শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

‘এ্যালা হামরা কোটে থাকমো আল্লায় জানে’

কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

ব্রহ্মপুত্রের করাল গ্রাসে বিলীন হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। ছবিটি উলিপুরের হাতিয়া ইউনিয়নের নয়াডারা গ্রাম থেকে তোলা -ইনকিলাব


 প্রতিবারের ন্যায় এবারও ২০দিন বন্যার সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে আছে কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা, দুধকুমারসহ ১৬টি নদ-নদী অববাহিকার ৯লাখ ৫৮হাজার বানভাসি মানুষ। পানি কমার সাথে সাথে শুরু হয়েছে ভয়াবহ ভাঙন। ভয়াবহ ভাঙনে গত এক সপ্তাহে কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নে শতাধিক বাড়িঘর ব্রহ্মপুত্রের পেটে চলে গেছে। হুমকির মুখে পড়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, ৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ৩টি মসজিদ, ১টি কমিউনিটি ক্লিনিকসহ ১ টি বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র। ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষজন পরিবার ও গবাদি পশু নিয়ে আশ্রয় নিচ্ছেন পার্শ্ববর্তী এলাকায়। ভাঙন অব্যাহত থাকলেও কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নেয়নি। এলাকাবাসীর আশঙ্কা বাঁধ ভেঙে গেলে উলিপুর ও চিলমারী উপজেলার বেশির ভাগ এলাকা ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে প্লাবিত হয়ে পড়বে।

সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কুড়িগ্রাম জেলা শহর থেকে ২০কিলোমিটার দুরে উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের পাশ দিয়ে ছুটে চলেছে খর¯্রােতা ব্রহ্মপুত্র নদী। ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে এই হাতিয়া ইউনিয়নে। গত ৩/৪ বছরের ভাঙনে এই ইউনিয়নের তিনভাগের দুইভাগ এলাকা ব্রহ্মপুত্র নদের করাল গ্রাসে বিলীন হয়ে গেছে। নদী তীরে ভাঙন কবলিতদের আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠেছে আকাশ-বাতাস।
রোববার দুপুরে উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের নয়াডারা, কামারটারী, পালের ভিটা, হাতিয়া ভবেশ গ্রামসহ ভাঙন কবলিত প্রায় ৩ কি.মি. এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষজন তাদের বাড়ি-ঘর অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। এসময় আবুল কাশেম (৬০) এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন,‘সউগ গেলো রে বাবা, এ্যালা হামরা কটে যে থাকমো আল্লায় জানে’। রাক্ষসী ব্রহ্মপুত্র নদের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে বিষন্ন অশ্রæসজল চোখে বলেন, নদের ওই খানে বাপ-দাদার কবর ছিল, সেসব এখন শুধুই স্মৃতি। নয়াদাড়া গ্রামের আব্দুল হাকিম (৪৫) বলেন, ৪ একর ধানি জমি ছিল, এখন সব কিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেলাম। রাস্তা কিংবা অন্যের জায়গায় আশ্রয় নিয়ে বাকি জীবনটা কাটাতে হবে। এছাড়া সৈয়দ আলী (৫৫) মেহের আলী (৬০) নুরুজ্জামানসহ অনেকেই একই কথা জানান।
হাতিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হোসেন বলেন, ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা পেতে ব্রহ্মপুত্র নদের ডান তীরে সাব বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এখন সেটিও নদী গর্ভে চলে যাচ্ছে। এভাবে নদী ভাঙন অব্যাহত থাকলে মূল বাঁধসহ ইউপি ভবন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো রক্ষা করা সম্ভব হবে না।
কুড়িগ্রাম পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, ভাঙন রোধে দ্রæত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন