বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

হজ কার্যক্রমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা প্রয়োজন

প্রকাশের সময় : ৩১ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আহমদুল ইসলাম চৌধুরী

॥ এক ॥
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের হজ ব্যবস্থাপনা। দেশের প্রায় ৫০টির মতো মন্ত্রণালয়ের মধ্যে ধর্মমন্ত্রণালয় সরকারের কাছে গুরুত্বের দিক দিয়ে এ, বি ক্যাটাগরিতে থাকবে বলে মনে হয় না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, অর্থমন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ক্যাটাগরিতে থাকবে এটাই স্বাভাবিক। অতি ব্যস্ততার মাঝে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ধর্মমন্ত্রণালয়ের হজ কার্যক্রম নিয়ে ন্যূনতম কতটুকু তদারকি করতে পারছেন তা দূর থেকে জানবার কথা নয়। স্মরণাতীতকালের মধ্যে গত হজ কার্যক্রম নিয়ে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। প্রায় ১৫/২০ হাজারের মতো হাজীর কোটা বাকি থাকতে কয়েক দিন আগে হঠাৎ করে কোটা পূর্ণ হয়ে ডাটা এন্ট্রি বন্ধ হয়ে যাওয়া, পরবর্তীতে অপেক্ষমান তালিকায় বরাদ্দ নিয়ে প্রকাশ্যে সমালোচনা হওয়া, অব্যবস্থাপনার কারণে ধর্ম মন্ত্রণালয় হজযাত্রীর তালিকা প্রকাশ করতে না পারা, এতে এজেন্সি প্রধানগণ সকলে তাদের হজযাত্রীর সংখ্যা নিশ্চিত হতে না পারায় পবিত্র মক্কা ও পবিত্র মদিনায় ঘর ঠিক করতে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে।
সৌদি আরবে ঘরভাড়া ও মোয়াল্লেম নির্ধারণ চুক্তিতে সৌদি হজ মন্ত্রণালয়ের সাথে চুক্তি সমঝোতায় এজেন্সিগণ বিড়ম্বনার সম্মুখীন হয়। এতে সেখানে বাংলাদেশ হজ মিশন নিয়ে যথাযথ সুনাম না থাকা নানান সমস্যার মধ্যে কয়েকটি। ডাটা এন্ট্রি না হলেও মোয়াল্লেম ফি জমা করা ছিল প্রায় ১০ হাজার বা কম বেশি হজযাত্রীর। যারা অনেকটা অপেক্ষমান তালিকায় পড়ে বলা যায়। একদম শেষের দিকে তথা হজের মাত্র দু’সপ্তাহ আগে সৌদি সরকার অতিরিক্ত ৫ হাজার হজযাত্রীকে অনুমতি দেয়। এতে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ সংক্রান্ত যথাযথ কর্মকর্তারা তৎক্ষণাৎ এজেন্সির সাথে যোগাযোগ করে হজযাত্রী প্রেরণ করলে এ ৫ হাজার হাজী পবিত্র মক্কায় পৌঁছে অনেকটা অভিভাবকহীন হয়ে পবিত্র কাবার ২/৩ কিলোমিটার দূরত্বে পাহাড়ের ওপরের ঘরে অবস্থান নিতে হতো না। এ হাজীগণের কল্যাণে সরকার যে বরাদ্দ দিয়েছে তারও প্রয়োজন হতো না। এ নিয়ে ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড প্রিন্ট মিডিয়ায় ব্যাপক সমালোচনা হয়। ২০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে সৌদি সরকার হজযাত্রীগণের জন্য মাধ্যমে প্রথা চালু করে। এতে হয়ত সরকারি মাধ্যমে অথবা সরকার স্বীকৃত এজেন্সির মাধ্যমে হজ করতে হবে। যেখানে আমাদের দেশ থেকে লাখের ওপরে হজযাত্রী সেখানে সরকারিভাবে ৩/৪ হাজার হজযাত্রী পাওয়া যায় না। হজযাত্রীরা সরকারিভাবে যেতে ভয় পায় কেন, অনীহা কেন, প্রধানমন্ত্রী তা যাচাই করলে রহস্য বের হয়ে আসবে। সরকারের স্বীকৃতি দেয়া এজেন্সিরা মূলত হজযাত্রীদের সেবার নামে ব্যবসা করে। প্রায় ১৬০০’র মতো এজেন্সির মধ্যে ৫/৭টা এজেন্সি পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না, যাদের মধ্যে ব্যবসার উদ্দেশ্য নেই। ব্যবসা মানে লাভের উদ্দেশ্য। এজেন্সিরা লাভ করতে গিয়ে হাজীরা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হচ্ছে কী-না তা প্রধানমন্ত্রীর নজরে রাখলে ভালো হয়। ভারত-পাকিস্তানসহ বিশ্বের এমন দেশ কম আছে যে সমস্ত দেশের হাজীরা জেদ্দা ও পবিত্র মদিনা এ দুই বিমানবন্দর ব্যবহার করছে না। হজের আগে যারা পবিত্র মদিনা যাবে সেসব হাজীরা দেশ থেকে সরাসরি পবিত্র মদিনা বিমানবন্দরে গিয়ে নামবে এবং হজের পর জেদ্দা বিমান বন্দর থেকে দেশের উদ্দেশ্যে রওনা হবে। যেসব হাজী হজের পর পবিত্র মদিনা যাবে তারা দেশ থেকে জেদ্দা নামবে হজের পর পবিত্র মদিনা বিমানবন্দর থেকে দেশে ফিরবে। কিন্তু বাংলাদেশ বিশ্বের ২য় বৃহত্তম মুসলিম দেশ হয়েও আমাদের বাংলাদেশ বিমান হজযাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে তা পারছে না কেন জানি না। প্রধানমন্ত্রী, আপনার নজরে আছে কিনা তাও জানি না।
পাকিস্তানের ৫/৬টি বড় বড় শহর থেকে হজযাত্রীরা সরাসরি সৌদি আরব যায়। ভারতের ১০/১২টি শহর বা আরও অধিক শহর থেকে সে দেশের হজযাত্রীরা সরাসরি সৌদি আরব যাচ্ছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী কলকাতা ও গৌহাটি থেকে হাজীরা সরাসরি সৌদি আরব যাচ্ছে। হজের আগে হলে সরাসরি পবিত্র মদিনা বিমানবন্দরে নামছে এবং হজের পর জেদ্দা থেকে ফিরছে। হজের পর হাজীরা পবিত্র মদিনা গেলে হজের আগে কলকাতা গোহাটি থেকে হজ ফ্লাইট সরাসরি জেদ্দা অবতরণ করছে, হজের পর পবিত্র মদিনা থেকে কলকাতা, গোহাটি ফিরছে। জানি না প্রধানমন্ত্রী ভারত, পাকিস্তানের হজযাত্রীর কল্যাণে এ ব্যবস্থাপনা আপনার নজরে আছে কিনা? সিলেট বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হয়েছে। চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পাশাপাশি রয়েছে ৯ একর ৩৫ শতক জমির ওপর পাহাড়তলী স্থায়ী হাজী ক্যাম্প। কাজেই লক্ষাধিক হাজীর ঢাকা বিমানবন্দর ও আশকোনা হাজী ক্যাম্পের উপর চাপ না ফেলে সিলেট বিভাগ ও চট্টগ্রাম বিভাগের হাজীরা অনায়াসে সিলেট ও চট্টগ্রাম থেকে হজে গমন করতে পারে। ভারত-পাকিস্তান হজযাত্রীর সুবিধা তথা কল্যাণ চিন্তা করে দেশের বিভিন্ন শহরের বিমানবন্দর ব্যবহার করে থাকে। আমরা তা না পারা মানে হজযাত্রীগণকে কষ্টে ফেলা নয় কি? এমনিতে সারাদেশ থেকে ঢাকামুখী সড়ক যোগাযোগে অনিশ্চিত যাত্রা। দুর্ঘটনা, ভয়াবহ যানজট লেগেই থাকে।
সৌদি আরবে বাংলাদেশি লক্ষাধিক হাজীর নানান হয়রানিমূলক অব্যবস্থাপনা প্রধানমন্ত্রী জানি না আপনার নজরে আছে কিনা। পবিত্র মক্কা ও পবিত্র মদিনায় বাংলাদেশ হজ মিশন রয়েছে, রয়েছে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী। হজ এজেন্সিরা তথায় গমন করলে তাদের সহায়তার পাশাপাশি হজযাত্রীগণের কল্যাণে সবকিছু মনিটর করা তাদের দায়িত্ব নয় কি? এজেন্সিরা কোথায় ঘর ঠিক করছে, ঘরের মান কিরকম হবে এজেন্সি প্রধানরা কি করছে না করছে, সহযোগিতার পাশাপাশি যথাযথ মনিটর করা হজ মিশনের দায়িত্ব নয় কি? আমার মনে হয় না হজ মিশন যথাযথ দায়িত্ব পালন করছে। হয়ত ঢাকা থেকে দুর্বল নিয়ন্ত্রণের কারণে, হজ মিশন দায়িত্ব পালনে মনে হয় তৎপর নয়। যেখানে লাখের ওপরে হজযাত্রী সেখানে ডাক্তারের সংখ্যা কয়েকগুণ বাড়াতে হবে। দেশ থেকে নিতে হবে আরও বহুগুণ বেশি ওষুধ। ডাক্তারের সেবা দানের ঘর থাকতে হবে মিসফলার মাঝে। যেহেতু মিসফলায় অধিকাংশ বাংলাদেশি হাজির অবস্থান। কিন্তু তাদের সেবাদানের কেন্দ্রটা নিয়ে গেছে মিসফলা থেকে অনেক দূরে। সৌদি আরব বিশ্বের সমস্ত হাজীদের স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার ক্ষেত্রে সুনামের অধিকারী। কিন্তু আমাদের দেশের সরকারি ডাক্তাররা শুধুমাত্র আমাদের দেশের হাজীদের কতটুকু সেবা দিতে পারছে তা ভাববার বিষয়। একাধিক হাজীর মুখে শুনলাম, তারা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে লম্বা লাইন দেখে ফিরে আসে। ওষুধ দেয়া হয় নাকি খুব স্বল্প মাত্রায়, শুনতে পাই ৫ শতের মতো সরকারি ডেলিগেট হয়ে সৌদি আরব গমন করেছে। এ বিপুল অর্থ হয় সরকারের টাকা, না হয় হাজীর টাকা।
হজযাত্রীগণের সেবক বা গাইড হিসেবে সৌদি আরব থেকে নিয়োগ দেয়া শ্রেয়। দেশ থেকে গিয়ে তারা কতটুকুই বা সেবা দিতে পারবে। সরকারি খরচে যারা গাইড হবে তারা হজ করতে পারবে কেন? হজ করতে গেলে তো হাজীদের যথাযথ সেবা দেয়া সম্ভব নয়। এক কাফেলা প্রধান বলেন, ১০ যিলহজ হজের কঠিন সময়ে ভারত পাকিস্তানের গাইডরা শরীরে গাইডের পোশাক পরে রাস্তায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে মুজদালেফা থেকে আসা তাদের দেশের হাজীদের তাঁবুর দিক নির্দেশনা দিচ্ছিল।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন