বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

কাশ্মিরে নিষেধাজ্ঞার একমাস : থমথমে চেহারা বদলায়নি। বন্ধই রয়েছে দোকানপাট

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১১:১১ এএম | আপডেট : ২:৪৫ পিএম, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

এক মাসের নিষেধাজ্ঞায় ভারত শাসিত কাশ্মিরের পরিস্থিতি বদলায়নি মোটেই। এখনো অচল হয়ে আছে ভূস্বর্গ। ভারত সরকার কাশ্মিরের বিশেষ মর্যদা বাতিল করার এক মাস পূর্ণ হয়েছে বৃহস্পতিবার। এক মাসের মাথায় এদিন দক্ষিণ কাশ্মিরের শোপিয়ানে প্রায় ৪০ জন গ্রামবাসীকে মারধর করেছে ভারতীয় সেনারা।

শোপিয়ানের পারিগাম ও ওমপোরা গ্রামের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ওই গ্রামগুলির কাছে গাছের গুঁড়ি ফেলে রাস্তা অবরোধ করেছিলেন বাসিন্দাদের একাংশ। বুধবার রাস্তা সাফ করে নিজেদের গাড়ি যাওয়ার পথ করে সেনা। এরপর সে রাতে ওই দু’টি গ্রামে ঢোকে সেনার কয়েকটি দল। ঘরবাড়ি তছনছ করতে শুরু করেন জওয়ানেরা। কয়েকটি গাড়িও ভাঙচুর করেন তারা। তার পরে শুরু হয় বাসিন্দাদের মারধর। অভিযোগ, মহিলা-সহ প্রায় ৩৬ জন বাসিন্দাকে সেনারা বেধড়ক মারধর করেন। তাতে কয়েক জনের হাড় ভেঙে যায়।


বাসিন্দাদের অভিযোগ, তাদের বাঁচাতে পুলিশ আসেনি। মারধরের পরে দুই গ্রামের ২০ জন যুবককে তুলে নিয়ে যায় সেনা। বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ওই এলাকার রাস্তা কাঁটাতার দিয়ে আটকে দেয় সেনা। ফলে আহতদের শ্রীনগরের হাসপাতালেও নিয়ে যাওয়া যায়নি। শোপিয়ানের হাসপাতালেই চিকিৎসা চলছে তাদের।

কাশ্মিরের স্বাস্থ্য দফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পারিগাম ও ওমপোরা এলাকার কয়েক জন বাসিন্দা শোপিয়ান জেলা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে ঠিক কত জন তা জানাতে রাজি নন তারা। তাদের দাবি, কারও আঘাতই গুরুতর নয়।

পুলিশের দাবি, ওই দুই গ্রামের বাসিন্দারা বাহিনীকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়েছিলেন। সংঘর্ষে কয়েক জন আহত হয়েছেন। পুলওয়ামার রাজপোরা, উটরু ও অন্য কয়েকটি এলাকাতেও সেনাদের বিরুদ্ধে গ্রামে ঢোকার অভিযোগ উঠেছে।


 
এদিকে কাশ্মিরে নিষেধাজ্ঞার এই এক মাসে কয়েক হাজার লোককে গ্রেফতারা করার কথা স্বীকার করেছে সরকার। তাদের মধ্যে প্রায় ১ হাজার মানুষকে উপত্যকার বাইরের জেলে বন্দী হিসেবে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারি কর্মকর্তারা।

সম্প্রতি নিষেধাজ্ঞা কিছুটা শিথিল করেছিল প্রশাসন। কিন্তু তাতে উপত্যকার থমথমে চেহারা বদলায়নি। বন্ধই রয়েছে দোকানপাট, স্কুল। দোকানদারের স্পষ্টই জানাচ্ছেন, কাশ্মিরের স্বতন্ত্র পরিচয় কেড়ে নিয়েছে দিল্লি। সেই পরিচয় ফিরিয়ে দিলে তবেই ফের ব্যবসা শুরু করবেন তারা।

বৃহস্পতিবার শিক্ষক দিবসে শ্রীনগরের প্রায় কোনও স্কুলেই দেখা যায়নি কোন ছাত্র-ছাত্রী। এক মিশনারি স্কুলের শিক্ষকেরা জানান, এ দিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আর বিতর্কসভার আয়োজন করা হয়; কিন্তু এ বার কোনও শিক্ষার্থী আসেনি।

শ্রীনগরের অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনারের দফতরের সামনে কয়েক দিন ধরেই দেখা যাচ্ছে লম্বা লাইন। পরিবারের যে সব সদস্যকে আটক করা হয়েছে তাদের জামিনে মুক্ত করা যায় কি না তা জানতে আসছেন মানুষ; কিন্তু বিশেষ ফল মিলছে না। সহসা মুক্তির আশা দেখছেন না তারা।

যোগাযোগ ব্যবস্থার উপরে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ফলে ধাক্কা খেয়েছে চিকিৎসা সেবা। শ্রীনগরের দুই বড় হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে; কিন্তু তাদের চিকিৎসার উপযুক্ত ব্যবস্থা করা ক্রমশই কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। কাশ্মিরের বাইরে থাকা পরিবার-পরিজনের সঙ্গে কথা বলাও বন্ধ। এমনকি ঈদের শুভেচ্ছাটুকুও জানাতে পারেননি অনেকে। এম ইউসুফ খানের ছেলে ইকবাল জার্মানিতে ডক্টরেট করছেন। ইউসুফ বললেন, ‘প্রায় এক মাস কথা হয়নি ছেলের সাথে। ও কেমন আছে জানি না।’

মনোবিদদের মতে, নিষেধাজ্ঞায় কাশ্মিরে গভীর মানসিক আঘাত পাচ্ছে শিশুরা। থেরাপির মাধ্যমে শিশুদের মানসিক সমস্যার মোকাবিলার কাজ করেন পারভেজ মাসুদি। তার বক্তব্য, ‘স্কুল বন্ধ। স্বাভাবিক জীবন নেই। ফলে শিশুরা বড় ধাক্কা খাচ্ছে। পরে এর ফল জানা যাবে।’ সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন