বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

দেবর ভাবির লড়াই

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

এরশাদের মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টিতে শুরু হয়েছে দেবর-ভাবির লড়াই। দলের চেয়ারম্যান পদ নিয়ে লড়াইয়ের পর এবার সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার পদ পেতে লড়াই শুরু করেছেন দেবর-ভাবি। দেবর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা করতে স্পিকারকে চিঠি দেয়ার পরদিনই গতকাল বুধবার ভাবি রওশন এরশাদ নিজেকে ওই আসনে বসানোর জন্য স্পিকারকে চিঠি দেন। এর আগে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম ও সংসদ সদস্যদের যৌথ বৈঠকে জিএম কাদেরকে বিরোধী দলের নেতা হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়।
সংসদে বিরোধী দলের নেতা হিসেবে নিয়োগ দেয়ার জন্য জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদের লেখা চিঠি স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে পৌঁছে দিয়েছেন দলীয় সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু। সংসদের একাধিক ব্যক্তি বিষয়টি নিশ্চিত করলেও এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে চাননি মুজিবুল হক চুন্নু। তবে স্পিকারের দফতরের এক কর্মকর্তা চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।

সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা মন্ত্রী এবং উপনেতা প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা পেয়ে থাকেন। জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালি-বিধি অনুযায়ী বিরোধীদলীয় নেতা ও উপনেতা নিয়োগ দেন স্পিকার। সংসদের বিরোধী দলের নেতা এইচ এম এরশাদের মৃত্যুর পর গত ৩ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার জাপার চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা করে সংসদে চিঠি দেন দলের কয়েকজন এমপি। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদের নেতৃত্বে শামীম হায়দার পাটোয়ারী, আদেলুর রহমান, নাজমা আক্তার, শরিফুল ইসলাম ও শরিফুল ইসলাম জিন্না সংসদ ভবনে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর দপ্তরে গিয়ে এই চিঠি দেন। চিঠিতে বিরোধীদলীয় উপনেতা হিসেবে উল্লেখ করা হয় রওশন এরশাদকে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যের সংখ্যা ২৫ জন। এর মধ্যে ৪ জন সংরক্ষিত মহিলা আসন। এদের মধ্যে ১৫ জন সদস্য জিএম কাদেরের পক্ষ্যে; আর রওশন এরশাদের পক্ষ্যে ৩ জন। অন্যান্যরা যেদিকে বৃস্টি সেদিকে ছাতা ধরার কৌশল নিয়েছেন। দলটির একাধিক নেতা জানান, মূলত দলে রওশন এরশাদের গ্রহণযোগ্যতা নেই। দু’জন সুবিধাবাদী নেতা যারা বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ছিলেন তারা রওশনকে ব্যবহার করে নিজেরা সুবিধা নিতে চাচ্ছেন। তবে রওশন এরশাদ মূলত রংপুর-৩ আসনের উপনির্বাচনে পুত্র সাদ এরশাদের নমিনেশন নিশ্চিত করতে জিএম কাদেরকে চাপের মুখে রাখতে বিরোধী দলের নেতা হতে চাওয়ার কৌশল নিয়েছেন।

এরশাদ জীবিত থাকার সময়ই স্ত্রী রওশন এরশাদের সঙ্গে স্বামী এরশাদের বিরোধ ছিল। দীর্ঘ ২০ বছর স্বামী-স্ত্রী আলাদা বসবাস করেছেন। এরশাদের অসুস্থতাও তাকে একবার দেখতে যাননি স্ত্রী রওশন। তবে জিএম কাদের ভাই হিসেবে বড় ভাই এরশাদের পাশে সবসময় ছিলেন। সেই এরশাদের মৃত্যুর পরই দলটির চেয়ারম্যান ও সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা হওয়া নিয়ে শুরু হয় রশি টানাটানি। ইতোমধ্যে জিএম কাদেরকে দলের চেয়ারম্যান হয়েছেন। এতে নাখোশ রওশন ও তার সুযোগ সন্ধানী অনুসারীরা। এরপর শুরু হয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচন নিয়ে মতবিরোধ। এ মতবিরোধের মধ্যেই জিএম কাদেরের পক্ষে বেশিরভাগ এমপির স্বাক্ষর নিয়ে সংসদে চিঠি জমা দিলেন তারা। সংসদে এখন সংরক্ষিতসহ ২৫টি আসন আছে জাতীয় পার্টির। দলের প্রতিষ্ঠাতা এরশাদের মৃত্যুতে শূন্য রংপুর-৩ আসনে উপনির্বাচন হবে। এর মধ্যে ১৫ জনের স্বাক্ষর নিয়ে চিঠি জমা দেন জিএম কাদের।

জিএম কাদের স্বাক্ষরিত স্পিকারকে দেয়া চিঠিতে বলা হয়, ‘মহাত্ম আপনার সদয় অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জানাচ্ছি যে, মহান জাতীয় সংসদে বর্তমানে জাতীয় পার্টির প্রধান বিরোধী দল হিসেবে রয়েছে। আপনি নিশ্চিয় অবগত আছেন যে আমাদের দলের চেয়ারম্যান ও সংসদের বিরোধী দলের নেতা বিগত ১৪ জুলাই ইন্তেকাল করেছেন। ফলে মহান জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা পদটি বর্তমানে শূন্য রয়েছে। ইতোমধ্যে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়ামের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত সিদ্ধান্ত এবং পার্টির সংসদীয় দলের সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদ সদস্যরা, বিরোধী দলের নেতা হিসেবে সংসদীয় আসন-১৮ লালমনিরহাট-০৩ থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত আমি গোলাম মোহাম্মাদ কাদেরকে মহান সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে মনোনয়ন দেয়ার জন্য প্রস্তাব করছে।’
‘অতএব, উপরোক্ত বিষয়ে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম এবং পার্টির সংসদীয় দলের মনোনীত সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে আমাকে নিয়োগ দানের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আপনাকে বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।’ জিএম কাদেরের চিঠিতে স্বাক্ষর করেন কাজী ফিরোজ রশীদ, শামীম হায়দার পাটোয়ারী, নাজমা আকতার, শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ, মেজর (অব.) রানা মোহাম্মদ সোহেল, আদেলুর রহমান, মসিউর রহমান রাঙ্গা, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, অধ্যাপিকা মাসুদা রশিদ চৌধুরী, লে. জে. (অব.) মাসুদ উদ্দীন চৌধুরী, গোলাম কিবরিয়া টিপু, নুরুল ইসলাম তালুকদার, সালমা ইসলাম ও পনির উদ্দিন আহমেদ।

এদিকে গতকাল স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে রওশন এরশাদের চিঠি পৌঁছানোর আগে এর আগে রওশন এরশাদের গুলশানের বাসায় বৈঠকে বসেন রওশন অনুসারী জাপার এমপি আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, ফখরুল ইমাম ও মুজিবুল হক চুন্নু। অতপর মুজিবুল হক চুন্নু ও ফখরুল ইমাম সংসদ ভবনে গিয়ে স্পীকারকে এই চিঠি দেন। জুন্নু জানান, ৫ সেপ্টম্বর সংবাদ সম্মেলন করে দলীয় অবস্থান স্পষ্ট করবেন রওশন এরশাদ।

জানতে জাইলে জিএম কাদের বলেন, বিরোধী দলীয় নেতা মনোনয়ন প্রশ্নে জোর করে কিছু করা হয়নি। জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চিঠি দেয়া হয়েছে। এরশাদ সাহেব যখন বেঁচে ছিলেন তিনিও কিন্তু এভাবে বিরোধীদলীয় নেতা হয়েছিলেন, আমাকে বিরোধীদলীয় উপনেতা করেছিলেন। পরে আমাকে সরিয়ে রওশন এরশাদকে উপনেতা করা হয়, তখনও কিন্তু পার্লামেন্টারী পার্টির কোনো মিটিং করা হয়নি। ১৫ জন এমপি আমাকে সম্মতিপত্র দিয়েছে। ২৫ জনের মধ্যে ১৫ জন সম্মতি দিলে আর কিছু লাগে না। অন্যদিকে রওশন পন্থী হিসেবে পরিচিত ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, ফখরুল ইমাম ও মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন,পার্টি সংসদীয় কোনো সভা ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত কেউ নিতে পারে না। ম্যাডাম (রওশন) আগামী ৮ তারিখে সংসদে আমাদের সংসদীয় দলের সভা ডেকেছেন। সেখানেই আমরা বিরোধীদলের নেতার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
আসলাম ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১০:০১ এএম says : 0
জিএম কাদেরকে সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা করা উচিত
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন