শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

চাপাতির কোপে ফালাফালা কণ্ঠশিল্পী জেমির শরীর

প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০৩ এএম | আপডেট : ১২:১৩ এএম, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

তিনি কণ্ঠশিল্পী। তার সুরের মূর্চ্ছণায় লাখো হৃদয়ে বয়ে যায় আনন্দের হিল্লোল। নিজস্ব গায়কী আর স্বতন্ত্র উপস্থাপন শৈলীতে নিজেকে অনেকের মধ্য থেকে আলাদা করে নিয়েছেন ইতিমধ্যেই। সংগীত জগতের সম্ভাবনাময় মায়াবি মুখ জেমি পারভীন। সপ্রতিভ এই আলোক শিখা পুরোপুরি জ্বলে ওঠার আগেই যেন নিভে যাচ্ছে দপ করে। তার কন্ঠকে চিরতরে স্তব্ধ করে দিতে চায় সন্ত্রাসীদের চাপাতির কোপ। নিজের নিরাপদ গৃহেই অতর্কিত হামলায় সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে ফালা ফালা করেছে জেমির শরীর। হাতে, পায়ে, পেটে, পিঠে-বাদ নেই শরীরের কোনো স্থান। হার্মাদ জলদস্যুদেরও হার মানানো সে এক অবিশ্বাস্য নৃশংসতা। ঘটনাটি গত ১৮ আগস্ট রাতে। সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া শহরের পশ্চিমপাড়ায়, জেমি পারভীনের স্বামীর বাড়িতে। ঈদ এবং শোক দিবস পালন করে ওইদিনই জেমি ঢাকা থেকে উল্লাপাড়া যায়। রাতে একাকী ঘরে বসে টিভি দেখছিলেন। বাইরে টিপটিপ বৃষ্টি। হঠাৎ কলিং বেজে ওঠে। দরজা খোলার সাথে সাথে ঘরে ঢোকে ৫/৬ সন্ত্রাসী। সবার শরীরে রেইনকোট। হাতে চাপাতি, রাম দা, চায়নিজ কুড়াল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সন্ত্রাসীরা স্কচটেপ দিয়ে জেমির মুখ আটকে দেয়। এরপরই অশ্রাব্য গালাগাল, সঙ্গে এলোপাতাড়ি কোপ। জবাই করার গরুর মতোই ফিনকী দিয়ে বেরোয় রক্ত। কয়েক মিনিটের মিশন। মৃত ভেবে সন্ত্রাসীরা ড্রয়িং রুমে ফেলে যায়। যাওয়ার সময় সন্ত্রাসীরা জিপার খুলে প্রশ্রাব করে দেয় জেমির মুখে। নিচ তলায়ই ভাড়া থাকেন সিরাজগঞ্জ-পাবনা মহাসড়কে কর্মরত ট্রাফিক পুলিশের কয়েকজন সদস্য। তারা কেউ টের পাননি। পরে জেমিকে প্রথমে সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতাল এবং পরে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। পরদিন ১৯ আগস্ট জেমি পারভীনের স্বামী মোহাম্মদ আলী বাদী হয়ে উল্লাপাড়া মডেল থানায় মামলা (নং-৪ (৮) ১৯, তারিখ ১৯/০৮/২০১৯ইং) দায়ের করেন। তাতে আসামি করা হয় জেমির চাচাতো ভাই রতন (৪৫), রূহুল আমিন (৪০), মো. মানিক (৪৬), মো. বাবুল (৪২) কে।
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় ঘটে যাওয়া এত বড় ঘটনা কোনো গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়নি। কারণ হিসেবে জানা যায়, সন্ত্রাসীরা চরমপন্থি একটি গ্রুপের সদস্য। তাদের বিষয়ে মুখ খোলার সাহস কারো নেই। অথচ কোনো সিসি ফুটেজ থাকলে এতোদিনে হয়তো জেমিকে কোপানোর দৃশ্য ভাইরাল হয়ে যেতো সিলেটের খাদিজা, ঢাকার বিশ্বজিৎ কিংবা বরগুনার রিফাতের মতো। তবে জেনির স্বজনরা কিছু ছবি তুলে রেখেছেন ভীবৎতার কারণে যা মূদ্রণ-অযোগ্য।
হাসাপাতালের বিছানায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে জেমি জানান, চাচাতো ভাই-বোনদের সঙ্গে শাহজাদপুর থানাধীন মাকরকোলা বাজারঘাটি গ্রামে পৈতৃক সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ দীর্ঘদিনের। ওরা ইতিমধ্যেই জালিয়াতির মাধ্যমে তাদের অনেক সম্পত্তি দখল করে নিয়েছে। বাকী সম্পত্তি নামমাত্র মূল্যে দিয়ে দিতে চাপ দেয়া হচ্ছে। রাজী না হওয়ায় হত্যার উদ্দেশ্যে এ হামলা। এটিই প্রথম নয়। এর আগে আরো চারবার তার ওপর নৃশংস হামলা হয়। সিরাজগঞ্জ, ঢাকা এবং গ্রামে প্রকাশ্য দিবালোকে হামলা চালানো হয়। এ নিয়ে থানায় মামলা ছাড়াও একাধিকবার সালিশও হয়। কিন্তু কোন কিছুতেই ওদের দমন করা যায়নি। এমনকি গত ২৫ জুলাই শাহজাদপুরের গ্রামের বাড়িতে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে তাকে মারধর করে জখম ও শ্লীলতাহানির চেষ্টা করা হয়। এ ঘটনার পর স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সিদ্ধান্তে মামলা প্রত্যাহার ও সমঝোতা হয়। পরে সমঝোতার শর্তও তারা মানেনি।
জেমি জানান, তারা ১০ বোন। তিনি নবম। সবার ছোট এক মাত্র ভাই। দুই সন্তানের জননী জেমি স্বামীর সঙ্গে ঢাকায় বসবাস করেন। কণ্ঠশিল্পী হবার সুবাদে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সাথে পরিচয় রয়েছে। সরাসরি দলীয় রাজনীতিতে যুক্ত না থাকলেও তিনি ও তার পরিবার আওয়ামী লীগের অনুসারী। পরিবারের পক্ষে পৈত্রিক সম্পত্তি সর্বশক্তি দিয়ে আগলে রাখতে চান। এ কারণে তিনিই সন্ত্রাসীদের প্রধান টার্গেট।
এদিকে ঘটনার পর প্রায় এক মাস হতে চললেও কোনো আসামিকে গ্রেফতার করতে পারে উল্লাহপাড়া থানা পুলিশ। জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উল্লাপাড়া থানার সাব-ইন্সপেক্টর জাহিদুল ইসলাম গতকাল বুধবার ‘ইনকিলাব’কে বলেন, মামলাটির তদন্ত চলছে। বাদী মোহাম্মদ আলী সাহেবকে নিয়ে একাধিকবার অভিযান চালিয়েও আসামিদের গ্রেফতার করা যায়নি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
Abir Khan ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৪৬ এএম says : 0
Very Sad news.
Total Reply(0)
Mannan Bhuiyan ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৪৬ এএম says : 0
May Allah Bless and help her.
Total Reply(0)
সাইফুল কবির ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৪৭ এএম says : 0
ইন্না নিল্লাহ, আল্লাহ তায়ালা রহমত করুন।আমিন
Total Reply(0)
মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৪৮ এএম says : 0
মানুষ কত নিষ্ঠুর বরবর ও দাম্ভিক হলে এভাবে কোপাতে পারে। দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার করে শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
Total Reply(0)
কবির ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৪৮ এএম says : 0
দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
Total Reply(0)
উজ্জল ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১০:৪৪ এএম says : 0
ঘটনার পর প্রায় এক মাস হতে চললেও কের কোনো আসামিকে গ্রেফতার হয় নি ?
Total Reply(0)
সা মো মছিহ্ রানা S M Moseeh Rana ৪ ডিসেম্বর, ২০২২, ৮:৪৩ পিএম says : 0
স্বাধীনতাবিরোধীচক্রের হাতে জাতীয় পতাকা রক্তাক্ত!!!???????????????????? কন্ঠশিল্পী জেমি পারভীনকে হত্যার উদ্দেশে পৈশাচিক নির্যাতন???? নরপিশাচদের টার্গেট বাংলাদেশের পতাকা, বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার নাকি আরও কিছু?? স্বাধীনতা বিরোধী দেশদ্রোহীদের উল্লাস নৃত্যে টনক নড়েনি দেশপ্রেমিক চৌকষ গোয়েন্দা, সরকার ও প্রশাসনের? রক্তের হোলিখেলায় বেসামাল এরা কারা? কী ঘটেছিল সেদিন? ????????????ডেটলাইন সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া শহরের পশ্চিমপাড়া কণ্ঠশিল্পী জেমি পারভীনের বাড়ি-২০১৯সালের ১৮ আগস্ট রাত। ৬-৭ জন হায়েনা চাপাতি, রাম দা, চায়নিজ কুড়াল নিয়ে বাড়িতে ঢুকে পড়ে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা স্কচটেপ দিয়ে জেমির মুখ আটকে, জাতীয় পতাকা দিয়ে তার হাত-পা বেঁধে কসাইর মতো জেমির শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাথারি কোপাতে থাকে। ফিনকী দিয়ে বেরোয় রক্ত। কয়েক মিনিটের মিশন। মৃত ভেবে সন্ত্রাসীরা ড্রয়িং রুমে ফেলে যায় তাকে। এর আগে ড্রয়িং রুমে থাকা বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ বঙ্গবন্ধু পরিবারের অন্য সদস্যদের ছবি ভাঙচুর করে। এখানেই শেষ হয়ে যেতে পারতো দানবদের তাণ্ডবতা! কিন্তু না!!! ????????জেমির বিরুদ্ধে একের পর এক ডিজিটাল নিরাপত্তা সহ বিভিন্ন আইনে অর্ধশত মামলা দায়ের এবং কালোটাকার বিনিময়ে বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ও পত্রিকায় জেমির অস্তিত্ব বিপন্ন করতে মিথ্যা কল্পকাহিনী প্রচার-প্রকাশ করা হয়। মামলায় কারাবন্দি হতে হয় জিমিকে। জেমির বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলেকে কিডন্যাপ করে ২৯দিন ধরে জিম্মি করে রেখে নির্মমভাবে মারধর করে তাকে রামপুরা ব্রিজের নিচে অর্ধমৃত অবস্থায় ফেলে যায়। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। বিভিন্ন মামলা দিয়ে হেনস্তা করা হয় জেমির ছোটভাই ও পরিবারের অন্য সদস্যদের। নানান কল্পকাহিনী-অপবাদ-সুড়সুড়ি ছড়ানো হয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে। কণ্ঠশিল্পী জেমি পারভীনকে জাতীয় পতাকা দিয়ে বেঁধে নির্মমভাবে কুপিয়ে রক্তাক্ত আহত করা, জেমির রক্তে জাতীয় পতাকা রক্তাক্ত করা, বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ বঙ্গবন্ধু পরিবারের অন্য সদস্যদের ছবি ভাঙচুর-ইত্যকার যাবতীয় অপকর্মকাণ্ডের নেপথ্যে দুর্বৃত্তদের নিশ্চয়ই গভীর কোনও দুরভিসন্ধি কাজ করেছে।???????? ????????????লক্ষপ্রাণের বিনিময়ে আমাদের অর্জন জাতীয় পতাকা এবং বঙ্গবন্ধুকে অপমান এদেশবাসী মেনে নিতে পারে না। এ নৃশংসতা, বর্বরতা, পাশবিকতা এবং নাটকীয়তার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন এখন জাতীয় দাবি। আশা করছি, স্বাধীনতার স্বপক্ষের বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে যুগান্তকারী পদক্ষেপ আশু গ্রহণ করবেন। এও আশা করছি, বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। আর এতে এসব ঘটনার নেপথ্য নায়ক, কলা-কুশলী দেশের স্বাধীনতাবিরোধীচক্রের পিলে চমকানো যাবতীয় রহস্য উন্মোচিত হবে। ????????????
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন