শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সিন্ডিকেটের বাধায় ছাত্রদলের কাউন্সিল

অনুসারিদের মামলা : আদালতের স্থগিতাদেশ হতাশ প্রার্থী, ভোটার, নেতাকর্মীরা

ফারুক হোসাইন | প্রকাশের সময় : ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:০৭ এএম

দীর্ঘ ২৭ বছর পর গণতান্ত্রিক চর্চায় ফিরছে ছাত্রদল। ভাই তন্ত্র ও সিন্ডিকেটের বাইরে তৃণমূলের কাঁধে পড়েছে আগামী দিনের নেতা নির্বাচনের দায়িত্ব। সারাদেশের ১১৭টি সাংগঠনিক ইউনিটের ৫৩৩ জন ভোটার তাদের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে বেছে নেবেন বিএনপির ভ্যানগার্ড খ্যাত ছাত্র সংগঠনটির নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। যে দু’টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২৮ জন প্রার্থী। তফসিল অনুযায়ী আগামীকাল শনিবার অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা কাউন্সিল। এ লক্ষ্যে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। ছাত্রদলের সাবেক ৬ নেতাকে দেয়া হয়েছে নির্বাচনের দায়িত্ব। প্রার্থীরাও গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে শেষ করেছেন তাদের প্রচার-প্রচারণা। ভোটারদের মধ্যে অনেকেই গতকাল নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে সংগ্রহ করেছেন ছবিযুক্ত ভোটার কার্ড। বহু বছর ধরে ছাত্রদলকে নিয়ন্ত্রণকারী সিন্ডিকেটের সদস্যরাও কষছিলেন শেষ মুহূর্তের হিসাব- নিকাশ। নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে চলছিল গ্রæপিং, লবিং, টাকার খেলা। কিন্তু এরই মধ্যে রাতে আদালতের এক আদেশে বদলে যায় সার্বিক চিত্র। ঢাকা জেলা জজ কোর্ট-৬ এ ছাত্রদলের কাউন্সিল স্থগিত চেয়ে মামলা করেন ছাত্রদলের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সহ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক আমান উল্লাহ আমান। মামলা করার পর কাউন্সিল ও নির্বাচনে অস্থায়ী স্থগিতাদেশ দেয় আদালত। একই সঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ১০ নেতাকে এ ঘটনায় শোকজ করেছেন। আদেশে তাদের ৭ দিনের মধ্যে শোকজের জবাব দিতে বলেছে। এই সময়ের মধ্যে বিএনপি ছাত্রদলের কাউন্সিল আয়োজন করতে পারবে না।

এদিকে কাউন্সিল স্থগিতের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর প্রার্থী, ভোটার ও নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে প্রার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে যে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন এবং ভোটের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন তারা স্থগিতাদেশের খবর শুনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ছাত্রদলের সভাপতি প্রার্থী ফজলুর রহমান খোকন, হাফিজুর রহমান, সাজিদ হাসান বাবু, এরশাদ খান বলেন, এ ধরনের ঘটনা গণতান্ত্রিক চর্চার পথে অন্তরায়। যে বা যারা এটি করেছে এবং করিয়েছে তাদের চিহ্নিত করা উচিত। সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করার পর স্থগিতাদেশ প্রার্থীদের জন্য বাড়তি বিড়ম্বনা সৃষ্টি করবে।

স্থগিতাদেশের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, একটি মহল ছাত্রদলের কাউন্সিল নিয়ে শুরু থেকেই ষড়যন্ত্র করছে। তাদেরই কেউ এটি করতে পারে। তবে বিএনপির কাছে গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত এরকম কোনো নির্দেশনা পৌঁছায়নি।

ছাত্রদলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহবায়ক খায়রুল কবির খোকন বলেন, ছাত্রদলের কাউন্সিল আয়োজনের সকল প্রস্তুতি তারা সম্পন্ন করে রেখেছেন। তবে আদালতের স্থগিতাদেশের বিষয়ে শুনেছেন। কপি না পাওয়া পর্যন্ত কাউন্সিল স্থগিত করার বিষয়ে কিছু বলতে পারবেন না।

এদিকে ছাত্রদলের শীর্ষ দুই পদে বিজয়ী হতে গতকাল রাত পর্যন্ত চলছে শেষ মুহূর্তের লবিং-তদবির। কাউন্সিলরদের মন জয়ের চেষ্টা। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী তালিকা দীর্ঘ হলেও প্রতিযোগিতা হবে হাতেগোনা কয়েকজনের মধ্যেই। সভাপতি পদে এগিয়ে আছেন ফজলুর রহমান খোকন, হাফিজুর রহমান, সাজিদ হাসান বাবু ও রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় আছেন আমিনুর রহমান আমিন, শাহ নেওয়াজ, তানজিল হাসান, মো: জুয়েল হাওলাদার (সাইফ মাহমুদ জুয়েল), মো. জাকিরুল ইসলাম জাকির ও মোহাম্মদ কারিমুল হাই (নাঈম)।

প্রার্থীদের প্রচারণা শেষ হয়েছে গতকাল বৃহস্পতিবার। এখন চলছে ভোটের হিসাব। ছাত্রদলের কাউন্সিল ঘিরে বিএনপি নেতারাও নানাভাবে মাথা ঘামাচ্ছেন। শনিবার ভোট গ্রহণের জন্য নির্ধারিত হয়েছে। ভোটারদের মন জয়ে এখনো নানা উপায়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন প্রার্থী ও তাদের অনুসারীরা। কাউন্সিল ঘিরে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা এবং ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকেরা নানা অঙ্ক কষছেন। পছন্দের প্রার্থীকে জয়ী করতে ব্যাপক লবিং আর তদবিরের প্রতিযোগিতা চলছে। কেননা ছাত্রদলের শীর্ষ দুই নেতা নির্বাচনে ফ্যাক্টর গ্রæপের সমর্থন আর অঞ্চলভিত্তিক ভোটারদের দেয়া হচ্ছে নানা অফার। আবার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট না দিলে ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং হুমকি এমনকি ভবিষ্যতে রাজনীতি কিভাবে করবেন সেটাও দেখে নেয়ার হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে প্রার্থী ও কাউন্সিলরদের অভিযোগ।

এবারের কাউন্সিলে সভাপতি পদে ৯ জন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ১৯ জনসহ সর্বমোট ২৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্ব›িদ্বতা করবেন। সভাপতি পদে বৈধ প্রার্থীরা হলেন- মো: ফজলুর রহমান খোকন, হাফিজুর রহমান, মো: মামুন বিল্লাহ (মামুন খান), সাজিদ হাসান বাবু, মাহমুদুল হাসান বাপ্পি, রিয়াদ মো: তানভীর রেজা রুবেল, মো: এরশাদ খান, এস এম এ বি এম মাহমুদ আলম সরদার ও কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ।

সাধারণ সম্পাদক পদে বৈধ প্রার্থীরা হলেন- মো: আমিনুর রহমান আমিন, শাহনেওয়াজ, মো: তানজিল হাসান, মো: জাকিরুল ইসলাম জাকির, মোহাম্মদ কারিমুল হাই (নাঈম), মাজেদুল ইসলাম রুমন, ডালিয়া রহমান, শেখ আবু তাহের, সাদিকুর রহমান, কে এম সাখাওয়াত হোসাইন, সিরাজুল ইসলাম, মো: ইকবাল হোসেন শ্যামল, মো: জুয়েল হাওলাদার, মুন্সি আনিসুর রহমান, মো: মিজানুর রহমান শরিফ, শেখ মো: মশিউর রহমান রনি, মোস্তাফিজুর রহমান, সোহেল রানা, কাজী মাজহারুল ইসলাম।

সভাপতি প্রার্থী হিসেবে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে উত্তরাঞ্চলের একক প্রার্থী বিএনপির তীর্থস্থান খ্যাত বগুড়ার সন্তান ফজলুর রহমান খোকন ও দক্ষিণাঞ্চলের প্রার্থী বাগেরহাটের সন্তান হাফিজুর রহমান। উভয়েরই রয়েছে বিশাল ভোটব্যাংক ও সুপরিচিতি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতা উত্তরাঞ্চলের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে খোকনের পক্ষে কাজ করছেন। অন্যদিকে দক্ষিণাঞ্চলের অধিকাংশ নেতাও হাফিজের পক্ষে মাঠে নেমেছেন। আর হামলা-মামলার শিকার হওয়ায় ব্যক্তি হিসেবে শ্রাবণেরও পরিচিতি রয়েছে। তবে তার পুরো পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত হওয়ায় তাকে নিয়ে কাউন্সিলররা সমালোচনায় মুখর। শেষ পর্যন্ত সভাপতি পদে খোকন-হাফিজের মধ্যেই হবে চূড়ান্ত লড়াই। অবশ্য এই পদে জামালপুরের সাজিদ হাসান বাবু, ঝালকাঠির মো: মামুন বিল্লাহ (মামুন খান), বরিশালের তানভীর রেজা রুবেল, নেত্রকোনার মো: এরশাদ খানও ভোট কাটবেন। সাধারণ সম্পাদক পদে সর্বাধিক আলোচনায় আছেনÑ নোয়াখালীর মো: শাহনেওয়াজ, সাতক্ষীরার মো: আমিনুর রহমান আমিন, পটুয়াখালীর মো: তানজিল হাসান, নরসিংদীর ইকবাল হোসেন শ্যামল, বরিশালের মো: জুয়েল হাওলাদার ও যশোরের মাজেদুল ইসলাম রুমন। আর ছাত্রদলের সাবেক নেতা হাবিব-রাজীবের প্রার্থী হিসেবে জাকিরুল ইসলাম জাকির, মামুনুর রশীদ মামুনের প্রার্থী মোহাম্মদ কারিমুল হাইও (নাঈম) বেশ আলোচনায় রয়েছেন। তবে শেষ পর্যন্ত শাহনেওয়াজ, আমিন, তানজিল, জুয়েল ও শ্যামলের মধ্যেই তুমুল প্রতিদ্ব›িদ্বতা হবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।

এদিকে কাউন্সিলের জন্য ফজলুল হক মিলনকে রিটার্নিং অফিসার, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও আজিজুল বারী হেলালকে সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিযুক্ত করা হয়েছে। এ বি এম মোশাররফ হোসেন, শফিউল বারী বাবু এবং সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে পোলিং অফিসার নিযুক্ত করা হয়েছে। ১৪ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত বিরতিহীন ভোটগ্রহণ হওয়ার কথা। আদালতের স্থগিতাদেশ থাকলে সেক্ষেত্রে কাউন্সিলের তারিখ পরিবর্তন হতে পারে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
Mir Shohag Hossain ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:২৮ এএম says : 0
ছাত্রদলের কাউন্সিল একান্তই তাদের ব্যক্তিগত বিষয় এটা স্থগিত করার ... কে। লক্ষ লক্ষ মামলা বিচারহীনতায় ঝুলে রয়েছে সেগুলো নিষ্পত্তি করার খবর নেই এসেছে ছাত্রদলের কাউন্সিল স্থগিত করতে।
Total Reply(0)
MD Nirob Ahamed Riyel ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:২৯ এএম says : 0
কয়দিন পরে বিয়ে করলেও আদালতের অনুমতি লাগবে
Total Reply(0)
MA Mannan Noyakhali ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:২৯ এএম says : 0
ক্ষমতাসীনদের ইশারায়, আদালত ছাত্রদলের কাউন্সিল স্থগিত করেছে।
Total Reply(0)
Ariful Islam Munshi ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:২৯ এএম says : 0
ভোটাধিকার বা গনতন্ত্রের নাম শুনলে যাদের শরীরে খিঁচুনি শুরু হয়, তারা সুস্থ গনতন্ত্র বা ভোটের উৎসব কিভাবে মেনে নিবে ? সেইজন্যই তো নানা রকম কূট কৌশল। ছাত্রদলের কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে যখন সারাদেশে জোয়ার জেগেছে ,তখন এই রকম কুৎসিৎ কূটকৌশল বাস্তবায়নের চেষ্টায় কোন কাজ হবে বলে মনে হয় না। এতদিনে আমরাও কিন্তু পাতায় পাতায় চলতে শিখেছি।।
Total Reply(0)
Lipy Farzana ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৩২ এএম says : 1
ছাত্রদলের কাউন্সিল স্থগিত করেছে আদালত, কমিটি করাতো স্থগিত করে নাই, হৈচৈ না করে আস্থা রাখুন তারেক জিয়ার উপরে। তৈরী হও সূর্য সৈনে আপন তেজের রং বিলাতে
Total Reply(0)
Alamgir Hossain ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৩২ এএম says : 0
কাউন্সিল স্থগিত মানেই তো কমিটি করতে না দেওয়া, এর পিছনে সরকারের অনেক দুর্বলতা এবং দূরভীসন্ধী আছে
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন