বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

ওয়াজ মাহফিল : প্রেক্ষিত আমাদের সমাজ

প্রকাশের সময় : ৩১ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এহসান বিন মুজাহির

॥ শেষ কিস্তি ॥
তাফসিরে মাআরিফুল কুরআনে আল্লামা মুফতি শফী (রাহ.) লিখেছেন, ‘দুই শ্রেণীর বক্তার বক্তৃতায় মানুষের কোন হিদায়াত হয় না। ১.এক শ্রেণি যারা মানুষকে আমলের কথা বলে, ভাল পথে চলার কথা বলে আর নিজেই এর আমল করে না। ২. আরেক শ্রেণি হল যারা ওয়াজ করে মানুষের কাছে টাকা চায়। এই দুইপ্রকার বক্তাদের বক্তব্যে মানুষের হিদায়াত ও কোন উপকার হবে না।
যে ওয়াজের মূল উদ্দেশ্য হয় লোক দেখানো ও প্রসিদ্ধি লাভ সে ওয়াজ যতই চমকপ্রদ হোক না কেন, মানুষ এর থেকে কোন হেদায়াত পাবে না, যুগ যুগ ধরে জাতির রাহবার ওলামায়ে কেরাম উম্মতের হিদায়াতের লক্ষে দ্বীনের অন্যান্য খিদমাতের পাশাপাশি একনিষ্টতার সাথে ওয়াজে মাহফিলের কাজ চালিয়ে গেছেন। খেয়ে না খেয়ে, দেশ দেশান্তরে সফর করে দ্বীন প্রচার করেছেন হজরত ওলামায়ে কেরামগণ। তথ্যনির্ভর ইখলাস ও নিষ্ঠাপূর্ণ নসীহতের মাধ্যমে কুরআন হাদিসের কথাগুলো পৌঁছে দিয়েছেন মানুষের দুয়ারে দুয়ারে। আওয়াম মানুষও তাদের বয়ান শুনে ইতিবাচগুলো গ্রহণ ও নেতিবাচকগুলো বর্জন করে খুঁজে নিয়েছেন ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তির পথ।
বর্তমান জামানায় দাওয়াতী কার্যক্রম (ওয়াজ মাহফিল) বহুগুণে বেড়েছে। মাদরাসা, মসজিদের পাশাপাশি বিভিন্ন সংঘ কর্তৃক অনুষ্ঠিত হচ্ছে সভা সম্মেলন। এগুলো খুব মহৎ উদ্যোগ। যারা এগুলোর আয়োজন করেছেন আল্লাহর দরবারে ছহিহ নিয়তের কারণে অবশ্যই এর প্রতিদান পাবেন, পূণ্যের অধিকারী হবেন। তবে যে বিষয়টি লক্ষণীয়, এ যুগে এত এত ওয়াজ মাহফিল প্রতিনিয়ত হচ্ছে মানুষের মধ্যে সে অনুপাতে খুব একটা পরিবর্তন পরিলক্ষিত হচ্ছে না। কারণগুলো খতিয়ে দেখা দরকার! তবে এর অন্যতম কারণ বোধয় ইখলাস ও নিষ্ঠার ঘাটতি। হিদায়াত ও আত্মশুদ্ধি পরিবর্তে সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করার মানসিকতা আর সঠিক ও তথ্যনির্ভর কুরআন সুন্নাহ ভিত্তিক বয়ান বাদ দিয়ে কিচ্ছাকাহিনীর মাধ্যমে টাইমপাস বৈকি!
‎আল্লামা ইবনুল জওযী (রাহ.) তার লিখিত গ্রন্থ তালবীসে ইবলীস নামক কিতাবে বক্তাদের হাল-হকীকত বর্ণনার অধ্যায়ে লিখেছেন, আগেকার যুগে বক্তাগণ আমলওয়ালা আলেম ছিলেন। এখনকার সময়ে আমলওয়ালা আলেমের খুবই অভাব। এখনকার সময়ে এই কাজটিকে জাহিলরা তাদের পেশা হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে। তারা জরুরুতে দ্বীন ও আমলের আলোচনা বাদ দিয়ে মূর্খ আওয়ামের পছন্দসই বিভিন্ন কিচ্ছা-কাহিনী বর্ণনায় প্রবৃত্ত হয়েছে। (তালবিসুল ইবলীস-১৬৮)
‎মুফতিয়ে আযম ফয়জুল্লাহ (রাহ.) রাসায়েলে মুফতি আজম নামক কিতাবে লিখেছেন, ওয়াজ হল ইনজার তথা মানুষকে গোনাহ থেকে ভয় দেখানো ও সতর্ক করার নাম। ওয়াজে কোকিল কণ্ঠে, টেনে টেনে বয়ান বলা এবং গানের স্বরে শের কবিতা গাওয়া ঠিক নয়। আল্লামা ইবনুল জওযী (রাহ.) বলেন, এই যুগে অধিকাংশ বক্তারাই ওয়াজে বিভিন্ন কিচ্ছা কাহিনী ঘটনা বলে সময় অতিবাহিত করে দেন। জরুরি ফারায়েজে ও আমলের আলোচনা তাতে খুবই অল্পই হয়ে থাকে।
তাদের ওয়াজ সংশ্লিষ্ট বিষয়বস্তু থেকে সম্পূর্ণরূপে অসম্পূর্ণ থাকে। কুরআন ও হাদিসের আলোকে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা অসম্পূর্ণ থাকে। কিচ্ছা কাহিনী শুনে শ্রোতারা আর কতটুকুই উপকৃত হতে পারেন? (-তালবিসুল ইবলিস: ১৭১ )
মুফতি ফয়জুল্লাহ (রাহ.) বলেন, বর্তমান যুগে ওয়াজ মাহফিল খুব কম লোকই সহীহ নিয়ত নিয়ে আসে এবং বক্তারাও দ্বীন প্রচারের উদ্দেশ্যে আসেন না। পার্থিব স্বার্থের জন্য বক্তারা মাহফিল করে থাকেন। শ্রোতারাও সুন্দর কণ্ঠ ওয়ালা বক্তাদের নাম শুনলে তার ওয়াজ শুনতে আসেন। আর এ কারণেই হিদায়াত না নিয়ে বঞ্চিত হয়ে বাড়ি ফিরে যান। (ইজহারুল মুনকারাত : ৫)
শেষ কথা : সম্মানিত ওয়াজকারী ব্যক্তিগণ ওয়াজ করবেন আখেরাত অর্জনের জন্য, দুনিয়ার সুনাম, সুখ্যাতি বা বিত্ত অর্জনের অভিলাষে নয়। চুক্তিভিত্তিক টাকা নিয়ে কিছু বক্তা ওয়াজ করেন, তাদের কথায় মানুষের হেদায়েত কতটুকু হতে পারে সে নিয়ে হক্কানি উলামায়ে কেরাম সবসময়ই সন্দেহ প্রকাশ করে থাকেন। বক্তাদের পথ খরচ বা তার অমূল্য সময়ের জন্য যে হাদিয়া দেয়া হয়, তা অবশ্যই স্বতঃস্ফূর্তভাবে এবং সন্তুষ্টিচিত্তে হওয়া উচিত। আয়োজকদেরও উচিত যে বিজ্ঞ আলেমকে তারা অতিথি ও আলোচক হিসেবে দাওয়াত করছেন তাদের যথাযথ সম্মান করা।
লেখক : সাংবাদিক, কলাম লেখক ও তরুণ আলেম

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
আলম খান ৩০ জানুয়ারি, ২০২০, ৬:৩৬ এএম says : 0
এখানে আরও ২টি দিক বাদ পড়েছে ১। মাননতের ওয়াজ ২। দলবাজির ওয়াজ।
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন