ফটিকছড়ির নারায়ণহাটে বালুখালী খালের ওপর নির্মিত সোয়া ২ কোটি টাকার সেতু সাড়ে ২০ লাখ টাকার সংযোগ সড়কের অভাবে অকেজো হয়ে পড়ে আছে। গোড়ার দু’পাশে মাটি ভরাট না করায় সেতুতে উঠতে এখন বানানো হয়েছে বাঁশ-কাঠের সিঁড়ি এবং তা দিয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উঠা-নামা করছে জনতা। আর চালু হবার পূর্বেই সেতুটির দু’পাশে ধস দেখা দিয়েছে। তা যেন দেখার কেউ নেই। নির্মাতা এলজিইডিও নির্বিকার!
সরেজমিনে দেখা যায়, চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার নারায়ণহাট ইউপির চাঁনপুর, শৈলকোপা, মুন্সিপাড়া, ধলিপাড়া ও হালদা ভ্যালী চা বাগানে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম ‘নারায়ণহাট-শৈলকোপা সংযোগ সড়ক এবং বালুখালী খালের ওপর জনগণের অর্থায়নে স্টিল খুঁটির ওপর নির্মিত কাঠের সাঁকো’। প্রতি বছর এটি নির্মাণ করলেও বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢলে তা ভেঙে যায়। উপায়ান্তর না দেখে স্থানীয় জনগণ পাশের হালদা ভ্যালি চা-বাগানের মালিক শিল্পপতি নাদের খানকে ওখানে একটি পাকা সেতু নির্মাণ করে দেবার আকুতি জানায়। তিনি বিষয়টি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তদবির করে বালুখালী খালের উপর পাকা সেতু নির্মাণের অর্থ বরাদ্ধ করান।
এ প্রকল্পটির নামকরণ হয় ‘নারায়ণহাট-মিরশ্বরাই গোভানিয়া হালদা ভ্যালি চা-বাগান সংযোগ সড়কে ৩২ মিটার দৈর্ঘ্য গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ’। এলজিইডির ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে ‘বৃহত্তর চট্টগ্রামের পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প’ খাতের আওতায় ২ কোটি ১৫ লাখ ৩১ হাজার ১ শত ২৭ টাকা ৩৪৩ পয়সা বরাদ্দ দেয়া হয়। এ নির্মাণ কাজটির টেন্ডার পায় চট্টগ্রাম শহরের পাঁচলাইশ ৫২, কাতালগঞ্জস্থ মেসার্স কাশেম কনসট্রাকশন। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ কাজ শেষ করার চুক্তি হয়। সে মতে মূল সেতু নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হলেও দু’পাশের সংযোগ সড়ক এখনো নির্মিত হয়নি। ফলে ৯ মাস ধরে সেতুটি তার নিজের উপরই দাড়িয়ে আছে। অন্য কেউ তাকে ব্যবহার করতে পারে না! সেতুর উত্তর পাড়ের লোকজন দক্ষিণ পাড়ে অবস্থিত মসজিদে যেতে পারে না। দক্ষিণ পাড়ের লোকজন উত্তর পাড় হয়ে বাজারে যেতে পারে না।
এ ব্যাপারে হালদা ভ্যালি চা বাগানের উর্ধ্বতন ব্যবস্থাপক মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জনগণের অনুরোধে আমাদের চা-বাগান মালিক সেতুটি নির্মাণে উদ্যোগী হন। কিন্তু সংযোগ সড়ক না হওয়ায় সড়কটি অচল। চা বাগানের সঙ্গে সব যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। প্রায় পাঁচ কিলোমিটার ঘুরে অন্য সড়কে এখন যাতায়াত করতে হচ্ছে।
চানপুর গ্রামের বাসিন্দা এডভোকেট মুহাম্মদ আবছার উদ্দিন হেলাল বলেন, সড়ক আর সেতু বিচ্ছিন্ন থাকায় মানুষ চরম দুর্ভোগে আছে। গেল বর্ষায় পাহাড়ী ঢল নামলে তখন সিঁড়ি বেয়ে চলাচলও কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। তিনি সেতুটির সংযোগ সড়ক দ্রæত নির্মাণের দাবি জানান।
সেতু নির্মাতা সাব-ঠিকাদার মুহাম্মদ মহসিন হায়দার এ প্রতিবেদককে বলেন, ৩২ মিটার দৈর্ঘ্য এ সেতুটি নির্মাণ কার্যাদেশ পাওয়ার পর কাজ করতে গেলে কর্তৃপক্ষ হঠাৎ করে সেতুর দৈর্ঘ্যতা ৪ মিটার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে। চলে নানা দোদূল্যমনতা; শেষতক ৪ মাস সময় ক্ষেপণ করে ১ মিটার বাড়িয়ে ৩৩ মিটার দৈর্ঘ্য সেতু নির্মাণের আদেশ দেয় এলজিইডি কর্তৃপক্ষ। তারপরও সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছিল ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসেই। কিন্তু সংযোগ সড়ক ধরে রাখার প্রতিরোধ দেয়াল তৈরির বরাদ্দ ছিল না। ফলে সংযোগ সড়ক এখনো নির্মাণ করা যায়নি। সেতুটি নির্মাণের পরপর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে দু’গোড়ায় ধ্বস দেখা দিয়েছে।
সেতুটির নির্মাণ কাজ তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত এলজিইডির ফটিকছড়ি উপ-সহকারী প্রকৌশলী জহুরুল আলম জানান, ডিজাইন জটিলতার কারণে দেরিতে কাজ শুরু হয় এবং নির্ধারিত সময়ে মূল সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হলেও সেতুর উত্তর প্রান্তের ভূমি জটিলতায় সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা যায়নি। ঠিকাদার ৩ কিস্তি টাকা নিয়েছে বটে। তবে চুড়ান্ত বিল দেয়া হয়নি। সংযোগ সড়ক নির্মাণে বরাদ্দ রাখা ২০ লাখ ৬৫ হাজার ১ শত ৮৪ টাকা রক্ষিত আছে। এ বরাদ্দ দিয়ে শীঘ্রই সংযোগ সড়কের কাজ শুরু হবে। অবশ্য সেতুটির দু’গোড়া প্রতিরোধে কোন বরাদ্দ ছিল না। এখন পরিস্থিতি বিবেচনায় বøক বসিয়ে দু’গোড়ার মাটি ধরে রাখার পদক্ষেপ নেয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন