সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : দাফনের পর পুনরায় কবর থেকে উত্তোলনের প্রায় আড়াই মাসের মাথায় নানা নাটকিয়তা শেষে পুলিশের অপরাধ তদন্ত সংস্থা- সিআইডি কুমিল্লা কার্যালয়ে পৌঁছেছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যার দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন। গতকাল রোববার সকাল পৌনে ১১টার দিকে কুমিলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ থেকে তনুহত্যা মামলার তদন্ত সংস্থা সিআইডিতে দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়া হয়। দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান ডা. কামদা প্রসাদ সাহা (কেপি সাহা) রিপোর্টের বিষয়ে বলেছেন মৃত্যুর আগে তনুর ‘সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স’ হয়েছে। তবে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়ার জন্য পুলিশকে আরও অধিক তদন্তের পথে এগুতে হবে।
অবশেষে সকল নাটকীয়তার অবসান ঘটিয়ে দেয়া হল চাঞ্চল্যকর তনুরহত্যার দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত রিপোর্ট। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ ফরেনসিক বিভাগের ফারুক আহমেদ ও মাহেআলম নামে দুই ব্যক্তি সিলগালায় অবস্থায় বিশেষ খামে রক্ষিত দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের রিপোর্ট রোববার সকাল পৌনে ১১টার দিকে কুমিল্লা পুলিশ সুপার অফিসের তৃতীয় তলায় অবস্থিত সিআইডি কার্যালয়ে নিয়ে আসলে সিআইডির সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মোশাররফ হোসেন তা গ্রহণ করেন। দুপুরে ময়নাতদন্ত রিপোর্টের বিষয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে কথা বলেন মেডিকেল বোর্ডের প্রধান ডা. কেপি সাহা। তিনি বলেন, তনুর মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কারণ দাফনের অন্তত দশদিন পর পচা-গলা লাশ কবর থেকে তুলে দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। আর মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হতে হলে পুলিশকেই আরও অধিক তদন্ত করতে হবে। দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান ও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ ফরেনসিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কামদা প্রসাদ সাহা (কেপি সাহা) আরও বলেন, মৃত্যুর আগে তনুর সঙ্গে সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স হয়েছে। আর এটি ধর্ষণ কিনা তা বলতে পারবো না।
কুমিল্লা সেনানিবাসের আবাসিক এলাকার একটি ঝোপ থেকে গত ২০ মার্চ রাত দশটায় তনুর লাশ উদ্ধারের পর ২১ মার্চ কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে তার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয় এবং ওইদিনই কুমিল্লার মুরাদনগরের মির্জাপুরের গ্রামের বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে তনুকে দাফন করা হয়। প্রথম ময়নাতদন্তের রিপোর্ট দেন ডা. শারমিন সুলতানা। রিপোর্টে তনুর মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত না হওয়া এবং ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করা হয়। ওইসময় মযনাতদন্ত রিপোর্টে তথ্য গোপন করার অভিযোগ উঠে এবং তনুর পরিবার থেকে রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করা হয়। আদালতের নির্দেশে ৩০ মার্চ দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে লাশ উত্তোলন এবং ডিএনএ পরীক্ষার জন্য তনুর শরীরের কিছু নমুনা সংগ্রহ করা হয়। আদালতের নির্দেশে তনুর পরিহিত কাপড়চোপড়সহ ৭টি আইটেমের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য সিআইডির ল্যাবে পাঠানো হয়। ১৪ মে সাতটি আইটেমের ডিএনএ রিপোর্ট আদালতে পৌঁছে এবং ১৬ মে তনুর ডিএনএ রিপোর্টে ভেজাইনাল সোয়্যাবে তিন পুরুষের শুক্রাণুর অস্তিত্ব পাওয়ার খবর প্রকাশ করে সিআইডি। ডিএনএ রিপোর্টে ধর্ষণের আলামতের খবরে দেশব্যাপি হৈচৈ পড়ে যায়। অভিযোগের আঙ্গুল উঠে প্রথম ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ডা. শারমিন সুলতানার বিরুদ্ধে। দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত রিপোট দিতে মেডিকেল বোর্ড ডিএনএ রিপোর্টের অজুহাতে সময় ক্ষেপণ শুরু করে। সিআইডির সঙ্গে মেডিকেল বোর্ডের শুরু হয় চিঠি চালাচালি। বিষয়টি শেষ অব্দি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। গত ৭ জুন মঙ্গলবার আদালতের নির্দেশে তনুর শরীর ও কাপড়ের ডিএনএ রিপোর্ট দ্বিতীয় ময়নাতদন্তকারী মেডিকেল বোর্ডের কাছে হস্তান্তর করে সিআইডি। ওইদিন বোর্ডের প্রধান ডা. কেপি সাহা রোববারের মধ্যে দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত রিপোর্ট দিতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অবশেষে তনুহত্যা মামলার তদন্ত সংস্থা সিআইডির হাতে রোববার সকাল পৌনে ১১টায় পৌঁছে বহুল আলোচিত দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত রিপোর্ট। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক গাজী মোহাম্মদ ইব্রাহিম জানান, দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে এসেছে। এটি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত হবে। মামলা তদন্ত সহায়ক দলের প্রধান, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণসহ কেউই মামলাটি নিয়ে শুরু থেকে বসে নেই। মামলা তদন্তে আরও এগুতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন