুরু করেছে।
গতকাল বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ আয়োজিত জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

বক্তব্য দিতে গিয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, কান্না করতেও দেখা যায় তাকে। এ সময় অনেককেই কাঁদতে দেখা যায়। এ হত্যাকান্ডকে কারবালার হত্যাকান্ডের সঙ্গে তুলনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারবালায় যেভাবে নির্মম হত্যাকান্ড চালানো হয়েছিল; ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যেন কারবালার ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল ৩২ নম্বরে। আমরা দুই বোন ভাগ্যক্রমে সেদিন বেঁচে যাই। নারীদের হত্যা করা হলো, শিশুদের হত্যা করা হলো। দুই-তিন বছরের শিশুরা ছিল। তাদের বাবা-মায়ের লাশের সামনে আনা হলে তারা বাবা-মা বলে ডাকতে শুরু করে, কারণ তারা তো আর লাশ বোঝে না। (এ সময় মঞ্চের সামনে বসা আগস্টে নিহত শেখ ফজলুল হক মণির ছেলে সংসদ সদস্য ফজলে নূর তাপসকে মাথা নিচু করে চোখের পানি ফেলতে দেখা যায়)। কারবালার ময়দানে নারী ও শিশুদের হত্যা করা হয়, মুক্তিযুদ্ধেও নারী-শিশুদের হত্যা করা হয়েছিল। ঠিক তেমনি ১৫ আগস্ট একইভাবে হত্যাকান্ড চালায় খুনিরা। এ হত্যাকান্ড কারবালার সাথে মিলে যায়। খুনিদের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করা। এখন বাংলাদেশ পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জিডিপির (গ্রোস ডমেস্টিক প্রোডাক্ট) দেশ।

শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান যদি খুনি না হতো তাহলে খন্দকার মোশতাক কেন তাকে সেনাপ্রধান বানাল? কারণ সে ছিল রশিদ-ফারুকের আশ্রয়দাতা প্রধান ষড়যন্ত্রকারী। কিন্তু মোশতাক দুই মাসের বেশি ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। সিরাজউদ্দৌলাকে পরাজিত করে মীর জাফরও বেশি দিন ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। বিশ্বাসঘাতক হিসেবে মীর জাফরের নাম আজও প্রচলিত।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়া অবৈধভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে একই সাথে সেনাপ্রধান ও প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করে নিজেকে, যা পরবর্তীতে অবৈধ ঘোষণা করেন আদালত। ক্ষমতায় এসেই জিয়া বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিদেশে বিভিন্ন দূতাবাসে আশ্রয় দেয়। কিন্তু বর্তমানে বঙ্গবন্ধু হত্যা নিয়ে বিএনপি নেতারা নতুন সাফাই গাইতে শুরু করেছে বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, টকশো দেখার সুযোগ হয় না, এরপরও মাঝে মধ্যে দেখার চেষ্টার করি। বিএনপি নেতারা বলছে, ’৭৫ সালে তো বিএনপি গঠনই হয়নি তাহলে বঙ্গবন্ধু হত্যায় বিএনপি কিভাবে জড়িত হলো? প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির যে প্রতিষ্ঠাতা, সেই জিয়াউর রহমান নিজেই খুনি। জিয়াউর রহমান শুধু খুনের সঙ্গে জড়িত ছিল না, এই হত্যার বিচার হবে না সেই ব্যবস্থাও জিয়াউর রহমান করেছিল। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডে যারা জড়িত ছিল তাদের বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছিল। ডালিমসহ অন্যদের যখন বিদেশে পাঠানো হলো; অনেক দেশ তাদের গ্রহণ করেনি। যেসব দেশ মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের সপক্ষে ছিল, তারা বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের কূটনীতিক হিসেবে মেনে নিতে নিতে পারেনি।

তিনি বলেন, ১৯৭৯ সালে প্রথম সুইডেনে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করা হয়। এতে রেহেনা (শেখ রেহানা) গিয়েছিল। সে সময় একটি ইনকোয়ারি কমিশন গঠন করা হয়, কিন্তু সেই কমিশনের স্যার টমাস উইলিয়াম কিউসি এমপিকে জিয়া দেশে আসতে ভিসা দেয়নি। রেহানার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হলে সেখানের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে তা রিনিউ করে দেয়া হয়নি। যেন রেহানা দেশে আসতে না পারে। সে সময় এ ঘটনার প্রেক্ষিতে ভারতীয় দূতাবাসের অ্যাম্বাসেডর শামসুর রহমান চুপচাপে আমার পাসপোর্ট রিনিউ করে দেয়। এরপর আমি ১৯৮০ সালে লন্ডন যাই। জিয়া যদি খুনি না হবে তাহলে সে আমাদের সাথে এমন করত না।

’৭৫-এর পর বঙ্গবন্ধুর নাম ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৫ আগস্টে শুধু একটা পরিবারকে হত্যা নয়; এর মধ্য দিয়ে আমাদের দেশের ইতিহাস মুছে দেওয়ার অপচেষ্টা করা হয়। বাংলাদেশ সৃষ্টিতে যার অবদান, ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে যত আন্দোলন সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর যে অবদান তা মুছে দেয়া হয়েছিল।

অনেকেই বলার চেষ্টা করে ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর কোনো ভূমিকা নাকি ছিল না। তারা বলেন, তিনি তো তখন জেলে ছিলেন। কিন্তু তিনি তো জেলেই গেলেন ভাষা আন্দোলন শুরু করার কারণে। শেখ মুজিবই ভাষা আন্দোলন শুরু করেছিলেন। তখন একমাত্র টিভি ছিল বিটিভি। কোনো খবরের অংশে যদি বঙ্গবন্ধুর নাম থাকত তা সাদা কাপড়ে ঢেকে দেয়া হতো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পঁচাত্তরের পর যারাই ক্ষমতায় এসেছে তারাই ১৫ আগস্টের খুনিদের মদদ দিয়েছে। যেভাবে জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে খুনিদের দূতাবাসে চাকরি দিয়েছিল সেভাবে খালেদা জিয়াও পুনর্বাসন করেছেন। এরশাদও খুনিদের মদদ দিয়েছে; পুরস্কৃত করেছে। দেশের ভেতরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী যারা বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডে জড়িত ছিল, তারাও পরবর্তীতে জিয়ার সঙ্গে গেছে। অনেকে এখনো বেঁচে আছে, বড় বড় কথাও বলে।

জিয়াউর রহমান আদর্শের রাজনীতি ধ্বংস করে খুনের রাজনীতি শুরু করে। ছাত্রদের রাজনীতিতে নিয়ে আসার নামে হাতে অস্ত্র তুলে দেয়। যাদের বাংলাদেশের পাসপোর্ট ছিল না তাদের পাকিস্তান থেকে এনে পুনর্বাসন করে। শুধু পুনর্বাসন নয়, বড় বড় ব্যবসায়ী বানায়। জিয়াই প্রথম ঋণ খেলাপির সংস্কৃতি শুরু করে।

বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি একটি দেশ স্বাধীন করেছেন অথচ তাকেই খুনিরা হত্যা করল। ইন্দিরা গান্ধী, ফিদেল ক্যাস্ট্র বঙ্গবন্ধুকে তথ্য দিয়েছিলেন কিন্তু তিনি বলেছিলেন বাংলার মানুষ এমন কাজ করতে পারে না। বঙ্গবন্ধুর দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন। এক টুকরো রিলিফের কাপড় দিয়ে তাকে দাফন দেয়া হয় টুঙ্গিপাড়ায়। বনানীতে পরিবারের অন্যদের কোনো মতে মাটিচাপা দেয়া হয়। বঙ্গবন্ধু দেশের জন্য কাজ করেছেন, নিজের জন্য কিছুই করেননি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ মতো রাজনীতি করতে নেতাকর্মীদের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, কবরে কিছুই যাবে না। ভালো কাজগুলো যাবে। আওয়ামী লীগ দেশের জনগণের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। যেন বঙ্গবন্ধুর রূহে শান্তি বর্ষিত হয়।

সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আহমদ হোসেন, এনামুল হক শামীম, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, সাবেক রেল মন্ত্রী মুজিবুল হক, সাবেক ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন মায়া চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধ সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, দফতর সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক ইঞ্জি. আবদুস সবুর, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, উপ-দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, মির্জা আজম, এস এম কামাল হোসেন, মারুফা আক্তার পপি, ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাত, সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, সহ-সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফি, প্রচার সম্পাদক আখতার হোসেন, ঢাকা উত্তরের সভাপতি রহমতউল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, সহ-সভাপতি আসলামুল হক, যুগ্ম-সম্পাদক এম এ কাদের খান, এস এম মান্নান কচি, হাবিব হাসান, দফতর সম্পাদক সাইফুল্লাহ সাইফুল, উপ-প্রচার সম্পাদক আজিজুল হক রানা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
Atiqur Rahman ৩১ আগস্ট, ২০১৯, ১২:৪০ এএম says : 0
Amar to unnoti holona Masters pass kore job paina
Total Reply(0)
Monirul Islam ৩১ আগস্ট, ২০১৯, ১২:৪১ এএম says : 0
100% Right সবার ভাগ্যে.....
Total Reply(0)
অন্য মানুষ ৩১ আগস্ট, ২০১৯, ১২:৪১ এএম says : 0
জনগণের ভাগ্য নয়,,, আওয়ামী লীগের ভিতরেই কিছু অংশের ভাগ্যের উন্নতি হয়,,,
Total Reply(0)
Alamjir Hossian Munna ৩১ আগস্ট, ২০১৯, ১২:৪২ এএম says : 0
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কিন্তু আমার ভাগ্য আগের ছেয়ে খারাপ হয়ে গেছে
Total Reply(0)
Kamal Hussian ৩১ আগস্ট, ২০১৯, ১২:৪৩ এএম says : 1
আল্লাহ ছাড়া কেউ আমাদের নেএী কে কিছু করতে পারবেনা।সারা বাংলার জনগনের দোয়া আছে।
Total Reply(0)
Md Salem Ahmed Salem ৩১ আগস্ট, ২০১৯, ১২:৪৩ এএম says : 1
মমতাময়ী মায়ের জন্য, দোয়া করি যেন আল্লাপাক পরওয়ার্দিগার,প্রিয় নেত্রীকে সুস্থ্য রাখুন,ও হায়াত দারাজ করুন। আমিন
Total Reply(0)
Mohsin Mohsin ৩১ আগস্ট, ২০১৯, ১২:৪৪ এএম says : 1
রাখে আল্লাহ মারে কে, হে আল্লাহ আমাদের প্রধান মন্ত্রিকে সুস্থ রাখেন আমিন
Total Reply(0)
তুষার ইমরান সোহাগ ৩১ আগস্ট, ২০১৯, ১২:৪৫ এএম says : 0
ওনার মত দেশপ্রেমি মানুষকে কি করে তারা মেরে ফেলতে চায়?যার চেতনায় শুধু দেশ।আমি ব্যাক্তিগত ভাবে উনার সাফল্য ও দীর্ঘায়ূ কামনা করি।
Total Reply(0)
M N Ahmed ৩১ আগস্ট, ২০১৯, ১০:৩২ এএম says : 0
Dear PM, the other leaders of your party are telling that BNP is not a political party anymore, it is dead. Then why 80 percent part of your every speech is about and against BNP?
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন