শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

মহাসড়কে টোল আদায়

| প্রকাশের সময় : ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

জাতীয় মহাসড়কগুলো থেকে টোল আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সাথে ২১টি মহাসড়কে এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণেরও নির্দেশনা দিয়েছে। জাতীয় মহাসড়কে যানবাহনের চাপ কমানো, মালবাহী গাড়ির অতিরিক্ত লোড এবং আকার আকৃতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি টোল থেকে আদায়কৃত টাকা দিয়ে মহাসড়ক মেরামতের কাজে ব্যয় করার লক্ষ্যে পৃথক অ্যাকাউন্ট বা ফান্ড গঠনের কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। গত মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে তিনি এ নির্দেশনার কথা জানান। বিশ্বের অনেক উন্নত রাষ্ট্রে জাতীয় মহাসড়কে টোল আদায়ের ব্যবস্থা থাকলেও বাংলাদেশে তা নেই। সড়ক মহাসড়ক নির্মাণ, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে সরকার বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করছে। এই বিপুল পরিমাণ টাকার যোগান দিচ্ছে রাজস্ব খাত। সড়ক-মহাসড়ক ব্যবহারকারীরা পণ্য পরিবহন ও যাতায়াতে নিয়মিত টোল দিলে রাজস্ব খাতের উপর চাপ কিছুটা হলেও কমিয়ে আনা সম্ভব। তা’ ছাড়া অনুমোদনহীন আকৃতি এবং অতিরিক্ত ওজনের যানবাহন সড়ক মহাসড়কে চলাচলের কারণে রাস্তার বেশি ক্ষতি হয়। অল্পদিনেই রাস্তাগুলো ভেঙ্গে গিয়ে জনভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এসব নিয়ন্ত্রণ এবং জনভোগান্তি কমিয়ে আনতে মহাসড়কে টোল আদায়ের পাশাপাশি এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ এবং সড়ক সংস্কারের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনা কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়। বাস্তবতার নিরীখে প্রধানমন্ত্রীর এ সময়োপযোগী নির্দেশনা প্রশংসনীয় ও অভিনন্দনযোগ্য। তবে টোল আদায় এবং এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি এ সব বিষয়কে ঘিরে যেন পরিবহণ ব্যবহারকারিদের বাড়তি হয়রানি ও যানজটের শিকার হতে না হয় সে দিকে লক্ষ্য রেখেই কর্মপন্থা নির্ধারণ করতে হবে।

টোল আদায় ও এক্সেল লোড কেন্দ্র স্থাপনের নির্দশনার পাশাপাশি কোনো ক্ষেত্রে যেন টেম্পারিং বা দুর্নীতির কোনো সুযোগ না থাকে সে বিষয়েও সতর্ক সংকেত দিয়েছেন। তবে সর্বাগ্রে মহাসড়কের নিরাপত্তা, শৃঙ্খলা ও গতিশীলতা নিশ্চিত করতে হবে। যেখানে আমাদের প্রধান প্রধান জাতীয় মহাসড়কগুলোতে সারাবছরই যানজটের ধকল পোহাতে হচ্ছে, সেখানে নতুন করে টোল আদায়ের সিদ্ধান্ত এবং এক্সেল লোড কন্ট্রোল সেন্টার বসানোর পদক্ষেপ যানজট আরো বাড়িয়ে তুলবে কিনা সে বিষয়ও বিবেচনায় রাখতে হবে। গত ঈদুল আজাহার আগে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাশে গাড়ির চাপ কমাতে সেতুতে টোল আদায় ১০ মিনিট বন্ধ রাখায় পূর্ব পাশে ২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট সৃষ্টির খবর পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। টোলপ্লাজা যতই ডিজিটাল হোক না কেন, এর পেছনে থাকা ব্যক্তিগুলো যদি সৎ ও দক্ষ না হয় তাহলে টোলপ্লাজাকে ঘিরে মহাসড়কে যানজটের বাড়তি বিড়ম্বনার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। মহাসড়কে টোল আদায়ের কারণে অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ ও গাড়ি চলাচল কিছুটা কমে আসলে গণপরিবহন ও পণ্যবাহী গাড়ির জন্য স্বস্তিদায়ক হতে পারে। মহাসড়কে টোল আদায়ের এটা একটি পরোক্ষ ইতিবাচক দিক হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। তবে মহাসড়কের নিরাপত্তা, যানজট নিরসন, রক্ষণাবেক্ষণসহ প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান যদি মহাসড়কে টোল আদায়ের সম্ভাবনা কাজে লাগানোর সর্বাধুনিক পদ্ধতি, প্রযুক্তি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করেই তা করতে হবে। একই সাথে যানজট নিরসন, টোল আদায় এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশে যেমনই হোক সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিস্তৃতি লাভ করেছে। পদ্মাসেতু হয়ে গেলে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল যুক্ত হলে সড়কের বিস্তৃতি ব্যাপক আকার লাভ করবে। এক্ষেত্রে সড়কের নির্মাণ কাজের মান যথাযথ রাখা বাঞ্চনীয়। তা নাহলে, টোল আদায় বা জনগণের ট্যাক্সের অর্থে সড়কের রক্ষণাবেক্ষণে কেবল অপচয়ই হবে, সড়ক যোগাযোগ মসৃণ হবে না। এ পরিস্থিতি যাতে সৃষ্টি না হয়, এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সচেতন থাকতে হবে।

মহাসড়ক নির্মাণ ও মেরামতের পেছনে সরকারকে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। একেকটি মহাসড়কের লেন উন্নয়ন একেকটি মেগা প্রকল্প। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় বছরের পর বছর ধরে যাত্রীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, ঢাকা-ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চারলেনে উন্নীতকরণের প্রকল্পের নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও কাজ শেষ হয়নি। এখন ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক ৬ লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের কাজের কারণে এ মহাসড়কের যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। একদিকে সময়মত প্রকল্পর কাজ বাস্তবায়ন করতে না পারা অন্যদিকে অস্বাভাবিক উচ্চ খরচে সড়ক যোগাযোগ অবকাঠামো নির্মাণের পর অল্পদিনের মধ্যে মহাসড়কে খানাখন্দ তৈরি হওয়ার বাস্তবতা থেকে মুক্ত হতে হবে। জনগণের রাজস্বে বিশ্বের সর্বোচ্চ খরচে সর্বনিম্ন অবকাঠামো এবং নিম্নমানের কাজের অপসংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে অস্বচ্ছতা দূর করার মাধ্যমে অবকাঠামো নির্মাণ খরচ কমিয়ে আনা এবং কাজের যথাযথ মান নিশ্চিত করা সম্ভব। টোল আদায়ের মাধ্যমে মহাসড়কের রক্ষণাবেক্ষণের উদ্যোগ নিঃসন্দেহে সময়োপযোগী। সেই সাথে টোল আদায়কে টেম্পারিং, অস্বচ্ছতা এবং হয়রানিমূলক যে কোন কর্মকান্ড থেকে মুক্ত রাখার কার্যকর পদক্ষেপ আগেই গ্রহণ করতে হবে। তা নাহলে একটি ভালো উদ্যোগ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাবে। আমরা সড়কে টোল আদায় এবং ওভার লোডিং নিয়ন্ত্রণে সরকারের পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানাই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন