বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

খুলনায় সাড়ে ৫ ঘণ্টার বজ্রপাতে বাবা মেয়েসহ ৬ জনের মৃত্যু

প্রকাশের সময় : ১৩ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

খুলনা ব্যুরো : খুলনায় সাড়ে ৫ ঘন্টার টানা বজ্রপাতে বাবা-মেয়েসহ মোট ৬ জন নিহত হয়েছে। শনিবার দিবাগত রাত থেকে গতকাল রবিবার ভোর পর্যন্ত বজ্রপাতের এসব ঘটনায় আরও অন্তত ১১জন আহত হয়েছেন। একই সাথে বজ্রপাতের সাথে খুলনায় ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি হয়। এতে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও অলিগলিতে পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়ে নগরবাসী। এছাড়া ঝড়ো হাওয়ায় নগরী ও জেলার বিভিন্ন স্থানে গাছ ও ডালপালা পড়ে কাঁচা ঘরবাড়ির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রাতে খুলনায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। রোববার বিকাল পর্যন্ত অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া সম্ভব হয়নি।
খুলনা জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, বজ্রপাতে খুলনায় ৬জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে বটিয়াঘাটা উপজেলায় ৩ জন, কয়রা উপজেলায় ২জন এবং পাইকগাছা উপজেলায় একজন নিহত হয়। এছাড়া অনেকে আহত এবং গাছ-পালা ও ঘরবাড়ির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তালিকা প্রস্তুত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মোঃ আমিরুল আজাদ বলেন, দক্ষিণাঞ্চলে প্রবল বজ্রপাতসহ দমকা ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি হয়েছে। শনিবার মধ্যরাত থেকে রোববার সকাল ৯টা পর্যন্ত খুলনায় ১৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। একই সঙ্গে খুলনায় রাত দেড়টা থেকে রোববার সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত অবিরাম বজ্রপাত হয়েছে।
তিনি বলেন, উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রচুর গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা এবং একটি পশ্চিমা লঘুচাপের সৃষ্টি হয়েছিল শনিবার রাতে। মেঘমালা ও পশ্চিমা লঘুচাপটির কারণে এই বজ্রপাত ও বৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রোববার ভোর ৫ টার দিকে বজ্রপাতে পাইকগাছা উপজেলার লস্কর ইউনিয়নের খড়িয়া খালের পুর্বপাড় গ্রামের মৃত মাদার গাজীর ছেলে মালেক গাজী (৬০) নিহত হয়েছেন। গড়াইখালীর বগুড়ারচক এলাকায় একটি চিংড়ী ঘেরে ঘুমন্ত অবস্থায় বজ্রপাতে তিনি মারা যান। একই সময় বজ্রপাতে উপজেলার পাতড়–বুনিয়া গ্রামের রাজ্জাক সানা (৩২), মারুফ বিল্লাহ (২৫), মোস্তাফিজুর (১৬), গদাইপুর ইউপির মটবাটি গ্রামের আমিনুল ইসলাম (২৫), রাড়–লী ইউপির মোজাহার গাজী (৪৫), মাজহারুল ইসলাম (৪৫), নওশের আলী (৫০) এবং রেজাউল ইসলাম (৩৮)সহ অন্তত ১০ আহত হয়েছে। আহতরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসধীন রয়েছে।
কয়রা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সমসের আলী জানান, উপজেলায় বজ্রপাতে মুরাদ গাজী (৩৩) ও তার মেয়ে মুসলিমা আক্তার সোনালীর (৫) মৃত্যু হয়েছে। রোববার সকালে মঠবাড়ি গ্রামে নিজ ঘরের বারান্দায় বাবা ও মেয়ে বসে থাকা অবস্থায় এ ঘটনা ঘটে। একই সঙ্গে বজ্রপাতে মুসলিমা আক্তারের মা আহত হয়েছেন। তাকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া বটিয়াঘাটা উপজেলায় বজ্রপাতে তিনজন নিহত হয়েছে। তাদের নাম ঠিকানা সর্বশেষ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জানা যায়নি।
ঝিনাইদহে দুইজনের মৃত্যু
ঝিনাইদহ জেলা সংবাদদাতা জানান,
বজ্রপাত ও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ঝিনাইদহে দুই জনের মৃত্যু ঘটেছে। নিহতরা হলেন জামেলা খাতুন (৫০) ও মিলন হোসেন (২৮)। জানা গেছে, জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার মনোহরপুর গ্রামে বজ্রপাতে জামেলা খাতুন (৫০) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়। নিহত জামেলা উপজেলার মনোহরপুর গ্রামের বাসিন্দা। স্থানীয়রা জানায়, রাতে হঠাৎ ঝড় শুরু হলে ঘরের বাইরে থেকে কাপড় আনতে যান জামেলা। এসময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
এদিকে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে গোসলের সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মিলন হোসেন নামে দমকল বাহিনীর এক সদস্যের মৃত্যু হয়। মিলন জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের বুলবুল হকের ছেলে।
মেঘনা উপজেলায় একজনের মৃত্যু
দাউদকান্দি উপজেলা (কুমিল্লা) সংবাদদাতা জানান, গত শনিবার বিকেলে কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার চন্দনপুর ইউনিয়নের রগুনাথপুর গ্রামের তিন সন্তানের জনক মুহাম্মদ হানিফ মিয়া (৩০) বজ্রপাতে ঘটনাস্থলে নিহত হন। হানিফ মিয়া রগুনাথপুর গ্রামের তুলাতুলী বাজার হইতে নিজ বাড়ীতে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনা-টি ঘটে।
যশোরে বৃদ্ধের মৃত্যু
যশোর ব্যুরো জানায়,
ঝড়ের সময় বজ্রপাতে ও ঘরের টালি ভেঙ্গে যশোরে দুই বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার মধ্যরাতে সদর উপজেলা ও ঝিকরগাছায় পৃথক এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, ঝিকরগাছা উপজেলার খাসখালি গ্রামের মৃত এলাহী বক্সের ছেলে আব্দুল আজিজ (৮০) ও সদরের বানিয়াবহু গ্রামের তাহাজ্জত মোড়ল (৬৫)। যশোর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইলিয়াস আলী জানিয়েছেন, বানিয়াবহু গ্রামে বজ্রপাতে ওয়ার্ড বিএনপির নেতা তাহাজ্জত মোড়ল (৬৫) মারা গেছেন। তিনি শনিবার রাত ১২ টার দিকে মূত্র ত্যাগ করতে ঘরের বাইরে আসেন। ওই সময় পাশে একটি নারকেল গাছে বজ্রপাত হয়। এতে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। নিহত তাহাজ্জত মোড়ল চাঁচড়া ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক। এছাড়া ঝিকরগাছার খাসখালি গ্রামে ঝড়ের সময় ছাউনির টালি পড়ে আব্দুল আজিজ নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে।
আশাশুনিতে মহিলা ও ৩ গবাদি পশুর মৃত্যু
আশাশুনি উপজেলা সংবাদদাতা জানান, আশাশুনি উপজেলার বড়দল ও খাজরা ইউনিয়নে বজ্রাঘাতে এক মহিলা ও ৩টি গরু/মহিষের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া আরও মানুষ ও গবাদিপশু আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এলাকায় বজ্রপাতের ভয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে।
রোববার ভোরে উপজেলার উপর দিয়ে ঘন্টা খানেক বিরামহীন বজ্রপাত ও প্রচুর ঝড়বৃষ্টি হয়। দিনের আলো প্রকাশিত হওয়ার আগেই আবার কালো ও ঘন মেঘে গোটা এলাকা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। এসময় তুয়ারডাঙ্গা গ্রামের তারাপদ বৈরাগির বিধবা কন্যা মৃতঃ সুনিল মÐলের স্ত্রী খুকু মনি (৩৫) গরু আনার জন্য বিলে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে অকস্মাৎ বজ্রাঘাতে তার মৃত্যু হয়। এদিকে বড়দল গ্রামের হাবিবুল্লাহর একটি মহিষ, ফকরাবাদ গ্রামের আঃ সবুরের একটি গরু ও উত্তর মাদিয়া গ্রামে নিমাই সরকারের একটি গরু মারা গেছে। এছাড়া আনুলিয়া ইউনিয়নের ঘাসটিয়া গ্রামে মহাদেব সরদারের স্ত্রী সুপ্রিয়া এবং হেতাইলবুনিয়া ও ঘুঘুমারীতে দু’টি গরুসহ বিভিন্ন স্থানে আরও অনেকে আহত হয়েছে বলে জানাগেছে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন