শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

সাকিবদের কাঁধে রেকর্ডের বোঝা

ইমরান মাহমুদ, চট্টগ্রাম থেকে | প্রকাশের সময় : ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:২৩ এএম

গত ক’দিন থেকেই মেঘ-বৃষ্টির লুকোচুরি চলেছে চট্টগ্রামে। টেস্টে খুব একটা বাগড়া দিতে অবশ্য পারেনি। খরতাপের মাঝে দু-এক পষলা বৃষ্টি বরং শান্তির পরশই বুলিয়ে গিয়েছিল সাগরিকার পরিবেশে। এখন সেই শান্তির খোঁজে বৃষ্টির দিকেই তাকিয়ে বাংলাদেশ। আবহাওয়া পূর্বাভাস বলছে টানা না হলেও আজ ও আগামীকাল চট্টগ্রামে হতে পারে ভারী বর্ষণ। যাতে ভেসে যাওয়ারও সম্ভাবনা আছে বাংলাদেশ-আফগানিস্তান একমাত্র টেস্টটি। তা যদি হয় তাহলেই বরং বেঁচে যাবে বাংলাদেশ। আর যদি কাছের বঙ্গোপসাগরের বাতাস এসে তাড়িয়ে নেয় সাগরিকার আকাশে ভেসে বেড়ানো ঘনকালো মেঘ তাহলে রশিদ খানদের স্পিনে উড়ে যাওয়ার শঙ্কাতেই থাকবে বাংলাদেশ। কারণ, তিনদিন পর ম্যাচের যা অবস্থা তাতে অতি আশাবাদীরও পক্ষেও বাংলাদেশের হয়ে বাজি ধরার সাহস করা মুশকিল। পীড়াদায়ক হলেও টেস্টের নবীন আফগানিস্তানের বিপক্ষে এমন রুঢ় বাস্তবতার সামনেই পড়েছে সাকিব আল হাসানের দল।

গতকাল চট্টগ্রাম টেস্টের তৃতীয় দিনটাও নিজেদের করে নিয়েছে আফগানিস্তান। বাংলাদেশকে ২০৫ রানে থামিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে তারা করে ফেলেছে আরও ২৩৭ রান। হাতে ২ উইকেট নিয়ে লিড হয়ে গেছে ৩৭৪ রানের। তৃতীয় দিনে ঘনকালো মেঘের কারণে আলোকস্বল্পতায় দিনের খেলা শেষ হয়েছে ২০ মিনিট আগেই। এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আজ ২০ মিনিট আগেই শুরু হবে চতুর্থ দিনের খেলা।

চট্টগ্রামের আকাশের এই গোমরা মুখই এখন পারে বাংলাদেশকে উজ্জ্বল করতে। কেন কাজটা বাংলাদেশের জন্য প্রায় অসম্ভব, কিছু তথ্যই দিতে পারে প্রমাণ। আফগানিস্তানের লিড হয়ে গেছে ৩৭৪ রানের। অর্থাৎ এই মুহূর্তে আফগানরা ইনিংস ছেড়ে দিলে বাংলাদেশকে জিততে হলে করতে হবে ৩৭৫ রান। ১৪২ বছরের টেস্ট ইতিহাসে এরচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জেতার ঘটনা আছে আর মাত্র ৭টি। নিশ্চিতভাবেই এই লিড বড় হয়ে বাংলাদেশের লক্ষ্য আরও বড় হওয়ারই কথা। আর বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড এর ধারেকাছেও নেই। ২০০৯ সালে গ্রানাডায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২১৭ রান তাড়া করে জিতেছিল বাংলাদেশ।

যদি পরিসংখ্যানটা মেলাতে হয় চট্টগ্রামের মাঠের সঙ্গে, তাহলে আরও হতাশার খবর আছে সাকিবদের জন্য। চট্টগ্রামে কখনই রান তাড়া করে টেস্ট জিততে পারেনি বাংলাদেশ। এমনকি চতুর্থ ইনিংসে ৩৩১ রানের বেশি করতেও পারেনি। এই মাঠে শেষ ইনিংসে রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ডটি ৩১৭, বাংলাদেশের বিপক্ষে ২০০৮ সালে জিতেছিল নিউজিল্যান্ড। অর্থাৎ আফগানিস্তানকে হারাতে হলে রেকর্ড বই রীতিমতো উলটপালট করতে হবে সাকিবদের।

সকাল থেকে সারাদিনই কেবল হতাশার গল্প। আগের দিন শেষ ২ উইকেট নিয়ে লড়াই করার পণ ছিল দলের। কিন্তু সেই লড়াই টেকেনি তিন ওভারের বেশি। ২০৫ রানে অলআউট হওয়ার পর প্রথম ওভারেই সাকিব হেনেছিলেন জোড়া আঘাত। নাঈম হাসানও শুরুতে পেয়েছিলেন এক উইকেট। কিন্তু এরপর আর কোন চাপ দেওয়া যায়নি আফগানদের।

চতুর্থ উইকেটে আসগর আফগান আর ইব্রাহিম জাদরান মিলে গড়েন ১০৮ রানের জুটি, তাতেই বিশাল রানের বোঝার নিচে পড়া নিশ্চিত হয়ে যায় বাংলাদেশের। দ্বিতীয় সেশনে মাত্র ১ উইকেট হারিয়ে তুলে নেয় তারা। ফিফটি করেই আসগর আর সেঞ্চুরির আশা জাগিয়ে ইব্রাহিম ৮৭ রানে থামলে কিছুটা উদযাপনের সুযোগ পায় বাংলাদেশ। শেষ সেশনে পড়েছে আরও ৪ উইকেট কিন্তু রানও বেড়েছে তরতরিয়ে। অধিনায়ক রশিদ নেমে নাঈমের এক ওভারে মারেন পাঁচ বাউন্ডারি। এক প্রান্ত ধরে রেখে রান বাড়াচ্ছেন উইকেটরক্ষক আফসার জাজাই। তাতে দুশ্চিন্তা বেড়ে কয়েকগুণ হচ্ছে স্বাগতিকদের।

সেই দুশ্চিন্তার স্পষ্ট ছাপ পাওয়া গেল দিন শেষে দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসা মেহেদী হাসান মিরাজের চেহারাতেই। যদিও বলছেন জয়ের বিকল্প ভাবছেন না তবে কথায় সে জোর পাওয়া গেল কই, ‘এখনও ম্যাচের দুই দিন বাকি। যদিও আমরা কিছুটা ব্যাকফুটে, তবে টেস্ট ম্যাচে অনেক কিছুই সম্ভব। আপনি আগে থেকে কিছু বলে দিতে পারেন না।’ কোন ‘অলৌকিক’তার কথা বলছেন মিরাজ তা বোঝা না গেলেও অনিশ্চয়তার এই খেলায় আশা জিইয়ে রেখেই যে জয় পেয়েছে অনেক দল মনে করিয়ে দিলেন তা-ও, ‘ক্রিকেট ইতিহাসে অনেক দল জিততে জিততে হেরেছে, আবার অনেক দল হারতে হারতে জিতে গেছে। চলতি অ্যাশে সিরিজেই আছে এর প্রমাণ।’ তবে সেটি তো আর কোন অস্বরীরী কিছুতে নয়, তরতে হবে ব্যাটসমানদেরই সেটিও সাফ জানিয়ে দিলেন এই অলরাউন্ডার, ‘ম্যাচে অসম্ভব কিছু করতে ব্যাটসম্যানদের অনেক দায়িত্বশীল ক্রিকেট খেলতে হবে। আফগানিস্তান ভালো ক্রিকেট খেলেছে। আমরা ভালো বোলিং করলেও উইকেট পেতে কষ্ট হয়েছে। চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করা অনেক কঠিন। ব্যাটসম্যানদের অসীম ধৈর্য্যরে পরীক্ষা দিতে হবে।’

আফগানদের দ্বিতীয় ইনিংসে নায়ক অভিষিক্ত ওপেনার ইব্রাহিম জাদরান এসেছিলেন দলের হয়ে। তৃতীয় দিন শেষে ১৭ বছর বয়সী এই তরুণও বুঝে গেছেন বাস্তবতা, আবহাওয়ার অনিশ্চয়তা মাথায় নিয়েও জানালেন বাংলাদেশের উপর চারশোর বেশি বোঝা চাপিয়ে ম্যাচ জিততে চান তারা, ‘আশা করছি কাল (আজ) আমরা আরও ১০-১৫ ওভার ব্যাট করব তাহলে লক্ষ্যটা চারশো ছাড়িয়ে যাবে। তখন ওদের জন্য কাজটা কঠিন হবে।’ প্রথম ইনিংসে ৭০.৫ ওভারে ২০৫ রানে অলআউট হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। আফগানিস্তান আশা করছে দুইদিন পড়ে থাকায় বাংলাদেশকে গুটিয়ে দেওয়ার পর্যাপ্ত সুযোগ পাবেন তারা, ‘প্রথম ইনিংসে ওদের ৬৪ ওভারে আমরা অলআউট করেছিলাম, আশা করছি আবারও তা করব। আমাদের ৭০ শতাংশ বিশ্বাস আছে যে আমরা জেতার মতো অবস্থায় আছি।’

স্কোর কার্ড
বাংলাদেশ-আফগানিস্তান, একমাত্র টেস্ট
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম, চট্টগ্রাম
টস : আফগানিস্তান (ব্যাটিং)
আফগানিস্তান ১ম ইনিংস : ১১৭ ওভারে ৩৪২।
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : আগের দিন শেষে ৬৭ ওভারে ১৯৪/৫ (সৌম্য ১৭, লিটন ৩৩, মুমিনুল ৫২, সাকিব ১১, মোসাদ্দেক ৪৪*, তাইজুল ১৪*; ইয়ামিন ১/২১, নবী ২/৫৩, রশিদ ৪/৪৭, কাইস ১/২২)
রান বল ৪ ৬
মোসাদ্দেক অপরাজিত ৪৮ ৮২ ১ ২
তাইজুল বোল্ড নবী ১৪ ৫৮ ২ ০
নাঈম এলবি ব রশিদ ৭ ১২ ১ ০
অতিরিক্ত (বা ৪, লেবা ১) ৫

মোট (অলআউট, ৭০.৫ ওভারে) ২০৫
উইকেট পতন : ১-০ (সাদমান), ২-৩৮ (সৌম্য), ৩-৫৪ (লিটন), ৪-৮৮ (সাকিব), ৫-৮৮ (মুশফিক), ৬-১০৪ (মাহমুদউল্লাহ), ৭-১৩০ (মুমিনুল), ৮-১৪৬ (মিরাজ), ৯-১৯৪ (তাইজুল), ১০-২০৫ (নাঈম)।
বোলিং : ইয়ামিন ১০-২-২১-১, নবি ২৪-৬-৫৬-৩, জহির ৯-১-৪৬-০, রশিদ ১৯.৫-৩-৫৫-৫, কাইস ৮-২-২২-১।
আফগানিস্তান ২য় ইনিংস রান বল ৪ ৬
ইহসানউল্লাহ এলবি ব সাকিব ৪ ৩ ১ ০
ইব্রাহিম ক মুমিনুল ব নাঈম ৮৭ ২০৮ ৬ ৪
রহমত ক এন্ড ব সাকিব ০ ১ ০ ০
হাশমতউল্লাহ ক সৌম্য ব নাঈম ১২ ৩৭ ২ ০
আসগর ক সাকিব ব তাইজুল ৫০ ১০৮ ৪ ২
আফসার ব্যাটিং ৩৪ ৮৩ ২ ১
নবী ক মুমিনুল ব মিরাজ ৮ ১৩ ০ ১
রশিদ বোল্ড তাইজুল ২৪ ২২ ৬ ০
কাইস এলবি ব সাকিব ১৪ ২৬ ২ ০
ইয়ামিন ব্যাটিং ০ ১ ০ ০
অতিরিক্ত (বা ৪) ৪

মোট (৮ উইকেট, ৮৩.৪ ওভারে) ২৩৭
উইকেট পতন : ১-৪ (ইহসানউল্লাহ), ২-৪ (রহমত), ৩-২৮ (হাশমতউল্লাহ), ৪-১৩৬ (আসগর), ৫-১৭১ (ইব্রাহিম), ৬-১৮০ (নবী), ৭-২১০ (রশিদ), ৮-২৩৫ (কাইস)।
বোলিং : সাকিব ১৬-৩-৫৩-৩, মিরাজ ১২-৩-৩৫-১, তাইজুল ২৪.৪-৫-৬৮-২, নাঈম ১৭-২-৬১-২, মুমিনুল ১০-৬-১৩-০, মোসাদ্দেক ৪-১-৩-০।
*তৃতীয় দিন শেষে

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
তানিয়া ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১০:৩৩ এএম says : 0
আর দলের অবস্থা খুবই করুণ
Total Reply(0)
সোয়েব আহমেদ ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১০:৩৫ এএম says : 0
আফগানের সাথে বাংলাদেশের বেগতিক অবস্থা দেখে মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে
Total Reply(0)
বাবুল ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১০:৩৬ এএম says : 0
দলে সাকিব ছাড়া আর কেউ ধারাবাহিক পারফরমেন্স করতে পারছে না।
Total Reply(0)
আশিক ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১০:৩৬ এএম says : 0
সব দলের পারফরমেন্স ধীরে ধীরে ভালো হয় আর বাংলাদেশের খারাপ হচ্ছে
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন