শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

রক্ত ঝরাচ্ছে মুসলমানরা সুবিধা নিচ্ছে অন্যরা

অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের সতর্ক থাকতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১১:৫৯ পিএম

মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মুসলমানরা নিজেদের মধ্যে রক্ত ঝরাচ্ছে। আর এ থেকে সুবিধা ভোগ করছে অন্যরা। মুসলিম উম্মাহর ঐক্য দরকার। মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে বিভেদ-সংঘাত চলছে, এ সুযোগে থার্ড কান্ট্রি বা থার্ড পার্টি লাভবান হচ্ছে। মুসলমানরা নিজেদের মধ্য রক্ত ঝরাচ্ছে আর অন্যরা এ থেকে সুবিধা ভোগ করছে।

গতকাল ঢাকা সফররত ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে এ কথা বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়। পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

মুসলমানদের মধ্যে সমস্যা ও সংঘাত নিজেরাই দ্বিপাক্ষিক বা বহুপাক্ষিকভাবে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের ওপর জোর দেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এর জন্য কোনো রক্তপাতের প্রয়োজন নেই। মুসলমানদের নিজেদের মধ্যে সংঘাত বন্ধে ওআইসিকে (অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন) ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুসলমানদের মধ্যে সংঘাত বন্ধে ওআইসির এগিয়ে আসা উচিত। জোরপূর্বক বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা প্রায় এক লাখ সন্তান জন্ম দিয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। ইরানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইরানের সঙ্গে আমাদের সাংস্কৃতিক সম্পর্ক ঐতিহাসিক। বাংলা ভাষায় অনেক ফারসি শব্দ থাকার কথাও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর কাছে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির শুভেচ্ছা পৌঁছে দেন মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ।

দুই দেশের মধ্যকার সুসম্পর্কের কথা তুলে ধরে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইরান-বাংলাদেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক সম্পর্কের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। দু’দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি। সাক্ষাতে ইরানের ওপর আমেরিকার অবরোধ আরোপের পর দেশটির বর্তমান অবস্থার কথা প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ। ইরান সউদী আরবসহ সব দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক চায় জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা ঐক্য চাই। সউদী আরবসহ সব প্রতিবেশীর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক চাই। কোনো বৈরিতা চাই না।
মুসলিম দেশগুলোকে অস্ত্রের পেছনে অর্থ খরচ না করে তা জনকল্যাণে ব্যয় করার আহ্বান জানিয়ে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা অস্ত্রের জন্য টাকা খরচ করতে চাই না। এ টাকা দিয়ে জনকল্যাণ করতে চাই।

ওআইসিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূমিকার প্রশংসা করেন ইরানি মন্ত্রী। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নতির প্রশংসা করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এসব হয়েছে। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অগ্রগতি দৃষ্টান্তমূলক অর্জন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে ইরানের উন্নয়নের কথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তুলে ধরেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে ইরান সেমিনার করবে বলেও জানান তিনি।

ব্যবসায়ীদের সতর্ক থাকতে হবে
এদিকে গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বিজিএমইএ-এর নবগঠিত পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নিজেদের ব্যবসায়িক স্বার্থে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশবিরোধী প্রপাগান্ডা (অপপ্রচার) মোকাবিলায় কাজ করতে হবে ব্যবসায়ীদের। আমাদের এখানে কিছু লোক আছে, যারা অনবরত প্রপাগান্ডা চালায়। তাদের অ্যাড্রেস করতে হবে, যাদের কারণে আপনারা ক্ষতিগ্রস্ত হন। আমাকে রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে চায়। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হন ব্যবসায়ীরা।

বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হকের নেতৃত্বে ব্যবসায়ী নেতারা এ সময় বাংলাদেশের উন্নয়নে সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের প্রশংসা করার পাশাপাশি নিজেদের বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশটাকে আমরা গড়ে তুলতে চাই, সব দিক থেকে। আর আমাদের অর্থনীতি যদিও কৃষিপ্রধান, কিন্তু এটাও ঠিক শিল্পায়ন ছাড়া কোনো দেশের উন্নতি ত্বরান্বিত হয় না। এটাও বাস্তবতা। সেজন্য একদিকে কৃষিকে গুরুত্ব দেই। আবার শিল্পকেও গুরুত্ব দেই।

শিল্পায়নের ফলে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, মানুষের কর্মসংস্থান ব্যাপকভাবে বাড়ছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। সরকারে আসার পর থেকে যত রকমের সুবিধা দেয়ার কথা, তা করে যাচ্ছি।
নতুন বাজার খোঁজা ও পণ্য বহুমুখীকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের উন্নয়নের ক্ষেত্রে গার্মেন্টস সেক্টর খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। পাশাপাশি আমাদের এটাও চিন্তা করতে হবে আমাদের ডাইভারসিফিকেশন প্রয়োজন। বিভিন্ন পণ্য বহুমুখীকরণ এটাও প্রয়োজন। কোন দেশে কোন পণ্যের বাজার আছে সেটা দেখা।

শ্রমিকদের উৎপাদন ক্ষমতা ও কম খরচের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেসব দেশের সঙ্গে আমাদের রপ্তানি আছে, সেটা থাকবে। একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে, শুধু লেবার খরচই কম তা কিন্তু না। আমরা যে পরিমাণে সাপ্লাই দিতে পারি, ভলিউমটা যে পরিমাণে দিতে পারি অন্য কোনো দেশ দেবে না। আমাদের দেশের শ্রমিকরা কিন্তু খুবই ভালো। তারা যে আট ঘণ্টা কাজ করে, অতিরিক্ত কাজ করতে বললে ওরা করে দেয়। ছুটির দিনেও কাজ করে দেয়। পৃথিবীর অন্য দেশে কেউ কিন্তু করে না। বাংলাদেশের শ্রমিকরা যখন কাজ করে তারা আপন করে নেয়। এই গুণটা বাংলাদেশের মানুষের আছে।

প্রধানমন্ত্রী বিজিএমইএ নেতাদের আশ্বস্ত করেন, যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে আলাদা হয়ে গেলেও বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের কোনো সমস্যা হবে না। যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে আলাপ হয়েছে। তাদের সঙ্গে আমাদের চুক্তি রয়েছে। সেটা যেভাবে আছে, সেভাবে চলতে থাকবে। ব্রেক্সিট-এ আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যে খুব একটা প্রভাব পড়বে না।
সরকার যে উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে শিল্প খাতের জন্য বিদ্যুৎ ও গ্যাস দিচ্ছে, সে কথাও প্রধানমন্ত্রী বিজিএমইএ নেতাদের মনে করিয়ে দেন।

বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হকের নেতৃত্বে সংগঠনটির নবগঠিত পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা ছাড়াও এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, বিজিএমইএ-এর সাবেক সভাপতি আনিসুর রহমান সিনহা, আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ, সিদ্দিকুর রহমান প্রমুখ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
Asadul Habib ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:২১ এএম says : 0
আল্লাহপাক তো একজক আছেন ৷ মনে রাখবেন হেদায়েতের মালিক হলেন আল্লাহ৷
Total Reply(0)
Abul Kalam Azad ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:২১ এএম says : 0
মাননীয় প্রধানমন্থী আপনি যখন বুঝতে পেরেছেন মুসলমান মুসলমানের ক্ষতি করছে।তাহলে মুসলমানের ঐক্য জন্য এরদোগানের সাথে এক হয়ে কাজ করেন।
Total Reply(0)
Asadur Rahman ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:২২ এএম says : 0
আর আমরা সার্পোট করছি ভারতের । আহা কি মজার বাণী।
Total Reply(0)
নাসির মঞ্জু ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:২৩ এএম says : 0
বিভেদ! আমাদের মত সুবিধাবাদী মুসলিমরাইতো সেটা জিইয়ে রেখেছেন
Total Reply(0)
Faruque Ahmed ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:২৩ এএম says : 0
কথাটা ভালো লাগল।এত দিন পর বুঝতে পারছেন।
Total Reply(0)
M Real M Real ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:২৩ এএম says : 0
সবাই কে ঐক্য বদ্ধ হওয়ার আহ্বান। আমরা কি করবো?
Total Reply(0)
Asaduzzaman Rana ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:২৫ এএম says : 0
আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বুঝেছেন যে আজ মুসলিম রাষ্ট্র গুলো ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, কিন্তু ক্ষমতাশালী মুসলিম রাষ্ট্র নায়ক গুলো বুঝে না, আফসোস,
Total Reply(0)
রাতের বেলা ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:২৫ এএম says : 0
এই জন্যই তো আমরা মুসলিমদের সাথে না থেকে ভারতের সাথে থাকার ঘোষণা দেই।
Total Reply(0)
muslim ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৮:০৯ পিএম says : 0
আপনি নিজেই তো দেশের মুসলিমদের মধ্য বিভেদ তইরি করে রাখসেন।রোহিঙ্গা সমস্যার কোন সমাধান করতে পারলেননা আবার কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতকে সাপোর্ট দেন আবার এত বর বর কথা বলেন।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন