বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

নান্দনিকতা হারাচ্ছে কুড়িল ফ্লাইওভার

উপরে বালির স্তূপ ময়লা ছোটবড় গর্ত

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

ছোট বড় গর্তে ভরা কুড়িল ফ্লাইওভার। গর্তের কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। দীর্ঘদিন ধরে এ সমস্যা সমাধানের কোনো উদ্যোগ নেই। গতকাল দুপুরে তোলা ছবি -ইনকিলাব


রাজধানীর কুড়িল ফ্লাইওভারকে বলা হতো দৃষ্টিনন্দন ফ্লাইওভার। ২০১৩ সালের ৪ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ফ্লাইওভার উদ্বোধন করেন। ছয় বছরের মাথায় সব নান্দনিকতা হারিয়ে ফ্লাইওভারটি এখন যাত্রীদের কাছে ‘দৃষ্টিকটু’ উপাধি পেয়েছে। ফ্লাইওভারে উঠতে গিয়ে বালু ও মাটির স্তুপ, ছোট-বড় খানাখন্দের কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। এ ছাড়া তদারকি না থাকায় ফ্লাইওভারের উপরেই ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। সব মিলে কুড়িল ফ্লাইওভারটি তার নান্দনিকতা হারিয়ে ক্রমে চলাচলের অযোগ্য হতে চলেছে।

রাজউকের তত্ত্বাবধানে কুড়িল ফ্লাইওভার নির্মাণ করেছে প্রজেক্ট বিল্ডার্স লিমিটেড। প্রকল্পের জন্য প্রায় ৪৭ কোটি টাকায় রেল ও ব্যক্তিমালিকানাধীন ১৩ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ফ্লাইওভারের লুপ চারটি। এগুলো হলো বনানী, কুড়িল, খিলক্ষেত ও পূর্বাচল প্রান্তে। সরেজমিনে দেখা গেছে, কুড়িল অংশে ফ্লাইওভারটি অবস্থা নাজুক। লুপের মাথায় জমে আছে বালু ও মাটির স্তুপ। এরপর লুপের ডানে-বামে ছোটবড় অনেক খানাখন্দ। কোনো কোনো গর্ত দেড় ফুট ছাড়িয়ে গেছে। বৃষ্টিতে পানি জমে যাওয়ায় সেই গর্তগুলোতে গাড়ির চাকা আটকে যাচ্ছে।

অন্যদিকে, দীর্ঘদিন ধরে পরিষ্কার না করায় দৃষ্টিনন্দন এই ফ্লাইওভারের দুই পাশে বালি মাটির স্তর জমেছে। একটু বৃষ্টি হলেই এ বালি ভিজে কাদায় পরিণত হয়। বালি কিংবা কাদা- দুই পরিস্থিতিতেই দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহনগুলো। সবচেয়ে বেশি বিপদের শঙ্কা মোটরসাইকেলগুলোর জন্য।

ভুক্তভোগিরা জানান, ফ্লাইওভারের ওপরে জমে থাকা বালি-মাটি যখন শুকনো থাকে, তখনো এর ওপর দিয়ে চলাচল করার সময় গাড়ির চাকা স্লিপ করে। এক্ষেত্রে বেশি বিপদে পড়তে হয় মোটরসাইকেল আরোহীকে। আর বৃষ্টি হলেতো কোনো কথাই নেই, বালি-মাটি ভিজে একেবারে মরণফাঁদ। বড় বড় গর্তে জমে থাকা পানিতে চাকা পড়ে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। ভুক্তভোগিরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে খোলা ট্রাকে মাটি ও বালি পরিবহনের সময় সেখান থেকে পড়ে পড়ে ফ্লাইওভারের উপরে এসব বালি-মাটি জমেছে। কখনো কখনো সিটি করপোরেশনের ময়লার ট্রাক থেকেও ফ্লাইওভারের উপরে ময়লা পড়ে। সেগুলো পরিস্কার না করায় ময়লার দুর্গন্ধে ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে চলাচল কষ্টকর হয়ে পড়ে।

ফ্লাইওভার ব্যবহারকারীরা জানান, সচরাচর এ ফ্লাইওভারের ওপরের অংশ পরিষ্কার করতে দেখা যায় না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বৃষ্টিতে ধুয়ে গিয়ে যতটা পরিষ্কার হয় তার ওপর ভরসা করতে হয়। কুড়িল ফ্লাইওভার দিয়ে নিয়মিত আসা যাওয়া করেন এমন কয়েকজন চালক বলেন, ফ্লাইওভারের উপরে ওঠার সময় রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় বালি-কাদা জমে। এখন দেখি ফ্লাইওভারের ওপরও বালি আর কাদা।

একজন মোটরসাইকেল চালক বলেন, ফ্লাইওভারে উঠতে এবং নামতে ঢালু। এছাড়া সাধারণ রাস্তার চেয়ে ফ্লাইওভার সরু। ফ্লাইওভারের রেলিং বা কিনারা ঘেঁষে যে বালু বা ভিজে যে কাদার সৃষ্টি হয়, তার ওপর চাকা গেলে স্লিপ করে যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক বশির বলেন, ফ্লাইওভারের উপরে সাবধানে গাড়ি চালাতে হয়। দুই পাশের বালি-কাদা বাদ দিয়ে চালাতে হয়। এর সাথে ছোটবড় গর্ততো আছেই। কোনো কোনো গর্ত এতোটাই বড় যে অটোরিকশাও আটকে যায়। কখনো কখনো পাশ থেকে বাস বা অন্য গাড়ি ওভারটেক করার সময় বেকায়দায় পড়তে হয়। সামাদ নামে একজন বলেন, ফ্লাইওভারটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দায়িত্বে যারা আছেন তারা তাদের কাজটা ঠিক মতো করছেন না। এগুলো নিয়মিত পরিষ্কার রাখা উচিত। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ফ্লাইওভারের প্রকল্প পরিচালকে ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেন নি।

সম্পূর্ণ টোল-ফ্রি ৩ দশমিক ১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে কুড়িল ফ্লাইওভার নির্মাণে প্রথমে ২৫৪ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হলেও শেষ পর্যন্ত তা বেড়ে ৩০৩ কোটি হয়। প্রকল্পের পুরো অর্থ রাজউকের নিজস্ব তহবিল থেকে দেওয়া হয়। ফ্লাইওভারটি রক্ষণাবেক্ষনের দায়িত্বও রাজউকেরই। কিন্তু তারা সেই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করায় দিন দিন ফ্লাইওভারটি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। #

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Nannu chowhan ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৮:৫৬ এএম says : 0
Many countries i have visited but never i have seen flyover without maintain the smooth condition,all over the world these kind of fly over maintain by private or public company but with the strict rules of law...
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন