বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

তদন্তে ভুয়া প্রমাণিত

বেনাপোল কাস্টমস কমিশনারের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

বেনাপোলের কাস্টমস কমিশনার বেলাল চৌধুরীর বিরুদ্ধে দুদকে দেয়া ১৫টি অভিযোগই এনবিআরের তদন্তে ভুয়া প্রমাণিত হয়েছে। দুদকের সাবেক উপ পরিচালক আহসান আলী যিনি দুদকের হবু মহাপরিচালক পরিচয়দাতা ‘বেনামীর বাদশা’ খ্যাত এবং ভায়াগ্রা গডফাদার চক্র ৩১টি চালানে ২ কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকির তদবির করে ব্যর্থ হয়ে একের পর এক বেনামে অভিযোগ দেয় বলে কমিশনার জানিয়েছেন।

বেনাপোল কাস্টমস কমিশনারই শুধু নন, অন্যান্য কর্মকর্তাসহ গোটা বেনাপোল কাস্টমসে শুল্ক ফাঁকির কারবার করতে ব্যর্থ হয়ে বিভিন্নভাবে অস্থিরতার সৃষ্টি করেছে শক্তিশালী ওই চক্রটি। দুদকের অভিযোগ প্রেক্ষিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের পক্ষে সদস্য (শুল্ক: নীতি ও আইসিটি) সৈয়দ গোলাম কিবরীয়ার নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি কমিশনার বেলাল চৌধুরীর বিরুদ্ধে বেনামী অভিযোগের তদন্ত করেন। এনবিআরের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ১৫টি অভিযোগই ভুয়া প্রমানিত হয়েছে। অভিযোগে তার নামে যেসব বাড়ি ও ফ্ল্যাটের কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো অন্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের। এর মধ্যে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের শ্বশুর-শাশুড়ির ধানমন্ডির বাড়িও আছে।

সাহাদাত হোসেন নামের এক ব্যক্তি ধানমন্ডি আবাসিক এলাকার ৬ নম্বর রোডের ২০ নম্বর বাসার ঠিকানায় ধানমন্ডির যে হোল্ডিং নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে সেটিও তার নয়। যেসব সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের সঙ্গে যোগসাজশে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ করা হয়েছে, তদন্তে সেসব সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের নাম-ঠিকানারও সত্যতা মেলেনি।

এনবিআরের প্রতিবেদনে বলা হয় বেনামী অভিযোগে মোটা অঙ্কের ঘুষ নিয়ে ৪৮০ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকির কথা বলা হলেও এ বিষয়ে তদন্তে সুনির্দিষ্ট বিল অব এন্ট্রি সংক্রান্ত কোনো তথ্য মেলেনি। অভিযোগে শেখ মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ীর মালিকানা হিসেবে মেসার্স ট্রিনা অ্যাসোসিয়েশনের কথা বলা হলেও বাস্তবে ওই ব্যক্তি কোনো সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট নন।

অবৈধ সম্পদের অভিযোগে বেলাল চৌধুরীর নামে ধানমন্ডির ১৫/এ, রোড নম্বর-৪-এর ১৫ নম্বর বাড়ির কথা বলা হয়েছে। তদন্তে ওই বাড়ির মালিক ও বসবাসকারী মো. আতিকুল করিম ও পাপ্পু। ওই বাড়িতে একটি ডেভেলপার কোম্পানি রয়েছে। একইভাবে ধানমন্ডির ৫ নম্বর রোডের ১৫০ কোটি টাকা মূল্যের ১৫ নম্বর বাড়িটি বেলাল চৌধুরীর নামে উল্লেখ করা হয়।

দেখা যায়, বাড়িটি উজির আফজাল, নাজির আফজাল ও তৈয়ব আফজালের। ধানমন্ডির ৫ নম্বর রোডের ১৬ নম্বর বাড়িটি বেলাল চৌধুরীর উল্লেখ করা হলেও তদন্তেকালে জানা যায়, সাবেক নৌবাহিনীর প্রধান ও তারেক রহমানের শ্বশুর মরহুম মাহবুব আলী খানের নামে। বাড়িটির বর্তমান মালিক সৈয়দ ইকবাল মান্দ বানু। তার দুই মেয়ে জোবায়দা রহমান ও বিন্দু। অভিযোগে বসুন্ধরা জি-ব্লকে ১০ কাঠা জমির ওপর ৭৫ কোটি টাকা মূল্যের ৬ তলা বাড়ির কথা বলা হলেও ওই তথ্যেরও সত্যতা পায়নি তদন্ত কমিটি।

এখানেই শেষ নয়, অভিযোগে বেলাল চৌধুরীর নামে যশোর এসপি অফিসের পাশে ১৫ কাঠা জমির ওপর ১৫ তলা ভবন নির্মাণ, ২ কোটি টাকা দিয়ে সিভিল সার্জন অফিসের পাশে ৩৩ শতাংশ জমি ক্রয় করে ৭৫ কোটি টাকা দিয়ে ১০ তলা ভবন নির্মাণের কথা বলা হয়। কিন্তু তদন্তে এর কোনো সত্যতাই মেলেনি।

অভিযোগে নোয়াখালী শহরে ৭৫ কোটি টাকা দিয়ে ১০ কাঠা জমির ওপর ৬ তলা বাড়ি নির্মাণের যে কথা বলা হয়েছে, তারও সত্যতা মেলেনি। তবে প্রতিবেদনে বলা হয়, ৪৫ নিউ ইস্কাটনে যে ফ্ল্যাটে বেলাল চৌধুরী পরিবার নিয়ে বসবাস করেন সেই ফ্ল্যাটের মালিক তিনি। সেটিও আইসিবি ইসলামী ব্যাংক থেকে ১৮ বছরের ঋণ নিয়ে ২০১২ সালে ক্রয় করা। এগারো বছরের কিস্তি এখনো অপরিশোধিত।

দুদুকের সাবেক উপ পরিচালক আহসান আলী চক্র মনগড়া সম্পদ ও দুই ডজন অপরাধের তালিকা দিয়ে দুই দফায় বেনামী অভিযোগ লিখে ২শ’ জায়গায় বিলি করেন। শুধু দুদকেই ৪০টির বেশি জমা দেন। আমদানিতে সুবিধা করতে না পেরে তিনি বেআইনি কর্মকান্ডসহ ভায়াগ্রা চোরাচালানের সাথে জড়িয়ে পড়েন। সর্বশেষ আহসান আলীসহ ভায়াগ্রা চক্রের আড়াই টন ভায়াগ্রার চালান আটক হয়। এতে তিনি আরো বেপরোয়া হয়ে কমিশনারের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার, অপপ্রচার, সম্মানহানীতে লিপ্ত হন। গত দেড় বছর ধরে বেনাপোল কাস্টম হাউসের কর্মকর্তা কর্মচারীদেরকে ভীতি ও আতঙ্কে রেখেছেন।

বেনাপোল কাস্টমস হাউসের কমিশনার বেলাল চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ভাযাগ্রা আটকের আগে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিলনা। ভায়াগ্রা আটকের পর প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে নাটের গুরু আহসান আলীসহ চক্রটি অস্থিরতার সৃষ্টি করে। আমি পৌনে দু’বছর ধরে কাজ করছি। দুইশ’র বেশি সংস্কার কাজ করেছি। বাণিজ্য ও যাত্রী সেবার মানোন্নয়নে এসব কাজ করেছি। ফলে পণ্য আমদানি চালান ৩৩দিনের জায়গায় ১দিনে খালাস হচ্ছে। একজন যাত্রী ২/৩ ঘন্টার স্থলে ৫-১৫মিনিটে নির্বিঘেœ ভারতে যাচ্ছে। আমি দুর্নীতি করি না, প্রশ্রয়ও দিইনা। এর আগেও চট্টগ্রাম থাকাকালীন আমার নামে দুদকে দেয়া বেনামী অভিযোগ ভুয়া প্রমাণিত হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন