মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

ভারতের গণতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্র

শশি থারোর : | প্রকাশের সময় : ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

বিপুল তুর্যনিনাদে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকার তার দ্বিতীয় মেয়াদের ১০০ দিন পূরণ করেছে। সরকারের ব্যর্থতাপূর্ণ রেকর্ড সত্তে¡ও মোদি এখনো বিপুলভাবে জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে রয়ে গেছেন। ভারতীয় গণতন্ত্রের জন্য এটি ভালো কিছু নয়।

মোদি সরকারের সমর্থকেরা নতুন একটি দমন আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করার দিকে ছুটছে। সেটা হলো তালাক-ই-বিদাত, তথা তাৎক্ষণিক তালাক আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মোদি কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদার ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করেছেন কঠোরতার মধ্যেই। রাজনীতিবিদদের গ্রেফতার করা হয়েছে, টেলিফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। কী ঘটছে সেখানে তা কেউ জানে না। কিন্তু তারপরও বেশির ভাগ ভারতীয় উচ্ছ¡সিতভাবে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে।

মোদির সমর্থকেরা কিন্তু অর্থনীতি নিয়ে তেমন কিছু বলেন না। অথচ এই অর্থনীতিই ভয়াবহভাবে পতনের দিকে যাচ্ছে। তারা ধর্মীয় স¤প্রদায়গুলোর মধ্যকার সম্পর্ক নিয়েও কথা বলতে চায় না। এই সম্পর্কও আগে কখনো এত উত্তপ্ত ছিল না। তারা চাঁদে মনুষ্যহীন যান নামাতে চেয়েছিল। তবে যান্ত্রিক ত্রæটির কারণে ১০০ দিন পূর্তির কাছাকাছি সময়ে তা ব্যর্থ হয়।
মোদির অব্যাহত জনপ্রিয়তা তার সমালোচকদের ধাঁধায় ফেলে দিতে পারে। তিনি প্রচলিত ধারার বাইরে গিয়ে সমস্যাগুলোর সমাধান করার জন্য যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছন, বেশির ভাগই ভালোর চেয়ে ক্ষতিই করেছে বেশি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ২০১৬ সালে ভারতের মুদ্রার ৮৬ ভাগ বাতিল করার বিপর্যয়কর সিদ্ধান্তের কথা। স্বাধীনতার পর এটাই ছিল সম্ভবত ভারতীয় অর্থনীতির ওপর একক বৃহত্তম আঘাত। এর ফলে লাখ লাখ লোক চাকরি হারায়, প্রবৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু বেশির ভাগ ভোটার এ দিকটিকে পরোয়া করেনি। তাদের কাছে তিনি দৃঢ়, অমূর্খ নেতা, তিনি ভারতের কঠিন সমস্যাগুলোর সাহসী সমাধান দিতে পারেন, ঐতিহ্য লঙ্ঘন করতে পারেন।

এটা অনেক ভারতীয়কে তাদের মাথা চুলকাতে বাধ্য করছে। প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় রাজনীতির প্রতিটি মার্জিত রীতি নিয়ে ছেলেখেলা খেলছেন। তিনি তুচ্ছ অভিযোগে বিরোধী দলের নেতাদের ধরতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী পাঠাচ্ছেন, মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের সন্ত্রস্ত্র রাখার জন্য মন্ত্রীদের বিভেদমূলক গলাবাজীকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন, তার প্রশাসনের জন্য অস্বস্তি সৃষ্টি করে, এমন খবর প্রকাশের বিরুদ্ধে মিডিয়াকে ভয় দেখাচ্ছেন।
অধিকন্তু মোদির সরকার ভারতের পার্লামেন্টারি স্ট্যান্ডিং কমিটির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দ্বিদলীয় রীতি লঙ্ঘন করেছে। এই রীতিতে বিরোধী দলের সদস্যদের পার্লামেন্টারি কমিটির প্রধান করা হতো। কিন্ত বিজেপি এবার তা নিজেদের লোক দিয়ে গঠন করেছে।

জ্বালাময়ী জাতীয়তাবাদ
মোদির অনেক উচ্ছ¡সিত সমর্থকের জন্য এ ধরনের লঙ্ঘন কোনো ব্যাপারই নয়। তাদের দৃষ্টিতে দশকের পর দশক ধরে কোমল হৃদয়ের গণতন্ত্র ও জোট সরকারের পর এখন কঠিন একজন নেতা দরকার। তবে আমরা যারা এখনো ভারতের গণতন্ত্রের ওপর আস্থা রাখছি, তারা দেখতে পাচ্ছি, যতটুকু বোঝা যাচ্ছে, গণতন্ত্রের শেকড় তার চেয়েও সরু হয়ে গেছে।

ন্যূনতম রাজনৈতিক বিরোধিতা বা প্রতিবাদকে জাতীয়বিরোধী এমনকি রাষ্ট্র্রদ্রোহিতা হিসেবে অভিযুক্ত করা হচ্ছে। সব স্বাধীন প্রতিষ্ঠানকে ফাঁপা করে তাতে সরকারের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। মোদির অধীনে রাজনৈতিক স্বাধীনতা আর কোনো গুণ বিবেচিত হচ্ছে না।

সা¤প্রদায়িক সম্পর্ক নষ্ট হয়ে গেছে
বিজেপির আমলে সা¤প্রদায়িক সম্পর্ক সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় পড়েছে। ভারতের মুসলিম স¤প্রদায়কে এত দূরে ঠেলে দেয়া হয়েছে যে সরকারের সবচেয়ে কঠোর সমর্থকও তা স্বীকার করে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। তিন হাজার বছর ধরে ভারত সব জাতির, সব বিশ্বাসের নির্যাতিতদের জন্য স্বর্গ বিবেচিত হয়ে আসছিল। আজ মিয়ানমারের মুসলিম রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের প্রত্যাখ্যান করাহ হচ্ছে, আসামের এনআরসি থেকে বাদ দেয়া হয়েছে প্রধানত মুসলিমদেরকে ও ভারতে জন্মগ্রহণ করা তাদের বংশধরদেরকে। সংখ্যালঘু স¤প্রদায়গুলো যাতে তাদের পারিবারিক প্রথা পালন না করতে পারে, সেজন্যও আইন করা হবে বলে শোনা যাচ্ছে।

আমাদের চোখের সামনেই প্রতিষ্ঠিত সব রীতিনীতি লঙ্ঘন করা হচ্ছে। মনে হচ্ছে ‘সাহসিকতাই’ সব কিছু।
যাই হোক, মোদির দ্বিতীয় পাঁচ বছর মেয়াদের প্রথম ১০০ দিনে যে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে তা হলো মহাত্মা গান্ধী যেমন দেশের জন্য স্বাধীনতা আন্দোলন করেছিলেন, সম্ভবত তা হওয়া শিগগিরই ছেড়ে দেবে ভারত। (সাউথ এশিয়ান মনিটরের সৌজন্যে।)

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন