শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

পীরগাছায় গ্রামজুড়ে নার্সারি

সরকার রবিউল আলম বিপ্লব, পীরগাছা থেকে | প্রকাশের সময় : ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময় বিদ্যালয় থেকে একটি চারা গাছ পেয়েছিলেন হেমন্ত চন্দ্র বর্মণ। এসময় শিক্ষকরা গাছের পরিবেশগত ও অর্থনৈতিক উপকারিতা নিয়ে শিক্ষার্থীদের উপদেশ দিয়েছিলেন। ছোট্ট বয়সে শিক্ষকদের সেই উপদেশ তার মনে গেঁথে গিয়েছিল। চারাটি বাড়িতে নিয়ে এসে রোপণ করেন। সেই ১৯৯০ সালের কথা। তারপর থেকে যখনই যেখানে গাছের চারা পেয়েছেন তা সংগ্রহ করে পরিবেশ রক্ষায় বাড়ির আশে পাশে রোপণ করেছেন। বসত ভিটায় চারা রোপনের পাশাপাশি ১৯৯৪ সালে নিজের জমিতে শান্ত নার্সারি গড়ে তোলেন। ১৯৯৮-৯৯ সালে জেলা পর্যায়ে (গ্রাম্য খামার বনায়ন প্রকল্প) সেরা নার্সারির পুরষ্কার পেয়ে যান। তারপর থেকে হেমন্ত চন্দ্র বর্মণকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। বর্তমানে তার প্রায় ৬০ বিঘা জমিতে নার্সারি রয়েছে। নিজের রয়েছে ২০ বিঘা। অন্যের জমি ইজারা (লিজ) নিয়েছেন ৪০ বিঘা। প্রায় ১০ লাখ বিভিন্ন প্রজাতির চারা গাছ রয়েছে তার নার্সারিতে। প্রতিদিন ২৫/৩০ জন শ্রমিক কাজ করছেন। বর্তমানে তার নার্সারি থেকে স্থানীয় চাহিদা পূরণের পাশাপাশি ট্রাক যোগে দেশের বিভিন্ন জেলায় চারা সরবরাহ করা হচ্ছে।

এমনি একটি নার্সারি রংপুরের পীরগাছা উপজেলার গোবরাপাড়া গ্রামে। ঐ গ্রামের হেমন্ত চন্দ্র বর্মণ এ নার্সারি গড়ে তুলেছেন।
বর্তমানে নার্সারি গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে গোবরাপাড়া গ্রাম। গত ১০ বছর থেকে উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ হয়ে আসছে শান্ত নার্সারি। হেমন্ত চন্দ্র বর্ম্মণ নার্সারি করে স্বাবলম্বী হওয়ায় এখন বেকার যুবকদের অনুকরণীয় দৃষ্টান্তে পরিণত হয়েছেন। তার দেখাদেখি ঐ গ্রামটিতে এখন ছোট বড় প্রায় ২০টি নার্সারি গড়ে উঠেছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা এসে ট্রাকে করে চারা নিয়ে যান। প্রতিদিন গ্রামটিতে দেশের অন্যত্র চারা পরিবহনের জন্য ৫ থেকে ৭টি ট্রাক আসে। এছাড়াও ভ্যান, রিকশা ও ট্রলি যোগে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা চারা নিয়ে গিয়ে হাট-বাজারে বিক্রি করে থাকেন। ফলে গ্রামটিতে প্রতিদিন দুপুরের পর থেকে কমর্ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিশাল এলাকা জুড়ে রয়েছে শান্ত নার্সারি। নার্সারিতে প্রায় ২৫ জন শ্রমিক কাজ করছেন। শ্রমিকের পাশাপাশি নার্সারির মালিক হেমন্ত চন্দ্র বর্মণ নিজেও বিভিন্ন চারা গাছের পরিচর্যা করছেন। ট্রাক যোগে বিভিন্ন জেলায় চারা পাঠানোর জন্য অনেকে চারা গাছ ট্রাকে তুলছেন। অনেকে আবার ভ্যান, রিকশা ও ট্রলিতে তুলছে বিভিন্ন প্রজাতির চারা গাছ। প্রজাতি ভেদে ও গাছের গঠনের উপর নির্ভর করে মূল্য। প্রজাতি ভেদে নার্সারি থেকে ৫ থেকে ৫৫০টাকা পর্যন্ত মূল্যের চারা গাছ বিক্রি হচ্ছে ।
ঐ নার্সারির শ্রমিক লক্ষু চন্দ্র বলেন, আমরা প্রায় ২৫/৩০ জন শ্রমিক মাসিক ৯ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকায় কাজ করছি। আমরা একসময় বছরে বেশীর ভাগ সময় বেকার থাকতাম। এ নার্সারির কল্যাণে সারা বছর এখন আমারের হাতে কাজ থাকছে।
নার্সারির উদ্যোক্তা হেমন্ত চন্দ্র বর্মণ বলেন, প্রায় ২০ বছর আগে আমি বর্ধিত পরিসরে নার্সারি গড়ে তুলি। বর্তমানে ৬০ বিঘা জমিতে আমার নার্সারি রয়েছে। এ নার্সারি থেকে আমার বার্ষিক প্রায় ১০/১২ লাখ টাকা আয় হয়। নার্সারি একটি লাভজন ব্যবসা। গাছ যেমন পরিবেশ বাঁচায়, আবার অর্থনৈতিক ভাবেও স্বাবলম্বী করে। বাজারে প্রচুর চারা গাছের চাহিদা রয়েছে। আমি চাই চাহিদা পূরণে নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হোক।
সংশ্লিষ্ট এলাকার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আহসানুল হক বলেন, এ অঞ্চলের সর্ববৃহত নার্সারিগুলোর মধ্যে অন্যতম শান্ত নার্সারি। এ নার্সারিতে অনেক শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে। সম্ভাবনাময় এ খাতকে বড় করতে কৃষি অধিদপ্তর কাজ করে যাচ্ছে।
পীরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামীমুর রহমান জানান, কৃষি বিভাগ থেকে নার্সারিগুলোকে পর্যবেক্ষু, পরামর্শ ও উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে নিয়মিত মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ থেকে নার্সারির সফল উদ্যোক্তাদের পুরস্কৃতও করা হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন