শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বিমান ওঠানামায় ঝুঁকি বাড়ছে

শাহজালালে এটিসির রেডিওর ত্রুটি : ককপিটে লেজার লাইট নিক্ষেপ

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে উড়োজাহাজ উড্ডয়ন ও অবতরণ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ট্রাফিক কন্ট্রোল টাওয়ারে রেডিওর ত্রুটি এবং বিমানের ককপিটে লেজার লাইট নিক্ষেপের ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, বিমানবন্দরে লেজার লাইটের কারণে সন্ধ্যার পর বিমান ওঠা-নামার সময় সমস্যায় পড়ছেন পাইলটরা। লেজার রশ্মি কারণে তারা চোখে ঝাপসা দেখেন। এছাড়া যেকোনও সময় দুর্ঘটনার শঙ্কাও রয়েছে। এ বিষয়ে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে তিন মাস আগে অভিযোগ করেন পাইলটরা। তারপরও বন্ধ হয়নি লেজারের উৎপাত। বিমানবন্দরের বাইরে থেকে এ ঘটনা ঘটায় কোনও ব্যবস্থা নিতে পারছে না বেসামরিক বিমান চলাচল (বেবিচক) কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্টরা জানান, মজা করতে লেজারের আলো বিমানের দিকে ছোড়া হয়। কিন্তু এ থেকে যেকোনও সময় বিপদ ঘটতে পারে। যদি লেজারের আলো পাইলটের চোখে পড়ে তাহলে তিনি বিভ্রান্ত হয়ে যাবেন। সংশ্লিষ্টরা জানান, বিমান অবতরণের সময়টা পাইলটের জন্য সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ওই সময়ে যদি পাইলট যদি চোখে আলো পড়া থেকে বাঁচতে সামনের দিক থেকে চোখ সরান তাহলে যেকোনও ভুল করে ফেলতে পারেন। আর এজন্য যদি বিমান দুর্ঘটনায় পড়ে তাহলে শুধু বিমানটি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এমন নয়। কতগুলো মানুষের জীবন চলে যাওয়ার শঙ্কা থাকে।

বেবিচক সূত্র জানায়, বিমানকে টার্গেট করে লেজারের আলো নিক্ষেপ শাস্তিযোগ্য ও দন্ডনীয় অপরাধ- এ মর্মে গত ১৭ জুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বেবিচক। একইসঙ্গে বিমানের নিরাপদ উড্ডয়ন ও অবতরণ নিশ্চিত করতে এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ জানায় সংস্থাটি। বেবিচক জানায়, বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল আইন, ২০১৭-এর ধারা-২৬ অনুসারে এই ধরনের কর্মকান্ড আইনত শাস্তিযোগ্য ও দন্ডনীয় অপরাধ।

পাইলটদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিনিয়ত রাতের বেলায় বিমান ওঠা-নামার সময় ককপিটের দিকে লেজার লাইটের আলো ছোড়া হচ্ছে। বিমানবন্দরের প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকার বাসা, ছাদ থেকে ককপিটে আলো ফেলা হচ্ছে। তীব্র আলো পাইলটদের দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। লেজারের উৎপাতের বিষয়ে বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল টাওয়াকেও জানিয়েছেন পাইলটরা। তারপরও গত তিন মাসেও কোন কাজ হয়নি। পাইলটদের মতে, বেবিচকের পক্ষ থেকে ব্যাপকভাবে সচেতনা ও প্রচার থাকলে এটি বন্ধ হয়ে যেতো।

একজন পাইলট বলেন, বাংলাদেশে অবতরণ ঝুঁকিপূর্ণ-এই কারণ দেখিয়ে কোনও বিদেশি এয়ারলাইনস যদি দেশে না আসে, কোনও দেশ যদি বাংলাদেশে নিষেধাজ্ঞা দেয় তাহলে দেশের জন্য নেতিবাচক হবে। ফলে বিমানবন্দরের বাইরে থেকে হচ্ছে, এই কারণ দেখিয়ে বেবিচকের বসে থাকার সুযোগ নেই। তাদের পক্ষে হয়তো নজরদারি করা সম্ভব না। কিন্তু ব্যাপক প্রচার চালানোর ব্যবস্থা করা সম্ভব। কিন্তু সচেতনতার জন্য বেবিচকের কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি।

বেবিচকের এয়ার ট্রাফিক সার্ভিস ও এরোড্রামস বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, পাইলটরা এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল টাওয়ারে প্রতিনিয়ত আমাদের জানাচ্ছেন তারা লেজার লাইট দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে বেবিচকের থেকে সচেতনামূলক ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিমানবন্দরের বাইরে থেকে এ ঘটনায় ঘটনায় আমাদের পক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

অন্যদিকে, একটি উড়োজাহাজ উড্ডয়ন থেকে শুরু করে গন্তব্যে পৌঁছাতে আকাশপথে চলাচলে প্রতিটি মুহূর্তে পাইলটকে সহায়তা করে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)। রেডিও’র মাধ্যমে সার্বক্ষণিক এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের সঙ্গে উড়োজাহাজে সংযুক্ত থাকেন পাইলটরা। বাংলাদেশের আকাশসীমায় উড়োজাহাজের চলাচল নিয়ন্ত্রণ ও হযরত শাহজালাল (রহ.)আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উড্ডয়ন-অবতরণের অনুমতি প্রদানকারী এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল টাওয়ারের রেডিও’তে ক্রুটি দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, দীর্ঘ দিনের পুরাতন রেডিও ব্যবস্থা প্রায় সময় পাইলটের সঙ্গে এটিসি’র যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। কখনও কখনও কথোপকথন পরিস্কার শুনতে সমস্যার মুখে পড়ছেন পাইলট ও এয়ার ট্টাফিক কন্ট্রোলাররা। এতে দূর্ঘটনার ঝুঁকির সৃষ্টি হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিমানবন্দরে টার্মিনাল ভবনের উত্তর পাশেই এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল টাওয়ার। এই টাওয়ারে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলাররা রাত দিন রেডিও’র মাধ্যমে সার্বক্ষণিক উড়োজাহাজ, হেলিকপ্টারের পাইলটদের চলাচলে নির্দেশনা দেন। বাংলাদেশের আকাশসীমায় উড়োজাহাজের গতিপথ নিয়ন্ত্রণ, আবহাওয়ার তথ্য প্রদান, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উড্ডয়ন-অবতরণের অনুমতি, বিমানবন্দরের গ্রাউন্ডে চলাচল, পার্কিং এ বিষয়গুলোর ভিত্তিতে আলাদা আলাদা রেডিও চ্যানেলের মাধ্যমে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলাররা পাইলটদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেন। এদিকে পুরাতন রাডার সিস্টেম রক্ষণাবেক্ষণের জন্য গত শনিবার দুপুর ২টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত বন্ধ রাখার কারণে পুরোপুরি রেডিও ব্যবস্থার উপর নির্ভর করতে হয়। শুধু তাই নয়, এয়ার ট্রাফিকে জনবল সঙ্কট রয়েছে। জনবল সংকট, পুরাতন রাডার, দুর্বল রেডিও সিস্টেমের কারণে বাড়তি চাপে থাকতে হচ্ছে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারদের।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (12)
Dutta Debgopal ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ২:৪৪ এএম says : 0
উড়োজাহাজ এর ড্রাইভার অন্ধ নাকি , সামান্য একটা ফানুস কে কাটাতে পারেনা
Total Reply(0)
Shiladitya Chatterjee ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ২:৪৫ এএম says : 0
Supreme court bollei sunbo
Total Reply(0)
মশিউর রহমান ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ২:৪৫ এএম says : 0
Safe drive save life
Total Reply(0)
Samg Basar ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ২:৪৬ এএম says : 0
How it is possible? Just stop it.
Total Reply(0)
Russell Sanowar ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ২:৪৬ এএম says : 0
হ্যাঁ, বিষয়টা আমিও খেয়াল করেছি। গত মার্চে রাত ১ টায় শাহজালাল থেকে ফ্লাই করার বেশ অনেকক্ষন, হবে ৩/৪ মিনিট পরে বিমানটি যখন উপরে উঠে গেছে সেখান থেকেও আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম ঢাকার রাস্তায় ডিউটি ট্রাফিকের লেজার লাইটের তির্যক আলো জানালার কাঁচ ভেদ করে চোখে লাগছে। আমি কিছুটা বিস্মিত হয়েছিলাম কিন্তু এটা পাইলটদের ও বিভ্রান্তির কারণ, সেটা ভাবতে পারিনি। লেজার লাইটের এই ব্যাবহার বন্ধ হওয়া উচিত।
Total Reply(0)
Khan Rahat Rahman ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ২:৪৬ এএম says : 0
একটা দুর্ঘটনা হয়ে মানুষ হতাহত না হওয়া পর্যন্ত কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া হবে কিনা সন্দেহ।
Total Reply(0)
Mostafizur Rahman ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ২:৪৭ এএম says : 0
Arrest those Bustards who doing this crime.
Total Reply(0)
Jahangir Arun ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ২:৪৭ এএম says : 0
রাস্তায় সার্জেন্টরা ড্রাইভারের চোখে মারতেছে! এতে বাচ্চা পোলাপান আরো উৎসাহী হবে। প্রচারণা দরকার। রাস্তায়ও লেজার বন্ধ করা দরকার।
Total Reply(0)
ইয়াসিয়া তনু ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ২:৪৭ এএম says : 0
রানওয়ের আসেপাশে যেখানে কোন বাড়িঘর থাকার নিয়ম নেই সেখানে ৩ বা ৪ তলা বাড়ি ও আছে।
Total Reply(0)
Tawhid Robin ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ২:৪৭ এএম says : 0
কি আজব কিছু মানুষ ট্রেনে পাথর মারে এরা আবার বিমানে লেজার মারতেসে যেকোনো সময় একটা ডিজাস্টার হবে। লেজার সোর্স বরাবার স্নাইপার রাইফেল দিয়া গুলি করা উচিত।
Total Reply(0)
Mashiur Rahman ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ২:৪৮ এএম says : 0
আমার তো মনেহয় এগুলো ট্রাফিক পুলিশের হাতে থাকা লেজার লাইটের আলো। যেটা আমরা রাস্তায় সব সময়ই দেখি। অনিচ্ছাকৃত ভাবে এগুলো আকাশের দিকে ঘুরে গেলেই তো এরকমটা হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। ট্রাফিক পুলিশদের লেজারের বদলে বিকল্প কিছু দেওয়া হোক। এটা বাইক বা গাড়িচালকদের জন্যও বিরক্তিকর। যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে।
Total Reply(0)
Mahmud Haque ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ২:৪৮ এএম says : 0
খুবই উদ্বগ জনক খবর। কতৃপক্ষের উচিৎ কঠোর ব্যাবস্থা গ্রহন করা যাতে কেউ এধরনের ঝুকি পুর্ন করতে সাহস না পায়।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন