শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

প্রস্তুত হচ্ছে পদ্মা সেতু

রক্ষণাবেক্ষণ ও টোলের দায়িত্বে কোরিয়ান কোম্পানি

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

প্রস্তুত হচ্ছে- পদ্মা সেতু। মূল সেতুর বাস্তব কাজের অগ্রগতি হয়েছে শতকরা ৮৩ দশমিক ৫০ ভাগ। আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে শতকরা ৭৩ দশমিক ৩৭ ভাগ। নদীশাসন কাজের বাস্তব অগ্রগতি শতকরা ৬২ দশমিক ৫০ ভাগ এবং সংযোগ সড়কের অগ্রগতি হয়েছে শতকরা ১০০ ভাগ। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ২০২১ সালের জুনে পদ্মা সেতু চালু হবে।

পদ্মা বহুমুখী সেতুর পরিচালন, রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায়ের দায়িত্ব পাচ্ছে কোরিয়ার প্রতিষ্ঠান কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশন। গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ এবং দক্ষিণ কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশনের (কেইসি) মধ্যে এ সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। ওই দিন দুপুরে বনানীস্থ সেতু ভবনের মিলনায়তনে এই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের উপস্থিত ছিলেন। এদিকে, পদ্মা সেতুর টোল হারের একটি তালিকা করেছে সেতু বিভাগ। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশে বিদ্যমান সেতুগুলোর তুলনায় পদ্মা সেতুর টোল বেশি হওয়াই স্বাভাবিক। বর্তমানে পদ্মা নদী ফেরিতে (শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি) পাড়ি দিতে যে টাকা লাগে, পদ্মা সেতু পার হতে এর চেয়ে গড়ে দেড় গুণ বেশি টাকা খরচ করতে হবে। আর বঙ্গবন্ধু সেতুর টোলের সঙ্গে তুলনা করলে তা হবে দ্বিগুণেরও বেশি। ফেরিতে করে একটি বড় বাস পদ্মা নদী পার হতে লাগে ১ হাজার ৫৮০ টাকা। পদ্মা সেতু হলে টোল দিতে হবে ২ হাজার ৩৭০ টাকা। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার জন্য বড় বাসের টোল ৯০০ টাকা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পদ্মা সেতু চালুর পর ১৫ বছরের জন্য একটি টোল হারের তালিকা করেছে সেতু বিভাগ। তালিকা অনুসারে, ছোট ট্রাকের জন্য ১ হাজার ৬২০ টাকা টোল প্রস্তাব করা হয়েছে। মাঝারি ট্রাকের টোল ২ হাজার ১০০ টাকা। বড় ট্রাকের ২ হাজার ৭৭৫ টাকা। চার এক্সেলের ট্রেইলারের টোল ধরা হয়েছে ৪ হাজার টাকা। ট্রেইলারের ক্ষেত্রে চার এক্সেলের পর প্রতি এক্সেলে দেড় হাজার টাকা টোল যোগ হবে। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রতি ১৫ বছর পরপর টোলের হার ১০ শতাংশ করে বাড়ানো হবে। সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, টোল আদায়ের হার ঠিক করা হয়েছে যানবাহন চলাচলের পূর্বাভাস ধরে। ২০২১ সালে পদ্মা সেতু দিয়ে প্রায় ৮ হাজার যানবাহন চলাচল করবে। ৩৫ বছর পর যানবাহনের সংখ্যা দিনে ৭১ হাজার ছাড়িয়ে যাবে। ব্যয় বৃদ্ধি বা যানবাহন কম চললে টোলের হার নিয়ে পুনরায় ভাবতে হবে। যদিও সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, পদ্মা সেতুর টোল এখনও নির্ধারণ করা হয়নি।

পদ্মা সেতুতে টোল দিতে চলমান কোন গাড়িকে বুথে থামানো লাগবে না। চুক্তিবদ্ধ কোরিয়ান এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশন পদ্মা সেতুর টোল আদায়ে ইলেক্ট্রনিক টোল কালেকশন (ইটিসি) পদ্ধতি চালু করবে। ইটিসি লেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালিত হবে এবং এ ক্ষেত্রে কোন যানবাহনকে টোল বুথে থামাতে হবে না। পদ্মা সেতুর রক্ষণাবেক্ষণে পারফরমেন্স বেইজড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমও চালু করবে কোম্পানিটি।

তাছাড়া, কোম্পানিটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ট্রাফিক ইনফরমেশন এপলিকেশন চালু করবে। এ পদ্ধতিতে প্রতি মুহূর্তে সড়ক, সেতু বা এর আওতাধীন অন্য যে কোনো অবস্থানের বিদ্যমান যানবাহন সংক্রান্ত তথ্যাদি স্বয়ংক্রিয়ভাবে মোবাইল, বেতার বা অন্য কোনো ডিভাইসের মাধ্যমে জানা যাবে। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষসহ টোল আদায় করে এ ধরণের সংস্থাসমূহের জনবলকে প্রশিক্ষিত করবে তারা।
গত বৃহস্পতিবার সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের ওবায়দুল কাদের জানান, পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের মূল সেতুর সবকটি পাইল ড্রাইভিং এর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। মূল সেতুর বাস্তব কাজের অগ্রগতি শতকরা ৮৩ দশমিক ৫০ ভাগ এবং আর্থিক অগ্রগতি শতকরা ৭৩ দশমিক ৩৭ ভাগ। নদীশাসন কাজের বাস্তব অগ্রগতি শতকরা ৬২ দশমিক ৫০ ভাগ এবং আর্থিক অগ্রগতি শতকরা ৪৮ দশমিক ৪০ ভাগ। সংযোগ সড়কের অগ্রগতি শতকরা ১০০ ভাগ। মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি শতকরা ৭৩ দশমিক ৫০ ভাগ। মোট পিয়ার ৪২টি। এর মধ্যে ৩১টির কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হয়েছে, বাকি ১১টির কাজ চলমান আছে এবং এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে। সেতুমন্ত্রী জানান, পদ্মা সেতুর মোট ৪২টি স্প্যানের মধ্যে মাওয়া সাইটে এ পর্যন্ত স্প্যান এসেছে ২৮টি। এর মধ্যে ১৪টি স্প্যান স্থাপন করা হয়েছে। ফলে এখন ২ দশমিক ১ কিলোমিটার দৃশ্যমান। এছাড়া অবশিষ্ট স্প্যানগুলোর কাজ চীনে প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

তিনি বলেন, মাওয়া ও জাজিরায় পাইলিং এবং পিয়ারের কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে পিয়ার ক্যাপের কাজ শেষ পর্যায়ে এবং গার্ডার স্থাপনের কাজ চলছে। মোট ১৪ কিলোমিটার নদীশাসন কাজের মধ্যে ৬ দশমিক ৬০ কিলোমিটার সম্পূর্ণ হয়েছে। রেলওয়ে স্ল্যাব এর জন্য মোট ২ হাজার ৯৫৯টি প্রি-কাস্ট স্ল্যাব এর প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে ২ হাজার ৮১৯টি স্ল্যাব তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। বাকি স্ল্যাব তৈরির কাজ চলতি সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ হবে। রোডওয়ে স্ল্যাব-এর জন্য মোট ২ হাজার ৯১৭টি প্রি-কাস্ট রোডওয়ে ডেকস্ল্যাব-এর প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে ১ হাজার ৩৭০টি স্ল্যাব তৈরির কাজ শেষ হয়েছে এবং বাকি স্ল্যাব তৈরির কাজ চলমান আছে।

২০১২ সালে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সেতু বিভাগ। সেতু নির্মাণের জন্য তাদেরকে ঋণ হিসেবে টাকা দিচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এই ঋণ সুদসহ ৩৫ বছরে ফেরত দিতে হবে। গত ২৯ আগস্ট অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সেতু বিভাগের এ নিয়ে চুক্তি হয়। এই চুক্তিতে পদ্মা সেতুতে চলাচলকারী যানবাহনের টোলের হার কী হবে, কত বছরে টোল আদায় হবে, টোলের টাকা কীভাবে পরিশোধ করতে হবে, এর বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে পদ্মা সেতুর ঋণের কিস্তি পরিশোধ শুরু হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
Vubon Sarkar ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:১১ এএম says : 2
২০২১ সাল পর্যন্ত টাইম নিয়েছে। কিন্তু ৩০২৩ সাল পর্যন্ত টাইম নিলেও হবেনা।
Total Reply(0)
Akbor Millat ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:১২ এএম says : 0
পদ্মাসেতু হচ্ছে শেখ হাসিনার একক প্রচেষ্টায়.... লবিং তকবির করে বিদেশী অর্থ বরাদ্দ বন্ধ করা হয়েছিলো। তবুও শেখ হাসিনা পিচু হটেনি। আমরা বোধহয় ভুলে গেছি পৃথীবীর ২য় খরস্রোতা নদী হচ্ছে পদ্মা। সময় একটু লাগতে পারে ধর্য্যতো ধরতে হবে।
Total Reply(0)
ABDUL MAJID QUAZI ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:১৩ এএম says : 0
I read the criticism of economics in Bangladesh regarding construction of this bridge. One of them raised question about spending money in train line. Since Bangladesh is over populated manpower is easily available at cheap rate the economist of did not count daily loss of man hours and its price on the bank of Padma waiting for ferry. These man hours can contribute huge in productivity of Bangladesh had they not lost in waiting time. The economist so made blunder mistakes.
Total Reply(0)
msIqbal ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:১৩ এএম says : 0
হতাশা প্রকাশ করছি তাদের জন্য, যাদেরকে প্রথম পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে বিয়ে করে নিজের বিয়েটাকে ঐতিহাসিক করে রাখার ইচ্ছা পূরণ করতে গিয়ে প্রতি বছরেই বিয়ের সাল (তারিখ নয়) পরিবর্তন করতে হচ্ছে!
Total Reply(0)
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:১৩ এএম says : 0
Why the construction work of Padma Bridge takes so long time to complete nearly 2 times higher than the estimate & cost also increased 3 times higher than the estimate. Govt friendly media also silent in this regards.
Total Reply(0)
মহররম আলী ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:১৪ এএম says : 1
চেষ্টা করলে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে সম্পন্ন হতেও পারে । ২০২০, ২০২১ স্বপ্নই থেকে যাবে নিশ্চিত ৷ পরিবর্তিত ডিজাইনে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের দারি এখনো আলোর মুখ দেখেনি।
Total Reply(0)
Omar Faruq John ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:১৪ এএম says : 1
আবুল মাল আব্দুল মুহিত ২০০৯ সালে বলেছিলো,'২০১৩ সালে পদ্মা সেতু নির্মাণ শেষ হবে'। ১৩ সালে বলা হলো ১৮ সালের ভেতর সেতু নির্মান শেষ হবে, এখন ১৯ সালে এসে বলা হচ্ছে ২১ সালে শেষ হবে। ২০২২-২৩ সালের আগে এই সেতু যে হবেনা সেটা পাগলেও বুঝে
Total Reply(0)
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:১৫ এএম says : 0
২০২১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ ৫০ বছরে পা দেবে। তার আগে পদ্মা সেতু দিয়ে পার হয়ে ঢাকায় পা রাখতে চাই। জয় বাংলা।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন