বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ক্ষুব্ধ মন্ত্রী তদন্তের নির্দেশ দিলেন

ভারত থেকে আনা বিআরটিসি বাসে ত্রুটি-বিচ্যুতি

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

ভারত থেকে আমদানি করা বিআরটিসি বাসের ফ্লোর কাঠের তৈরি। হাতের আঙুল দিয়ে সামান্য চাপ দিলে বেঁকে যায় বাসের বডি। স¤প্রতি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন বিআরটিসি’র চাহিদা অনুযায়ী ভারত থেকে আনা বাসগুলোতে ধরা পড়েছে এমন ত্রুটি। সরকারি সংস্থাটির সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, সদ্য সাবেক বিআরটিসি চেয়ারম্যান ফরিদ আহমেদ ভূঁইয়াকে ভারতে নিয়ে ‘ম্যানেজ’ করা হয়েছে। আর তার ফলেই ‘স্পেসিফিকেশন’ অনুযায়ী বাস চাওয়া হলেও ভারতীয় টাটা কোম্পানি এমন নিম্নমানের বাস ধরিয়ে দিয়েছে বিআরটিসিকে।
এদিকে ভারত থেকে অতি নিম্নমানের বিআরটিসি বাস আমদানির বিষয়টি তদন্তে নতুন চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের

গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে ১১ টায় বিআরটিসি›র প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে দিকনির্দেশনামূলক সভায় তাৎক্ষনিক এ নির্দেশনা দেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী। ভারত থেকে আনা নতুন বাসের ত্রুটি-বিচ্যুতি এবং যাদের মাধ্যমে আনা হয়েছে তাদের কোনো কারসাজি আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে তদন্তের নির্দেশ দিয়ে মন্ত্রী বলেন, কিছু বাসে ছাদ ফুটো হয়ে পানি পড়ার পর সরবরাহকারীকে ডাকা হয়েছিল। যারা গাড়িগুলো সরবরাহ করেছে তারা ক্ষতি পুষিয়ে দেবে, সে দায়িত্ব তারা নিয়েছে। আর যেসব ত্রুটি-বিচ্যুতি রেখে গাড়িগুলো সরবরাহ করা হয়েছে সেগুলো দ্রুত সারানোর নির্দেশও দেন ওবায়দুল কাদের

এসময় বিআরটিসি›র সাবেক চেয়ারম্যানের প্রসঙ্গ উঠলে মন্ত্রী বলেন, যার নেতৃত্বে ত্রুটি-বিচ্যুতিপূর্ণ বাসগুলো নিয়ে আসা হল সেটা আমরা খতিয়ে দেখছি। কারা গাড়িগুলো এনেছে, কি ত্রুটি-বিচ্যুতি? কেনো ত্রুটিপূর্ণ গাড়ি দেওয়া হয়েছে এবং যারা এগুলো গ্রহণ করেছে সেই সময় তারা ত্রুটিপূর্ণ গাড়ি কেনো গ্রহণ করল। তাতে কোনো কারসাজি আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে বলেছি।

জানা গেছে, ভারত থেকে কেনা বিআরটিসির ছয়শ বাসের মধ্যে এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চারশ বাস চলে এসেছে দেশে। এর মধ্যে একতলা দুইশ এসি বাসের মধ্যে এসেছে ১২৯টি, বাকিগুলো আসার পথে। নন-এসি একতলা টাটা বাস এসেছে একশটি। ইতোমধ্যে নতুন এই বাসগুলোর ছাদ ফুটো হয়ে পানি পড়ে। নতুন বাস এমন হওয়ার পর সরবরাহকারী কোম্পানিকে ডাকা হয়েছে। এখন আবার বাসগুলো নতুন করে মেরামত করতে বলা হচ্ছে ওই কোম্পানিকে।

বিআরটিসির দোতলা বাস কেনা হয় তিনশটি। এর মধ্যে এ পর্যন্ত এসেছে ১৬৮টি। বিআরটিসি সংশ্লিষ্টরা জানান, এই বাসগুলোর বডিশিট অত্যন্ত নিম্নমানের। হাত দিয়ে চাপ দিলেই বাঁকা হয়ে যায় বাসের বডি। আরও জোরে ধাক্কা দিলে একেবারে ভেতরে ঢুকে যায়। বাসের বডি তৈরিতে নিম্নমানের শিট ব্যবহারের কারণেই এমনটা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিআরটিসি ডিপোর কারিগরি বিভাগের কর্মকর্তারা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বাসের ওজনেও তারতম্য পাওয়া গেছে। ‘স্পেসিফিকেশন’ নথি অনুযায়ী, বাংলাদেশ চেয়েছিল ১৬ হাজার দুইশ কেজি ওজনের বাস। সেখানে দেশে আসা বাসগুলোর ওজন ১৫ হাজার কেজিরও নিচে।

শুধু বাসের বডি নয়, বাসগুলোর অন্যান্য ‘স্পেসিফিকেশনে’ও ফাঁকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ বিআরটিসি’র চালক ও কন্ডাক্টরদের। তারা জানান, এসি বাসগুলো প্রতি লিটার জ্বালানিতে তিন কিলোমিটার যাওয়ার কথা থাকলেও সেগুলোর মাইলেজ মাত্র ১ দশমিক ২ কিলোমিটার। এসব বাসের সামনের অংশে এসিও কম কাজ করছে। বাসের ভেতরে সিট বসানো নিয়েও ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি বাসের সিট ক্যাপাসিটি ৫১ হওয়ার কথা থাকলেও সিট বসানো হয়েছে ৪১টি। এতে যাত্রী পরিবহন কম হওয়ায় সরকারের রাজস্ব আয় কম হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিআরটিসি’র বাসচালকরা জানান, বাসগুলোর গতি ৯০ কিলোমিটারে উঠলেই ইঞ্জিন গরম হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া নন-এসি বাসের লাগেজ ক্যারিয়ার ত্রুটিযুক্ত। লং রুটে ঘণ্টায় ৭৫ কিলোমিটারের বেশি গতি ওঠানো যাচ্ছে না। বাসের ফ্লোর কাঠের তৈরি হওয়ায় কিছুদিনের মধ্যে ক্ষয় হতে শুরু করবে বলে আশঙ্কা তাদের।

জানা যায়, বিআরটিসি বাস ঠিকমতো তৈরি হচ্ছে কি না, তা দেখতে বহুবার ভারত সফরে গেছেন বিআরটিসির তৎকালীন চেয়ারম্যান ফরিদ আহমেদ ভূঁইয়া। সেসব সফরে তিনি তার পছন্দমতো কিছু কর্মকর্তাকেও সঙ্গে নিয়ে যেতেন। সে সময় চেয়ারম্যানের সফরসঙ্গী বিআরটিসির একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগ করে বলেন, ‘বাসের এসব ত্রুটি তখন তাদের চোখেও ধরা পড়েছিল। কিন্তু চেয়ারম্যান ভারতীয় কোম্পানি থেকে কমিশন খেয়ে এসব নিয়ে কথা তোলেননি।

এ বিষয়ে বিআরটিসি বর্তমান চেয়ারম্যান এহছানে এলাহীর সাংবাদিকদের কাছে বাসের সিট চাহিদার তুলনায় কম দেওয়া ও স্পেসিফিকেশনের অন্যান্য ত্রুটির কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ভারতীয় বাস কোম্পানিকে ডাকা হয়েছে। দু’বছর এসব বাসের কোনো ত্রুটি ধরা পড়লে তারা মেরামতের বিষয়টি দেখবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
Md Dulal ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ২:০১ এএম says : 0
ভারত থেকে বাস আনা বন্ধ করুন, এই গুলি এতই বাজে চলতে চলতে ভেঙ্গে যায়,চায়না থেকেও আনা উচিত না।
Total Reply(0)
Saiful Alam ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ২:০১ এএম says : 0
ভারত থেকে আনতে হবে কেন? জাপান কি ভুমিকম্পে দংশ হয়ে গেছে? সবি মন্ত্রী সাহেবের বাটপারি দরা খাইলেই তদন্তের নামে আড়াল করে সেটাকে মাটি চাপা দিয়ে জনগণের টাকার অপচয় করা
Total Reply(0)
Md Hasan ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ২:০২ এএম says : 0
মহা লুটপাট ও দুর্নীতির অপর নাম, আওয়ামীলীগ।
Total Reply(0)
Moshiur Rahman ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ২:০২ এএম says : 0
ভারতে কোন জিনিসের মান নাই , যত সব নিম্নমানের দ্রব্য ভারতে , কেন যে সব কিছুই ভারত থেকে এই অবৈদ সরকার আনে
Total Reply(0)
প্রজাপতির জীবন ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ২:০২ এএম says : 0
ভারত ভালো জিনিস দিবে তা না ভাবাই ভালো।। সবাই অকেজো মাল দিলেও করার কিছু নেই।
Total Reply(0)
Abduz Zaher ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ২:০৩ এএম says : 0
কমিশনটা ভাল হলে মেজাজ ও ভাল থাকে নাহয় আমার মেজাজ ও বিগড়ে যায়।
Total Reply(0)
Shamsuddin Shams ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ২:০৩ এএম says : 0
ভারত যেখানে বাইরের দেশ থেকে বাস আমদানি করে আমরা কেন ভারত মতো নিচু দেশ থেকে বাস আমদানি করবো। পুরাতন বাস মেরামত করে আমাদের কে দিয়েছে। এর সাথে আমার দেশের কিছু অসাধু মন্ত্রী জড়িত আছে
Total Reply(0)
Ali Akbar ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ২:০৪ এএম says : 0
দূর্ণীতি এখন আওয়ামী লীগ নামক সাইন বোর্ড লাগিয়ে পদ পেয়ে সব বাটপার এখন দেশে ভাইরাসের মত চেপে বসে দেশের কান্দে..
Total Reply(0)
Nannu chowhan ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৮:৫১ এএম says : 0
Eai vabei bondhu rashter khomotai rakhar kotha bole mainkar chipai fele amader dhongsho korbe,eta theke ber howar kono opai dekhsina...
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন