ভারতের আসামে একটি দুর্গম এলাকায় প্রায় সাতটি ফুটবল মাঠের সমান বনভূমি উজাড় করা হয়েছে। সেখানে নির্মাণ করা হচ্ছে রাজ্যের অবৈধ অভিবাসীদের জন্য বন্দিশিবির। ভারতে এটিই প্রথম কোনো গণকারাগার। নির্মাণাধীন অন্তত তিন হাজার বন্দির ধারণক্ষমতার বন্দিশিবিরটির ভেতরে স্কুল ও হাসপাতালসহ অন্যান্য সুবিধা থাকবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
নির্মম বাস্তবতা হলো, এটির নির্মাণকাজে নিযুক্ত শ্রমিকদের কারো কারো নাম নেই গত সপ্তাহে প্রকাশিত রাজ্যের জাতীয় নাগরিক তালিকা—এনআরসি বা নাগরিকপঞ্জিতে। এর মানে, নিজেদের হাতে বানানো বন্দিশালায় শেষমেশ বন্দি হতে পারেন এই নির্মাণশ্রমিকরা।
বন্দিশালার নির্মাণকাজে নিয়োজিত পার্শ্ববর্তী গ্রামের নৃগোষ্ঠীর নারী শেফালী হাজং বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, তার নাম এনআরসি তালিকায় নেই। তাকে নিজের নাগরিকত্ব প্রমাণে আদালতে যেতে হবে। দেখাতে হবে জমিজমার কাগজপত্র। যদি তাতে তিনি ব্যর্থ হন, তাকেও এমনই একটি বন্দিশালায় নেওয়া হতে পারে।
ভারত সরকারের ভাষ্য হলো, আসাম রাজ্যে সীমান্তবর্তী মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারী বহু অবৈধ অভিবাসী সেখানে যুগের পর যুগ ধরে বসবাস করে আসছেন। তবে ভারতে অবৈধ ঘোষিত কোনো নাগরিককে নিজেদের দেশের নাগরিক বলতে রাজি নয় ঢাকা।
এ অবস্থায় হাজং নৃগোষ্ঠীর শেফালীর মতো অনেকেই ব্যাপক দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগ নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। শেফালী বলছিলেন, ‘কিন্তু আমার পেটের দায় আছে, কোথাও না কোথাও কাজ করতেই হবে।’
রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলার সময় শেফালীর মা মালতী হাজংও ওই বন্দিশিবির নির্মাণে কাজ করছিলেন। মালতী বুঝতে পারছেন না, কেন তালিকায় তাদের নাম নেই। তবে শেফালীর জন্মসনদ কেন নেই, তা বলতে পারলেন না তার মা।
প্রথম দফায় গোয়ালপাড়া শহরের কাছাকাছি এমন অন্তত দশটি বন্দিশিবির নির্মাণ করা হবে বলে আসাম রাজ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। বন্দিশিবিরের মধ্যে একটি রান্নাঘর বানানোর চুক্তিভিত্তিক কাজ পেয়েছেন ঠিকাদার শফিকুল হক। তিনি বলছিলেন, আশপাশের বহু গ্রাম থেকে মানুষ প্রতিদিনই কাজের খোঁজে আসছেন।
সেখানে ৩৫ বছর বয়সী সরোজিনী হাজং নামের আরেক নারী শ্রমিক জানালেন, তারও নাম নেই এনআরসির চূড়ান্ত তালিকায়। তারও জন্মসনদ নেই। তিনি বলছিলেন, ‘কী যে হবে, জানি না। ভবিষ্যতের কথা ভেবে চিন্তা হয়। কিন্তু আমরা কী করব, টাকা তো লাগবে।’
ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে আসামের নাগরিকদের তালিকা—এনআরসি প্রস্তুত করা হয়। গত সপ্তাহে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হয়। তাতে আসামের তিন কোটি ১১ লাখ মানুষের নাম রয়েছে। বাদ পড়েছেন ১৯ লাখ ছয় হাজার মানুষ, যার মধ্যে অধিকাংশই হিন্দু ধর্মাবলম্বী। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকার এই তালিকা প্রস্তুত প্রক্রিয়ার পেছনে জোর সমর্থন দিয়ে রেখেছে।
যদিও সমালোচকরা বলে আসছেন, এই নাগরিক তালিকা প্রস্তুত প্রক্রিয়াটি মূলত মুসলিমদেরকে লক্ষ্য করে হাতে নেওয়া হয়েছে। যদিও তারা যুগের পর যুগ ধরে বসবাস করে আসছেন। তবে বহু হিন্দুর নামও বাদ পড়েছে এনআরসি থেকে। রয়টার্স
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন